Saturday, October 10, 2015

সমগ্র জীবন দিয়ে, একটি বাক্য রচনার চেষ্টা করে যাচ্ছি...শব্দগুলি খুঁজে পাচ্ছি না, পেলেও তা মনোমতো হচ্ছে না...
আমার রাধাকে আমি দেখি নানা ভাবে,
কখনো ডুবুরী হই, কৃষক স্বভাবে
কখনো বা চাষ করি তাহার জমিন ।
সে আমার লেখা হয়ে জাগে রাত্রিদিন...
প্রতিটি অক্ষর, জানি, মূলত ঘাতক,
চকচকে ছুরিটি লুকানো,
কণ্ঠনালি কেটে তারা বেরিয়ে এসেছে ।
তুমি তার চিহ্ন ধরে রাখো,
প্রত্যেক বসন্তে পুজো করো আম পাতা সহ
ভুল ছন্দে, মাত্রা ভুলে গেঁথে রাখো তাকে
সুতোহীন স্রোতে...
তুমি গুপ্ত ঘাতকের কেউ নও, নাকি ভুল জানি ?
তোমার হাতেও তবে রয়ে গেছে পানিনির ছুরি ?
কুহকিনী কথা দেখলাম ।
এরাবেলের নাটক দেখেছিলাম প্রায় ৩৫ বছর আগে, মানিক চক্রবর্তীর নির্দেশনায় । মিতুল দত্তের এই নাটক দেখতে দেখতে, কেন জানি, মনে পড়ে গেল, এরাবেলের কথা । নাটক কবিতা নয়, কিন্তু কবিতা যে কখনও কখনও নাটক হয়ে ওঠে, মিতুল তা বুঝিয়ে দিলেন আমাদের । একটি দীর্ঘ কবিতাই তো কুহকিনী কথা ! তার ইশারা, ব্যঞ্জনা, শব্দে শব্দে গড়ে ওঠা ভাষা, তার কারুকার্য অনুভূতির শেকড় ধরে যখন টান মারে, তখন তাকে কবিতা না বলে উপায় থাকে না আমাদের ! 
মাইকেল মধুসূদন দত্তের বীরাঙ্গনা কাব্যে তবু নাটকীয়তা ছিল, শুভাশিস সিংহ, বাংলাদেশের তরুণ নাট্যকার ও নির্দেশক, সেই নাটকীয়তাকেই পূঁজি করে এক কাব্যকে মঞ্চস্থ করার সাহস দেখিয়েছিলেন, জ্যোতির অভিনয়, সে নাটকের প্রাণ, আর কুহকিনী কথায নাটকীয়তার দিকে একেবারেই ঝুঁকেননি মিতুল ।
এখানেই তার যাদুমযতার স্পর্শ দর্শকের অন্তর ছঁয়ে যায় । এরাবেলের নাটকে কোথাও যেন বাঘের থাবার মত লুকিয়ে থাকে এক দার্শনিকতা, মিতুল সেদিকেও যাননি । তার এক এবং অদ্বিতীয়ম অস্ত্রই হল কবিতা যাকে সঙ্গ দিয়েছে অসাধারণ কিছু গান !
বড় দুর্গম এক পথের যাত্রী কুহকিনী কথা, আমরা তার মুগ্ধ দর্শক !
ধমনীবাহিত তুমি, সুড়ঙ্গলালিত,
চেয়ে থাকে শাদা অ্যাপ্রনের চোখগুলি,
উত্থানরহিত ঐ মুহূর্তে,
পরকামী তুমি, শুয়ে আছো
কোন অপমানে ? সে কি জানে ? না কি সেও
দ্বিধাগ্লাসে পান করে দৃষ্টি ?
তোমার এ নিদ্রারূপ বিভ্রম এনেছে
তার মনে ? চৌষট্টি কলার দেশে তুমি
পরম ঈশ্বর, হায়, এখন পাথর,
অনুভূতিহীন, না কি অতিঅনুভূতিময় আজ ?
খুব শীত পড়েছে এখানে,
জানি না, তোমার ওখানে কেমন শীত !
শীত-গ্রীষ্ম পার হয়ে তুমি চলে গেছ
সেই কবে, পচানব্বই জুলাই । বড় অভিমানে !
অভিমান কি আমার নেই ?
দাঁত চেপে কিভাবে হজম করে, শিখে গেছি তাও,
কাউকে বলি না, আমার শরীর ক্রমে ছোট থেকে
ছোট হয়ে যাচ্ছে !
তারপর একদিন হয়ে যাব বিন্দু ।
শাদা কাগজের উপর এক ফুটকি !
একটা সকাল ক্রমশ সন্ধ্যার দিকে চলে যাবে...
সব রঙ মুছে দিয়ে রাত্রি তার রঙে
সাজাবে পৃথিবী...
সেখানে আমার প্রেম নবতর লোভে
আর একবার জেগে ওঠে,
যেন কোনো বুদবুদ, একা !