Friday, December 27, 2013

বেঁচে থাকার জন্য চাই টগবগে আগুন, সে চকমকি ঠুকেই হোক, কাঠ বা কয়লা জ্বালিয়েই হোক, হিটার জ্বালিয়েই হোক । তবে সেরা হচ্ছে ভালোবাসার আগুন ।

Friday, December 13, 2013

প্রথমে বন্দনা করি জয় অবরোধে ।
দ্বিতীয়ে বন্দনা করি পিচ্ছিল নিরোধে ।।
সমকাম সমপ্রেম গড়াগড়ি যায় ।
আমাদের সকলের রাজার ইচ্ছায় ।।
অবরোধে ভাঙচুরে স্বদেশ অচল ।
কাঁদে কন্যা কাঁদে পুত্র জিভে হলাহল ।।
কাঁদে প্রেম কাঁদে কাম সুপ্রীমের রায় ।
বেঁচে থাকি বড়ো কষ্টে দৈবের দয়ায় ।।
দৈবকে চিনি না আমি চিনেছি তোমাকে ।
তুমি রাষ্ট্র তুমি দয়া প্রণাম বোমাকে ।।
তোমার ইঙ্গিতে কাটা যায় অর্ধশিশ্ন ।
জিহ্বাহীন মুখে বলি, জয় জয় কৃষ্ণ ।।
এ কেমন লীলা প্রভু এ কেমন লীলা ।
প্রজাচর্মে তৈরি করো ধনুকের ছিলা ।।
সে ছিলায় শাস্তি দাও তোমার প্রজারে ।
নিরোধে ও অবরোধে আহা কি মজারে ।।

Wednesday, December 4, 2013

পুনরায় গর্তে ঢুকে গেলো আমার সর্পিনী, শীত এলো তবে ?
শীতের কি দোষ, এই তার জন্মখেলা ।

বসে থাকি, খোলস ছাড়িয়ে, জানি, আসবে বসন্তে...
পুনরায় গর্তে ঢুকে গেলো আমার সর্পিনী, শীত এলো তবে ?
শীতের কি দোষ, এই তার জন্মখেলা ।

বসে থাকি, খোলস ছাড়িয়ে, জানি, আসবে বসন্তে...
মালোদের দেশ থেকে বয়ে আসে নদী,
মালোদর তবু কেউ নয় ।

দু-হাত পেতেছে সেও, ফিরিয়ে দিয়েছে,
মালোদের নদী তবু একা জেগে রয় ।

Sunday, December 1, 2013

পুড়ে যায় স্বরবর্ণ, পুড়ে যায় লাল পেনসিল
রেটিনাও পুড়ে গেলো এই গৃহদাহে ।
দমকল আসে আর ফিরে যায়, ছাই ওড়া পথে...

হলুদ পতাক ওড়ে অবরুদ্ধ পঞ্চম সপ্তাহে ।

Thursday, November 28, 2013

খুচরো কিছু শব্দ চেয়ে হাত পেতেছি নারীর কাছে/ দেবার মত ভূতল ছিল, সমুদ্র ও টিলাভূমি/আমি তো চাই প্রেমের মত আফোট কিছু শব্দগুচ্ছ/যা দিয়ে আজ ধরবো আমি ছায়াপথের নীহারিকা/বুকের মাঝে উল্কাপাতের নতুন খেলা, জিভের ডগায় মনিপদ্ম/ ওঁকারের ঐ গোপন কথা চন্দ্র এবং বীজের মত/ ওঠুক ফুটে এসব শব্দে, শিকড় ছড়াক নোনাজলেও ।/ খুচরো কিছু শব্দ দেবে, ঘোরের ভেতর নাচের ভেতর ?/ সঙ্ঘ এবং সঙ্গমের ঐ উঠে আসা ধ্বনির মতো শব্দ দেবে ?

Tuesday, November 26, 2013


হেঁটেছি গলিপথে,
তোমাকে খুঁজে খুঁজে
হয়েছি হয়রান ।

থেকেছি ঘাড় গুঁজে ।
1.
শক্তি চট্টোপাধ্যায় সঙ্গে প্রথম দেখা শিলচরে । ৭৩ বা ৭৪ সাল । কাছাড় সাহিত্য সম্মেলনে তিনি অতিথি । আগের দিন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এসেছিলেন, চলে গেছেন পরদিন অর্থাত্‍ যেদিন শক্তি চট্টোপাধ্যায় এলেন । সার্কিট হাউসে এসে উঠলেন দুপুর বেলা । বন্ধু দেবাশিস তরফদার আর আমি দুজনে গেলাম দেখা করতে । মুড অফ তাঁর । তবু বললেন, আমার কবিতা পড়েছো ? কথাটা মাটিতে পড়েনি, দেবাশিস আর আমি কে বেশি শোনাতে পারি, তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলো । এই শক্তিদার ডাকে শিলচর থেকে পালাই কলকাতা বিনা টিকিটে । এবং তাঁর বণ্ডেল রোডের বাড়িতে গিয়ে ওঠি । সিঁড়ি বেয়ে দোতলার ঘরে উঁকি দিয়ে দেখি, মেঝেয় বসে ভাত খাচ্ছেন তিনি । দরজার দিকে পিঠ । শক্তিদা-- বলে, আমি আর কিছুই বলতে পারিনি, তিনি খ্যঁক খ্যঁক করে উঠলেন । নিচে, নিচে । নিচে গিয়ে বসো । মর্মাহত হয়ে, নিচে নামলাম । ছোটো এক কুঠুরি, প্রায়ান্ধকার । চুপচাপ বসে রইলাম । তিনমিনিটও যায়নি, তিনি নিচে এলেন নেমে । আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, তুমি ? কবে এলে ? তারপর আমার কথা শুনে বললেন, পালিয়ে এসেছো ? আমি জবাব দেবার আগেই তিনি উঠে গেলেন উপরে । দুমিনিট পরে নেমে এলেন । সঙ্গে মীনাক্ষীবউদি । হাতে চিনামাটির ডিশে করে গরম ভাত । পাশে বড় এক গলদা চিংড়ি । সেই প্রথম আমার গলদা চিংড়ি খাওয়া । আমার খাওয়া শেষ হয়নি, তার আগে একটা চিরকূটে কি যেন লিখলেন তিনি । তারপর বললেন, দশপনেরো দিন কলকাতা থাকবো না আমি । তোমার বউদিকে নিয়ে পাটনা যাচ্ছি । ততদিন স্বদেশ তোমার দায়িত্ব নেবে । এই নাও, চিঠিটা তাকে দেখালেই চলবে । আর এই কটি টাকা সঙ্গে রাখো । স্বদেশ ভারতী খুব ভালো লোক । হিন্দি ঔপন্যাসিক । আমি চুপ করে শুনে যাচ্ছি । একটা চারমিনার ধরিয়ে তিনি পুনরায় বললেন, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে ১৪ নম্বর বাস ধরবে । প্রতাপাদিত্য রোডে থাকে স্বদেশ । আমি এখুনি বেরিয়ে যাচ্ছি । এসে কথা বলবো । তিনি কথা রেখেছিলেন । যদিও স্বদেশ ভারতীর ঘরে থাকা হয়নি আমার, কেন না তার ১০ বাই ১০ ঘরে সেদিনই বিহার থেকে তাঁর বৌ, ছেলে, শ্বশুর শ্বাশুরী শ্যালিকা এসে পড়েছিলেন । শক্তিদার চিরকূট পড়ে, তিনি আশ্চর্য এক সুরে বললেন, শক্তিদা পাঠিয়েছেন, আমার ঘাড়ে দুটি মাথা নেই, যে তা অমান্য করবো । দেখছেন তো আমার অবস্থা । নিজে কোথায় থাকবো, তাও বুঝতে পারছি না । শেষপর্যন্ত দুপুএরর পরেই তিনি আমার থাকার জায়গা ঠিক করলেন কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের ঘরে । বললেন, শালা, তিনচারটে বেডরুম নিয়ে থাকেন একা । আপনি ওখানে আরাম করেই থাকবেন । সেদিন রবিবার । পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের ঘরে চলছে তরুণ কবিদের আড্ডা । সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় থেকে তুষার চৌধুরী অনেকেই ছিলেন সে আড্ডায় । আড্ডা শেষে সবাই চলে গেলো । পবিত্র মুখোপাধ্যায় বললেন, চলুন, খেয়ে আসি । নিচে তাঁর সঙ্গে নামলাম । তিনি আমাকে মোড়ের একটা পাইস হোটেল দেখিয়ে বললেন, এই নিন আড়াই টাকা । এতে মাছভাত পাওয়া যাবে । আপনি খেতে খেতেই চট করে আমিও খেয়ে আসছি শ্বশুর বাড়ি থেকে । আপনাকে সঙ্গে নিলাম না । ছমাস ধরে কলেজে স্ট্রাইক । বৌকে পাঠিয়ে দিয়েছি শ্বশুরবাড়ি । নিজেও তাদের ঘাড়ে চেপে আছি । আমি খেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতেই দেখি, তিনি দাঁড়িয়ে । হাসছেন । রয়্যাল লাঞ্চ কেমন হলো ? সন্ধ্যে অবধি গল্প হলো । গল্পের ফাঁকে 'ইউরেকা' বলে, চিত্‍কার করে উঠলেন তিনি । যোগ, যোগব্রত চক্রবর্তীর ওখানেই আরামসে থাকতে পারবেন আপনি । ব্যাটা একা থাকে মাকে নিয়ে । দি বেস্ট প্লেস । বলে, শক্তিদার ঐ চিরকূটের উলটে দিকে লিখলেন, হি ইজ ফ্রম আসাম । এণ্ড ইটস ইওর ডিউটি টু গিভ হিম শেলটার এজ ডিজায়ারড বাই আওয়ার গ্রেট পোয়েট শক্তি চট্টোপাধ্যায় । চিরকূটটি আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, শক্তিদা যোগর ঈশ্বর । আপনি নিশ্চিন্তে যান । হ্যাঁ, ঐ দশ পনেরোদিন আমি আশ্রয় পেয়েছিলাম কবি যোগব্রত চক্রবর্তীর বেহালার বাড়িতে ।

2.
যোগব্রত চক্রবর্তীর বেহালার বাড়ি খুঁজে পেতে খুব একটা অসুবিধে হলো না । সন্ধ্যে হয়ে গেছে অনেক আগেই, গলিতে ঢুকে, দেখি, মোড়ে জটলা করে গুলতানি মারছে কয়েকজন ছেলে । তাদের যোগব্রতদার কথা বলতেই, ছেলেগুলি সমস্বরে বলে ওঠে, কবি যোগব্রত চক্রবতী ? আসুন, দেখিয়ে দিচ্ছি । হৈ হৈ করে, আমাকে নিয়ে এগিয়ে চললো তারা । পথে জেনে নিলো, কোথা থেকে এসেছি আমি, কি করি ইত্যাদি । একটা দোতলা বাড়ির সামনে এসে একসঙ্গে ছেলেগুলি বলে উঠলো, যোগদা, দেখো, আসাম থেকে এসেছেন ইনি । শক্তি চট্টোপাধ্যায় পাঠিয়েছেন তোমার কাছে । যাকে বলা হলো, তিনি, ঐ দোতলাবাড়ির রকে, চিত হয়ে শুয়ে আছেন, খালি গায়ে । এক ছেলে ফিসফিস করে আমাকে বললো, আজ মাত্রাটা বেশি হয়ে গেছে বোধহয় । কিছু মনে করবেন না, কবিরা এক আধটু খায় । তারা তো আমাদের মতো সাধারণ লোক না । তবে যোগদা ফাইন মানুষ । কোনো কিচাইনে নেই । এগিয়ে গিয়ে আমি হাতজোড় করে নমস্কার করলাম । তিনি, ঐ অবস্থাতেই, বললেন, ইয়ু আর ফ্রম আসাম ? শক্তিদা সেন্ট ইয়ু ? পরিস্কার শ্রীহট্টীয় উচ্চারণে বললাম, হ্যাঁ, শিলচর থেকে এসেছি, আমার নাম সমরজিত্‍ সিংহ । তড়াক করে উঠে দাঁড়ালেন তিনি, দাঁড়াতে অসুবিধে হচ্ছিলো, একটা ছেলে তাকে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলো । আপনি বাংলা জানেন ? আসুন, আসুন । আমার ঈশ্বর আপনাকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন, এ আমার পরম সৌভাগ্য । আমি চিরকূটটি এগিয়ে দিলাম তার দিকে । উলটে পালটে দেখলেন কিছুক্ষণ, তারপর বললেন, পবিত্রও রয়েছে দেখছি । আসুন ভেতরে । ছেলেগুলিকে ধন্যবাদ জানিয়ে, যোগব্রত চক্রবর্তীর পেছনে পেছনে ভেতরে গেলাম । তিনি তখন শিশুর মতো । মা, দেখো, শক্তিদা কাকে পাঠিয়েছে ! আসামের কবি । আমাদের এখানে থাকবে । আজ ভালো কিছু রেঁধে খাওয়ায় । আমি তাকে তার ঘর দেখাচ্ছি । তিনি এবার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলেন আমাকে নিয়ে । একটা ঘরের দরজা খুলে লাইট জ্বালালেন, ঘর দেখিয়ে, বললেন, এ ঘরে থাকতে অসুবিধে হবে না তো ? আমি মাথা নাড়লাম । বিশাল এক হলঘর । আমার গাঁয়ের বাড়ি মনে পড়ে গেলো । দোচালা ছনের ছোট্ট এক ঘর । বৃষ্টি এলে জল ভেতরেই পড়ে, বিছানাকে বাঁচাতে মা আর আমার তখন কি তত্‍পরতা ! ঐ ঘরের তুলনায়, এ তো রাজপ্রাসাদের খাসমহল । আসলে এটা লাইব্রেরীঘর । একপাশে মেঝেয় জাজিম পাতা । সেটা দেখিয়ে বললেন, বিছানা করে দিচ্ছি, ততক্ষণে আপনি হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন । তখনই আমার খেয়াল হলো, শিলচর থেকে পালিয়েছি আমি একবস্ত্রে । ভিখারির মতো ।
বারোদিনের মাথায় যোগদা জানালেন, কলকাতা ফিরে এসেছেন শক্তিদা । এ কয়দিন যোগদা আমাকে রেখেছিলেন আকবরের সন্তান সেলিমের মর্যাদায় । প্রথমরাতে, তিনি, খুব বিনীতভাবে, জানতে চাইলেন, 'মদ চলে ?' মাথা নাড়লাম, 'না ।' 'সিগেরেট ?' কোনো জবাব দিতে পারলাম না । কি জবাব দেবো ? বয়সে তিনি কত বড়, তার কবিতা শিলচরে বসেই পড়েছি অনেক । ষাটের দশকের তখনও যারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, যোগব্রতদা তাদের একজন । 'ও, বুঝেছি । আপনি বিশ্রাম করুন । মা রান্না সারতে সারতে গলায় আরও দু ঢোক ঢেলে আসি । বুঝতেই পারছেন, গলায় না ঢালা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই ।' তিনি চলে গেলেন । ঘরে বইয়ের রেক প্রচুর । ছোটোখাটো একটা লাইব্রেরী । একটা তাক থেকে বুদ্ধদেব বসুর 'তপস্বী ও তরঙ্গিনী' নিয়ে জাজিমে শুয়ে পড়লাম । এ বইটা তখনও পাঠ হয়নি আমার । পাতা খুলেছি, তখনই, তিনি এসে উপস্থিত । 'এই নিন ।' তাকিয়ে দেখি, চারমিনার । পাঁচ প্যাকেট । সঙ্গে একটা দেশলাই । 'শেষ হলে, বলবেন । এশট্রে নেই । ইচ্ছে করলে, পুরো ঘরটাকেই ইউজ করতে পারেন এশট্রে হিসেবে ।' এক ঘণ্টাও হয়নি, এক আত্মপরিচয়হীন তরুণকে কত আপন করে নিয়েছেন তিনি, ভেবে, অবাক হই । না কি, এ শুধুই শক্তিদার প্রতি অন্ধ টান থেকে ? তবুও ভেতরের মানুষটা যে, সত্যি, অন্যরকম, তা অনুভব করতে পারি । কলকাতা ফিরে এসেছেন শক্তিদা, এ খবর জানাতে গিয়ে, তার গলার স্বর কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলো । 'কাল শক্তিদা নিজে আসবেন এখানে । আপনাকে নিয়ে যেতে ।' অনিশ্চয়তার হাত ধরে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলাম, ননভেলেবল ওয়ারেণ্ট এড়াতে । কলেজে পড়ি । ফার্স্ট ইয়ার । কমিউনিস্ট পার্টি করতে গিয়ে জেল খাটতে হলো । জেল থেকে বেরিয়ে, আর এক বিচ্ছিরি গণ্ডগোলে ফেঁসে গিয়ে, ডেকে আনি এই বিপদ । আমার নামে বেরিয়ে গেলো ওয়ারেণ্ট । তাও ননভেলেবল । কবি হিমাদ্রি দেব ও আমার সহপাঠী নূপুরের প্ররোচনায়, দশদিন আত্মগোপন করে থাকার পর, শিলচরে পালিয়ে যাই । আমার মা তখন হাত ভেঙে বিছানায় পড়ে আছেন । ঘরেও যেতে পারিনি মাকে দেখতে । এই অবস্থায় পালাতে হলো শিলচরে, যে শহর আমার অচেনা, যে শহরের কাউকে চিনি না আমি । এক অনিশ্চয়তা থেকে এসেছি আর এক অনিশ্চয়তায়, শুধু কবিতার জন্য । কাল আবার পাড়ি দেবো আর এক অনিশ্চয়তায় !

