Monday, September 30, 2013

সে আমার ধুকপুক । আমার আতংক ও উচ্ছ্বাস । মুক্তি ও বিষাদ । সে আমার অবসরকাল । ২০১৪ নভেম্বর এর প্রথমদিন থেকে তার সঙ্গে আমার আমৃত্যু সহবাস । সে আসছে, বলে, নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছি । ঝুলকালি পরিস্কার করে ঝকঝকে করে রাখছি আমার মন । প্রেমিকের মতো । ভুল বললাম, আমি তো তার প্রেমিকই । তার হাত ধরে ঘুরে আসবো সিনিয়র সিটিজেনদের নির্জন দ্বীপ । শুয়ে থাকবো বালির উপরে । সমুদ্রকে ডেকে আনবো ঘরের কাছে । সমুদ্র বলতেই মনে পড়ে গেলো, নুলিয়ার কথা । আমিও কি নুলিয়া নই এ জীবনে ? কিছুটা সাঁতার আমিও কাটিনি কখনও ? তবে. সাঁতারের চেয়ে, নাকে-মুখে জল নিয়ে আমি কি তাকিয়ে থাকিনি তার দিকে ? সে আমার মরণ, আমার অথর্ববেদ !
ডাক্তারি শাস্ত্রমতে মাত্র তিন পেগ বাকার্ডি স্বাস্থ্যসম্মত । শাস্ত্রবচন মানতে গিয়ে. টেবিলে রাখা শুয়োরে মাংস ফ্রাই হাফিজ হয়ে গেলো এক লহমায় । এই হাফিজ করার বিদ্যে শেখার জন্য, হে তরুণী, তোমার চেয়ে বড় শিক্ষক আর নেই ।
সবচেয়ে সহজ কাজ কবিতা লেখা । যা খুশি লিখে ফেললেই হলো । এ বিষয়ে, আমাদের এক পরিচিত ভদ্রলোক, সত্য নন্দী, বলেছিলেন, খবরের কাগজের ডাবল কলমের এক রিপোর্টকে ব্লেড দিয়ে মাঝখানে কেটে দিলে, যা দাঁড়াবে, তাই আধুনিক কবিতা । এবং তিনি তা প্র্যাকটিক্যালি করে দেখিয়েছিলেন । "যুবতী দেখেনি সন্ধ্যায়/ আসিল পুলিশ কাঁটাতার/ থেকে আসে লোক/বলিল সে /দায়ী ঐ রাত..." এভাবেই লেখা হচ্ছে, "দেয়াল থেকে বেরিয়ে এল ঘর, /হ্রেষা থেকে ঘোড়া, শীত্‍কার থেকে রমণ গেছে উড়ে" ইত্যাদি ইত্যাদি । সন্দেহ নেই, ফুলপাখিলতাপাতানীলাকাশমেঘপ্রেমাদি নিয়েও লেখা হচ্ছে খুব । কত সহজ এসব লেখা । তারপর অর্থ না বুঝতে পারলেও ক্ষতি নেই, উত্‍পল কুমার বসুর মত বললেই হলো, চিন্তা নেই, আমাদের কালুবাবু আছেন ।
সবচেয়ে সহজ কাজ কবিতা লেখা । যা খুশি লিখে ফেললেই হলো । এ বিষয়ে, আমাদের এক পরিচিত ভদ্রলোক, সত্য নন্দী, বলেছিলেন, খবরের কাগজের ডাবল কলমের এক রিপোর্টকে ব্লেড দিয়ে মাঝখানে কেটে দিলে, যা দাঁড়াবে, তাই আধুনিক কবিতা । এবং তিনি তা প্র্যাকটিক্যালি করে দেখিয়েছিলেন । "যুবতী দেখেনি সন্ধ্যায়/ আসিল পুলিশ কাঁটাতার/ থেকে আসে লোক/বলিল সে /দায়ী ঐ রাত..." এভাবেই লেখা হচ্ছে, "দেয়াল থেকে বেরিয়ে এল ঘর, /হ্রেষা থেকে ঘোড়া, শীত্‍কার থেকে রমণ গেছে উড়ে" ইত্যাদি ইত্যাদি । সন্দেহ নেই, ফুলপাখিলতাপাতানীলাকাশমেঘপ্রেমাদি নিয়েও লেখা হচ্ছে খুব । কত সহজ এসব লেখা । তারপর অর্থ না বুঝতে পারলেও ক্ষতি নেই, উত্‍পল কুমার বসুর মত বললেই হলো, চিন্তা নেই, আমাদের কালুবাবু আছেন ।
ঈর্ষা করি, অন্ধকার । ঈর্ষা করি, রাত ।
ঈর্ষা করি, শূন্য ক্লাস, তরুণ কবির ধারাপাত ।
এই নাও, দ্রৌপদীর শাড়ি, এই নাও, পাশা খেলা,
পুনরায় শুরু হোক আমাদের অজ্ঞাতবাসের দিনগুলি ।
পকেটে তামাক রেখো, চুয়াক বনেই পাবো, বন মোরগের ঝুঁটি সহ,
কার্তুজ শিকারপর্বে লাগে, রেখে দিও ।
চা ও কফি সঙ্গে নিও । কোথায় লুকোবো ঠিক নেই,
দু একটা বর্ষাতি রাখতে পারো । মশারিও নেবে ?
খাগড়াছড়ির দিকে এসব পাবে না । নিও সব । হাতঘড়িটিও নিও ।

সীমান্ত প্রহরী এলে, বলো, পাশা খেলা ছাড়া আমাদের কোনো খেলা নেই ।
এই নাও, দ্রৌপদীর শাড়ি, এই নাও, পাশা খেলা,
পুনরায় শুরু হোক আমাদের অজ্ঞাতবাসের দিনগুলি ।
পকেটে তামাক রেখো, চুয়াক বনেই পাবো, বন মোরগের ঝুঁটি সহ,
কার্তুজ শিকারপর্বে লাগে, রেখে দিও ।
চা ও কফি সঙ্গে নিও । কোথায় লুকোবো ঠিক নেই,
দু একটা বর্ষাতি রাখতে পারো । মশারিও নেবে ?
খাগড়াছড়ির দিকে এসব পাবে না । নিও সব । হাতঘড়িটিও নিও ।

