Friday, September 18, 2015

শর্ত এটুকুই,
গণ্ডী টানা আছে, চৌকোণো, তার বাইরে
থাকতে হবে, তাহলে, এসো ।
অন্দরমহলে, মনে রেখো, কোনোদিন
প্রবেশ নিষেধ ।
শর্ত এটুকুই,
যদি রাজি থাকো, বলো, কবুল কবুল !
যদি রাজি থাকো, বলো, অন্দরেবাহিরে
নিকাহ সম্পন্ন হবে, কবুল, কবুল !
শর্ত এটুকুই,
যদি রাজি থাকো,
জীবিত ও মৃতে হনিমুন হবে আশ্বিনের শেষে ।
তোমাকে কোথায় রাখি, এইটুকু ঘর,
পিঁপড়ের বাসা এর চেয়ে ঢের বড় ।
কুড়িয়ে এনেছি কিছু ক্ষুদ,
নুন মেখে দিয়েছি থালায়, খেয়ে নাও ।
ফুরিয়ে এসেছে রাত, ফিরে গিয়ে বলো,
দুহাজার তিরিশের পর, পুনরায়, দেখা হবে
গৃহনির্মাণের কাজ ততদিনে ঠিক শেষ হবে !
তোমাকেই লিখি, বারবার ।
লেখক হতাম যদি, প্রতিটি অক্ষরে
রেখে দিতাম তোমার শ্বাস ।
বুকের ঐ উঠানামা, মেলে ধরা ঊরু,
আর তির তির করে কেঁপে ওঠা ঠোঁট...
লেখক হইনি, তবু তোমাকেই লিখি
আগামী জন্মের পরে চিত্রকর হবো...
পুনরায়, মূষিক নয়, রীতিমতো সিংহের মত এলাম মাঠে...
সিংহই তো, মূষিক হবো কেন ?
অপরাধতত্ত্ব এক জটিল তত্ত্ব । লোভ এর পিতা, মাৎসর্য এর সঙ্গী, আর মাতা স্বয়ং মোহ ।
হোটেলের জানালা থেকে দীঘার সমুদ্রকে মনে হচ্ছে ব্রজবালা রাধিকা, প্রতীক্ষা করছে মিলনের ।
অলিখিত এই বেঁচে থাকা ।
মৃত্যুও লিখিত নয় । গ্রহদোষ যাকে বলো তুমি,
সে কেবল প্রাণতৃষ্ণা, মেটে না সহজে ।
এই সব ভাগবতে লেখা নেই, বেদ বা পুরাণে
পাবে না কখনও, কোরাণ বা বাইবেল
এসব বলে না । পরাশরকথা থাক,
নারদপুরাণে নেই । শূন্য থেকে শূন্যে
যেতে যে সাঁকোটি পার হতে হয়, একা,
তাকে বলো, প্রেম, বলো, মৃত্যু...
নক্ষত্রদোষের কথা, প্রাণ জানে, মন...
গ্লাসে ঢেলেছি সামান্য বিষ,
নীলকণ্ঠ, এ'বলে তোমার
প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবো না আমাকে !
সমগ্র পুরাণ জুড়ে তুমি, 
মীথ হয়ে আছো !
কাহারও পরাণ জুড়ে বাসভূমি নেই,
গ্লাসে ঢেলে নিই রাত্রিসুখ ।
তুমি একে অসুখ বলো না !
যুদ্ধ কি সত্যিই বেঁধে যাবে ? কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তান যা শুরু করেছে, মোদী সরকারের ভূমিকাও সংশয়াতীত নয়, তাতে এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ।
পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকাগুলি কেচ্ছাতেই মগ্ন, কাল হয় তো ধর্মঘট নিয়ে পাতা ভরাবে, কিন্তু দেশ যে আর এক যুদ্ধের দিকে পা বাড়িয়ে বসে আছে, সে খবর রাখার সময় তাদের নেই !
চলে গেল ! বলেও গেল না !
এটা কার কথা, জানি না । জানি এটুকুই, চলে যে যায়, সে বলে যায় না !
(আয়ু)
অপ্রাপ্তির বেদনার চেয়ে হারাবার হাহাকার অনেক বেশি ও তীব্র...
যে লেখে, সে আমি নই, শুধু প্রতি রাতে
একটি অন্ধ লোক পিয়ানো বাজায়,
একা, নুলো হাতে---
তাকে আজ সেই কবি, দূর থেকে, প্রণাম জানায় !