3.
ট্যাক্সিতে করে, যেখানে আমাকে নিয়ে এলেন শক্তিদা, সে জায়গাটাকে বলা হতো সাহেবপাড়া । অর্থাত্‍ ১৬ নম্বর থিয়েটার রোড । এখন সেখানে বিকে মার্কেট । আগে এখানে ছিলো অরূপ গুহঠাকুরতার রেকর্ডিংয়ের অফিস । রুমা গুহঠাকুরতাকে কে না চেনে ? ঐ বিশাল বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে ডানদিকে ডাঃ কালীকৃষ্ণ গুহর চেম্বার । মূলত প্যাথোলজি হাউস । অনেকগুলি ঘর । তার একটাতে আমাকে নিয়ে ঢুকলেন শক্তিদা । 'এই যে, কালীদা, ছোকরাটাকে নিয়ে এলাম । এবার একে মানুষ করার দায়িত্ব আপনার ।' বলে সামনের একটা চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়লেন শক্তিদা । দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছি আমি । সামনে বিশালদেহী এক বয়স্ক ভদ্রলোক । দেখতে অনেকটা হিন্দি সিনেমার জগগুর মতো । মিলিটারি ছাটের চুল, মুখে চুরুট । আমার দিকে তাকালেন তিনি । 'কবিতা লেখো ?' বাজখাই গলা কাকে বলে সেই প্রথম জানলাম । হঠাত মেঘগর্জন হলে যেভাবে চমকে ওঠে লোক, সেভাবেই চমকে উঠলাম আমি । বলা ভালো, আঁতকে উঠলাম । কোনোরকমে ঢোক গিলে, মাথা নাড়লাম । হ্যাঁ । 'শোনাও একটা ।' বুঝলাম, রীতিমতো আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তিনি । অর্থাত্‍ এই ইন্টারভিউতে পাশ করতেই হবে আমাকে । শক্তিদা এবার আমার মুখের দিকে তাকালেন । মনে করতে লাগলাম, সাম্প্রতিককালে কোন কবিতাটি আমার লোকে ভালো বলেছে । তখনই, মনে পড়ে গেলো রূপসীবাড়ির কথা । তোমাদের লালবাড়ির কথা । আমি শোনালাম তার একটা । তিনি চুপ করে রইলেন, দুমিনিট । তারপর বললেন, 'বাংলা সাহিত্যে অবজেকটিভ কবিতার ছড়াছড়ি । তুমি সাবজেকটিভ কবিতা লিখবে ।' তারপর, 'শক্তিদার দিকে ফিরে, বললেন, হাতটা বেশ । ছন্দটা, আরও তুখোড় হতে হবে । ও কে । ওর দায়িত্ব আমার ।' কিছুই বুঝতে পারছি না আমি । আমার কি দায়িত্ব নেবেন তিনি ? শক্তিদার উদ্দেশ্য আসলে কি ? কবিতা লিখতে এসেছি কলকাতা, যে কলকাতার মাত্র দুজনকে আগে থেকে চিনি । একজন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, অপরজন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবতী । আর তো কাউকে চিনি না । প্রথমদিন, শিয়ালদা স্টেশনে এসে যখন নামলাম, মানুষের ভীড় দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । উফ । এখানে যদি আমি হারিয়ে যাই, তাহলে আমার কি হবে ? ভয়ে ভয়ে, প্ল্যাটফর্ম থেকে বাইরে এসে যখন দাঁড়ালাম, আমাদের কৈলাসহরের রথের মেলার ভীড়ের চাইতেও হাজার গুণ বেশি লোক এখানে । এত লোক কোথায় থাকে ? কোথা থেকে আসে ? রাস্তায় এসে অবাক হয়ে গেলাম, মাথায় বামুনের টিকির মতো টিকি লাগানো গাড়ি যাচ্ছে টিং টিং করতে করতে । সবাই দৌঁড়তে দৌঁড়তে উঠছে । অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখার পর মনে হলো, এ তো খুব সহজ, আমিও পারবো । উঠতে গেলাম, দরজার ঐ হাতলটা ধরতে গেলাম, পারলাম না, চলে গেল গাড়িটা । আর আমি পড়ে গেলাম হুমড়ি খেয়ে । হৈ হৈ করে ছুটে এলো লোকজন । লেগেছে ? কোথায় লাগলো ? দেখে চাপবেন তো ? ট্রামও ইদানিং প্রাইভেট বাসের মতো হয়ে গেছে । বাংলার উন্নতির তো এই হাল । কতকথা, কত লোক । একজন হাত বাড়িয়ে তুলে ধরলেন আমাকে । 'লাগেনি তো ? কোথা থেকে এসেছেন আপনি ? কলকাতায় এই প্রথম ?' পরিস্কার শ্রীহট্টীয় ভাষায় তার উত্তর দিলাম । এই উচ্চারণ শুনে সব লোক উধাও হয়ে গেলো মুহূর্তে । এইই কলকাতা, এখানেই থাকতে এসেছি, এই অচেনার ভীড়ে । ডাঃ কালীকৃষ্ণ আমার দায়িত্ব নেবেন এখন থেকে । তারপর ? তিনি আমাকে বললেন, 'এখানে তিনচারটে ঘর আছে । একটাতে তুমি থাকবে । আরও দুজন কর্মী আছে ।' তিনি থামলেন । তারপর পুনরায় বললেন, 'বিনে পয়সায় তোমাকে থাকতে দেবো না এখানে । আমার ছেলেকে, রোজ সকালে, কামারহাটি গিয়ে, পড়াতে হবে তোমাকে । সেখানেই লাঞ্চ করবে । দুপুর যেভাবে খুশি কাটাতে পারো, বিকেল চারটেয় আবার কামারহাটি যাবে । ছেলেকে পড়িয়ে, ছেলের মাকে নিয়ে, চলে আসবে এখানে । রাতের খাবার রুটি তরকারি এখানেই হবে । পারবে তো ?' কিছু বলতে যাবো, তার আগেই শক্তিদা বলে উঠলেন, 'পারবে না মানে ? আলবত্‍ পারবে ।'
4.
সারাদিন মনমরা । শক্তি চলে যাবার পর, ডাঃ কালীকৃষ্ণও বেরিয়ে গেলেন কোথায় যেন । যাবার আগে বললেন, 'তোমার রুটিন শুরু হবে কাল থেকে । আমার গাড়ি এসে প্রথম দিন নিয়ে যাবে তোমাকে । এরপর থেকে বাসে করেই যাবে আর আসবে ।' বলার মতো কিছু ছিলো না আমার । ছাত্র পড়ানোর শুরু সেই ছোটোবেলা থেকে । কলেজেকালে প্রচুর ছাত্র পড়াতে হতো গ্রাসাচ্ছদনের জন্য । জীবিকা হিসেবে বিরক্তিকর । এই প্যাথোলজি হাউসের ছেলগুলি, বয়সে আমার ছোটো, এসে কথা বললো অনেকক্ষণ । মেদিনীপুর থেকে এসেছে । বুঝলাম, এদের সঙ্গে বেশিক্ষণ আলাপ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব । অথচ থাকতে হবেই এদের সঙ্গে । একটা ঘরে নয়, এটাই বাঁচোয়া । ভালো লাগছিলো না কিছুই । মনে হলো, কলকাতা এসে ভুল করেছি । তার চেয়ে অনেক ভালো ছিলো শিলচর । মহিমালয় ছিলো, প্রান্তঃজ্যোতির রবিবারের পাতা সম্পাদনা করতাম মনের মতো করে, গতি পত্রিকার সাপ্তাহিক কলমের বিনিময়ে দুপুরে সম্পাদকের সঙ্গে লাঞ্চ করতাম ভালোমন্দ । ছিলো শতক্রতু ও মিথিলেশ, শেখর ও তপোধীর । দিদিভাইয়ের কথা তো স্পেশাল । নিজ হাতে কাঁটা বেছে মাছ খাওয়া আমাকে শিখিয়েছে দিদিভাই । কবিতা নিয়ে হৈচৈ, প্রেমতলার ট্রাফিক পয়েন্টে রাত বারোটায় তপোধীরের গলায় অমানুষ সিনেমার গান । কোনোটাই নেই এখানে । কবিতা কি লিখতে পারবো আর কোনোদিন ? কবিতার কথা মনে পড়তেই, দুচোখ বেয়ে নেমে এল অশ্রুধারা । আমার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা এই কবিতা, তার কাছ থেকে দূরে যদি সরে যেতেই হয়, তাহলে বেঁচে থেকে কি লাভ ? সন্ধ্যের একটু আগে গেটের বাইরে এলাম রাস্তায় । উলটোদিকে নাগাল্যাণ্ড ভবন, তার বাঁদিকে ব্রিটিশ লাইব্রেরী । একটু এগিয়ে গিয়ে, রাস্তার এপার থেকে দেখতে লাগলাম লাইব্রেরী । আমাকে কি ঢুকতে দেবে সেখানে ? যেতে পারবো কোনোদিন ঐ লাইব্রেরীতে ? লাইব্রেরী আমার প্রিয়, আমার মনের খোরাক সেখানেই, বই পড়তে পারলে আমার আর কিছু দরকার পড়ে না । যোগব্রতদার ঘরে বই পড়েই সময় কাটিয়ে দিয়েছি সুন্দর । কলেজের লাইব্রেরী ছোটো ছিলো, ফলে সবকটি বই পাঠ করতে সময় লাগেনি বেশি । মনে মনে বললাম, একদিন ঠিক যাবো এই লাইব্রেরিতে । রাত একটু বাড়তেই সাহেবপাড়ার চেহারা পালটে যেতে লাগলো আমাকে অবাক করে দিয়ে । অরবিন্দভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে ফিরলাম ১৬ নম্বর থিয়েটার রোডে । ঘরে ঢুকতে যাবো, তিন চারটে গাড়ি এসে থামলো কালীদার চেম্বারের সামনে । সাত-আটজন লোক সেসব গাড়ি থেকে নামলেন, সঙ্গে, মনে হলো, তাদের বউরা । সবার পেছনে নামলেন যোগব্রতদা ও শক্তিদা । সবাই ড়ুকলেন কালীদার চেম্বারে । আমাকে দেখে, কাছে ডাকলেন শক্তিদা । তারপর, পাশের একজনকে, আমাকে দেখিয়ে, বললেন, 'সুনীল, এই হলো সমরজিত্‍ । কবিতা লিখবে, বলে, বাড়ি পালিয়ে এসেছে ।' আমি হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে রইলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখে, প্রণাম থাক, হাত জোড় করে নমস্কার করতে পর্যন্ত ভুলে গেছি তখন ।
5.
ক্রমে লোকজন আরও এলেন । ডাঃ কালীকৃষ্ণ চ্যাটার্জীর দেখা নেই তখনও । প্যাথোলজি হাউসের ছেলেগুলি তড়িত্‍ গতিতে জলের বোতল, গ্লাস, বরফ ইত্যাদি রেখে দিলো টেবিলে । কেউ একজন বের করলেন অনেকগুলি বোতল । ভাঙা হলো সেগুলি আবার প্রত্যেকের গ্লাসে গ্লাসে ঢালা হলো মুহূতে । আমাকে ডেকে নিয়ে একটা গ্লাস এগিয়ে দিয়ে, শক্তিদা বললেন, 'নে, খা ।' আমি বিব্রত আর থরথর করে কাঁপছি । আমি যে সংস্কারের ভেতর দিয়ে বড় হয়েছি, সেখানে বড়দের সামনে নেশাভাং করার রীতি নেই । তবুও রীতিভাঙায় আমার জুড়ি ছিলো না সেখানে । প্রথম যেদিন সিগারেট খেতে শিখি বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে, তখন সবে মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি, এক প্যাকেট ক্যাপস্টেন কিনে ঘরে যাই । বাবার ঘরের সামনে গিয়ে, একটা সিগারেট ধরিয়ে বাবাকে ডাকি, 'বাবা...' তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এলে বলে ওঠি, 'আজ থেকে সিগারেট ধরলাম । এখন আমি এডাল্ট । এই দেখো ।' বলে, ধোঁয়া ছাড়লাম সিগারেটের । তিনি, 'শুয়োরের বাচ্চা একটা' বলে, মুখের উপর দরজা দিলেন বন্ধ করে । হা হা হা করে হেসে উঠলাম আমি । বললাম, 'শুয়োরটা তো আপনি নিজেই । একটা খাঁটি রামশুয়োর ।' মা দৌঁড়ে এলেন আমাদের ঘর থেকে, আমাকে দেখে, আঁতকে উঠলেন, 'সিগারেট ধরেছো ? তা টাকা যোগাবে কে ?' আমার হাসি কি আর থামে ? কাকা ধারে কাছে কোথাও ছিলেন, এগিয়ে এসে, আমার মুখে সিগারেট দেখে বলে উঠলেন, 'আর আছে ? আমাকে একটা দে ।' রীতি ভাঙতে ভাঙতে এলেও, এখানে থর থর করে কাঁপছি । এঁরা আমার স্বপ্নের জগতের মানুষ । কতদিন, কত কত রাত 'আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি, তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ' আউড়ে গেছি একা একা । সেই প্রিয় কবি, শক্তিদা, ততক্ষণে জেনে গেছি, আয়ান রশীদ খান, বরুণ চক্রবর্তীরা আছেন এখানে, তাদের সামনে রীতি ভাঙার সাহস দেখাবার মুরোদ নেই আমার । যোগব্রতদা ত্রাণকর্তা, তিনি পাশ থেকে বলে উঠলেন, 'সমরজিত্‍ মদ খায় না, শক্তিদা ।' হো হো করে হেসে উঠলেন শক্তিদা, বললেন, 'ব্যাটা, মদ না খেলে কবিতা লিখবে কি করে ? অ্য: !'