সীমান্ত প্রহরী এলে, বলো, পাশা খেলা ছাড়া আমাদের কোনো খেলা নেই ।
আজ আমার মন খারাপ । আজ তোমার মন খারাপ । আজ তাহার মন খারাপ । মন খারাপ ভাঙা ঘড়িটির । মন খারাপ ঐ দেয়ালের । মন খারাপ আঁশবটিটির । এই মন খারাপ নিয়ে আজ বিবৃতি দেবেন মাননীয় মন খারাপের মন্ত্রী । মন খারাপ নিয়ে বিরোধীরা নামবেন রাস্তায় । কাঁদানে গ্যাসের বদলে আজ মন খারাপের গ্যাস ছুঁড়বে পুলিশবাহিনী । আর আমরা টিভির চ্যানেল ধুন্ধুমার বিতর্ক শুরু করে দেবো । খবরের কাগজে পোস্ট এডিটরিয়লে এই সব নিয়ে কলম লিখবেন এক মন খারাপ লেখক । এসব দেখতে দেখতে তোমার মন খারাপ তামাদি হয়ে যাবে । আমার মন খারাপ তামাদি হয়ে যাবে । তাহার মন খারাপ তামাদি হয়ে যাবে ।
কথাটি মিথ্যে নয় । কথাটি সত্যিও নয় । কথাটি মিথ্যে ও সত্য থেকে দূরে, মৃত নদীটির ।
নিদ্রা আর ঘুম দুজনেই যুক্তি করে চলে গেছে বনদুয়ারে । আমাকে একা ফেলে রেখে ।
যিনি পণ্ড করেন= পণ্ডিত । এই ব্যাসকূটটি মনে পড়ে গেলো হিন্দুপণ্ডিতদের দেখে । জানি, রে রে করে তেড়ে আসবেন পণ্ডিতকূল, অভিশাপ দেবেন আমাকে । ভাগ্যিস, কলিযুগ এখনও শেষ হয়নি, না হলে, তাদের অভিশাপে ভস্ম হয়ে যেতাম । তবে, পণ্ডিতকূলের জ্ঞাতার্থে জানাই, আমার জন্ম পূর্বফালগুনী নক্ষত্রে । এর জাতক অভিশপ্ত । জুয়াড়ি । বহুগামী । নিন্দিত । জেদী বা একরোখা । আনন্দবাদী । অসম্ভব কৌতুহলী । তৃতীয়ে ক্ষীণচন্দ্র রাহুগ্রস্ত বলে অস্থিরতাদোষেদুষ্ট । এই বক্তব্য আমার নয়, পরাশরী হোরা ও ভি রমণের । তাঁরা পণ্ডিত এবং আমার জীবনের সকল উদ্যোগ পণ্ড করতে তাঁদের এই বাণীসমূহও কম দায়ী নয় ।

যিনি পণ্ড করেন= পণ্ডিত । এই ব্যাসকূটটি মনে পড়ে গেলো হিন্দুপণ্ডিতদের দেখে । জানি, রে রে করে তেড়ে আসবেন পণ্ডিতকূল, অভিশাপ দেবেন আমাকে । ভাগ্যিস, কলিযুগ এখনও শেষ হয়নি, না হলে, তাদের অভিশাপে ভস্ম হয়ে যেতাম । তবে, পণ্ডিতকূলের জ্ঞাতার্থে জানাই, আমার জন্ম পূর্বফালগুনী নক্ষত্রে । এর জাতক অভিশপ্ত । জুয়াড়ি । বহুগামী । নিন্দিত । জেদী বা একরোখা । আনন্দবাদী । অসম্ভব কৌতুহলী । তৃতীয়ে ক্ষীণচন্দ্র রাহুগ্রস্ত বলে অস্থিরতাদোষেদুষ্ট । এই বক্তব্য আমার নয়, পরাশরী হোরা ও ভি রমণের । তাঁরা পণ্ডিত এবং আমার জীবনের সকল উদ্যোগ পণ্ড করতে তাঁদের এই বাণীসমূহও কম দায়ী নয় ।

ধর্মেও থাকিনি, জিরাফেও থাকিনি ...
ধর্মেও থাকিনি, জিরাফেও থাকিনি ...
এক ফেসবুক বন্ধু, উত্তম দত্ত, আমার "ধর্মেও থাকিনি জিরাফেও থাকিনি" স্ট্যাটাসটিতে কমেন্ট করতে গিয়ে বলেছেন, "স্বভাবতই তিনি স্বাধীন ও ব্রাত্য" । তাঁর এই মন্তব্য, সংশয় নেই, আমাকে চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে । স্বাধীন ও ব্রাত্য শব্দদুটির মধ্যে আপাত কোনো সম্পর্ক না থাকলেও, লক্ষ্য করি, রয়েছে গূঢ় এক ইশারা । তা হলো, আশ্চর্যজনকভাবে, দুটি শব্দই, ব্যাক্তিজীবনে, পরস্পরের পরিপূরক । স্বাধীনতাকামী অধিকাংশ লোকের জীবনেই নেমে এসেছে ব্রাত্য রয়ে যাবার অন্ধ এক অভিশাপ । তার মানে, স্বাধীনতাকামীদের আজীবন ব্রাত্য থেকে যাবার এক সম্ভাবনা ধাওয়া করে তাদের যা থেকে মুক্তির একটিই পথ, আপোষকামী হয়ে যাওয়া । এই আপোষকামিতা সঙ্ঘবিলাসীদের পক্ষে শোভন, কিন্তু স্বাধীনতাকামীর পক্ষে মেরুদণ্ড বিসর্জনসমান । ফলে, তাকে মাথা পেতে নিতে হয় ঐ ব্রাত্য থাকার অভিশাপ । অনেকে, ভুল করে, একে অহংসর্বস্ব, বলে, প্রচার করতে থাকে আর এই প্রচারকারীরাই, কে না জানে. মূলত সঙ্ঘবিলাসী ।
লেখো, লেখো, বলে ওঠে ছায়া,
লিখবো কি ? আমি তো বেহায়া ।
আমি কি প্রত্যাখ্যান করবো এই সকাল ও সন্ধ্যাকে ? অস্বীকার করবো মৃত নক্ষত্রগুলিকে ? ঐ ছাইচূর্ণকে ? আমি কি চামড়া খুলে ডুগডুগি বানাতে দেবো, ঐ ডুগডুগি বাজবে ঈশ্বরের চতুর্থবিবাহে ? চলে যাবো ঐ রক্তহীন দ্বীপে ? সামনে সাতটি রাস্তা, সবকটিই ধাবিত তোমার দিকে । চলে যাবো ধূসরের থেকে ফিরে এসে তোমার হলুদের কাছে ? বলে ওঠবো কি, তোমার বয়ফ্রেণ্ড আছে, আমার আছে মৃতদের শকট ?
ঈশ্বর মৃত, কবিতাও মৃত । মৃত এই পৃথিবীও । যা কিছু জীবিত মনে হয়, তা আসলে, এক ধারণা । আমরা ধারণার মৃত সন্তান ।
রিক্ত এই হাত ।
কি দেবো তোমাকে ?
শূন্য দিনগুলি ?
অন্ধ এই রাত্রি ?
অবৈধ দুপুর ?
হারানো নদীটি ?