(১৪১৮য় লেখা)
কবিতা বা গল্প বা গদ্য কোনোটাই লিখতে পারি না, বলে, একটা গাড়িও কিনতে পারবো না ? সেকেণ্ড হ্যাণ্ড না হোক ইলেভেন্থ হ্যাণ্ড হলেও তো পারতাম ! পারতাম না ?
না, সেই যোগ্যতাও আমার নেই, বলে, ঘোষণা দেওয়া হয়ে গেছে !
লিখতে যে পারে না, তার কোনো শখ থাকতে পারে না ! এটা না কি লেখকপুরাণে বলা আছে ।
লেখকপুরাণ কোথায় পাবো গো ? দেখে নিতে হবে, কথাটা নেতাদের ভাষণের মত সত্যি কি না !
ফেসবুকে, কাল থেকে শিক্ষক দিবস নিয়ে মাতামাতির শেষ নেই । মাতিয়ে তোলার বিষয় এটা নয়, শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের বিষয় । ফলে, প্রায় প্রত্যেকের স্ট্যাটাস পড়ে যাচ্ছি কাল থেকে ।
শিক্ষক তিনিই, যিনি নতুন পথ দেখাতে পারেন, হাত ধরে সেই পথে হাঁটতে শেখান । বাকিরা 'মাস্টর' ।
মাস্টর নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই, তারা তাদের মত থাকুন । 
আমার আজীবনের শিক্ষক তিনজন ।
আমার নিরক্ষরা মা, আমার অংকের স্যর সুহাস মিশ্র এবং কবিতার প্রেমে পড়তে যিনি শিখিয়েছিলেন, সেই কৃষ্ণধন নাথ । 
এই তিনজনকে, আজ শুধু নয়, আমি রোজ প্রণাম জানাই ।
স্নান করে এলে শুদ্ধ রূপে
দেখব, এটুকু বাসনা নিয়ে বসে থাকি
পুকুরঘাটের পশ্চিমে, সেখানে, নারকেল গাছ,
একটা নাগকেশর, আর আম্রপল্লী...
দূরে, কৃষ্ণাদ্বাদশীর চাঁদ, তার ছায়া
পুকুরের জলে, না কি ছায়াটি আসলে
তোমার নিজের ?
বিভ্রমের মত তুমি ডুব দাও জলে...
তোমার কাছে আমার ছিল ঋণ
হারানো সেই দিন...
মনে পড়ে, শ্রীগোপালের দুপুরগুলি ?
মেঝের উপর দুটি শরীর, ছেঁড়াফাটা ঝুলি ?
তোমার কাছে ছিল আমার সবুজ ধারাপাত
মনে পড়ে, সন্ধ্যে থেকে অমাবস্যা রাত ?
তোমার কাছে আমার ছিল ঋণ
হারানো সেই দিন...
মনে পড়ে, শ্রীগোপালের দুপুরগুলি ?
মেঝের উপর দুটি শরীর, ছেঁড়াফাটা ঝুলি ?
তোমার কাছে ছিল আমার সবুজ ধারাপাত
মনে পড়ে, সন্ধ্যে থেকে অমাবস্যা রাত ?
খুব সংগোপনে তোমাকে অনুসরণ করে যাচ্ছি, ঐ তো, তুমি বেরিয়ে এলে লাল টী-শার্টের সঙ্গে, দক্ষিণাপণ থেকে, ছেলেটি কি তোমার প্রেমিক ? তার আগে, যাদবপুর থানার সামনে অটো থেকে নেমেছিলে, একা । আজ তুমি জিন্স, ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে, কাকে যেন ফোন করলে, এই ছেলেটিকেই ? কথা শেষ হলে, আর কারও ফোন যেন এল, আমি তখন তোমার ঠিক পেছনে, বললে, বিকেল চারটেয় আসছি । ঘরে থেকো । 
চারটে এখনও বাজেনি । আর আধঘণ্টা । রাস্তায় এসে, ট্যাক্সি ডাকলে । ছেলেটিকে, হেসে, বললে, কাল ঠিক এগারোটায় । মনে রেখো ।
তোমাকে অনুসরণ করতে করতে, এখন মনে হচ্ছে, তুমিই শতরূপা, যার প্রেমে আমিও ডুবে মরেছি ।
আমি তোমার অনুসরণকারী, প্রেমিক নই, অথচ নাকতলার বৈশাখী পার্কের কাছে ট্যাক্সি থেকে যখন নামছ, চারটে সতের, একটু লেট, তোমার চোখ থেকে রোদচশমা খুলে, বাড়িটার দিকে তাকালে, এই প্রথম, হ্যাঁ, আমার মনে হলো, আমি তোমার অনুসরণকারী নই, আমিই তোমার প্রেমিক, যাকে ঘরে থাকতে বলেছিলে !