6.
কামারহাটি, ভেবেছিলাম, ধারে কাছে কোথাও হবে, বেহালা বা টালিগঞ্জের মত, চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ মিনিটের পথ । হা হতোস্মি ! এ যে ব্যারাকপুরের প্রায় কাছে । অন্তত প্রথমদিন তাই মনে হলো আমার । শ্যামবাজার থেকে টালাপার্ক হয়ে চিড়িয়া মোড়, সিঁথির মোড়, ডানলপ, রথতলা, গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে বি টি রোড ধরে । বি টি রোড বলতেই মনে পড়ে গেলো, ক্লাস ইলেভেনে থাকতেই সমরেশ বসুর উপন্যাস বি টি রোডের ধারে পড়ে ফেলেছি স্কুলের পড়া ফাঁকি দিয়ে । তখন গোগ্রাসে পড়ছি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী । তাদের চোখ দিয়ে আবিষ্কার করছি আমার কলকাতাকে । নায়কের প্রবেশ ও প্রস্থান পড়ে রীতিমতো ভক্ত হয়ে গেলাম মতি নন্দীর । কলকাতার গলির এমন জীবন্ত বর্ণনা, মধ্যবিত্তদের টানাপোড়েন, পড়তে পড়তে, অনুভব করতে শুরু করি তখন থেকেই । বি টি রোডের ধারে আমাকে চমকে দিয়েছিলো এখানকার জীবনযাপনের চিত্র দেখে । সেই বি টি রোড ধরে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা । শেষপর্যন্ত পানিহাটির মোড়ে এসে গাড়ি বাঁক নিল বাঁদিকে । প্রায় এক দেড় কিলোমিটার এগিয়ে গিয়ে গাড়ি থামলো একটা বাড়ির সামনে । বাড়িটি কলকাতার মত নয় । শহরতলী তথন শহরতলীই । দালান ঘর । ডানদিকের একটা ঘরে আমাকে নিয়ে গেলেন ভেতরের এক ঘরে । আভিজাত্যের ছাপ আছে, অথচ কোথাও যেন মনে হলো, তা বড় ম্রিয়মান । এক ছোটোখাটো মিষ্টি চেহারর এক মহিলে এলেন ঐ ঘরে । পেছনে একটি ছয়সাত বছলের ছেলে । বুঝতে অসুবিধে হলো না, যে, এই ছেলেটিই আমার ছাত্র । একে দেখে, শিবরাম চক্রবর্তীর মন্টুর মাস্টারকে মনে পড়ে গেলো আমার ।

7.কামারহাটি থেকে থিয়েটার রোড ক্রমে হয়ে ওঠে পরিচিত । আমার ছাত্রটি বেশ তুখোড়, ফলে খাটনি ছিলো কম । অনেকদিন পড়া ফাঁকি দিয়ে আমরা চলে যেতাম গঙ্গার ঘাটের দিকে । ওকে শোনাতে হতো নানা গল্প । এত স্টক কি আমার আছে ? ফলে বানাতে হতো গল্প যার কোনো মাথামুণ্ডু নেই । অনেক সময় বিরক্ত হতাম । কেন না, গল্পের দুটি বাক্য শেষ হবার আগেই ছাত্রটি বলে উঠতো, তারপর ? এই তারপর কথাটির তাড়া ব্যতিব্যস্ত করে রাখতো আমাকে । শেষপর্যন্ত এক উপায় বের করলাম । তাও ছোটোবেলায় আমার কাকার গল্প বলার এক কৌশল । আমি ছেলেটিকে বলতাম এক ব্যাধ এর কাহিনী । ব্যাধ একবার এক জাল পেতে অসংখ্য পাখি ধরে ফেলে । অসহায় পাখিগুলি জালের ভেতর ছটফট করতে করতে হাল ছেড়ে দিলো হতাশ হয়ে । তখনই একটা পাখি লক্ষ্য করলো, জালে একটা ছিদ্র । পাখিটি ছিদ্র দিয়ে তার ঠোঁট ঢুকিয়ে দেখলো, বেরুতে পারছে কিনা । দু একবার চেষ্টা করতেই ফুড়ুত্‍ করে বেরিয়ে গেলো জাল থেকে । আমার ছাত্রটি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, তারপর ? হাসলাম । তার মাথার চুল ঘেঁটে দিয়ে বললাম, আর একটা পাখিও আগের পাখিটির অনুসরণ করে সেই ছিদ্রটি দিয়ে ফুড়ুত্‍ । তারপর ? এবার তৃতীয় পাখিটিও ফুড়ুত্‍ । তারপর ? ছাত্রের কণ্ঠে উত্‍কণ্ঠার ছাপ । ফুড়ুত্‍ । এভাবে ক্রমে কাহিনীর শব্দ সংখ্যা গেলো কমে । গল্প শুধু নয়, অংক পড়াতে গেলেও অনেক কথা বলতে হতো তার সঙ্গে । একদিন, একটা গুণ অংক নিয়ে ঝামেলায় পড়ে গেলো । তাকে বললাম, পৃথিবীতে যোগবিয়োগ ব্যতীত আর কোনো বিশুদ্ধ অংক নেই । এই যে গুণ দেখছো, আসলে এটা একটা যোগ মাত্র । ৩ x ৫ = ১৫ আসলে ৩ + ৩ + ৩ + ৩ + ৩ = ১৫ অর্থাত্‍ পাঁচটা তিনের সমাহার এটা । অংক এভাবেই শিখেছি ছোটবেলায় আমার শিক্ষক সুহাস মিশ্র স্যরের কাছে থেকে । অংক আমার কাছে একটা খেলামাত্র । সেই আমি অংক নিয়ে পড়তে পারিনি, বলে, আফশোস করি সবসময় । অংক যে খেলামাত্র, জেনে যাবার পর, অংকে তত্‍পর হয়ে ওঠে আমার ছাত্রটি । এতে আমার পরিশ্রম বেঁচে যায় অনেকখানি । গৃহশিক্ষকতা আমার কাছে নতুন নয়, ফলে, তেমন অসুবিধে হলো না এক্ষেত্রেও । সন্ধ্যেবেলা তাড়াতাড়ি পড়িয়ে চলে আসতাম থিয়েটার রোড । একদিন, কামারহাটি থেকে ফিরে এসে দেখি, বাইরে, একটা খাটিয়ায় চিত হয়ে শুয়ে আছে রাজপুত্রের মত এক যুবক । আমারই বয়সী । ভেতরে ঢুকতেই, যোগব্রতদা বললেন, আপনার দেশের ছেলে । দীপংকর । দীপংকর সাহা ।

8.
দীপংকর আগরতলার ছেলে । বাবা ইউবিআই এর এজেন্ট, এখন তাদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার বলা হয় । মিলিত কান্নাকাটি বলে ওর কবিতার একটি পুস্তিকা ইতিমধ্যে বেরিয়েছে । হাংরি কবি প্রদীপ চৌধুরীদের সংস্পর্শে এসে রীতিমতো হাংরি কবি সে । কলকাতায় শিল্পী অসিত পাল এর চলমান শিল্প আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত । চলমান শিল্প আন্দোলন তখন কলকাতার অন্যতম আলোচিত বিষয় । কলকাতার সকল দেয়াল ছবি আর কবিতায় ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, খবরের কাগজও মাতামাতি করছে এনিয়ে । কবি সমরেন্দ্র দাস থেকে শুরু করে তরুণ শিল্পী পার্থপ্রতিম গঙ্গোপাধ্যায়, তপশ্রী সেন, সুতনুকা বাগচি, কে নেই এই আন্দোলনে ? ১৬ নম্বর থিয়েটার রোডের এই নৈশঠিকানায় কি করে সে এলো, সেই রহস্য প্রকাশিত নয় আজও । এসেছে একেবারে বেহুঁশ অবস্থায় । যখন হুঁশ ফিরলো, বললাম, 'আমি সমরজিত্‍, ত্রিপুরার ।' নেশাচ্ছন্ন চোখে তাকালো আমার দিকে. তারপর হাত বাড়িয়ে বললো, 'দীপংকর, হার্ডিঞ্জে থাকি । তোমার কথা শুনেছি ।' সে রাত থেকে দুজনে বন্ধু হয়ে যাই । তার হার্ডিঞ্জ হোস্টেলে বহুবার গেছি, সেও এসেছে আমার কাছে । তার সঙ্গে অসিত পালদের চলমান শিল্পের শনিরবির আড্ডায় গেছি অনেকবার । পরের দিকে নিয়মিত যেতাম এস্প্ল্যানেডের গম্বুজের নিচের আড্ডায় । সে আর এক গল্প । থিয়েটার রোডের এই নৈশ আড্ডায়, একদিন, আমার কাঁধে চাপানো হলো ভয়ংকর এক দায়িত্ব । রোজ রাতে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে শক্তিদাকে । তার আগে, শক্তিদার চশমা এবং ঘড়ি খুলে পকেটে রেখে দিতাম । সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বলে দিলেন, 'শোনো, রোজ ঘড়ি ও চশমা হারাবার বিশ্বরেকর্ড তোমার শক্তিদা ব্যতীত আর ইহসংসারে কারও নেই । এটা ভুলে যেও না ।' পাশ থেকে শমিত ভঞ্জ, চলচিত্র নায়ক, ফোড়ন কাটলেন, 'আপনার বিশ্বরেকর্ডের কথাটিও বলে দিন ।' হো হো করে হেসে উঠলেন সবাই । ডাঃ কালীকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় বললেন, 'সন্দীপন এখনও রেকর্ড করতে পারেনি । পাঁচ ছ'বার নেশার ঘোরে জামাপ্যাণ্ট আণ্ডারওয়্যার সহ হারিয়ে ফেলেছে, বলে, একে রেকর্ড বলা যায় না ।' আবার হাসির ফোয়ারা । রাত তিনটে পর্যন্ত তরল আড্ডায় বুঁদ হয়ে থেকে, যে যার গাড়ি করে চলে গেলেন তারা । সন্দীপনদা ডাঃ চাট্যার্জির গাড়িতে । থেকে গেলেন শক্তিদা । তিনি আমার কাঁধে ভর দিয়ে, কোনো রকমে এলেন রাস্তায় । ট্যাক্সি ধরতে হবে বণ্ডেল রোড যাবার । রাতের ট্যাক্সি কখনই মনোমতো জায়গায় যেতে চায় না । নর্থ কলকাতা বললে, বলবে, বালিগঞ্জ যাচ্ছে । ঠকে ঠকে এটা শিখেছি । পথে নেমে ট্যাক্সি ডাকছি, ধরতে পারছি না । পেছন ফিরে তাকাতে দেখি, একটা ট্রাক থেকে নেমে আসছে পাঞ্জাবী ড্রাইভার আর একজন পাঞ্জাবী । 'আরে, সাহেবজী, ইয়ে আচ্ছা হুয়া । আজ হাম ইয়ে রাতকো রঙীন বানায়েঙ্গে ।' দেখলাম, শক্তিদা দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে, পুনরায়, চেম্বারের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন । দুই পাঞ্জাবীর বগলে দুই বোতল । মাঝরাস্তা থেকে এই অলৌকিক দৃশ্য দেখতে দেখতে ভুলে গেলাম, ভোর হতে বাকি নেই আর ।

Wednesday, November 20, 2013

গিলোটিন, তোমার প্রেমিক জানে বুঝি 
কীটদ্রষ্ট গোপন সন্ধির কথা ? রাত নেমে এলে
সে কি বলে আজও ঊনত্রিশ, ঊনত্রিশ ?

