Wednesday, March 19, 2014

ইনবক্স মানে গোপন ইশতেহার, পুলিশ গোয়েন্দার চোখ এড়িয়ে এই ইশতেহার পাচার হয় নির্দিষ্ট ঠিকানায় ।
কাচের মতো সবকিছু একদিন ভেঙে যায় । রাজার রাজ্যপাট থেকে শুরু করে দলীয় উন্মাদনা, ধর্ম থেকে সংসার, খেলার প্রতিভা থেকে সম্পর্ক, সকলই ভেঙে পড়ে । অনিত্য এই জগত, কথাটির তাত্‍পর্য তার আগে ধরা পড়ে না তেমন ভাবে । তাহলে সত্য কি ? গম্ভীর দার্শনিকের মত এই প্রশ্নটি যখন ধাওয়া করে দিনরাত, দেখি, ঐ ভেঙে পড়াটাই আসলে সত্য ।
দিনভর চৌপর...এই দোলাটা বাংলা কবিতার জগতকে যতটা দুলিয়েছে, ক্ষতিও করেছে ততটা ।
আমাদের বড় গুণ হলো, দলাদলি, গোষ্ঠীবাজি আমরা ভালো পারি । দল থেকে উপদল, উপদল থেকে উপউপদল করতে করতে এতদূর এসেছি আমরা । আমাদের এই গুণ অন্যদের মধ্যে থাকলেও তারা অনেক পিছিয়ে ।
ঐটুকু খাদ, তাতে
রেখেছি আঙুল, শুরু
হোক যাদু, খুলে 
যাচ্ছে দরজা, লাভা
পড়ছে ছড়িয়ে তার
মুখে, হাঁ ক্রমশ বড়
হতে হতে, বাপ, দানো
ও দৈত্য, তারপর

নটে গাছ, একা...একা
মাথা মুড়োয়নি...আছে ।
এই নাও অস্থি ।
তাতে লেখা আছে
তোমারই নাম ।

এই নাও শিরা ।
কেটেছি তোমার
নামে । দেখো, লাল ।

হোলি খেলো আজ
আমারই রক্তে ।
নাও, এই কষ ।

ঠোঁট বেয়ে আসে
নেমে, পিছনে, ঐ
পিঁপড়ের সারি ।

এই দেহে আজ
চুম্বনের দাগ
রেখে গেছে মৃত্যু ।

পরকীয়া, বলি
কি করে, শঙ্খিনী,
বাজিয়েছে দেহ !

তোমাকে দেখার
আগে, অন্ধ এই
দুটি চোখ নাও ।

একবার, বলো,
জরা শেষে প্রাণ
যেন ওঠে জেগে

তোমার সবুজে ।
প্রীতি আচার্য মনস্থির করেছেন, এক কন্যা সন্তান পালন করবেন । দত্তক যদি একে বলা হয়, তবে এটা তাই । শর্ত এই, পালিিত যে হবে, সেই কন্যাটি আমার কন্যা হিসেবে পরিচিত হবে । অর্থাৎ সে হবে আমাদের একমাত্র কন্যা ।
সরকারি বিধি অনুসারে, আমার এই বয়সে,দত্তক নেওয়া অসম্ভব । ফলে, বিধিবহির্ভূতভাবে, সকলের কাছে প্রার্থনা করছি, এমন কোনো সন্ধান তাদের কাছে থাকলে, আমাদের যাতে জানান । কোনো দুঃস্থ পিতামাতা যদি, স্বেচ্ছায়, তাদের কন্যাসন্তান আমাদের দান করেন, তাহলে, প্রীতি আচার্যর মনোবাসনা পূর্ণ হতে পারে ।
মত্‍স্যপুরাণ থেকে উঠে এসে আলো নয় অন্ধকার নয় এ কেমন তোমার খেলা মুগ্ধ করো কড়াইচিত্র...
প্রত্যেকেরই স্বাধীনতা আছে তার লেজ নিয়ে খেলবে, না বসে থাকবে, এটা ঠিক করার ।
বসনহীন বসন্ত সেজেছে তার শিমূলপলাশে । দিগন্ত রাঙানো এই বসন্তকাল প্রেমিকজনের অতিপ্রিয়, অথচ আমার কাছে বড় বিরক্তিকর এক ঋতু । আমার প্রিয় বর্ষা । আমি তো আমূল ভিজতে চাই তার বারিধারায় । ময়ূরের মত ।
বসন্তের আমি কেউ নই । বর্ষারও নই আমি । গ্রীষ্ম বরাবর শত্রুতা করছে আমার । হেমন্ত ও শীত, কারও নই আমি । শরত, ঐ ফুলবাবুটিরও নই কোনোদিন । যদি ভাবো, আমি তাহার, আমি তাহারও নই । কাহারও যেমন আমি নই, কেউই আমার নয় । এই 'আমি'টাও আমার নয় । গ্রীষ্মরচিত সেই অনন্ত ফাঁদ জানে এই সত্য ।