কি দেবো তোমাকে,
হে পলিটব্যুরো ?
এই নাও ভুর্জপত্র, লেখো, হ্রীং শ্রীং ক্লীং

তুমি যত লেখো, হয়ে ওঠি বিধিলিং !
দুই খান কথা আছে আমার ।
১. আমার স্বাধীনতা আমারই । আর কারও স্বাধীনতার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে আমি তা উপভোগ করবই ।
২. কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করব না । তা বলে আমার মাথা বিকিয়ে দিয়ে তার স্বাধীনতার অত্যাচার নির্বিবাদে মেনে নেব, তাও নয় ।
সংযোজন : মাথা নুইয়ে রাখি শুধু ভালোবাসার কাছেই । এটাকে কেউ দুর্বলতা ভাবলে, ভুল করা হবে ।
দুই খান কথা আছে আমার ।
১. আমার স্বাধীনতা আমারই । আর কারও স্বাধীনতার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে আমি তা উপভোগ করবই ।
২. কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করব না । তা বলে আমার মাথা বিকিয়ে দিয়ে তার স্বাধীনতার অত্যাচার নির্বিবাদে মেনে নেব, তাও নয় ।
সংযোজন : মাথা নুইয়ে রাখি শুধু ভালোবাসার কাছেই । এটাকে কেউ দুর্বলতা ভাবলে, ভুল করা হবে ।
মুশকিল আর আসান, দুজনেই, আজ, আমার ঘরে এসেছে । একসঙ্গে ।
দক্ষিণ তোমার, উত্তর আমার, বলে, ভাগ করে যারা নিচ্ছে আমার স্বপ্ন, তাদের চোখের তারা মূলত মাংসখেকো ডাইনোসরের, জিভ ড্রাগনের, দাঁতগুলি ব্রহ্মকুমীরের, নখগুলি তীক্ষ্ণ বর্শাফলক ।
আমি প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছি আমার স্বপ্নকে বাঁচাতে । টাইটান সিনেমার ঐ নায়কের মত, একা ।

Tuesday, September 24, 2013

চলন অসম, কিছুটা মাতাল, যেন সে আসছে বহুদূর জুমক্ষেত থেকে । তার পায়ে বুনো শুয়োরের খুর, নিচু মাথা, মূলত লজ্জ্বার ভারে । ফিরে সে আসছে অপমানে, তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে ঐ সকাল, প্রণয়গোধূলি আর রাত্রি । তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে মৃতনদীটিও । অপমান কেড়ে নেয় পুরুষের নক্ষত্রক্ষমতা, একথা জানে না, বলে, ফিরে আসছে, সে টিলা বেয়ে নিচে, যেখানে অপেক্ষা করে বসে আছে মগ্ন সে পাতাল ।