গিলোটিন, ধড়হীন সন্ধিপত্রটিকে 
নদীতে ভাসিয়ে দিও নিশিডাক এলে ।

Ratrimoth book Download

Friday, November 1, 2013

তোমাকে অনুভব করি, নীরবতা । এই শূন্যতার ভেতর জেগে ওঠা রন্ধনপ্রণালী, তোমাকে অনুভব করি, তীব্র অন্ত্রময় তুমি । যতিচিহ্নের আড়ালে বেড়ে ওঠা যৌনআবেদন, তোমাকেও অনুভব করি বাঁশীর ছিদ্রে । আজ, ৩১ অক্টোবর ২০১৩, অনুভব করি, ঐ ছিদ্রপথে, জেগে উঠছে উঁইঢিবি ।

- Samarjit Sinha

Il silenzio, mi sento. Sei acuta intenstinale, La Cucina sulla scia di questo vuoto, mi sento.Mi sento, La crescato punteggiatura di attrazione sessuale alla fenditura di fluta. Allora,Oggi,31 ottobre 2013, verme svegliato quello passago di foro, mi sento.
আমার অস্তিত্ব জুড়ে আছো তুমি, ওগো দীর্ঘশ্বাস...
মিহি ঠাণ্ডা পড়ে গেছে অন্তর জুড়িয়া । তাহাতে মরিল সখা অনলে পুড়িয়া ।।
একদিন এই পৃথিবীই থাকবে না । সূর্য থাকবে না । চন্দ্র থাকবে না । এই বায়ুমণ্ডল থাকবে না । এবং আমরাও পোদ্দারি করার জন্য থাকবো না কেউ । তখন ? ক্ষমতা, কাঁটাতার, লেখা, গান, ছবি, ভালোবাসা, ঘৃণা, লোভ, ঈর্ষা, মোহ, কাম, মাত্‍সর্য, গীর্জা, মঠ, মসজিদ বা মন্দির, পার্লামেন্ট, বেশ্যালয়, পানশালা, প্রতিষ্ঠান, অনাথ আশ্রম, থানা, জেলখানা কিছুই থাকবে না তখন । যদি সত্যিই এইই হয় সুদূর ভবিষ্যতে, তাহলে, এইসব তত্‍পরতার কোনো মানে আছে ? এই নিরীহ ও অমোঘ প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে, বিশু পাগলা তার চটের আচ্ছাদন খুলে ফেলে দিয়ে, ডান হাতের চেটো কপালে রেখে, যেন সে তার অদৃশ্য কমাণ্ডেণ্টকে স্যালুট করছে, বলে ওঠে, আসলে সব আত্মরতি । জাস্ট মাস্টারবেশন করে যাওয়া । নাথিং মোর ।
একদিন এই ফেসবুক ছিলো না, ইন্টারনেট ছিলো না, কমপিউটার ছিলো না, আরও কতকিছুই ছিলো না এই জগতে । না থাকার অনেক অসুবিধে ছিলো, আবার সুবিধেও ছিলো তখন । আজ, মনে হয়, এত কিছু সহজে পেতে পেতে, আমরা ভুলে গেছি ঐ সব কথা, আমাদের শৈশব, কৈশোর, তার আদিম সরলতা । ভুলে গেছি, সেইসব বিকেলগুলি যা হাডুডুর মাঠে ফেলে এসেছি কবে । নৌকো নিয়ে পালিয়ে যাওয়া হিমরাত, বন্যায় ভেসে যাওয়া মানুষের ত্রাণে ছুটে বেড়ানোর কথাও এখন আর মনে পড়ে না খুব একটা । এখন দেখি, পিঠে ব্যাগ নিয়ে শৈশব ও কৈশোর হারানো ছেলেমেয়েরা ছুটছে টিচারের বাড়ি । যেতে যেতে তাদের পথ মগ্ন থাকে মোবাইলে আর ফেসবুকে । তারা জানে না গ্রন্থাগারের পথ । পরীক্ষায় মার্কস তুলতে গিয়ে তারা যোগ দিতে পারেনি সৃষ্টির আনন্দে । বা তাদের অভিভাবকগণ বারণ করে রাখেন এসব থেকে । ফলে, ভাষার মহিমা উপলব্ধি করতে পারে না তারা । আধুনিক ইলেক্ট্রণিক জগত, ইন্টারনেট বা ফেসবুক যা কেড়ে নিয়েছে এবং যা দিয়েছে তার হিসেব কোনোদিন হয়তো নেবেন কেউ । কিন্তু ভাবী প্রজন্মকে দেখে আতংক ছাড়া আমার আর কিছুই হয় না ।
আমি মরে গেলে এই জগতের একটি ধুলিকণাও নড়বে না, একটি গাছের পাতাও পড়বে না ঝরে । যে যেমন ছিলো, যা যেমন ছিলো, তাই থেকে যাবে । সূর্য তার প্রথামত আপন কক্ষপথে থাকবে । গ্রহতারা সহ চন্দ্রালোকিত আকাশ তেমনই থাকবে । আর খুশি হবে অধিকাংশই, বলবে, বাঞ্চোত্‍ মরে গেছে ? যাক, বাঁচা গেলো । জ্বালিয়ে মারছিলো এতদিন ! তাদের ঐ খুশি দেখে, যদি আত্মা বলে সত্যিই থাকে কিছু, তাহলে, আমার ঐ আত্মা শান্তি পাবে খানিকটা । তবু, মরে গিয়ে, কাউকে তো খুশি করতে পারলাম । এই ইহজীবনে আমি কাউকে সুখি করতে পারিনি যে ! এতটাই অপদার্থ ও নিষ্কর্মা । বেজন্মাও বটে ।
মহাত্মা গান্ধী আর ইংরেজ শাসকের গোলটেবিল বৈঠক নয়, যা হলো খাওয়ার-টেবিল বৈঠক । প্রীতি আচার্য ও আমার মধ্যে । কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও হয়নি এই বৈঠকে । যা হয়েছে, তা আর কিছু নয়, কালীকৃষ্ণ গুহর পাঠবৃত্তে কালযাপন পাঠপ্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন । তা থেকে রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তি, বিবেকানন্দ, ঈশ্বরবোধ, মৌলবাদ, কবিতা, ভালোবাসাহীনতা, যৌনবোধ, হতাশা, কলকাতা এবং ফেসবুক পর্যন্ত এই বৈঠকের পরিসীমা । তৃতীয়পক্ষ নেই বলে, সিদ্ধান্তহীন বৈঠক পাক-ভারত বৈঠকে পরিণত হলো শেষপর্যন্ত ।
মহাত্মা গান্ধী আর ইংরেজ শাসকের গোলটেবিল বৈঠক নয়, যা হলো খাওয়ার-টেবিল বৈঠক । প্রীতি আচার্য ও আমার মধ্যে । কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও হয়নি এই বৈঠকে । যা হয়েছে, তা আর কিছু নয়, কালীকৃষ্ণ গুহর পাঠবৃত্তে কালযাপন পাঠপ্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন । তা থেকে রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তি, বিবেকানন্দ, ঈশ্বরবোধ, মৌলবাদ, কবিতা, ভালোবাসাহীনতা, যৌনবোধ, হতাশা, কলকাতা এবং ফেসবুক পর্যন্ত এই বৈঠকের পরিসীমা । তৃতীয়পক্ষ নেই বলে, সিদ্ধান্তহীন বৈঠক পাক-ভারত বৈঠকে পরিণত হলো শেষপর্যন্ত ।

Thursday, October 31, 2013

একটা বুলেট, একটা ঝকঝকে স্টেনলেস ব্লেড, একটা শক্তপোক্ত দড়ি বা ৩০টা স্লিপিং পিল । অনেকগুলি অপশন । তার কোনো একটা হলেই কেল্লা ফতে । মুশকিল হলো, স্লিপিং পিল বিট্রেয়ার । ভরসা রাখা যায় না । দু দু'বার বিট্রে করেছে । দড়িও যে ভরসা দেবে, সেটা কতখানি বিশ্বাস করতে পারি ? বুলেট হবার নয় । সে অনেক ঝক্কিঝামেলা । হাতে রইল ঐ ব্লেড । কার্তিকদুপুর, তোমার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাবার জন্য এই ব্লেড ব্যতীত আর কিছু নেই । তুমি বসন্তের কেউ নও, গোয়ালপাড়ায় যাতায়াত নেই তোমার । গত গ্রীষ্মে তুমি চষে বেড়িয়েছ উঁইপোকাদের সাথে গীর্জার বাগানে । আমার টেবিলের পেপার ওয়েটগুলি তুমিই পাঠিয়েছিলে তুরস্কের হারেম থেকে । আজ তোমাকে পাঠাচ্ছি স্টেনলেস ব্লেড । যত্নে রেখো, আগামী জন্মদিনে শিরা কেটে তোমাকে উপহার দেবো রক্তঘড়ি সহ বজ্রযানশ্লোক । তাতে উল্লেখ থাকবে বেদব্যাসপিতা রচিত এক অসম্ভব প্রতারণাকাহিনী ।
ম্যাঁয় সময় হুঁ । কোনো এক টিভি সিরিয়ালের শুরুতে এই উক্তিটি ছিলো । জানি না, ঠিক এভাবে কথা বলতে পারত কি না সময় ! সময় আসলে এক ধারণা, যেমন ঈশ্বর । এই ধারণা-বশবর্তী হয়ে, বা, না হয়ে, মানুষ সমগ্র জীবন ধরে নিজেকে জানার চেষ্টা করে গেছে, একই সঙ্গে আপন অস্তিত্ব প্রোথিত করতে চেয়েছে চিরকালীন সময়ে । সে ভালোবেসেছে, ভালোবাসা পেতে চেয়েছিলো বলে । ঘৃণা করেছে, ভালোবাসাহীনতায় । ছবি এঁকেছে দুর্গম গুহায়, নিজের অভিজ্ঞান রেখে যাবার তীব্র বাসনায়, যে বাসনা থেকে সে জন্ম দেয় সন্তানের । সকল সৃষ্টির মূলে যদি ঐ অভিজ্ঞানই থাকে, তাহলে একটি অসহায় প্রশ্ন থেকে যায় আমাদের সামনে, তা হলো, এই সুন্দরতম প্রকৃতি রচনার আড়ালেও কি তেমন কোনো বাসনা ছিলো কারও ? তখনই, ধর্মবিশ্বাসীগণ, জানি, বলে উঠবেন, তিনিই ঈশ্বর ! আজ আমি সেই অদেখা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তর্জনি সংকেত করে বলবো, তিনিও, তাহলে, সামান্য এক পটুয়া যার এই সৃষ্টি একদিন মিশে যাবে সেই কালো গহ্বরে । চিরকালীন সময়ের উর্ধে উঠে যেতে পারেনি তারও রচনা ! এই যুক্তির সামনে দাঁড়িয়ে, দু এক লাইন লিখিয়ে বলে অর্ধপরিচিত এই আমাকে আজ আর অসহায় মনে হয় না । জানি, এই সব লেখা, একদিন, মিশে যাবে ধুলিতে । উঁইয়ের খাদ্য হবার যোগ্যতাও নেই এসব লেখার ।
কোথায় হারিয়ে যায় এত সব কথা ? গুহামানবের কাল থেকে কত কথা কয়ে গেল লোকে, কত প্রেমভালোবাসাঘৃণাতাচ্ছিল্যলোভঈর্ষাঔদ্ধত্যাদি কথা কোথায় গেল ? ভাবছি, এবার থেকে সব ধরে রাখবো আমার এই যাদুবোতলে ।
পিঠে বারবার ছাপ মেরে গেছে লোকে । কেউ বলেছে, লম্পট । কেউ আবার চরিত্রহীন, অহংকারী । স্বেচ্ছাচারী বলে খবরের কাগজের শিরোনাম হলো কতবার । বহুগামিতার দোষে কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছে কতবার । অবিনয়ী বলেছেন কেউ কেউ । স্বার্থপর, লোভী ও কামুক বলেছেন অনেকেই । মিথ্যেবাদী কি বলেছে কেউ ? মনে করতে পারছি না ! প্রেমিকপুরুষ বলে কোনো কোনো নারী আখ্যা দিয়েছেন । প্রতারকও বলেছেন কেউ কেউ । মাতাল তো কমন কথা । এত বিশেষণময় হয়ে, এখন মনে হয়, এই নরকেও আমার স্থান হবে না মৃত্যুর পর । ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে ফেলে আমাকে ভাজা হচ্ছে কত কতদিন আগে থেকে, তাতেও এত বিশেষণভার কমবার নয় । হায়, একজন মোটে যদি পেতাম, এই ভার ওপার পর্যন্ত পৌঁছে দিত, অন্তত ।
তোমাকে অনুভব করি, নীরবতা । এই শূন্যতার ভেতর জেগে ওঠা রন্ধনপ্রণালী, তোমাকে অনুভব করি, তীব্র অন্ত্রময় তুমি । যতিচিহ্নের আড়ালে বেড়ে ওঠা যৌনআবেদন, তোমাকেও অনুভব করি বাঁশীর ছিদ্রে । আজ, ৩১ অক্টোবর ২০১৩, অনুভব করি, ঐ ছিদ্রপথে, জেগে উঠছে উঁইঢিবি ।
কচি ধনেপাতা মোড়ানো সকাল এসেছে । তাকে কিভাবে যে স্বাগত জানাই ?
পরচর্চা আমাদের প্রধানতম উপজীব্য সংস্কৃতি । তা ফেসবুক হোক, চায়ের স্টল বা অফিস হোক, মন্দির বা কলতলা হোক । রসনা ও মননের এমন যুগল তৃপ্তি আর কোথাও নেই ।

Thursday, October 24, 2013

কানা হারিয়ে গেছে নিরবধিজলে । /সে জলে আমার ছায়া নেই । বলো, কোন মন্ত্রবলে/ ফিরিয়ে আনবো তাকে, পারা ওঠা দিনে ? /পথে পথে ঘুরি, দিন কেটে যায় পরজন্মঋণে/ বাজাই নিজেকে একা, এই নুলো হাতে ।/ সে সুরে রচিত রাত্রি নেমে আসে ঊরু মেলে জঘনপ্রভাতে । /এসব জানে না চারুলতা, বালিকা সে, থাকে কোটিবর্ষদূরে । / আমার পথের শেষে নিরবধিপুরে ।
 