Tuesday, March 11, 2014

আমার একটি কবিতা নিয়ে তিনি এঁকেছিলেন ছবি । সে অনেককাল আগের কথা । আগরতলা এসেছিলেন সেবার । আমাকে উপহার দিয়েছিলেন ঐ ছবিটি যা পরবর্তীকালে ত্রিপুরাদর্পণ পত্রিকায় ছাপা হয় । কবিতাপাগল তিনি, আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন অপার নৈঃশব্দের জগতে । তাঁকে, মানে শিল্পী প্রকাশ কর্মকারকে আজ প্রণাম জানাই ।
লোকটাকে দেখি রোজ । মিঠাই, মিঠাই, বলে হেঁকে যায় বাড়ির সামনে দিয়ে । পাড়া কাঁপানো সে সুর শুনে, কতদিন, ছুটে গেছি বারান্দায় । মলিন পোশাক, মাথায় হাড়ির পর হাড়ি, ভাঙা পুতুলের মত চেহারা তার । কোনোদিন দেখিনি, মিঠাই কিনে নিচ্ছে কেউ । তবু হেঁকে যায় সেই ফেরিওয়ালা, মিঠাই কিনবেন, মিঠাই । আশ্চর্য সেই হাঁক, আজ, লক্ষ্য করছি আমার সকল লেখায় রয়ে গেছে । আমি যেন সেই ফেরিওয়ালা, যে লিখে যায়, অথচ পড়ে না কেউ । শীতের কুয়াশা থেকে বসন্তের ধুলি, গ্রীষ্মের অসহ তাপ, বর্ষার শ্রাবণ আমার লেখাকে ক্রমে করে তুলেছে অপাঠযোগ্য এক আত্মবিস্মরণময় কীটখাদ্য ।
লিঙ্গপূজার মধ্য দিয়ে, এই উপমহাদেশে, বহু বহুযুগ আগে থেকে, শিকড় গেড়েছে পুরুষতন্ত্র যার মূলোত্‍পাটন কঠিনতম এক কাজ । কেন না, ধর্মীয় মোড়কে এর বাজারীকরণ করা হয়েছে নিপুণভাবে । কেউ লক্ষ্য করছি না, যে শিবলিঙ্গে কোটি কোটি মেয়ে বা মহিলারা আজ দুধ ঢালবেন, সেই লিঙ্গটিই প্রোথিত পার্বতীর যোনিমধ্যে । এই মৈথুনরত দৃশ্যটির অন্য যে মাত্রা আছে তা ইশারাবাহী । এবং তা বৈজ্ঞানিকও । পজিটিভ ও নিগেটিভ এর এই খেলার উপর টিকে আছে এই জগত যাকে বলা হয়েছে পুরুষ ও প্রকৃতির লীলা । লিঙ্গপূজা যদি করতেই হয়, তবে যোনিপূজাই বা হবে না কেন ?
যে আয়নাটি সামনে, তার হাজার টুকরোর মধ্যে আমার মুখ দেখছি আর ভাবছি, এক একটা টুকরোয় এক একজন আমি অথচ কত তফাত্‍ একজন থেকে আর একজনের ! হোরাচক্র থাক, নবাংশ থেকে দ্বাদশাংশ পর্যন্ত যেতে যেতে এই ভাঙা আয়নায় প্রতিফলিত লোকটির অস্তিত্ব আজ হয়ে উঠেছে এক পূর্ণ নাস্তি । এটাকে মাটির গুণ যদি বলি, তার সত্যতা নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়, কিন্তু তা কি সত্য ? খণ্ডিত আয়নার এক একটায় যাকে দেখছি, তার সত্যটা যতখানি, তার অসারতাও তত বেশি ।