দেয়াল থেকে বেরিয়ে আসছে একটা আস্ত টিকটিকি, তার মাথায় শ্যাওলা, ভাগাড়ের গরুর পাঁজরের মত দু-একটা ইট, দেযালটি ইতিহাসহীন, এই দেয়ালরচিত এলাকায়, তোমার শেষ নিঃশ্বাস যেন দেয়ালের খসে পড়া পলেস্তারা...
এই রচনালেখক, একা, তোমার মৃত্যু দেখে যাচ্ছে, কৌশিকী অমাবস্যার আগে ।
পাতা খসে খসে পড়ছে । আদিকথার মত । দূরে লোহার জঙ্গল ছড়িয়ে রয়েছে শিরা-উপশিরার মত । নাবিকের খুলি, মাস্তুলের প্রান্তভাগ ঢেকে যাচ্ছে পাতার হলুদে ।
গতজন্ম থেকে তুলে আনা এই দৃশ্যটির সামনে দাঁড়িয়ে, তুমি, ক্রমে নিস্তেজ হয়ে পড়ছো । তোমার শুশ্রুষা দরকার । লোহার জঙ্গলে পাখি নেই, যে পাখিটা দিয়েছিলাম তোমাকে, তার ফসিল থেকে কুড়িয়ে নিও গন্ধ ।
এই জন্ম গন্ধহীন, তাকে ঘ্রাণের রঙ দিও ।
আত্মা শব্দটি এসেছে আত্ম থেকে । এই আত্মকে আর এক আত্মর সঙ্গে মিলিয়ে দেয় ভালোবাসা ।
আত্মকে জানতে হলে, এটাও জরুরি । আবার আত্ম দেহহীন নয়, দেহহীন হলে তার অস্তিত্ব থাকে না ।
নাটকের অভিনেতা চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গেলে সে আর অভিনেতা থাকে না, চরিত্র হয়ে ওঠে । আবার চরিত্র থেকে বেরিয়ে এলে, সে অভিনেতা ।
আত্মা ও শরীরের সম্পর্কও অনেকখানি তাই...
শরীর শরীর নয়, এ কথা জানিও ।
নদীটির কথা ভুলে গেছি ।
সেও কি ভুলেছে ? এই প্রশ্নে, উঠে আসে
গতজন্ম, বিবাহ ছিল না
সেই জন্মে । প্রণয়সঙ্গীতে নেচে ওঠে
নদীটির প্রাণ, শ্রাবণে সে
উচ্ছ্বল যুবতী, ছলাকলা জানে বড়,
আমাকে ভাসিয়ে নিত উজানের কাছে ।
নদীটির মনে আছে বুঝি ?
প্রণয় নিষিদ্ধ হলে, শ্বেতকেতু, বিবাহকে দিলে
তুমি বৈধ প্রতিষ্ঠান, নদী তা জানে না ।
যেদিন জেনেছে, সেই থেকে চর পড়ে
আছে তার বুকে ।
লাইক, আর পিঠ চাপড়ানো কমেন্টস-এর জন্য এই বান্দা লেখে না । ম্যাগাজিনেও লেখা আর দিই না খুব একটা । কোনো মোহ আর নেই । চাইবারও নেই, পাবারও নেই এই লেখা থেকে । একটা তাগিদ থেকে লিখি, ফেসবুকে সরাসরি লিখি, প্রায় কোনো পরিমার্জনা ছাড়াই পোস্ট করি ।
আসলে, এই সকল লেখা মূলত নিজের সঙ্গে নিজের কথোপকথন । কাউকে আঘাত করার জন্যও নয় ।
কথা বলতে ইচ্ছে করে খুব, কার সঙ্গে কথা বলবো ?