L'indrizzo ha perso con la acua silenziosa./ La mia ombra non esista sulla acqua. Mi suggeriscono un incanto, vorrei tornare lei indietro, il giorno di abilita./Passa gli giorni con il debito di un altro vita,sposto qui è la./ Lo giocco da solo, con le mani di brusco./ La cantata notte arriva a buio mattina con la partita coscia ./La moglia di solitario non lo sa, è ragazza, abita tanti sostenuto da./Alla fine del mio corso, a cielo.
কে তকমা পায় সেরা বলে, কে হারিয়ে যায় চোরাস্রোতে, কার মাথা উড়ে যায় দিগন্ত পেরিয়ে, কার লেজ কাটা পড়ে গোপন চাকার নিচে, কে জানে ? সবাই লাফাচ্ছে, সবাই দৌঁড়ছে, শুধু একজন, খড়ি হাতে, লিখে যাচ্ছে শূন্য ব্ল্যাকবোর্ডে, অন্তিম ঠাট্টা ও হাহাকার ।
কে তকমা পায় সেরা বলে, কে হারিয়ে যায় চোরাস্রোতে, কার মাথা উড়ে যায় দিগন্ত পেরিয়ে, কার লেজ কাটা পড়ে গোপন চাকার নিচে, কে জানে ? সবাই লাফাচ্ছে, সবাই দৌঁড়ছে, শুধু একজন, খড়ি হাতে, লিখে যাচ্ছে শূন্য ব্ল্যাকবোর্ডে, অন্তিম ঠাট্টা ও হাহাকার ।
ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে আছে বাঘাডাঙা । ভোরে, ঘুম ভেঙে গেলে, দেখি, আশি বছরের পিসিমা উঠোনে শিউলি ফুল কুড়োচ্ছেন । আর বিড়বিড় করে কাকে যেন বকছেন । পরে, বুঝলাম, যাকে লক্ষ্য করে এই বকাবাদ্যি, সে সামনে নেই, তাদের সব ফুল চুরি করে চলে গেছে অনেক আগেই । আজ লক্ষ্মীপুজো । বাংলার ঘরে ঘরে গতকাল থেকে শুরু হয়ে গেছে এর আয়োজন । বাঘাডাঙার এ ঘরেও তার ব্যতিক্রম নেই । পূজাকাতর আমি নই, ধর্মহীন লোক, আমার লোভ ঐ নারকেলের নাড়ুর প্রতি । আহা ! ঐ নাড়ুতেই যেন সকল স্বর্গীয় অনুভূতি । প্রীতি আচার্যর ভাইঝি, শ্রীমতী অপর্ণা আচার্য, গতরাত থেকে বায়না ধরেছে, পূজা উপলক্ষ্যে পিকনিক খাবে । পিকনিক বলতেই মনে পড়ে গেল চড়ুইভাতির কথা । এই দুইয়ের চরিত্র কত আলাদা । পিকনিকে বাঙালিয়ানা নেই, চড়ুইভাতিতে আছে । আমরা কি তাহলে ঐতিহ্যকেও ক্রমে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি ? এই যে, আজ লক্ষীপূর্ণিমার রাতে, এ পাড়ার লোক ও পাড়ার জাম্বুরা(বাতাবিলেবু)গাছ থেকে চুরি করবে জাম্বুরা ? কই সেই দিনগুলি ?
আমার নিজস্ব এক নদী আছে । সে নদী গভীর, ছলোচ্ছল তার জল । বান এলে ভাসিয়ে নিয়ে যায় । তবু অচেনা নদীর চোরাটান অনুভব করি বিষাদগ্রস্ত রাতে, যে রাতে পাখি ওঠে জেগে ।
আমার কিছু স্বপ্ন নীলামে বিক্রি করবো । স্টক ক্লিয়ারেন্স করতে হচ্ছে । না হলে নতুন স্বপ্ন দেখতে পারছি না । যারা কিনতে চান, অগ্রিম বুক করুন ।
বাঘাডাঙায় বাঘ নেই, বাজি আছে । আজ সন্ধ্যেবেলা বাজির খেলা শুরু হবে যার লোভে আমার শিরা-উপশিরা টানটান ।
কান্না ও বন্যা দুই বোন । দু জনেই ভাসায় । ভাসিয়ে নিয়ে যায় সকল মালিন্য ।
পেটে বুদ্ধি নাই, ঘটে বুদ্ধি নাই, মগজেও কিছু নাই । কি কইরা যে বাঁইচ্যা আছি, কও তো, নদী ?
দক্ষিণেশ্বর গঙ্গার ঘাট । ওপারে বেলুড়, এপারে রাণী রাসমনির অসামান্য কীর্তি । এক বিধবা রমণী নিজ প্রতিপত্তি ও মেধা দিয়ে প্রবল ইংরেজ শাসনকালে, বাংলার রেনেসাঁর ঐ যুগে এই দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির স্থাপিত করেন এবং সেই বৈদ্যবাটী বা ঐ দিকের একটা গ্রাম থেকে গদাধরকে এনে, প্রচারের আলোয় পরম হংস রামকৃষ্ণ হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন এই অসামান্য রমণী । আজ বন্ধুবর অশোক মাহাতো এখানে আমাদের নিয়ে এসেছেন । আগেও কত কতবার এসেছি এখানে । প্রতিবারই মাথা নত হয়ে গেছে এই অসামান্য কীর্তির সামনে । আজও চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছি, ঘাটে প্রচণ্ড ভীড়, দূরে ছুটে যাচ্ছে লঞ্চ, সে এক অপার্থিব দৃশ্য । অশোক আর প্রীতি মন্দিরচত্বর ঘুরতে গেছে আর আমি অবাক হয়ে দেখছি বাঙালীর ভক্তিকাতরতা ।
দক্ষিণেশ্বর গঙ্গার ঘাট । ওপারে বেলুড়, এপারে রাণী রাসমনির অসামান্য কীর্তি । এক বিধবা রমণী নিজ প্রতিপত্তি ও মেধা দিয়ে প্রবল ইংরেজ শাসনকালে, বাংলার রেনেসাঁর ঐ যুগে এই দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির স্থাপিত করেন এবং সেই বৈদ্যবাটী বা ঐ দিকের একটা গ্রাম থেকে গদাধরকে এনে, প্রচারের আলোয় পরম হংস রামকৃষ্ণ হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন এই অসামান্য রমণী । আজ বন্ধুবর অশোক মাহাতো এখানে আমাদের নিয়ে এসেছেন । আগেও কত কতবার এসেছি এখানে । প্রতিবারই মাথা নত হয়ে গেছে এই অসামান্য কীর্তির সামনে । আজও চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছি, ঘাটে প্রচণ্ড ভীড়, দূরে ছুটে যাচ্ছে লঞ্চ, সে এক অপার্থিব দৃশ্য । অশোক আর প্রীতি মন্দিরচত্বর ঘুরতে গেছে আর আমি অবাক হয়ে দেখছি বাঙালীর ভক্তিকাতরতা ।
আমি বিশুদ্ধ মানুষ নই, ভালো মানুষ নই । নিজের ভেতরে টর্চ জ্বেলে কতদিন দেখেছি, কত খানাখন্দ সেখানে । পোকা কিলবিল করছে সে সকল খানাখন্দে । আমার সরলতা চুরি হয়ে গেছে কবে যেন । সব কিছু বাঁকা দেখি । আমার ভার্জিনিটি যে হরণ করেছিলো জোর করে, সেই পিসতুতো দিদিকে অভিশাপ দেবার বদলে ধন্যবাদ দিই এই জন্য, সেই শিখিয়েছিলো, ভালোবাসার বদলে কি করে শরীর হয়ে যায় তীর্থস্থান । তীর্থপরিক্রমাকালে দেখেছি, মানুষ শুধুই ব্যবহৃত হয়ে থাকে । ব্যবহৃত হয়েছি আমিও । হতে হতে আমার সকল বিশ্বাস নিজ হাতে হত্যা করেছি । ভালো মানুষ নই আমি । অথচ একদিন সত্যিই আমারও স্বপ্ন ছিলো প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার...
দ্বন্দ্বসমাসের ঐ দ্বন্দ্ব থেকে কোনো রকমেই বেরিয়ে আসতে পারছি না, মত্‍পুরুষের দোষে ।
মৃত্যুর অধিক এই রাত আজ হাত পেতে বসে আছে ভাঙা সেতুটির কাছে । 'যা দেবার দিয়ে দাও, তর সইছে না আর' বলে, সে আসে এগিয়ে । সেতুটির কথা না বলা বিধেয়, জেনে, চুপ করে চেয়ে আছে রাত্রির অধিক মথ ।
এই দেহকাব্য কীটরচিত প্রাচীন এক মর্মগাথা মাত্র, যার প্রতিটি পাতায় ঈশ্বরীর দীর্ঘশ্বাস, নখের আঁচড়, দংশন ব্যতীত আর কিছু নেই । অকুস্থল থেকে ফিরে এসে, এই অসমাপ্ত নোট লিখে, যে গিয়েছে, তাকে কি চিনেছে, এই মঙ্গলকাব্য ?
বিদায় কলকাতা । বিদায় বন্ধুরা । কফিহাউসে কথা দিয়েও যেতে পারিনি আজ, অথচ অপেক্ষা করছিলেন অনেকেই । দেখা হয়নি অনেকের সঙ্গেই । হয়তো আবার আসবো, হয়তো দেখা হবে তখন । এই ঝটিতি সফরে অপূর্ণতাই থেকে গেলো বেশি । তবু আশ্চর্য এক ভালো লাগা নিয়েও ফিরে যাচ্ছি । গৌতম মণ্ডল সম্পাদিত 'আদম' এর সাম্প্রতিক সংখ্যা পেলাম, যেখানে সত্তর দশকের কবির তালিকায় সমরজিত্‍ সিংহকেও রেখেছে, যা ভাবিনি কোনোদিন ।
নীরবে হজম করে যাচ্ছি । তাতে পেট ভালো থাকে, এটুকুই জানি । বাকি সব অন্ধকার ।
যুবকের মেধা-বীর্য, একদিন, এই কলকাতা খেয়েছিলো, আজ সেই কলকাতা কি তাকে এই বয়সকালে গ্রহণ করবে জুতোহীন পুরাণো সেই প্রেমিককে ?
যুবকের মেধা-বীর্য, একদিন, এই কলকাতা খেয়েছিলো, আজ সেই কলকাতা কি তাকে এই বয়সকালে গ্রহণ করবে জুতোহীন পুরাণো সেই প্রেমিককে ?
জবাটির রঙ লাল, ভেবে, যতটা হয়েছো খুশি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেলে, লাল মুছে যখন পাপড়িগুলি হয়ে ওঠল ধূসর । জবাও কি বহুরুপী তবে ? আফোট বিস্ময়ে কাকে যেন বললে কথাটি । উত্তর দেবার কেউ নেই চরাচরে । জানোনি কখনো, রঙ মূলত কল্পনা, না হলে সকল শাদা । বলে, উড়ে গেল এক প্রজাপতি । ডানাহীন অন্ধকারে ।
এখানে রাত একাকী জাগে...ঘুমিয়ে পড়ি রাতের বুকে...
একটা শব্দ । জল তোলার, না কি, মগজের ভেতরে ঘুণপোকার শব্দ । ছিঁড়ে নিচ্ছে থ্যালামাসের সকল পালক ।
একটু আগে, খেয়ে উঠেছি মাত্র, ঘরে লোকজন, কালীদার ফোন এলো । কবি কালীকৃষ্ণ গুহ । আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ 'রাত্রিমথ' পড়ছেন । প্রথম দুটি গল্প পাঠের পর ধৈর্য রাখতে পারেননি । বললেন, 'তোমার গল্প পড়ে আমার রক্তক্ষরণ হচ্ছে । মনে হয়, আড়ালে একজন কাপালিক আছে । অসাধারণ ।' তিনি আরও কথা বললেন । হয়তো, তাঁর সব কথাই স্নেহসম্ভব । তবু, এই কটি কথা আমার ভেতরের মৃতসত্তাকে দানবে রূপান্তরিত করেছে মুহূর্তে । লিখতে ভালো লাগছিলো না আর । কোথাও যেন নিঃস্ব হয়ে পড়ছিলাম । রাত্রিমথ প্রকাশিত হবার পর কলকাতার একটি কাগজ ব্যতীত আর কোথাও কোনো আলোচনা বেরোয়নি । যেমন আলোচনা হয়নি আমার উপন্যাস 'আলান' 'অন্তর্জলকথা' নিয়ে । অথচ 'ট্রা রা রা রা' উপন্যাস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে, প্রথিতযশা উপন্যাসিক শৈবাল মিত্র, কলকাতা থেকে প্রকাশিত আজকাল-এ বলেছিলেন, সমরজিত্‍ সিংহ এর লেখা শুধু পাঠক নয়, বাঙালী লেখকদেরও ঋদ্ধ করবে । হায় ! পাঠক কোথায় আমার ?কালীদার চার নম্বর sms একটু আগে এলো । তিনি পড়ছেন এখনও । এক একটা গল্প পড়ছেন, আর sms করে তার প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন । এ আমার বুকার পাওয়ার চাইতেও অনেক বড় পাওনা ।

Monday, October 14, 2013

কথাটি গুজব, সত্য নয় । সত্যের চাইতে তার শক্তি বেশি । উড়ে যেতে পারে মুহূর্তের হাত ধরে । নিমেষসম্ভব, বলে, সে থাকে আড়ালে, সত্যের পোশাকে । যেন এখনই মঞ্চে উঠবে সে, দ্বিতীয় অংকের পর । সত্য তুমি, তাড়াহুড়ো নেই, ধীর পায়ে, এগিয়ে যাচ্ছো ঐ, দূরে বধ্যভূমি, প্রস্তুত ফাঁসুড়ে, প্রস্থানভূমির চারদিকে শ্বাসরোধকারী এক গল্পের খসড়া । ক্যামেরাতীত সে দৃশ্যে, তোমার চোখের তারা ক্রমে হয়ে ওঠে সবুজ, ক্ষুধার্ত ।

La parola rumors, non è vero. Piu forza della verita. Puo essere voltare con i momenti. é possibile dividere, chè,verita abbigliamento, essere a dietro. Comè ora sta andando in scena dopo i secondi numeri.Sei vero, sta andando a avanti, non chè sta fretta, il chiuso terrano lantano da,il slayer è pronto ,Sfondo smothery intorno alla storia di uno dei progetti. I tuo occhi sono verdi, a poco a poco venne fame, Scena della photocamera .
নিয়তি, নিষ্ঠুর সে নারীর প্রতি আমার মূলত কোনো টান নেই । তবু সে আমার নিদ্রাজাগরণে খেলছে আমাকে নিয়ে । তাকে বলি, ক্ষান্ত দাও, মোহময়ী । কবরের উষ্ণতা আর হিমচিতার



Doom, non c'è carenza di donna, e crudele. Oppure, lei gioca con il mio sonno e la veglia. Gli dico, madame, dai spassionato.Comè La calda tomba e la pira di nevicata.