Monday, September 23, 2013

ছায়া থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে রোদসাইকেল । ঐ সাইকেলে চেপে বসে আছে মন্দোদরী, মানে, রাবণের বউ । সে যাচ্ছে বিভীষণের কাছে । আর বিভীষণ নিজের ঘরে আগুন লাগিয়ে পরীক্ষা করছে সরমার সততা । তুমি এসবের কিছুই জানো না, শুধু দেখেছো প্রমীলার ঐ অহংকার । আমি কি ডরাই, সখি, ভিখারী মেঘনাদকে, বলে, সেও চলে গিয়েছিলো দুপুরের কাছে । তুমি, দুপুর নয়, গোধূলির কাছে যেও । তাকে চুমু খেও । তোমার রোদসাইকেল নেই, অটো করে চলে যেও অসম প্রণয়ে ।
চার পংক্তির এই খেলা জমে না তোমাকে ছাড়া ।
আমি তো দর্শক মাত্র, রাতে তার তীব্র কড়া নাড়া
শোনোনি কখনো ? আমি শুনি, সে আসে নিরন্ন পায়ে,
একা, ডুবুরির মতো, ডুব দেবে রেনকোট গায়ে ।
মিথ্যা বলিব না । ধর্মাবতার, একটি উপন্যাস লিখিতে পারিলেই এই জগত হইতে বিদায় নিব, মনস্থ করিয়াছি । এই জগত আমাকে যত্‍সামান্য হইলেও পরিচিতি দিয়াছে, যাহা আমার প্রাপ্য ছিল না । অযোগ্যের প্রাপ্য বলিয়া কিছুই থাকে না । আমি জানিয়াছি, এই জগতের সকলই ধুলিবত্‍ । তবুও এই উপন্যাসটি লিখিতে চাহিতেছি, যাহাতে আমার মাতৃদেবীর আত্মা যত্‍সামান্য হইলেও শান্তি পায় । ইহজীবনে ভালোবাসা ব্যতীত কিছু চাহি নাই, ফলত তরুণী ভার্যার মাথা গুঁজিবার এক বাসস্থানও দিতে পারি নাই তাহাকে । বড় অভিমানিনী তিনি । এই জগত ত্যাগ করিয়া গেলে তাহার যে কি দুর্দশা হইবে, তাহা ভাবিয়া ভীত আমি । তথাপি যাইতে হইবে আমাকে । তাহার আগে ঐ উপন্যাসখানা রচনা করিতে চাহিতেছি । এই লোভ বা বাসনার জন্য যারপর নাই অপরাধী ও লজ্জিতও বটে । আমার এই কথা শুনিবার পর, যাহা রায় দিবেন, ধর্ম না মানিলেও, তাহা নতমস্তকে মানিয়া নিব ।
মিথ্যা বলিব না । ধর্মাবতার, একটি উপন্যাস লিখিতে পারিলেই এই জগত হইতে বিদায় নিব, মনস্থ করিয়াছি । এই জগত আমাকে যত্‍সামান্য হইলেও পরিচিতি দিয়াছে, যাহা আমার প্রাপ্য ছিল না । অযোগ্যের প্রাপ্য বলিয়া কিছুই থাকে না । আমি জানিয়াছি, এই জগতের সকলই ধুলিবত্‍ । তবুও এই উপন্যাসটি লিখিতে চাহিতেছি, যাহাতে আমার মাতৃদেবীর আত্মা যত্‍সামান্য হইলেও শান্তি পায় । ইহজীবনে ভালোবাসা ব্যতীত কিছু চাহি নাই, ফলত তরুণী ভার্যার মাথা গুঁজিবার এক বাসস্থানও দিতে পারি নাই তাহাকে । বড় অভিমানিনী তিনি । এই জগত ত্যাগ করিয়া গেলে তাহার যে কি দুর্দশা হইবে, তাহা ভাবিয়া ভীত আমি । তথাপি যাইতে হইবে আমাকে । তাহার আগে ঐ উপন্যাসখানা রচনা করিতে চাহিতেছি । এই লোভ বা বাসনার জন্য যারপর নাই অপরাধী ও লজ্জিতও বটে । আমার এই কথা শুনিবার পর, যাহা রায় দিবেন, ধর্ম না মানিলেও, তাহা নতমস্তকে মানিয়া নিব ।
এই লেখাতে তোমার কথা রইল না ।
আগুন পোড়া ভালোবাসাও সইল না ।
এই লেখাতে আমার কথাও রইল না,
নুন সাগরে ডুবে যাওয়াও হইল না !
১. বিয়ের বাজারে হাজার ঝামেলা । ঘটকালি থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত যে দীর্ঘ রাস্তাটির কথা আমরা জানি, তার প্রতিটি বাঁকে ওত্‍ পেতে থাকে লম্বা নখওয়ালা বিপদ । কনেপক্ষের কাছে সে রূপবান আতংক । এরকম এক আতংকমহলে, একবার, সেই কলেজকালে, হঠাত্‍ গিয়ে উপস্থিত হয়ে পড়েছিলাম । আসলে, পিসিমার বাড়িতে বন্ধুদের সহ হাজির হয়েছিলাম সন্ধেবেলা । এই আমার এক দোষ, মন চাইলো তো, চল পানসি । ঘরে পা দিতেই, পিসিমার মেজোমেয়ে, রেণুকা, বলে ওঠলো, জানো, আজ যমুনার বিয়ে । যমুনা মানে রেণুকার জ্যাঠামশাইয়ের মেয়ে । ক্লাস নাইন, বলিউডের যে কোনো নায়িকা তার সৌন্দর্যের কাছে হার মেনে যাবে । কিশোরী যমুনার বিয়ে হচ্ছে ৪৫ বছরের এক লোকের সঙ্গে । চমকে ওঠি আমি । এ দেশে কত কিশোরী বা বালিকা কিছু বোঝার আগেই বসে পড়ে বিয়ের পিড়িতে । বাধ্য হয়ে । ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড ক্রোধ জেগে উঠলেও নিজেকে শান্ত করি । ৭ কন্যাসন্তানের পিতার মুখ ভেসে ওঠে আমার সামনে ।
২. চমকের পালা ছিল আরও বাকি । বিয়ের আসরে গিয়ে, দেখি, পাত্রপক্ষ আমার অতিপরিচিত । দু একটা কথা তাদের সঙ্গে বলে, কনের বাড়িতে ঢুকে পড়ি । ভেতরে গুমোট পরিবেশ । চাপা সুরে কে যেন কাঁদছে । কাছে গিয়ে, দেখি, যমুনার মা, যিনি দূর সম্পর্কে আমার মাসি হন । যমুনার বাবা ফিসফিস স্বরে, মনে হলো, সে সুর চাপা ক্রোধ ও অপমান মিশ্রিত, বলে ওঠলেন, পই পই করে বলেছিলাম, মেয়েটার গতিবিধি ভালো নেই, সামলাও । কথা শোনোনি, এখন মুখে চুনকালি মেখে চলে গেল পালিয়ে । এখন কি করে মুখ দেখাবো ? এবার ডুকরে ওঠলেন মাসি । জিগ্যেস করে জানতে পারলাম, যমুনা পালিয়ে গেছে । 
৩. বিয়েবাড়ির বরমহলে তখনও হাসিঠাট্টার আসর । আর, ভেতরমহলে, তখন, প্রতিমা বিসর্জনের পর যে আবহ, তা । এই পরিস্থিতিতে, কিইবা করতে পারি আমি ? তারপর হঠাত্‍ মনে হলো, করতে হলে, আমাকেই কিছু করতে হবে । কোনো কথা না বলে, ঘর থেকে এলাম বেরিয়ে । বরপক্ষের একজন আমাকে ডাকলেন, বললেন, আচ্ছা, কনেকে কখন বিয়ের আসরে আনা হবে ? অম্লানবদনে মিথ্যে কথাটিই বললাম আমি । কনে হঠাত্‍ অসুস্থ হয়ে পড়েছে, আপনারা, দয়া করে, ধৈর্য ধরুন । আমি ডাক্তার ডাকতে যাচ্ছি । না আসা পর্যন্ত একটু ধৈর্য ধরে থাকবেন ।
৪. যমুনার বাবাকে গিয়ে বললাম, don 't worry. আমি যমুনাকে খুঁজতে যাচ্ছি । একা মেয়ে কতদূর আর যাবে ? খুঁজে বের করবই । পাশে থেকে একজন বলে ওঠলো, সবগুলি ঘর এরং গাছগাছালি দেখে এসেছি । কোথাও যমুনা নেই । ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠি, গাছগাছালি কেন ? তিনি বললেন, ভাবলাম, যদি মেয়েটা গলায় দড়িটড়ি দিয়ে বসে ! এসব কথা শোনার সময় নেই আমার । যমুনার একটা বোনকে ডেকে বললাম, আচ্ছা, এই গ্রামে যমুনার কোনো ক্লাসমেট আছে ? একটু চিন্তা করে ও জানালো, আছে । বিন্দু । আর কথা না বাড়িয়ে পাড়ার দুতিনটে ছেলেকে সহ সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম । শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী বা চতুর্দশী হবে । চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে সারা গ্রাম । রাত বেশ হয়ে যাচ্ছে তখন । গ্রামে রাত ন'টা মানে গভীর রাত । বিন্দুর বাড়িতে গিয়ে তাকে ডেকে তুললাম । ও তখন শুয়ে পড়েছিলো । বিয়েতে নিমন্ত্রিত হলেও যমুনা বারণ করেছে তাকে যেতে ।
৫. বিন্দু থতমত খেয়ে গেলে সব শুনে । বললো, এসবের কিছুই জানি না আমি । ও শুধু বললো, যমুনা বলছিলো, জোর করে আমার গলায় দড়ি পরিয়ে দিচ্ছে বাবা-মা । বুঝলাম, যমুনার আপত্তি ছিল এই বিয়েতে । জানতে চাইলাম, যমুনার কোনো প্রেমিক ছিল ? হ্যাঁ । অমল । ঐ যে, জারইলতলী বাড়ি, ফুটবল খেলে । সেখান থেকে, সোজা অমলের বাড়ি । ১২/১৫ কিমি দূর । তার মানে আরও একঘণ্টার পথ । সব শুনে চমকে ওঠলো অমল । বাচ্চা ছেলে, গোঁফের রেখা দেখা যায় কি যায় না । ক্লাস টেন । যমুনা পালিয়েছে ? কেন ? আমি তাকে চেপে ধরলাম, তুমি জানো না ? সে সোজা পায়ে পড়ল লম্বা হয়ে । সত্যি বলছি, দাদা, মার কিড়া, আমি জানি না । ওকে তো বলেছিলাম, দেখো, আমি টেনে পড়ি, এখন বিয়ে করি কি করে ?