প্রত্যকের নিজস্ব সমস্যা আছে । আর, আমার সমস্যার সঙ্গে খুব একটা জড়াতে চাই না । যার সঙ্গে কথা বলতে যাবো, তার অভিযোগের তীর আমার দিকে।
ফলে, কথাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ।
এই জন্যে, নিজের সঙ্গেই কথা বলি, বারবার ।
সে তুমি পছন্দ করো, আর নাই করো...
ঘোড়াদের ছুটি দিয়ে, নৌকোয় বসেছি ।
বিশ্রামের পর হাতিগুলি
এসে যাবে মাঠে, ততক্ষণ, আমাদের
ইঁদুর দৌড়ের খেলা দেখা ছাড়া করণীয় কিছু
নেই, ফলে, হাততালি দিই, শিস দিই ।
শিস দিতে দিতে, লক্ষ্য করি, বোড়েগুলি,
আর কেউ নয়, আমরা, হ্যাঁ, আমরা ছিলাম !
রচনা করেছি জতুগৃহ,
এবার আগুন দেবো তাতে ।
পঞ্চপাণ্ডবের কেউ নেই, এই গৃহে ।
পঞ্চশর আছে ।
পুড়ে যেতে যেতে ছাইগন্ধে
বুঁদ হয়ে থাকে চরাচর ।
দুই চোখে আয় ঘুম আয় ।
এই ভাবে নিদ্রাকে জানাই,
ডাকি তাকে, সে কি আর আসে ?
ঘরণী সে, কাকে ভালোবাসে ?
নিদ্রাহীন বাঁচবো কি করে ?
বেঁচে থাকি প্রতিবার মরে ।
সকলের জন্য চাই বস্ত্র, খাদ্য, বাসস্থান, প্রেম ও যৌনতা !
চাল ফুটছিল ডেকচিতে,
আঁচ ছিল না তখন ।
আগুন যখন নিভে গেল
ছ্যাঁকা লাগে গায়ে !
হায় ! লাগছিল ছ্যাঁকা গায়ে,
লাল ফুসকুড়ি গালে,
হাতের আঙুল পুড়ে গেল
গরম মসুর ডালে ।
হায় ! রাঁধুনীর কী কপাল !
তিনি আসছেন ।
এটুকুই ব্রেকিং নিউজ ।
তিনি আসছেন ।
ক্যামেরা, লাইট, রেডি । ঐ যে,
তিনি আসছেন ।
চ্যানেল স্পেশ্যাল কভারেজ
দেখুন । একটা বিরতির পর, ফিরে
আসছি আমরা ।
তিনি আসছেন ।
বিরতির পর ।
নিয়তিতাড়িত আমি, অভিশাপগ্রস্ত,
হাতের সকল তাস ফেলা হয়ে গেছে
সেই কবে, পৌষে, আমার জন্মের আগে !
এ জীবন, জানি, শুধু দেখে যাওয়া...
আলো, মূলত এক ধাঁধা ! প্রকৃত অন্ধকার তো ঐ আলোর ভেতরেই !
আর প্রকৃত আলো ? ঐ অন্ধকারের ভেতর থেকে ফুটে আসছে !
অবাক হয়ে, তা দেখছি...
পেত্নী : ১
মিথ্যা বলিব না । পেত্নীর সহিত আমার কলহ ।
তাহার দুই পা দুলাইয়া থাকা, ঘোর নিশিকালে
হাসিতে হাসিতে প্রসারিত হস্তে গ্রহপুঞ্জসহ
আকাশ ধরিয়া ছেলেখেলা করে বলিয়াই এই,
এই বিরূপতা । ইহাও সঠিক, পেত্নী না থাকিলে,
এই বেলগাছ অস্তিত্ববিহীন হইতে পারিত ।
এই সম্ভাবনা ছিল বলিয়াই, প্রতিদিন আমি
বেলগাছটিকে প্রদক্ষিণ করি । যদি ইহা ভুল
করিয়া চলিয়া যায়, কোন নব্য গৃহস্থের গৃহে,
আর ঐ গাছের সহিত পেত্নীও যদি, উচাটন
মনে, কোন কথা না বলিয়া যায়, যদি দুই চক্ষু
মেলিয়া আমাকে না দেখে সকালে, এই ভয়ে, আমি
কলহ করিতে গিয়া, বলি, পেত্নী, বেলগাছে থাক ।
প্রণয়রহিত জীবনে তুমিই বিসর্গ, তুমি চন্দ্রবিন্দু ।
একা হবার, একা থাকার, একা হতে পারার শক্তি, একদিন, সত্যিই, ছিল না আমার । নাকি ছিল ?