নামই আসল । নামকীর্তনই সার । এই যে শত শত ব্রাণ্ডনেম, তা ঐ নামকেই সার ভেবে । নামহীন কাউকে বা কোনোকিছুকে ঘরে ঢুকতে দিই না, অন্তত কুণ্ঠা বোধ করি । এই নাম এর পেছনে দৌড়ছেন হাজার হাজার তরুণ তরুণী থেকে বুড়োবুড়ি সবাই । আর আমি, ঐ নামটাকেই ভুলে যেতে চাইছি, কেন না, নামবিভ্রাটের পাল্লায় পড়ে ওষ্ঠাগত আমার প্রাণ । একবার, কমলপুরে, এক অনুষ্ঠানে, দেখলাম, ১৮৩ জন সমরজিত্‍ সিংহ । শুনেছি, তার মধ্যে একজন ডাকাত ও একজন নকশাল নেতা আছেন । এটা জানার পর থেকে, ভাবছি, নামে আমার কাম নেই । বরং কামে থাকি মেতে । কামই সার, বলে, এই বয়সে, মেতে ওঠি, কামকীর্তনে । কর্মেন পরিচয়তে, এর বাংলাও করে নিয়েছি, কামে পরিচয় ! বাংলা ভাষার এই সুবিধা বা মহিমা কজনে আর বুঝি ? বুঝেছিলেন গৌরপাগলা । হায় ! তিনি তো নামের পাগল !
রাত যত বাড়ে, তত নিঃস্ব মনে হয় নিজেকে । যোগবিয়োগ মেলে না । গুণভাগ তখন হয়ে ওঠে ভয়ংকর রহস্যময় । কাকে যেন কি বলেছিলাম, শোনেনি, কার অনুরোধ রাখতে পারিনি, কি একটা জরুরি কাজ ভুলে গেছি বেমালুম । মনে পড়ে না । কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ ম্রিয়মান বড় । বিরহী সে । তবু তার নিয়ম আছে, নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে তার । আমার তা নেই । এটুকুই মনে পড়ে, ঘরওয়ালীকে কিনে দিতে হবে ফ্ল্যাট । না হলে তার মাথা গুঁজবার ঠাঁই থাকে না । আমার ঠাঁই মানে তো রাস্তা । সেই কবে বাড়ি থেকে পালিয়েছি, রাস্তাকেই করে নিয়েছি আস্তানা । এখনও তাই । পথে পথে মোর ঠাঁই আছে. বলে, এতদুর এগিয়ে এসেছি । পেছন ফিরে তাকালে, দেখি, সমস্ত পথটিই ছিলো মরুভুমি ।
রাত যত বাড়ে, তত নিঃস্ব মনে হয় নিজেকে । যোগবিয়োগ মেলে না । গুণভাগ তখন হয়ে ওঠে ভয়ংকর রহস্যময় । কাকে যেন কি বলেছিলাম, শোনেনি, কার অনুরোধ রাখতে পারিনি, কি একটা জরুরি কাজ ভুলে গেছি বেমালুম । মনে পড়ে না । কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ ম্রিয়মান বড় । বিরহী সে । তবু তার নিয়ম আছে, নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে তার । আমার তা নেই । এটুকুই মনে পড়ে, ঘরওয়ালীকে কিনে দিতে হবে ফ্ল্যাট । না হলে তার মাথা গুঁজবার ঠাঁই থাকে না । আমার ঠাঁই মানে তো রাস্তা । সেই কবে বাড়ি থেকে পালিয়েছি, রাস্তাকেই করে নিয়েছি আস্তানা । এখনও তাই । পথে পথে মোর ঠাঁই আছে. বলে, এতদুর এগিয়ে এসেছি । পেছন ফিরে তাকালে, দেখি, সমস্ত পথটিই ছিলো মরুভুমি ।
যিনি পণ্ড করেন= পণ্ডিত । এই ব্যাসকূটটি মনে পড়ে গেলো হিন্দুপণ্ডিতদের দেখে । জানি, রে রে করে তেড়ে আসবেন পণ্ডিতকূল, অভিশাপ দেবেন আমাকে । ভাগ্যিস, কলিযুগ এখনও শেষ হয়নি, না হলে, তাদের অভিশাপে ভস্ম হয়ে যেতাম । তবে, পণ্ডিতকূলের জ্ঞাতার্থে জানাই, আমার জন্ম পূর্বফালগুনী নক্ষত্রে । এর জাতক অভিশপ্ত । জুয়াড়ি । বহুগামী । নিন্দিত । জেদী বা একরোখা । আনন্দবাদী । অসম্ভব কৌতুহলী । তৃতীয়ে ক্ষীণচন্দ্র রাহুগ্রস্ত বলে অস্থিরতাদোষেদুষ্ট । এই বক্তব্য আমার নয়, পরাশরী হোরা ও ভি রমণের । তাঁরা পণ্ডিত এবং আমার জীবনের সকল উদ্যোগ পণ্ড করতে তাঁদের এই বাণীসমূহও কম দায়ী নয় ।
যিনি পণ্ড করেন= পণ্ডিত । এই ব্যাসকূটটি মনে পড়ে গেলো হিন্দুপণ্ডিতদের দেখে । জানি, রে রে করে তেড়ে আসবেন পণ্ডিতকূল, অভিশাপ দেবেন আমাকে । ভাগ্যিস, কলিযুগ এখনও শেষ হয়নি, না হলে, তাদের অভিশাপে ভস্ম হয়ে যেতাম । তবে, পণ্ডিতকূলের জ্ঞাতার্থে জানাই, আমার জন্ম পূর্বফালগুনী নক্ষত্রে । এর জাতক অভিশপ্ত । জুয়াড়ি । বহুগামী । নিন্দিত । জেদী বা একরোখা । আনন্দবাদী । অসম্ভব কৌতুহলী । তৃতীয়ে ক্ষীণচন্দ্র রাহুগ্রস্ত বলে অস্থিরতাদোষেদুষ্ট । এই বক্তব্য আমার নয়, পরাশরী হোরা ও ভি রমণের । তাঁরা পণ্ডিত এবং আমার জীবনের সকল উদ্যোগ পণ্ড করতে তাঁদের এই বাণীসমূহও কম দায়ী নয় ।
ভিসা পেলাম । বাংলাদেশ ভিসা অফিসের প্রথম সচিব ওবায়েদুর রহমান অতি সজ্জন, নিজ হাতে গতকাল সব ব্যবস্থা করে দিলেন । ১১ অক্টোবর ঢাকা যাচ্ছি । ম্যাডাম প্রীতি আচার্য সহ । কমলাপুর শ্যামলীর বাসস্ট্যাণ্ডে অপেক্ষা করবেন কবি সরদার ফারুক এবং তরুণতুর্কী জাহিদ সোহাগ । ঢাকা থেকে বরিশাল । ভেবেছিলাম, কক্সবাজারেও যাবো । হচ্ছে না । এ যাত্রাতেও কক্সবাজারদর্শন হলো না । সব পুষে যাবে, ওবায়েদ আকাশ, সরকার আমিন, মেঘ অদিতি, বিধান সাহা, অপরাজিতা ফেরদৌস, সাঈদা মিমিদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারলে । অতি অবশ্যই শামীম রেজা ও লোক পত্রিকার সম্পাদক সহ গল্পকার পারভেজ ও কচি রেজাও আছেন । আরও অনেক অনেক বন্ধুও আছেন । সিম কার্ড দেবেন বলেছেন অনুজ কবি রেজওয়ান তানিম । আসছি ঢাকা ।
পথে এসে, দেখি, পথের বিভ্রম ম্লান করে রেখেছে তোমাকে ।
পথে নেমে, দেখি, তোমার বিভ্রম ম্লান করে ফেলেছে আমাকে ।

পথ রেখে, সেই থেকে, হেঁটেছি বিপথে ।
ফেসবুক এলিসের সেই আজব দেশ । এলিস আয়নার ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়েছিল সেদেশে, আর আমরা ডেস্কটপ ল্যাপটপ বা মোবাইলের স্ক্রীন দিয়ে ঢুকে পড়ি ফেসবুকে, মোহগ্রস্ত হই, মোহ ভাঙে । অভাবিত ঘটনাবলীর সম্মুখীন হই প্রতিমুহূর্তে । যা ভাবি, তার বিপরীত ঘটে আর যা ভাবিনি, দেখা গেলো, তাই হয়ে গেছে । শিল্পী আমীর চারু বাবলু থাকেন আরবদেশের কোথাও । ফেসবুকবন্ধু । ইনবক্সে দুচারটে কথা হয়েছে কি হয়নি । লাইকালাইকি হয় । এটুকুই । ঢাকা যাচ্ছি, শুনে, তিনি যারপর নাই চিন্তিত সেই দূর আরবদেশ থেকে । তার চিন্তার কারণ ঢাকা গিয়ে আমি কোথায় ওঠবো । এবং তিনি যথারীতি ১৬ ও ১৭ অক্টোবর আমার থাকার জন্য ঢাকায় থ্রিস্টার হোটেল বুক করে দিয়েছেন নিজ খরচে । সেখানেই থেমে থাকেননি, তার এক বন্ধু, রিয়াজ খানকে দায়িত্ব দিয়েছেন আমার যাতে কোনো অসুবিধে না হয়, তা দেখার জন্য । আমীর চারু আমাকে চিরজীবনের জন্য ভালোবাসার ঋণে আবদ্ধ করে রাখলেন । এখন মনে হয়, আসলে, আমিই সেই এলিস ।
চিত্রা নক্ষত্রকে মনে পড়ে । কত কত রাত তার সাথে শুয়ে দেখেছি, বাঘিনী মূলত সে । তার ডাক নিশিরাত পার হয়ে চলে গেছে অনন্তের দিকে । মনে পড়ে মৃগশিরা, রোহিনীর কথা । সর্পগন্ধা মৃগশিরা উল্লাসে মেতেছে প্রতিটি দুপুরে । রোহিনী বিষাদগ্রস্তা, পূর্ণ কলসের মত, কথা কম, রাতে প্রগলভা । পতিত নক্ষত্র শতভিষা, মূলত হস্তিনী । রাহুপ্রিয়া । কেতুর সকাশে তার আসা-যাওয়া । দেখি তাকে মধ্যযামিনীতে । একটি শব্দের জন্য রাত জেগে বসে থাকা তরুণ কবিটি, জেনে রেখো, নক্ষত্র দোষের কথা । প্রতিটি বাক্যের নিচে যে পাহাড়ী ঝর্ণা বয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ শিয়রে, তার জলে কৃত্তিকার ছায়া । সেই ছায়া গ্রাস করে রাখে এই শূন্য পাতাগুলি । জেনে রেখো, কবিকে নরকগামী করে বিশাখার ক্রোধ ।
রাত কি বাত কুছ অলগ হ্যায়...দিলকি বাত কুছ অলগ হ্যায়...লেকিন হামারে বাত অলগ নেহি ।
রাত কি বাত কুছ অলগ হ্যায়...দিলকি বাত কুছ অলগ হ্যায়...লেকিন হামারে বাত অলগ নেহি ।
ভাবছি, অবসর জীবনে, বসে বসে, দিন কাটানোর চাইতে, কিছু কি করা যায় ? বাংলা একাডেমি ঢাকা চালু করেছে লেখা শেখার ক্লাস । আমিও কি তা করবো ? পূঁজিহীন এই ব্যবসাটা মন্দ নয় । মার্কসসাহেব কি বলবেন, জানি না, আমার মনে হয়, পূঁজিহীন ব্যবসাতেই ক্ষতির সুযোগ কম । তাহলে কি কবিতার ক্লাস শুরু করে দেবো অবসর জীবনে ? কবি যদি নাই হলাম, কবিতার ক্লাস এর মাস্টার তো হতে পারি !
এবারই প্রথম এত নির্জীব দেখলাম আগরতলা । ষষ্ঠীর রাত যে ভাবে মেতে ওঠত আনন্দে, প্রাণের সেই আনন্দ যেন আর নেই । পূজা আয়োজকগণের সে জৌলুষ নেই । আলোকসজ্জাও এবার অতিম্রিয়মান । আগরতলার এত দরিদ্ররূপ এর আগে কখনও দেখিনি । কেন এমন হল ? আগরতলা কি দুঃখে আছে ? নাহলে এত বিষাদগ্রস্ত হবে কেন সে ? কে একজন বললেন, ম্লান হবে না কেন ? এই রাজ্যের প্রাণশক্তি হল কর্মচারিবৃন্দ । আজ তাদেরই আবস্থা রিক্ত । প্রতিমাসে একজন গ্রুপ ডি কর্মচারি ছহাজার টাকা কম পায় । উপরে আঠারো কুড়িহাজার টাকা । অংকের হিসাবে লক্ষ লক্ষ টাকা মার খাচ্ছেন কর্মচারিরা । বঞ্চনার এই বেদনাময় ইতিহাস আর কোথাও নেই পৃথিবীতে । কর্মচারিদের দীর্ঘশ্বাসে চাপা পড়ে গেছে পূজার আনন্দ ।
সন্তের জীবন, পিতা, আমিও জেনেছি ।--সরদার ফারুক
ভদকা জ্ঞানী, সেই জ্ঞানে ডুবে যাচ্ছি আমি ।
প্রেতযোগিনীর সাথে দেখা হয়েছিল চিত্রানক্ষত্রের ঘরে । দেখা ও নাদেখা এই দুটি পথ পার হয়ে যে মরুভূমিটি, একা, জেগে থাকে রাতে, তার বিছানাটি কেঁপে ওঠে প্রেতযোগিনীর স্পর্শে । কাঁপে চিত্রানক্ষত্রের ঘর । যে কাঁপেনি, সে আর কেউ নয়, অন্ধ সে ক্যামেরামান ।
আজ, মনে হচ্ছে, সময়ের দুটি ডানাই কেটে দিতে হবে, যাতে উড়ে যেতে না পারে ।
দশমী সে, চলে যাবে, বলে এসেছিল, চলে গেছে মোহপাশ ছেড়ে...
হায় ! ভালোবাসা ! হায় ! প্রেম ! তুমিও দশমী তবে ?
হায় ! ভালোবাসা ! হায় ! প্রেম ! তুমিও দশমী তবে ?
সোনার গাঁ, ছেলেবেলায় দেখা এক যাত্রাপালা । যে রাজধানী এখন ইতিহাস, ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে পানামনগরে, শতোর্ধ বয়সী এই মৃতনগরী । ব্রিটিশ স্থাপত্যের আদলে তৈরি এই নগরের ঘরবাড়িগুলি অধিকাংশই দ্বিতল. জীর্ণ, জনহীন । সামান্য এগিয়ে গেলে ছোটো এক বাজার । সোনার গাঁ পুরসভা আয়োজন করেছে দুর্গাপুজো । আরতির জন্য প্রস্তুতিতে যেসকল যুবক গলদঘর্ম হয়ে ব্যস্ত, তাদের একজন ওমর ফারুক । সে জানালো, আইছেন যহন, বারদী ঘুইরা আসেন । সেখানে বাবা লোকনাথ মন্দিরে দুর্গাপূজা । দেইখা আসেন একবার । মন্দির পূজা, মাজার বা গীর্জাতে আমার কোনো আকর্ষণ নেই । ধর্ম যে আদৌ মানুষের কল্যাণকামী নয়, অন্তত আচরণবাদ কোনোভাবেই মানা যায় না । তবু ইতিহাসের টানে সরদার ফারুক আর আমি ছুটে গেলাম বারদীতে ।
পাতালগঙ্গার কথা থাক আজ । দশমীও থাক । ভেজা কাঠ, তাকে আজ ভাসিয়ে এলাম তোমার নীরব চোখের নদীতে । পূণ্য থাক । স্বর্গলোভ থাক আজ । নদী, তাকে আজ পুড়িয়ে এলাম এই মৃতনগরীতে ।
কথাটি গুজব, সত্য নয় । সত্যের চাইতে তার শক্তি বেশি । উড়ে যেতে পারে মুহূর্তের হাত ধরে । নিমেষসম্ভব, বলে, সে থাকে আড়ালে, সত্যের পোশাকে । যেন এখনই মঞ্চে উঠবে সে, দ্বিতীয় অংকের পর । সত্য তুমি, তাড়াহুড়ো নেই, ধীর পায়ে, এগিয়ে যাচ্ছো ঐ, দূরে বধ্যভূমি, প্রস্তুত ফাঁসুড়ে, প্রস্থানভূমির চারদিকে শ্বাসরোধকারী এক গল্পের খসড়া । ক্যামেরাতীত সে দৃশ্যে, তোমার চোখের তারা ক্রমে হয়ে ওঠে সবুজ, ক্ষুধার্ত ।