 ৬. অমলকে বললাম, এই প্রেক্ষিতে, তোমারও করণীয় আছে । চলো, আশেপাশের গ্রামগুলিতে খুঁজি । কারও না কারও বাড়িতে নিশ্চয় লুকিয়ে আছে যমুনা । হয় তার স্কুলমেট অথবা আত্মীয় । অমলের বাবা বললেন, হ্যাঁ, এই বিপদে তোমার পাশে থাকা উচিত । সেই রাতে আশেপাশের গ্রামগুলির প্রায় সকল বাড়ি ঘুরে ঘুরে খোঁজ করলাম আমরা । না, যমুনা কোথাও নেই । ভেতরে ভেতরে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ছি আমি । সুইসাইড করে বসেনি তো যমুনা ? যদি করে, কি হবে ঐ বাড়ির অবস্থা ? অথবা বরপক্ষ ? শহরে তাদের বাড়ি । কৈলাসহরের প্রাচীন পরিবার । সবাই তাদের শ্রদ্ধা করে একবাক্যে । কি করে তারা দেখাবে মুখ ? লোকে কি বলবে ? আমার মাথায় তখন হাজারো প্রশ্ন । শরীর আর মানছে না । ভগ্নমনোরথে ফিরতে শুরু করলাম সঙ্গীদের নিয়ে । অমলের মুখেও কথা নেই আর । রাত তখন প্রায় দুটো । যমুনাদের আগের গ্রামের একটা বাড়ির সামনে এসে বললাম, চলো, এই বাড়িতে গিয়ে একটু চা খাই । আমি আর পারছি না ।
 ৭. এই রাতে তাদের বিরক্ত করবো ? এটা কি উচিত হবে, দাদা ? হেসে ওঠলাম আমি । এই বাড়িটা আমার এক আত্মীয়ের । কিছু বলবে না । চলো । এই অসময়ে, তাদের ডেকে তুললাম আমি । আমার এক মামার বাড়ি এটা । আমাকে দেখে অবাক তারা । বললাম, একটা কাজে বেরিয়েছি । খুব চা খেতে ইচ্ছে করছে । এখন দোকান পাবো কোথায় ? ফলে, তোমাদের জ্বালাতে এলাম । মনিপুরী গ্রাম, মনিপুরী বাড়ি এটা । রীতি অনুযায়ী বাইরের তিনদিক বন্ধ বারান্দায়, মনিপুরীরা বলে মাংকল, বসলাম আমরা । ঘরের ভেতরে দেখার উপায় নেই কিছু । আত্মীয় বলে ভেতরে ঢুকলাম আমি । ঘরের মাঝখানে, বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী, ব্রহ্মস্থান, সেখানে একটা চুল্লি । তাতেই কেটলী বসিয়ে যে চায়ের জল ফোটাচ্ছে, পেছন থেকেই, তাকে দেখে, মনে হলো, বড় চেনা । কাছে এগিয়ে গেলাম তার । এবং তাকে সামনে থেকে দেখেই অবাক হলাম আমি । তুমি ? এখানে ?
৮. মামী এগিয়ে এলেন । জানো, সন্ধ্যের পর এখানে এসেছে আজ । একা । কত করে বললাম । বোঝালাম । ওর এক কথা । না, সে যাবে না । চুপ করে কিছুক্ষণ রইলাম, তারপর বললাম, তোমার আবেগ, তোমার না মানার কারণ আমি বুঝি, যমুনা । ফীল করি তোমাকে । আবার তোমার বাবামায়ের কথাটিও ভাবো একবার । আরও পাঁচটি মেয়ে আছে তার । এই ঘটনার পর, তাদের অবস্থা কি হবে, একবার ভেবেছো ? যমুনা ফোঁস করে ওঠলো, আমার কথা তো কেউ ভাবলো না একবারও । ঐ বুড়োর সঙ্গে --- কথা শেষ করতে পারলো না সে । কেঁদে ওঠলো হাউমাউ করে । তাকে বললাম, বয়স, সন্দেহ নেই, অনেক বেশি । আমি তো চিনি তাকে । লোকটা ভীষণ ভালো । সুখে রাখবে তোমাকে । দেরি করো না, চলো । যমুনা কোনোমতেই যেতে রাজি নয় । উপায় না পেয়ে আমি অমলকে ডাকলাম ।
৯. অমলের সাইকেলের সামনে বসে যমুনা, পেছন পেছন আমরা ফিরে এলাম তাদের গ্রামে । অঘ্রাণের প্রথম সপ্তাহ । হালকা শীত পড়ে গেছে এসব এলাকায় । কুয়াশায় চাঁদ পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়, হূ হূ করে কাঁপতে কাঁপতে, তাদের বাড়ির পেছন দিক দিয়ে ঢুকলাম আমরা । তড়িঘড়ি করে কনে সাজিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে যমুনাকে যখন তোলা হলো, তখন ভোর হতে আর দেরি নেই । এই বিয়ের পর রাজনৈতিক কারণে, বাড়ি ও রাজ্য ছেড়ে পালাই আমি । প্রায় আট বছর পর যখন তাদের দেখি. তিন সন্তানের মা হয়ে গেছে যমুনা । এবং আমার দেখা দশটি সুখী দম্পতির একটি তারা । যমুনা আমাকে বললো, তুমি জোর করে বিয়ে না দিলে এই সুখ আমি কখনই পেতাম না । যতবারই কৈলাসহর গেছি, যমুনা ও তার বর আমার খুব যত্ন করতো । চারবছর আগে, জানলাম, যমুনা ও তার বর, দুজনেই, মারা গেছে ক্যানসারে ।
এই, তুই আমাকে ভালোবাসিস ? ছেলেটা হঠাত্‍ জিগ্যেস করে বসে মেয়েটাকে । তার বুকে তখন উথালপাতাল ঢেউ । নৌকা ডুবে যেতে পারে যে কোনো মুহূর্তে । ছেলেটার প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে, বলে ওঠলো, তুই আমাকে তিতির পাখির ডানা এনে দিবি ? হাঁ করে তাকিয়ে রইল ছেলেটা । তিতির পাখির ডানা ? পাখি নয়, পাখির ডানা ? এ কি ধরণের বায়না ? মাথায় কিছু ডুকছে না ছেলেটার । মেয়েটাকে তার ভালো লাগে । সামনে এলেই তার উথালপাথাল ঢেউ, আর ঐ ঢেউয়ে নৌকা প্রায় ডুবু ডুবু । কলেজ থেকে ফেরার পথে কিছুটা সময় এই পার্কে বসে থাকে তারা । কথা বলে না । চুপচাপ । তারপর চলে যায় যে যার ঘরের দিকে । আজ আর থাকতে পারেনি, সরাসরি জিগ্যেস করে বসলো, আমাকে ভালোবাসিস তুই ? আর মেয়েটা চাইছে তিতির পাখির ডানা ? সন্ধ্যে নেমে এল পার্কে । মেয়েটা নীরবে উঠে দাঁড়ালো । বললো, আসি । এক স্তব্ধতার ভেতর থেকে ছেলেটি দেখলো, মেয়েটা তিতির পাখির মতো উড়ে যাচ্ছে সন্ধ্যার আকাশে ।
সুখ আসলে কি ? এই নিরীহ প্রশ্নটির সামনে অসহায় ছিলেন উপনিষদকারগণ । ব্যাসদের যুধিষ্ঠিরের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, অঋণী থেকে সন্ধ্যায় যিনি শাকান্ন ভোজন করেন, তিনিই সুখী । সুখের সংজ্ঞা দেননি তিনিও, এড়িয়ে গেছেন । গ্রামবাংলার লোকজন তবু সহজ সরল করে বলতে চেয়েছেন, ঘামাচি হলে চুলকাতে পারাটাই সুখ । গোপাল ভাঁড় এর গল্প অল্পবিস্তর জানি আমরা । এসকল পার হয়েও সুখ এর সংজ্ঞা থেকে গেছেই অধরা । দুঃখের বিপরীত হিসেবে ।
ইলিশ ভাজা চলছে সরোবরে । ভাজা হয়ে গেলেই ডুব দেবো আজ । নির্ঘাত্‍ । তখন বাকার্ডি এসে কাকুতিমিনতি করলেও মানবো না । আজ আমার ডুব দেবার দিন । শাস্ত্রমতে । ইলিশ ভাজাটাই যা বাকি !
সে-ই আমাকে জাগায়, যে থাকে অন্তরে । তার ভালোবাসার স্পর্শে ঘুম ভাঙে আমার, আবার রাতে ঘুমিয়েও পড়ি । রূপোর কাঠি আর সোনার কাঠি তারই হাতে ।
নিজেকে অতিক্রম করে উঠতে পারিনি । এই অপদার্থতা, রোজ এসে, ভেংচি কাটে আমাকে ।
ঢেউ এসে নিয়ে গেল তুলে নিমরাতে তাকে,
দোষ দেব কাকে ?
ফিরে এসে দেখি আজ, ফিরিনি আসলে,
গৃহহীন করে রেখে, বলেছে, যা চলে !
প্রথম পাতাটি শূন্য, ঈশ্বররচিত ।
দ্বিতীয় পাতায় প্রস্তাবনা