হরির গোয়াল দেখি নাই । তবে মানিকের গোয়াল দেখি রোজ । দুইটা মাদি গরু তিনটা খাসি, আর একটা ভেড়া নিয়া এই গোয়ালঘর । দুধ আনবার জন্যে একদিন এই গোয়ালে গিয়া দেখি, সাধু আর চলতি মিশাইয়া বালতির জল ক্রমে ফেনাময় হয়ে উঠতাছে । খোদায় মালুম, কথাটা মিছা না । মানিকের গোয়ালের দুধের মত শাদা এইডা ।
আজ নারী দিবস । হায়, এর চাইতে অবমাননাকর আর কি থাকতে পারে নারীদের ? এখনও কি আমরা তাদের সর্বার্থে সমান ভাবে নিইনি আর্ধেক আকাশকে ? যদি নিয়ে থাকি, তাহলে এই কোটা সিস্টেম কেন ? এ যে পিছিয়ে পড়া বর্গকে লিয়ে হ্যায় ! নারী ও পুরুষ পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক, কেউ ছোটো বা বড় নয় । একথা মনে থাকে না কেন আমাদের ? নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখাতে পারলে, তাদের বিষয় না ভেবে, তারাও পুরুষের সমান এটা ভাবতে পারলেই, বোধহয়, আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান হবে ।
ধূসর পাতার কাছে এসে মৃত নদী ফিরে চায়
জীবনের মানে । এ কথা বলেছি, বলে, মহানিশীথের কাক
চাঁদের অন্তিম বক্ষ থেকে উড়ে গেলো
হাঁসুলি বাঁকের দিকে । সেই থেকে, প্রত্নজলস্তর
নেমে গেছে পিপাসার কাছে ।

কুয়োতলা থেকে, একা, ফিরে গেছে নারী খালি হাতে ।
আর পুরুষ হয়েছে জন্মপিপাসার্ত ।
ছিলো না তুরুপের তাস,
হাতের মুঠো খুলে দেখি,
শূন্য গ্লাসটির মতো
নীরব ঐ হাহাকার ।

সকল তাস পড়ে গেছে ।

দুপুর, জানে কাকে বলে
অন্ধ গীতিমুখরতা,
স্তব্ধ দিন পার হয়ে
ক্রমশ জেগে ওঠে শেষে ।
এ বছর, আজ, প্রথম, শুনলাম, কোকিল ডাকছে ! করুণতম সেই আর্তি শুনে, ভাবছি, রাবারের এই রাজ্য থেকে, একদিন, হারিয়ে যাবে কোকিলও !
সম্পর্ক আসলে বিনি সুতোর এক বাঁধন, যা মাঘনিশীথেও দিতে পারে ওম, প্রখর দহনে
দেয় ঝর্ণার শীতল স্পর্শ । দূর হয়ে ওঠে পরম কাছের । সঙ্গীত তখনই হয় অমরাবতীর, কবিতা প্রাণ জাগানিয়া ।