আজ আর সংশয় নেই, আমি একা হতে পেরেছি !
তুমিই আমাকে এটা শিখিয়েছ, মা, একা হতে গেলে, মানসিক শক্তি দরকার । আজ সে শক্তি, বোধহয়, অর্জন করতে পেরেছি !
সকল না-পারা নিয়ে আমার এই থাকা, যা আসলে, না-থাকা-ই ।
না-থাকারও কিছু দাবি আছে । তখনই, মনে হয়, দাবি ছাড়া পৃথিবীতে আর কিছু নেই !
ওয়েটিং হলে, বসে থেকে থেকে, যখন শুনলেন, ট্রেন ক্যানসেল হয়ে গেছে, আজ আর যাওয়া হল না, সেই মুহূর্তে, মনে পড়ে যাবে, এই ট্রেন মিস করা, মানে, কানেক্টিং ট্রেন মিস, চাকরিতে জয়েন করা হল না, বা, ইন্টারভিউটা মিস হল, মা-কে গিয়ে পাবো তো, নাকি তার আগেই...সেই উৎকণ্ঠিত মুহূর্ত এসে, এখন, চেপে ধরেছে আমার গলা, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে...
বুঝতে পারছি, আমার করণীয় আর কিছু নেই...চেয়ে থাকা ছাড়া ।
কারও সঙ্গে কথা বলার চাইতে নিজের সঙ্গে কথা বলার সুবিধে এই, যে, তাতে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকে না । অপরের সঙ্গে কথা বলতে গেলে দেনা-পাওনার হিসেব চলে আসে । কেন না, এই জগত স্বার্থের, ফলে, ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ থাকে বেশি, আবার ব্যবহার করারও । কাউকে ব্যবহার করা খুব খারাপ, অপরদিকে, ব্যবহৃত হওয়ার মত অপমানকর আর কিছু নেই।
কোনো সম্পর্ক যদি ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে রচিত হয়, বা অপরপক্ষ যদি ব্যবহৃতই হতে থাকে, সেই সম্পর্কও বেশিদিন টিকে না ।
একই নদীতে দুবার স্নান করা যায় না...
--গ্রীকবচন
সুখ কাকে বলে, জানি না । সংজ্ঞাহীন আমি । সুখের সন্ধানও করিনি । মানুষ যখন সুখ সুখ করে মরে, আমি তখন ভালোবাসার দরজায় । সে কি আর আমাকে গ্রহণ করে ?
তার অনেক বায়না, বায়নাদার নই, বলে, সে বায়নাও মেটাতে পারি না । আমি চাই, বায়না ছাড়া, শর্ত ছাড়া, দাবি ছাড়া সে আসুক আমার কাছে ।
যদি না আসে, কুছ পরোয়া নেই ! আমার বিষাদ আছে, আমার চিরসঙ্গী ।
সব রাস্তাই গেছে মৃত্যুর দিকে, আমার রাস্তাটি কেবল তোমার দিকে ।
সংখ্যার প্রশ্নে তুমি বিচলিত, এক এল কোথা থেকে ? কার সন্তান সে ? আর পিতামাতা কারা ?
বিন্দু সে, প্রধান । ঈশ্বর প্রতিম । সকল সন্দেহ তাকে ঘিরে । বরং দুই, সে গোবেচারা, তাকে নিয়ে প্রশ্ন নেই । সমস্ত যৌগিক সংখ্যার বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন নেই, সংশয় নেই !
তাহলে, মৌলিক মাত্রেই অগ্নিপরীক্ষা ? ক্রুশবিদ্ধ হতে হবে তাকে ?
একটি দুঃস্বপ্ন, সেই বালককাল থেকে, আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, আতঙ্ক ও ত্রাসে, ঘুম ভেঙে যেত আমার, থর থর করে কাঁপতাম, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেত ভয়ে ।
মনু নদীর পাড়ে থাকতাম, নদীই প্রেমিকা ছিল, বন্ধুহীন সেই সময়ে, নদীপাড়ের বটগাছটিই ছিল বন্ধু । অথচ, স্বপ্নে, সেই নদী, আমি হয়তো হাঁটছি, একা অথবা বসে আছি, নদীর পাড় ভেঙে পড়ে যাচ্ছি আমি, পড়ে যাচ্ছি, নদী ফুঁসে উঠেছে, ভয়ঙ্কর তার রূপ, পড়ে যাচ্ছি, শূন্যে থেকে আঁকড়ে ধরতে চাইছি বটগাছের ডাল, পারছি না, নাগাল পাচ্ছি না, নিচে জল, জলের ঢেউ, ফেনা...আমি পড়ে যাচ্ছি...