তৃতীয় পাতার শেষে ফুটনোট যা মূলত এক দীর্ঘশ্বাস

গ্রন্থকীট জানে, টীকা ও টিপ্পনী পার হয়ে, ক্রমে
সেতুটির দিকে অগ্রসরমান জিহ্বা
যাকে দেখি বাহান্ন পৃষ্ঠার নিচে, নাভিটির কাছে,
সক্রিয় কর্মীর মত, পুরুষকঠিন...

বাহাত্তর পাতা কেঁপে ওঠে থর থর
চুরাশি হাজার যোনি পার হয়ে মানব জনম
ফেটে পড়ে তীব্র জলোচ্ছ্বাসে ।

ছয় ফর্মা ভরে ওঠে তোমার প্রণয়ে
মূলত পূজার শুরু, শাস্ত্রমতে, এই রতি শেষে ।
পাঠক ও কবি, আজ, এভাবেই, পূজা ও পূজারী ।
মিথ্যাকে দেখেছি । মিথ্যার ঐ রূপ সর্বগ্রাসী, ভয়ংকর ।
মিথ্যের মুখশ্রী সুন্দর, মোহময় । ভুবন ভুলিয়ে রাখে ।
সত্য ম্রিয়মান, এই সংসারে তার ঠাঁই বাহির বারান্দায়, অনাদরে, উপেক্ষায় ।
মই লাগে । এই মই ছাড়া লুডো খেলা যেমন জমে না, উপরে উঠতেও এর ভূমিকা অনবদ্য । মইয়ের নানারূপ আছে । তবে সেই সরল গ্রামীণ রূপ এখন আর নেই । ছড়া ও ছবির সেই মইটির কথা মনে আছে যেখানে মই টানছে পিপড়ে । ছড়া ও ছবির যুগ নেই আর । এখন আপডেট বা স্ট্যাটাসের দিন । আর অবাক হয়ে দেখি, এখানে মই টানছে মানুষ । মই টানা সেই বোকাচুদাদের লাইনে, দেখছি, আমিই সবার আগে !
এই সকাল আমার নয় ।
এই দিন আমার নয় । রাত, না, আমার নয় ।
আমিও কারও নই ।

এই ত্রাণশিবির, বই, আসবাব, বিছানা, বাথরুম, স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্ন, লোভ, হতাশা,
কাম, ক্রোধ, এই শরীর, ঠোঁট, চোখ, হাত-পা, এই জননাঙ্গ, কোনোটাই আমার নয় ।
এই মন, না, আমার নয় ।
আমিও কারও নই ।

এই লেখাটিও আমার নয় ।
প্রেতরচিত সব ।

Tuesday, September 17, 2013

অফিসে আসব, বারান্দা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে, প্রীতি আচার্য, আমার গার্লফ্রেণ্ড তথা সহগামিনী বললেন, দেখো, আমার সঙ্গে যা করো, তা আবার তোমার ফেসবুক প্রেমিকাদের সঙ্গে করতে যেও না । রুক্ষ ব্যবহার করো না তাদের সঙ্গে । আঘাত পাবে তারা । ভালো করে কথা বলো, সুন্দর করে বিহেভ করো । গাড়িতে পা রাখতে গিয়ে, ফিরে তাকালাম, তার দিকে । দেখি, সেই ভুবনমোহিনী হাসি ! পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে যার আজন্ম জেহাদ, সে কি আজ পুরুষদমনে নামল এভাবেই ?
মরিয়ম, এ লেখা পড়ো না ।
মরিয়ম, পাদ্রী সাহেবের কথা শোনো ।