Saturday, October 5, 2013

নিস্পৃহতা ভালো । জীবনের প্রতি এটা থাকলে, তা সুখ ও দুঃখের বাইরে গিয়ে এক নিরাসক্ত জগত তৈরি করে তোলে । এই নিস্পৃহতা পারসোনোলালাজড় হলে সম্পর্কের সেতুটি ভাঙে, অন্তত ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হতে থাকে । একটি সম্পর্ক টিকে থাকে আবেগের উপর ভর করে, যা মূলত কাজ করে সিমেন্ট হিসেবে । সম্পর্ককে যদি একটি সরলরেখা ধরি, তাহলে তার দুটি প্রান্তবিন্দুর ভূমিকা হবে আবেগ সচল রা
প্রবচন মাত্রেই অভিজ্ঞতাসঞ্জাত । অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণসম্ভব । এই যেমন, মুখে মিষ্টি অন্তরে বিষ/ সেই বন্ধুকে চিনে রাখিস । এই সতর্কবাণী কেন যে, বারবার, ভুলে যাই !
প্রবচন মাত্রেই অভিজ্ঞতাসঞ্জাত । অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণসম্ভব । এই যেমন, মুখে মিষ্টি অন্তরে বিষ/ সেই বন্ধুকে চিনে রাখিস । এই সতর্কবাণী কেন যে, বারবার, ভুলে যাই !
দিন কাটে উপেক্ষায়, রাত কাটে অপেক্ষায় । না কি তার বিপরীত চিত্র হবে, বলো, বক, বলো, হে ঠাকুরমার ঝুলি ! রূপার কাঠি নেই, সোনার কাঠি তো দূরের কথা, ঘুম ভাঙাতে চেয়েছিলাম তার, কথা ও শব্দে । বলো, কাঠ, বলো হে হিতোপদেশ, বাক্য কেন বৃথা যায় স্বপ্নের পেছনে ? ক্রোধ কেন শুয়ে থাকে কুণ্ডলী পাকিয়ে ? জাগে না ধর্ম, জাগে না নির্দেশাবলী, তাকে ঘিরে বড় হতে থাকে শূন্য চরাচর । বলো. ধারাপাত, বলো পঞ্চতন্ত্র, আমার মাতৃভাষা কেন এত উপেক্ষিত ? কেন আমি পান করি এত আত্মবিষ ?
মিথ্যার কোনো আবেগ থাকে না । আশ্চর্য এক শীতলতা তার দু'চোখে । আজ আমি সরে আসছি সেই শীতলতা থেকে, আবেগহীনতার কাছ থেকে । এক পা দু'পা করে ।
অভিসারী রাত্রি আজ পথে এসে দাঁড়িয়েছে, একা । মুহূর্মুহূ বিদ্যুচ্চমক থেমে গেছে কখন । ফলে, তাকে ঘিরে রেখেছে অন্ধকার । পথ পিচ্ছিল ও অনিশ্চিত, এই গোপন অভিসার তাকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে, জানা নেই তার । এটুকুই জানে সে, পথে নেমে, ভাবতে নেই কিছু । পথই দেখাবে তাকে পথ ।
কতটুকু দিতে পারো তুমি ?
ঠিক কতটুকু ? বলে ওঠে ভাঙা শ্লেট ।
কখনো লেখোনি অন্ধকার,
শুয়ে থাকা ছাদ আর নাভির অতল ।
লিখেছো কি ঘন উপত্যকা
ভিজে আছে নুনে ?
ভাঙা খড়ি আজ পড়ে আছে
তোমার হাতের অনাদরে ।
INVADOR, এই ইংরাজি শব্দটির মহিমা, আর কেউ বুঝুক আর নাই বুঝুক, ভারতবর্ষ বোঝে । আর্যরা এসেছিল ভিখিরির মত এদেশে । হিংস্র, নারীলোভী, কৃষিজীবী এক গোষ্ঠী এদেশে এসে, নিজেদের দাবি করে সুর বা সভ্য জাতি বলে । আর এদেশের দ্রাবিড় সভ্যতাকে ধ্বংস করে তাদের আধিপত্য বিস্তারের নামে । অথচ এই দ্রাবিড় সভ্যতা (হরপ্পা সভ্যতা) বহুগুণ বেশি উন্নত ছিল তাদের তুলনায় । তাদের অসুরবিজয়ের গাঁথা আজ রামায়ণ হিসেবে পূজিত । এই রামায়ণেও দুর্গার উপস্থিতি দেখতে পাই রাবণবধের প্রাক্কালে । কে এই দুর্গা ? আর্যরা চতুর গোষ্ঠী । তারা হরপ্পান সভ্যতার শেষচিহ্ন ভারতবর্ষের কয়েকজন সর্দারনীকে দেবী হিসেবে বরণ করে অসুরবিজয় সমাধা করেছিল । এই সর্দারনীদের একজন এই দুর্গা, হিমালয় এর পাদদেশ ও তত্‍সংলগ্ন এলাকা যার নিয়ন্ত্রাধীন ছিল । রাবণবধেও তার সাহায্য নিতে হয়েছিল সুর রামকে যার শরীরে ততদিনে দ্রাবিড়রক্ত ঢুকে গেছে । কেন না, আর্যরা এসে এদেশে প্রথম যা করেছিল, তা ঐ নারীলুণ্ঠন । সেই লুণ্ঠিত নারীরক্ত ছিল রামের রক্তে । যে কারণে তার দেহ উজ্জ্বল শ্যাম ।
এই INVADOR বা হানাদারদের উত্‍পাত ভারতবর্ষে হয়েছে সবচেয়ে বেশি । শক হূণ গ্রীক, পাঠান, মোঘল থেকে শুরু করে ইংরেজ অবধি কত কত গোষ্ঠী এসে হানা দিয়েছে এই দেশ, তার ইয়ত্তা নেই । কেউ লুঠপাট করে ফিরে চলে গেছে । কেউ থেকে গেছে ক্ষমতার লোভে । যারা থেকে গেছে দীর্ঘকাল, তাদের আধিপত্য বিস্তারের কাহিনী হয়ে ওঠেছে এদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি । ফলে আমাদের দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি মূলত আধিপত্যবাদীদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি । পাঠান বা মোঘল রাজত্বের হাত ধরে এদেশে মুসলিম ধর্মের আগ্রাসনের শুরু । তার আগে হিন্দু বৌদ্ধ বা জৈন ধর্মের আগ্রাসনকথা আমরা জানি । রাজক্ষমতার হাত ধরে ধর্মের এই আগ্রাসন মেনে নিতে হয়েছে এদেশের নিরীহ মানুষজনদেল । পর্তুগীজ বা ইংরেজশাসনকালেও এভাবেই খ্রীস্টান ধর্মের আবির্ভাব । এই আধিপত্যবাদের নোংরা খেলা এখনও অব্যাহত যা মানা উচিত নয় কোনো সচেতন মানুষের পক্ষে ।
অতিজীবিত, একরাম আলির কাব্যগ্রন্থের নাম । সেই নাম ধার করে, আমি লিখতে শুরু করেছিলাম এক উপন্যাস, যার প্রথমপর্ব প্রকাশিত হয়েছিল পল্লব ভট্টাচার্য সম্পাদিত 'উত্তরপুরুষ' এর প্রথম সংখ্যায় । দ্বিতীয়পর্ব প্রকাশিত হয় সমীরণ রায় সম্পাদিত 'ত্রিপুরা দর্পণ' শারদীয় সংখ্যায় ।
উপন্যাসটির পরিণতি কি হবে, তা নিশ্চিত নই, বলে, আমি বাকি পর্বগুলি লিখতে পারিনি । এই উপন্যাসটি বিদ্বজনদের নজর কেড়েছিল, বলে, সামান্য দুর্বলতাও রয়ে গেছে উপন্যাসটির প্রতি ।
উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র দুটি, সময় আর পরী ।
এই পরী, বারবার, ঘুরেফিরে এসেছে আমার লেখায় । 'হননমুহূর্ত' নামে আমার এক গল্পগ্রন্থের শেষ গল্পটিতে, পরী এসেছে । সেই পরীকে পুষতেন এক লোক । পরী ধরার গল্প আমাদের পরিবারে চালু আছে দীর্ঘবছর ধরে । আমার মা-কেও না কি, তার ছোটবেলায়, ধরে নিয়ে গিয়েছিল পরী । পরে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় ১৭ মিঞা হাওরের মাঝখানে যে ঘন বেতঝোঁপ, তার মাঝখানে, বালিতে স্নানরত অবস্থায় ।
আমার সকল স্বপ্নে, পিতৃ-মাতৃসূত্রে চলে এসেছে পরী । আমার এই অভিশপ্ত জীবন আসলে এক পরীকথা, যা থেকে নিস্তার নেই আমার ।
আমার মা নিজেই ছিলেন এক পরী । তার দুটি ডানা ছিঁড়ে রেখেছিলেন আমার জন্মদাতা । নৃত্যশিল্পী হতে হতে, ছিন্নডানা আমার মা, পুরুষতন্ত্রের বলি হয়ে, মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন একসময় । সে ছিল সাময়িক । তারপর, সব অগ্রাহ্য করে, এই পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ে, পেরেছিলেন নিজ পায়ে দাঁড়াতে ।
পরী সব পারে, এই ধারণা মা-র মগজে যিনি ঢুকিয়েছিলেন, তিনি মা-র শ্বাশুড়ি । আর তিনিই আমার মাথা খেয়েছিলেন চিবিয়ে । তিনিই, মৃত্যুর প্রাক-মুহূর্তে, তর্জনীসংকেতে জানান, পরী বিনা গতি নেই আমার ।
প্রীতি আচার্য জানেন আমার এই পরীকথা । তাকেও, আজ, মনে হয় সেই ছিন্নডানা পরী ।
ছাই

এমন একটা গাছ, ছায়া নেই, আর, সে শুকিয়ে যাচ্ছে, একা ।
পাতাগুলি ঝরে গেছে শীতে, বসন্তেও রুখুসুখু
তার ডালপালা । এই দৃশ্য, গত এপরিলে, দেখে,
চমকে উঠেছি । দুহাজার চার ছিল সম্ভবত । ঐ গাছের নিচে এক
বেদী, তাতে তিনটে কিশোরী ।
গান গাইছিলো এই বসন্তের । একটা কোকিল ঘুরে ঘুরে
ডেকে যাচ্ছে তার সঙ্গিনীকে ।
গাছটাকে, দেখে, মনে হলো, তার প্রাণে
আগুনের ছাই আছে । ঐ ছাই সরিয়ে দিলে, সেও ফিরে পাবে
তার ছায়া । সবুজ পাতার
ঢেউ তাকে মাতিয়ে তুলবে পুনরায় ।
মরুভূমি নয়, এই মাটি এখনো উর্বর । গাছ
প্রাণময় হলে, মেঘ ডেকে আনবে মাটিতে । ছায়া
হবে শীতল, বিস্তৃত । আমি,
আর কিছুই করিনি, সেই থেকে, তার ছাই তুলে নিয়ে উড়িয়ে দিয়েছি
শূন্যে, পিতৃলোকে ।

এতদিন পর, মনে হচ্ছে, সেই ছাই
আজ গ্রাস করতে আসছে, হ্যাঁ, আমাকেই !

Monday, September 30, 2013

সে আমার ধুকপুক । আমার আতংক ও উচ্ছ্বাস । মুক্তি ও বিষাদ । সে আমার অবসরকাল । ২০১৪ নভেম্বর এর প্রথমদিন থেকে তার সঙ্গে আমার আমৃত্যু সহবাস । সে আসছে, বলে, নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছি । ঝুলকালি পরিস্কার করে ঝকঝকে করে রাখছি আমার মন । প্রেমিকের মতো । ভুল বললাম, আমি তো তার প্রেমিকই । তার হাত ধরে ঘুরে আসবো সিনিয়র সিটিজেনদের নির্জন দ্বীপ । শুয়ে থাকবো বালির উপরে । সমুদ্রকে ডেকে আনবো ঘরের কাছে । সমুদ্র বলতেই মনে পড়ে গেলো, নুলিয়ার কথা । আমিও কি নুলিয়া নই এ জীবনে ? কিছুটা সাঁতার আমিও কাটিনি কখনও ? তবে. সাঁতারের চেয়ে, নাকে-মুখে জল নিয়ে আমি কি তাকিয়ে থাকিনি তার দিকে ? সে আমার মরণ, আমার অথর্ববেদ !
ডাক্তারি শাস্ত্রমতে মাত্র তিন পেগ বাকার্ডি স্বাস্থ্যসম্মত । শাস্ত্রবচন মানতে গিয়ে. টেবিলে রাখা শুয়োরে মাংস ফ্রাই হাফিজ হয়ে গেলো এক লহমায় । এই হাফিজ করার বিদ্যে শেখার জন্য, হে তরুণী, তোমার চেয়ে বড় শিক্ষক আর নেই ।
সবচেয়ে সহজ কাজ কবিতা লেখা । যা খুশি লিখে ফেললেই হলো । এ বিষয়ে, আমাদের এক পরিচিত ভদ্রলোক, সত্য নন্দী, বলেছিলেন, খবরের কাগজের ডাবল কলমের এক রিপোর্টকে ব্লেড দিয়ে মাঝখানে কেটে দিলে, যা দাঁড়াবে, তাই আধুনিক কবিতা । এবং তিনি তা প্র্যাকটিক্যালি করে দেখিয়েছিলেন । "যুবতী দেখেনি সন্ধ্যায়/ আসিল পুলিশ কাঁটাতার/ থেকে আসে লোক/বলিল সে /দায়ী ঐ রাত..." এভাবেই লেখা হচ্ছে, "দেয়াল থেকে বেরিয়ে এল ঘর, /হ্রেষা থেকে ঘোড়া, শীত্‍কার থেকে রমণ গেছে উড়ে" ইত্যাদি ইত্যাদি । সন্দেহ নেই, ফুলপাখিলতাপাতানীলাকাশমেঘপ্রেমাদি নিয়েও লেখা হচ্ছে খুব । কত সহজ এসব লেখা । তারপর অর্থ না বুঝতে পারলেও ক্ষতি নেই, উত্‍পল কুমার বসুর মত বললেই হলো, চিন্তা নেই, আমাদের কালুবাবু আছেন ।
সবচেয়ে সহজ কাজ কবিতা লেখা । যা খুশি লিখে ফেললেই হলো । এ বিষয়ে, আমাদের এক পরিচিত ভদ্রলোক, সত্য নন্দী, বলেছিলেন, খবরের কাগজের ডাবল কলমের এক রিপোর্টকে ব্লেড দিয়ে মাঝখানে কেটে দিলে, যা দাঁড়াবে, তাই আধুনিক কবিতা । এবং তিনি তা প্র্যাকটিক্যালি করে দেখিয়েছিলেন । "যুবতী দেখেনি সন্ধ্যায়/ আসিল পুলিশ কাঁটাতার/ থেকে আসে লোক/বলিল সে /দায়ী ঐ রাত..." এভাবেই লেখা হচ্ছে, "দেয়াল থেকে বেরিয়ে এল ঘর, /হ্রেষা থেকে ঘোড়া, শীত্‍কার থেকে রমণ গেছে উড়ে" ইত্যাদি ইত্যাদি । সন্দেহ নেই, ফুলপাখিলতাপাতানীলাকাশমেঘপ্রেমাদি নিয়েও লেখা হচ্ছে খুব । কত সহজ এসব লেখা । তারপর অর্থ না বুঝতে পারলেও ক্ষতি নেই, উত্‍পল কুমার বসুর মত বললেই হলো, চিন্তা নেই, আমাদের কালুবাবু আছেন ।
ঈর্ষা করি, অন্ধকার । ঈর্ষা করি, রাত ।
ঈর্ষা করি, শূন্য ক্লাস, তরুণ কবির ধারাপাত ।
এই নাও, দ্রৌপদীর শাড়ি, এই নাও, পাশা খেলা,
পুনরায় শুরু হোক আমাদের অজ্ঞাতবাসের দিনগুলি ।
পকেটে তামাক রেখো, চুয়াক বনেই পাবো, বন মোরগের ঝুঁটি সহ,
কার্তুজ শিকারপর্বে লাগে, রেখে দিও ।
চা ও কফি সঙ্গে নিও । কোথায় লুকোবো ঠিক নেই,
দু একটা বর্ষাতি রাখতে পারো । মশারিও নেবে ?
খাগড়াছড়ির দিকে এসব পাবে না । নিও সব । হাতঘড়িটিও নিও ।