কাল, বহুদিন পর, এই স্বপ্নটি ফিরে এল...
কাল আমি ভয় পাইনি !
আত্মবিষ পান করে চলেছি নিয়ত ।
অপমানিত হতে হতে, হতে হতে, হতে হতে, ভুলে গেছি, আমার আদৌ কোনোদিন কোনো সম্মান ছিল কি না ! 
অভিমানও নেই ।
ফ্যাল ফ্যাল করে, তাকিয়ে থাকি শুধু, দেখি, সম্পর্কগুলি কাচের মত ভেঙে ভেঙে, ভেঙে ভেঙে পড়ছে...আর ঐ কাচের টুকরোয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে আমার হাত, আমার পা...
চরাচর ব্যাপী এক হিমঘূর্ণী, কুরুক্ষেত্র শুরু হবার দুদিন আগে, বয়ে যেতে দেখেছিলেন বিদুর । তিনি পুত্র যুধিষ্ঠিরের কল্যাণে, প্রার্থনা করছিলেন আকাশের দিকে তাকিয়ে, কিছুক্ষণ আগে এসেছিলেন পিতা বেদব্যাস, বলেছেন, রচনা ব্যর্থ হবার নয় ।
কি রচনা করেছেন পিতা ? অন্যদিন হলে, জিজ্ঞাসা হয়তো করতেন, এই সময় প্রশ্নের নয়, এই সময় সম্ভাব্য যুদ্ধের ফলাফল চিন্তার । লোভ ও লালসা, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা, ক্ষমতা লিপ্সা অন্ধ করে তুলেছে মানুষকে ।
ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ, তাছাড়া, রাজা কখনই চোখে দেখেন না, কানে দেখার নিয়তি নিয়েই শাসনকার্য চালাতে হয় । অন্ধের পক্ষে রিপু সংবরণ সম্ভব নয়, এটা তিনি জানেন ।
যুদ্ধ অনিবার্য, আর মনুষ্যকূল মেতে উঠছে আত্মধ্বংসযজ্ঞে, ভেবে, দুচোখ থেকে নেমে এল যমুনা ।
ডায়েরির পাতা থেকে
একটু পরেই বন্দনা আসবে, মানে, আমাদের কাজের মাসি । সে এলে, তবে, সকালের চা, ব্রেকফাস্ট, সব ।
ব্রেকফাস্ট করতে করতে, খবরের কাগজ দেখে নেবো । এখন খবরের কাগজ কেউ পড়ে না, দেখে নেয় ।
তবে টাইমস অব ইণ্ডিয়া মাঝে মাঝে পড়তে হয়, আনন্দবাজার হলে, তার দরকার পড়ে না । 
এই একটা কাগজ, খবর নয়, কেচ্ছা ছাপতেই আগ্রহী । জমজমাট কেচ্ছা ।
কেচ্ছা বলতে মনে পড়ে গেল, আমার এই জীবনটাও কেচ্ছার, যেখানে কোনো রামধনু নেই ।
বন্দনা এত দেরি করছে কেন ?