রেহানা, মৌলভী সাহেবের কথা শোনো ।
এ লেখা তোমার জন্য নয় ।

প্রমিলা, আঙুল তুলে তোমাকে বলবে মুরুব্বিরা,
এ সব পড়ো না ।

এই সব লেখা তোমাদের
শেখাবে অধর্মকথা, বলবে, নারীই সৃষ্টিকর্ত্রী ।

ইহকথা উহ্য থাক লেখার ভেতরে ।
উদ্ধার করো না এই সব ।
দ আমাকে, সেই আধফোটা বয়স থেকে, ভাবায় । আজও ভাবি । এর মহিমা, অন্তর্নিহিত তাত্‍পর্য, গভীরতা, ক্রিয়া ও কর্ম সম্পর্কে ভাবতে ভাবতে, শেষ হয়ে আসছে আমার দিন । আয়ুকে বলেছি, আর একটু, হ্যাঁ, আর একটু অপেক্ষা করো, আয়ু । আমার এখনো দ-কে বোঝা বা জানা হয়নি । তিন ভাই ব্রহ্মার কাছে গিয়েছিল । ব্রহ্মা তিনজনকেই বলেছিলেন, দ । খুশি হয়ে ফিরে আসছিল তারা । সবার ছোট যে, থমকে দাঁড়ালো চৌরাস্তার মোড়ে । বলল, দ কথাটি দিয়ে পিতামহ কি বলতে চাইলেন আমাদের ? বড়ভাই বলল, এই সামান্য কথাটির অর্থ বোঝোনি ? দ মানে দলন করো । উঁহু । এত সহজ নয় তা । আমি ফিরে যাচ্ছি । বড়ভাই ফিরে গেল না । সে হলো, দনু যার থেকে দানব । এভাবে দ্বিতীয়বারও ব্রহ্মা বললেন, দ । মেজভাই, মনু বুঝে নিল, দ মানে দান করো । আর ছোটভাই ? সে ফিরে গেল পুনরায়, আর সে-ই হলো দেবতা । দ তাহলে কি ?
প্রীতি আচার্য, সাং বাঁশপাড়া, মৌজা বিলোনীয়া, দক্ষিণ ত্রিপুরা, কাল, দুপুর থেকে, লড়ে যাচ্ছিলেন যমের সঙ্গে । তড়িঘড়ি করে, হাসপাতালে তাকে নেওয়া হল, একটা এসি কেবিনও বুক করা হলো, তিনি থাকবেন না সেখানে । ডাঃ শংকর চক্রবর্তী ও কবি ডাঃ বিশ্বজিত্‍ সিংহ অনেক বুঝিয়েও যখন বিফল, তাকে ফিরিয়ে আনা হলো ত্রাণশিবিরে । ইঞ্জেকশন অষুতপত্র, স্যালাইন সহ । ডাঃ বিশ্বজিত্‍ এলেন রোগীর চিকিত্‍সার জন্য । সঙ্গে সিগনেচার প্রিমিয়াম, আধকিলো শুয়োরের মাংস, চপ ও এক কিলো শসা লেবু আদি সহ । স্যালাইন আর একটার পর একটা ইঞ্জেকশন চলছে । এক ফাঁকে, ডাঃ নিজেই রাঁধলেন লেমন পর্ক । ডাল ভাত মাছ রাঁধলাম আমি । সারাদিন অভুক্ত রোগী অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছেন এই উপচারের দিকে । ডাঃ সবগুলি খাবার ও সিগনেচার রোগীর নাকের কাছে রেখে বললেন, শাস্ত্রমতে ভোজন করুন । ঘ্রাণেন অর্ধভোজন করলেন প্রীতি ।
ভালোবাসো, ভালোবাসো, বলে, এক মৃত নদী শরীর ভাসিয়ে চলে গেলো অস্তাচলে । এই সন্ধ্যেবেলা তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে এক বুরবক, সে জানে না চৌষট্টি কলার ইতিহাস ।
গলাটা হাঁড়িকাঠে দিয়েছি অনেক আগেই । এখন বলির বাজনা শুরুর অপেক্ষায় আছি ।
ছায়াপথে এসে, তোমাকে খুঁজছি, প্রেম । দূরে ঐ ব্রহ্মহৃদয়, তার আগে ধ্রুবতারা । হেঁটে যাচ্ছি, একা, এখানে মাটির গন্ধ নেই, ঈর্ষা নেই, কূটকচালিও নেই, প্রতারণা নেই । নক্ষত্রখচিত এই পথে, আজ তোমাকেই খুঁজে যাচ্ছি আমি, যাকে এক অনাথপুরুষ ব্যতীত ভাবেনি কেউ, ফেলে আসা ঐ মর্ত্যের লোক ।
ভার্চুয়াল এই জগত পরাবাস্তবের চাইতেও রোমহর্ষক । এই আছে, এই নেই ।
অন্তত, একটিবার, হ্যাঁ, একটিবার, রাত্রি, অবগুণ্ঠন খোলো তোমার...
সে আমারই মত, বিষণ্ণ এক ফুল । সহস্র ভ্রমর তাকে ঘিরে । দূর থেকে দেখি তাকে । এই ভীড়ের ফাঁক দিয়ে, তার করুণ দুটি চোখ জেগে আছে আকাশে, দেখি ।
এই রাত নক্ষত্রবিহীন । ঘোর অন্ধকারে তবু উজ্জ্বল তোমার ঐ দুটি চোখ । বলছে, জীবন বেদনামধুর ।
এই সকাল প্রেমময় । এই সকাল মধুর আশ্বিনের আগমনী সংবাদ এনেছে । আর, আমি, আজ বিষণ্ণতার বেড়াজাল কেটে বেরিয়ে এসেছি চাঁদের জগতে । এখন সূর্যকে মনে হয় প্রাণসঞ্জীবনী এক উত্‍স । চিয়ার্স ফ্রেণ্ডস !
সকাল যতখানি সুখদায়ক, দুপুর তার বিপরীত । অথচ দুপুর অবৈধতার এক নাম ।
আমার সকাল গেছে মুছে । দুপুর নেই, সন্ধ্যে বা বিকেল নেই । আছে শুধু এক রাত্রি, যে মূলত মৃত্যুর সহোদরা ।
মন-এর নিয়ন্ত্রক চাঁদ । জ্যোতিষবিদ্যা অনুসারে এটা মান্য ।
চাঁদ-এর গতিবিধি, ফলে, প্রভাব ফেলে মন-এর উপর ।
আর কারও ক্ষেত্রে কি হয়, জানি না । আমার বেলায় এটা
১০০০০০০০০০০০০০% সত্যি ।
লোকে বলবে চন্দ্রদোষ, আর আমি বলবো, তোমার কেরামতি, চাঁদ ।
রাতে ছিলে শুক্লপক্ষ । এখন ঘোর অমাবস্যা ।
ইতি একটি রেখার নাম । টেনে, দেখা যায়, তার শেষ নেই । এ যেন একটি মৌলসংখ্যাকে আর একটি মৌলসংখ্যা দিয়ে ভাগ করার অবস্থা । ভাগশেষ থেকেই যায় । ভাগশেষ থাকে ইতিরও । আজ সেই ভাগশেষ বা অবশিষ্টের সামনে দাঁড়িয়ে, দেখছি, শুক্লপক্ষের চাঁদ হাসছে আকাশে । ঐ হাসি মধুর এবং ঘাতকস্বভাবের । আজ কি তবে ঘাতচন্দ্রের সন্ধ্যে ? কি বলবেন খনা ?
শুক্র বা শনিতে কি এসে যায় এক মৃতের ? অথবা শীতগ্রীষ্মে ? সে দেখে, তার শরীর ক্রমশ মিশে যাচ্ছে মাটিতে । হাড়গোড় সহ । দেখে কি ? তার চোখ গেছে উঁইপোকাদের ভোজে । মন ? সেও আধারহীন । তার মানে নিউরনই আসল । ঐ ব্রেনসেলস । যেখানে থাকে নিঃসঙ্গতার প্রাণকূট, নির্বোধ সাফল্যের ঠা ঠা হাসি । আর...আর সকল না পারার গান ।
মৃত্যুদণ্ডই কি শেষ কথা ? ফাঁসি দিলেই কি ধর্ষণ নামক ব্যাধি নির্মূল হয়ে যাবে ? এই প্রশ্ন সহ চার ধর্ষকের বিরুদ্ধে আদালতের রায়কে স্বাগত জানাই । তারপর ঐ প্রশ্নটি পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে । ধর্ষণ কি আদৌ বন্ধ হবে ? আদিতে পুরুষ নারীকে জোর করেই ভোগ করতো । পিতামহ ব্রহ্মা আপন কন্যা সরস্বতীকে ধর্ষণ করেছিলেন । তার ফলস্বরূপ তাদের যে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়, তাকে জানি শতরূপা বলে । তো, ধর্ষণের এমন নিদর্শন পৃথিবীর সব দেশেই সুলভ । যা আজ ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত । এই ব্যাধি কি ফাঁসি দিলেই দূর হয়ে যাবে ? জানি, হবে না । কেন না, এর মূলে রয়েছে পুরুষের আধিপত্যবাদ । আগে এই আধিপত্য দূর হোক ।