সীমান্ত প্রহরী এলে, বলো, পাশা খেলা ছাড়া আমাদের কোনো খেলা নেই ।
এই নাও, দ্রৌপদীর শাড়ি, এই নাও, পাশা খেলা,
পুনরায় শুরু হোক আমাদের অজ্ঞাতবাসের দিনগুলি ।
পকেটে তামাক রেখো, চুয়াক বনেই পাবো, বন মোরগের ঝুঁটি সহ,
কার্তুজ শিকারপর্বে লাগে, রেখে দিও ।
চা ও কফি সঙ্গে নিও । কোথায় লুকোবো ঠিক নেই,
দু একটা বর্ষাতি রাখতে পারো । মশারিও নেবে ?
খাগড়াছড়ির দিকে এসব পাবে না । নিও সব । হাতঘড়িটিও নিও ।

সীমান্ত প্রহরী এলে, বলো, পাশা খেলা ছাড়া আমাদের কোনো খেলা নেই ।
আজ আমার মন খারাপ । আজ তোমার মন খারাপ । আজ তাহার মন খারাপ । মন খারাপ ভাঙা ঘড়িটির । মন খারাপ ঐ দেয়ালের । মন খারাপ আঁশবটিটির । এই মন খারাপ নিয়ে আজ বিবৃতি দেবেন মাননীয় মন খারাপের মন্ত্রী । মন খারাপ নিয়ে বিরোধীরা নামবেন রাস্তায় । কাঁদানে গ্যাসের বদলে আজ মন খারাপের গ্যাস ছুঁড়বে পুলিশবাহিনী । আর আমরা টিভির চ্যানেল ধুন্ধুমার বিতর্ক শুরু করে দেবো । খবরের কাগজে পোস্ট এডিটরিয়লে এই সব নিয়ে কলম লিখবেন এক মন খারাপ লেখক । এসব দেখতে দেখতে তোমার মন খারাপ তামাদি হয়ে যাবে । আমার মন খারাপ তামাদি হয়ে যাবে । তাহার মন খারাপ তামাদি হয়ে যাবে ।
কথাটি মিথ্যে নয় । কথাটি সত্যিও নয় । কথাটি মিথ্যে ও সত্য থেকে দূরে, মৃত নদীটির ।
নিদ্রা আর ঘুম দুজনেই যুক্তি করে চলে গেছে বনদুয়ারে । আমাকে একা ফেলে রেখে ।
যিনি পণ্ড করেন= পণ্ডিত । এই ব্যাসকূটটি মনে পড়ে গেলো হিন্দুপণ্ডিতদের দেখে । জানি, রে রে করে তেড়ে আসবেন পণ্ডিতকূল, অভিশাপ দেবেন আমাকে । ভাগ্যিস, কলিযুগ এখনও শেষ হয়নি, না হলে, তাদের অভিশাপে ভস্ম হয়ে যেতাম । তবে, পণ্ডিতকূলের জ্ঞাতার্থে জানাই, আমার জন্ম পূর্বফালগুনী নক্ষত্রে । এর জাতক অভিশপ্ত । জুয়াড়ি । বহুগামী । নিন্দিত । জেদী বা একরোখা । আনন্দবাদী । অসম্ভব কৌতুহলী । তৃতীয়ে ক্ষীণচন্দ্র রাহুগ্রস্ত বলে অস্থিরতাদোষেদুষ্ট । এই বক্তব্য আমার নয়, পরাশরী হোরা ও ভি রমণের । তাঁরা পণ্ডিত এবং আমার জীবনের সকল উদ্যোগ পণ্ড করতে তাঁদের এই বাণীসমূহও কম দায়ী নয় ।

যিনি পণ্ড করেন= পণ্ডিত । এই ব্যাসকূটটি মনে পড়ে গেলো হিন্দুপণ্ডিতদের দেখে । জানি, রে রে করে তেড়ে আসবেন পণ্ডিতকূল, অভিশাপ দেবেন আমাকে । ভাগ্যিস, কলিযুগ এখনও শেষ হয়নি, না হলে, তাদের অভিশাপে ভস্ম হয়ে যেতাম । তবে, পণ্ডিতকূলের জ্ঞাতার্থে জানাই, আমার জন্ম পূর্বফালগুনী নক্ষত্রে । এর জাতক অভিশপ্ত । জুয়াড়ি । বহুগামী । নিন্দিত । জেদী বা একরোখা । আনন্দবাদী । অসম্ভব কৌতুহলী । তৃতীয়ে ক্ষীণচন্দ্র রাহুগ্রস্ত বলে অস্থিরতাদোষেদুষ্ট । এই বক্তব্য আমার নয়, পরাশরী হোরা ও ভি রমণের । তাঁরা পণ্ডিত এবং আমার জীবনের সকল উদ্যোগ পণ্ড করতে তাঁদের এই বাণীসমূহও কম দায়ী নয় ।

ধর্মেও থাকিনি, জিরাফেও থাকিনি ...
ধর্মেও থাকিনি, জিরাফেও থাকিনি ...
এক ফেসবুক বন্ধু, উত্তম দত্ত, আমার "ধর্মেও থাকিনি জিরাফেও থাকিনি" স্ট্যাটাসটিতে কমেন্ট করতে গিয়ে বলেছেন, "স্বভাবতই তিনি স্বাধীন ও ব্রাত্য" । তাঁর এই মন্তব্য, সংশয় নেই, আমাকে চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে । স্বাধীন ও ব্রাত্য শব্দদুটির মধ্যে আপাত কোনো সম্পর্ক না থাকলেও, লক্ষ্য করি, রয়েছে গূঢ় এক ইশারা । তা হলো, আশ্চর্যজনকভাবে, দুটি শব্দই, ব্যাক্তিজীবনে, পরস্পরের পরিপূরক । স্বাধীনতাকামী অধিকাংশ লোকের জীবনেই নেমে এসেছে ব্রাত্য রয়ে যাবার অন্ধ এক অভিশাপ । তার মানে, স্বাধীনতাকামীদের আজীবন ব্রাত্য থেকে যাবার এক সম্ভাবনা ধাওয়া করে তাদের যা থেকে মুক্তির একটিই পথ, আপোষকামী হয়ে যাওয়া । এই আপোষকামিতা সঙ্ঘবিলাসীদের পক্ষে শোভন, কিন্তু স্বাধীনতাকামীর পক্ষে মেরুদণ্ড বিসর্জনসমান । ফলে, তাকে মাথা পেতে নিতে হয় ঐ ব্রাত্য থাকার অভিশাপ । অনেকে, ভুল করে, একে অহংসর্বস্ব, বলে, প্রচার করতে থাকে আর এই প্রচারকারীরাই, কে না জানে. মূলত সঙ্ঘবিলাসী ।
লেখো, লেখো, বলে ওঠে ছায়া,
লিখবো কি ? আমি তো বেহায়া ।
আমি কি প্রত্যাখ্যান করবো এই সকাল ও সন্ধ্যাকে ? অস্বীকার করবো মৃত নক্ষত্রগুলিকে ? ঐ ছাইচূর্ণকে ? আমি কি চামড়া খুলে ডুগডুগি বানাতে দেবো, ঐ ডুগডুগি বাজবে ঈশ্বরের চতুর্থবিবাহে ? চলে যাবো ঐ রক্তহীন দ্বীপে ? সামনে সাতটি রাস্তা, সবকটিই ধাবিত তোমার দিকে । চলে যাবো ধূসরের থেকে ফিরে এসে তোমার হলুদের কাছে ? বলে ওঠবো কি, তোমার বয়ফ্রেণ্ড আছে, আমার আছে মৃতদের শকট ?
ঈশ্বর মৃত, কবিতাও মৃত । মৃত এই পৃথিবীও । যা কিছু জীবিত মনে হয়, তা আসলে, এক ধারণা । আমরা ধারণার মৃত সন্তান ।
রিক্ত এই হাত ।
কি দেবো তোমাকে ?
শূন্য দিনগুলি ?
অন্ধ এই রাত্রি ?
অবৈধ দুপুর ?
হারানো নদীটি ?

কি দেবো তোমাকে,
হে পলিটব্যুরো ?
এই নাও ভুর্জপত্র, লেখো, হ্রীং শ্রীং ক্লীং

তুমি যত লেখো, হয়ে ওঠি বিধিলিং !
দুই খান কথা আছে আমার ।
১. আমার স্বাধীনতা আমারই । আর কারও স্বাধীনতার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে আমি তা উপভোগ করবই ।
২. কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করব না । তা বলে আমার মাথা বিকিয়ে দিয়ে তার স্বাধীনতার অত্যাচার নির্বিবাদে মেনে নেব, তাও নয় ।
সংযোজন : মাথা নুইয়ে রাখি শুধু ভালোবাসার কাছেই । এটাকে কেউ দুর্বলতা ভাবলে, ভুল করা হবে ।
দুই খান কথা আছে আমার ।
১. আমার স্বাধীনতা আমারই । আর কারও স্বাধীনতার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে আমি তা উপভোগ করবই ।
২. কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করব না । তা বলে আমার মাথা বিকিয়ে দিয়ে তার স্বাধীনতার অত্যাচার নির্বিবাদে মেনে নেব, তাও নয় ।
সংযোজন : মাথা নুইয়ে রাখি শুধু ভালোবাসার কাছেই । এটাকে কেউ দুর্বলতা ভাবলে, ভুল করা হবে ।
মুশকিল আর আসান, দুজনেই, আজ, আমার ঘরে এসেছে । একসঙ্গে ।
দক্ষিণ তোমার, উত্তর আমার, বলে, ভাগ করে যারা নিচ্ছে আমার স্বপ্ন, তাদের চোখের তারা মূলত মাংসখেকো ডাইনোসরের, জিভ ড্রাগনের, দাঁতগুলি ব্রহ্মকুমীরের, নখগুলি তীক্ষ্ণ বর্শাফলক ।
আমি প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছি আমার স্বপ্নকে বাঁচাতে । টাইটান সিনেমার ঐ নায়কের মত, একা ।

Tuesday, September 24, 2013

চলন অসম, কিছুটা মাতাল, যেন সে আসছে বহুদূর জুমক্ষেত থেকে । তার পায়ে বুনো শুয়োরের খুর, নিচু মাথা, মূলত লজ্জ্বার ভারে । ফিরে সে আসছে অপমানে, তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে ঐ সকাল, প্রণয়গোধূলি আর রাত্রি । তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে মৃতনদীটিও । অপমান কেড়ে নেয় পুরুষের নক্ষত্রক্ষমতা, একথা জানে না, বলে, ফিরে আসছে, সে টিলা বেয়ে নিচে, যেখানে অপেক্ষা করে বসে আছে মগ্ন সে পাতাল ।

Monday, September 23, 2013

ছায়া থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে রোদসাইকেল । ঐ সাইকেলে চেপে বসে আছে মন্দোদরী, মানে, রাবণের বউ । সে যাচ্ছে বিভীষণের কাছে । আর বিভীষণ নিজের ঘরে আগুন লাগিয়ে পরীক্ষা করছে সরমার সততা । তুমি এসবের কিছুই জানো না, শুধু দেখেছো প্রমীলার ঐ অহংকার । আমি কি ডরাই, সখি, ভিখারী মেঘনাদকে, বলে, সেও চলে গিয়েছিলো দুপুরের কাছে । তুমি, দুপুর নয়, গোধূলির কাছে যেও । তাকে চুমু খেও । তোমার রোদসাইকেল নেই, অটো করে চলে যেও অসম প্রণয়ে ।
চার পংক্তির এই খেলা জমে না তোমাকে ছাড়া ।
আমি তো দর্শক মাত্র, রাতে তার তীব্র কড়া নাড়া
শোনোনি কখনো ? আমি শুনি, সে আসে নিরন্ন পায়ে,
একা, ডুবুরির মতো, ডুব দেবে রেনকোট গায়ে ।
মিথ্যা বলিব না । ধর্মাবতার, একটি উপন্যাস লিখিতে পারিলেই এই জগত হইতে বিদায় নিব, মনস্থ করিয়াছি । এই জগত আমাকে যত্‍সামান্য হইলেও পরিচিতি দিয়াছে, যাহা আমার প্রাপ্য ছিল না । অযোগ্যের প্রাপ্য বলিয়া কিছুই থাকে না । আমি জানিয়াছি, এই জগতের সকলই ধুলিবত্‍ । তবুও এই উপন্যাসটি লিখিতে চাহিতেছি, যাহাতে আমার মাতৃদেবীর আত্মা যত্‍সামান্য হইলেও শান্তি পায় । ইহজীবনে ভালোবাসা ব্যতীত কিছু চাহি নাই, ফলত তরুণী ভার্যার মাথা গুঁজিবার এক বাসস্থানও দিতে পারি নাই তাহাকে । বড় অভিমানিনী তিনি । এই জগত ত্যাগ করিয়া গেলে তাহার যে কি দুর্দশা হইবে, তাহা ভাবিয়া ভীত আমি । তথাপি যাইতে হইবে আমাকে । তাহার আগে ঐ উপন্যাসখানা রচনা করিতে চাহিতেছি । এই লোভ বা বাসনার জন্য যারপর নাই অপরাধী ও লজ্জিতও বটে । আমার এই কথা শুনিবার পর, যাহা রায় দিবেন, ধর্ম না মানিলেও, তাহা নতমস্তকে মানিয়া নিব ।