সপ্তম অন্ধ
অন্ধের হস্তীদর্শনের কথা আমরা জানি । হস্তীদর্শন করে এসে, ছয় অন্ধ, প্রত্যেকেই, বর্ণনা করেছিল তাদের অভিজ্ঞতার কথা । কেউ বলেছিল, হস্তী স্তম্ভ সদৃশ । দ্বিতীয়জন বাধা দিয়ে বলল, না, না, হাতি অনেকটা কুলোর মত । এভাবে, প্রত্যেকেই, বলে গেল তাদের কথা । কোনটিই পূর্ণ নয়, অথচ, অংশত, সকলেই সত্য বলেছিল । এই ছয় অন্ধের কাহিনী সকলেই জানে, যেটা কারও জানা নেই, তা হল, আর একজন অন্ধ ছিল তাদের সঙ্গে । সে, ফিরে এসে, বলেছিল, হস্তী সম্পর্কে তোমরা যা বলছ, বলে, বোঝাতে চাইছ, তা মূলত এক শূন্য । দু-হাত দিয়ে স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম আমি, হাতের মুঠোয় হাওয়া ব্যতীত আর কিছুর স্পর্শ পাইনি ।
এই সপ্তমজনের কথা বড় বেশি প্রাসঙ্গিক আজ । কেন না, এই সপ্তমই, দ্বাপরে ধৃতরাষ্ট্র, কলিতে জনগণেশের দোহক এবং রাজনীতির সফল বেপারী । সকল সর্বনাশের আদিপিতা । পার্থক্য এটুকুই, কারও ক্ষতি সাধনের ক্ষমতা ছিল না সপ্তম অন্ধটির, যা অন্যদের মধ্যে প্রবল ।
চিতার আগুনে নিজের মাংস ঝলসে নিয়ে, রুটি ও মদে বুঁদ হয়ে থাকার নাম 'বাঁচা' ?
আমাদের বড় দোষ, আমরা নিজেদের দিকে তাকাই না । গত কয়েক দশক ধরে, যাদুবাস্তবতা নিয়ে মেতে আছি আমরা, অথচ এই যাদুবাস্তবতা ঠাকুরমার ঝুলিতে কি খুব কম? দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদারের এই অসাধারণ রচনা কজনে পড়েছি? অথবা ডমরুচরিত ?
যাদুবাস্তবতার জন্ম, পশ্চিমে নয়, এই দেশেই। পঞ্চতন্ত্র, হিতোপদেশ, কথাসরিৎসাগর যাদুময় ।
আমরা আমাদের ছেলেমেযেদের এসব পড়তে দিই কি ?
সকলেই বলেছেন, নতুন নয় কথাটা, তবু আমার মত করে উচ্চারণ করি রোজ । জীবন সেই হল্ট স্টেশন যেখানে প্রতীক্ষা করতে হয় মৃত্যু এক্সপ্রেস-এর জন্য ।
গণপতিই কি বাঙালির পরিত্রাণকর্তা ? বিশেষত বাঙালি নারীর ?
ফেসবুকে যে হারে গণপতি বন্দনা শুরু হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে, গণপতি এক্সপ্রেস পশ্চিমবঙ্গে দ্রুত চালু করার দাবিও উঠতে পারে ! কলকাত্তা টু মুম্বাই...পরিত্রাণকর্তাকে আনতে হবে না !
মালাউনের মাইয়াদের ধর্ষণ করলে কি জন্নতে যাওয়া যায় ? কোরানে কি তাই বলা হয়েছে ?
আমার কোরানপাঠ নেই বললেই চলে, তাই জানতে চাইছি ?
অপর ধর্ম বা মতে বিশ্বাসীদের প্রতি কোরান এত অসহিষ্ণু ?
আশ্বিনে রান্ধে কার্তিকে খায়
যে বর মাঙ্গে সে বর পায়...বাৃঙালদের এই সংক্রান্তি-উৎসব পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে, আমাদের কাজের মাসী বন্দনার কথায়, ভাত পুজো ।
এখানে তা, ভাদ্রে রাঁধে আশ্বিনে খায়...
এই ভাত পুজো উপলক্ষ্যে বন্দনার দুদিনের ছুটি । তাদের তো আর বিশ্বকর্মা বা ঈদের ছুটি নেই ।
তাদের ছুটি ভাতপুজোয় ।
ভুল এক অসুখের নাম...
সকলেই চলে যায়, এই দিন আর রাত্রিও । এই সন্ধেটাও চলে যাবে । 
তারপর, একা, চেয়ে থাকব আকাশের দিকে, ঐ ব্রহ্মহৃদয়ের দিকে । আর একটু দূরে লুব্ধক । 
চেয়ে থাকব তারাদের দিকে । তারাদেরও মৃত্যু হয় । ছাই হয়ে ভাসতে থাকে এই মহাশূন্যে ।
আমি এই মহাশূন্যে বিলীন হব একদিন । ঘর করব লুব্ধকের পাশে ।
আমাকে যখন বকতে চাইবে, রাগে ও ঘৃণায়, আকাশের দিকে তাকিও না । আমি ছায়া হয়ে পানকৌড়ির পিছনে পিছনে ঘুরব বিলের জলে ।
কেউ আর আমাকে দেখবে না !