একটি না বলা কথা এখনো পিছু ধাওয়া করে যাচ্ছে তোমার দিকে । তুমি, তৃতীয়া, দশমীও বটে, বট পাতায় লিখে রাখছো আমাদের আয়ু ।
এই প্রেতরাতে, একা, জেগে আছি ।
এই প্রেতরাতে, একা, জেগে আছি । দেখছি, সকলেই সুখের পেছনে দৌঁড়ছে যেন সামান্য দেরি হলেই ট্রেন মিস হয়ে যাবে ।
প্রেতপক্ষ আসছে । মানে, আমার ১৫ দিন । এই কদিনে যা করার করে ফেলতে হবে । প্রেতকর্ম ফেলে রাখতে নেই ।
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এল সকাল । দরজা খুলে দিয়ে, আমি হাঁ, তাকিয়ে আছি তার দিকে । ভেজা শরীরে, উফ্, এত যৌন আবেদন তার ! এই ৫৮ পেরুনো বয়সে, নিজেকে মনে হল, ২৮ বছরের টাটকা যুবক, যার সসপ্যানের ভেতর টগবগ টগবগ করে ফুটছে কাম ।
কাম মহৎ, সে বাঁচতে শেখায়, স্বপ্ন দেখতে বলে । বলে, বী পজিটিভ, বী পজিটিভ । আমি তো আছি তোমার অনামিকার পান্নার আংটি হয়ে ।
শরীর দিলাম খুলে সামান্য এক ভুলে
তোমার নৌকা যাচ্ছে তখন ভেসে
তীরের কোলাহলে কে ঝাঁপালো জলে
তুমি কি আর জানতে পেলে, শেষে ?
এসেছিলে, তবু আসো নাই, জানায়ে গেলে... রবিবাবু এই গান যাকে নিয়ে লিখেছিলেন, তিনি কি ভাগ্যবতী ? না কি, তিনি হারিয়েছিলেন অমূল্য এক প্রেম ?
চপলা সে, বিদ্যুত্‍ । এই আছে, এই নেই । বারান্দায়, একা, বসে বসে, দেখছি, আকাশ নেমে আসছে, কাছে, খুব কাছে । এই রকম মুহূর্ত, খুব কম আসে জীবনে । লক্ষ্য করি, মেঘ সরিয়ে, দূর থেকে ঘাতচন্দ্র দেখছে এই দৃশ্য । তার মানে, আমি একা নই । আর একজন আছে । এই আর একজন কখনও হয়ে ওঠে চাঁদ, কখনও নদী, বা কোনো খালি ক্লাসরুম । কখনো বা পরিত্যক্ত মাঠ, ঐ মাঠের পাশে যে দীঘি, তার জলে স্নানরতা পরী, অথবা সেই ঘণ্টা যা মৃত্যুসংবাদ দিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । ঐ আর একজন আমাকে ঘিরে থাকে সবসময়, আমি জানি, সেই আমার পরম, সে শূন্যতাও বটে । মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে যে ফিসফিস আওয়াজ শুনি হাওয়ার, এই সে জন । বস্তুত, সেই শৈশব থেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবীদের, প্রেমিকার উপেক্ষা সয়ে যেতে শিখিয়েছে এই আর একজন । সে না থাকলে আমার অস্তিত্বই যে থাকে না আর !
ভাষা প্রতারণাও করে, এটা জানার পর, থমকে যেতে হয়, মূঢ়ের মত । ভাব প্রকাশ নয়, ভাবকে আড়াল করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ভাষা । ছেলেবেলায়, অন্যদের কাছে কথা লুকানোর জন্য বা তাদের বুঝ্তে না দেবার উদ্দেশ্যে আমরা বলতাম, লচ রদআ রক । বা, মুচু ওখা । পুরোটাই ছেলেমানুষী । এই আড়াল করার প্রবণতার প্রাণকূট ছিল ভাষার ভেতরেই যা আজ প্রতারণার নামান্তর । এটা কেন হয়েছে, তার বিশদ আমার জানা নেই, ভাষাবিদও নই । শুধু লক্ষ্য করি, আমাদের মনোজগত যত জটিলতর হয়েছে, যত বেড়েছে অন্ধকার, তত বেশি ভাষা হয়ে উঠছে প্রতারণার হাতিয়ার । ফলে, একজন কবিকে লক্ষ্য রাখতে হয়, তার ভাষা যেন প্রতারকের ভাষা না হয়ে ওঠে । অন্তরলোক আলো করা ভাষাই আজ সবচেয়ে জরুরি কবিতার জন্য, এই সরল সত্যটি যেন না ভুলে যায় এই সময়ের তরুণ কবি ।
পাতা থেকে তুলে নিই ঐ সবুজ । মিশিয়ে দিলাম তাতে ঘোরস্বপ্ন । তামাটে, মলিন সে মাদারি ঐ স্বপ্নের মাঝখানে খেয়ে নেবে বাকি ক্লোরোফিল । অবশিষ্ট পাতার কাঠামো দেখে ভয় পেও না, সে আসলে আমার প্রতিরূপ । যাকে তুমি নিঃস্ব করেছিলে গতজন্মে ।
শোভন যোগের এই সকাল, স্বাগত । বণিজকরণ, স্বাগত । একাদশী তিথি, স্বাগত । রোদ ও বৃষ্টি, স্বাগত । উপেক্ষা ও ফিরে যাওয়া, স্বাগত । ঘৃণা ও অপ্রেম, একাকীত্ব ও শূন্যতা, স্বাগত । আজ আমার দিন কাটুক নিরক্ষরতার আলোয়, দারিদ্রসীমারেখার অন্ধকারে, ধর্ষিতার নীরব অপমানে, বিরহীর হাহাকারে, কিশোরীর স্বপ্নে, বালকের অবোধ জিজ্ঞাসায় । স্বাগত, হে রবিবার ।
বিবিধরূপ তার । ঐ যে, চুল ছড়িয়ে, বিবসনা, কৃষ্ণা, দাঁড়িয়ে আছে, সে আসলে একুশ । অষ্টাদশী তার কিশোরবেলা পার হয়ে আসা রূপ । অনৃতভাষণে তাকে দেখা যায় না, মৃতদের গানেও নয় । ঘোরঅন্ধকারবর্ণা, বলে, লোকে জানে, মূলত, সে যূঁই, তার শাদা পাপড়ি মেলে দিলে চাঁদের কিরণ অনুভূত হয়, কাকজ্যোত্‍স্না বলে জানি তাকে । আজ, সে সন্ধ্যা, চপলাও বটে. এই কিছুক্ষণ আগে, বারান্দায় এসেছিলো, একা । তার স্পর্শে জেগে ওঠছে নিশিফুল । এই ফুল আজ তোমাকেই দেবো, কবিতা, তবু, একবার, অন্তত একবার, বলো, সমরজিত্‍, আমি একান্তই তোমার । বলো, আমাকে লেখো আজ ।
পঞ্জিকা আর গঞ্জিকার সম্পর্ক মাসতুতো, না, পিসতুতো ?
তোমার দরোজা, রোজ দেখি, থাকে খোলা
ওই সান্ধ্য-পুরুষের জন্য ।
এই দৃশ্যে, কেউ নই আমি, নুলো, মেরুদণ্ডহীন
মূলত দর্শক, কিছুটা ঈর্ষাকাতর, এবং বন্য ।
নরেন্দ্র মোদি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, লালু যাদব, নীতিশ, মুলায়ম, সোনিয়া, জয় ললিতা, যাদেরই নাম নিই না কেন, আসলে তো সবাই শাসক, গু-য়ের এপিঠ ওপিঠ । তা হলে, এত বাছবিচার কেন ? রামে মারলেও মরবো, রাবণে মারলেও মরবো । মরা বিনা গতি নাই !
বিকেলে ভোরের ফুল, সমরেশ বসুর এই লেখা পড়িনি কখনো, ঐ গল্প নিয়ে তৈরি সিনেমাও দেখা হয়ে ওঠেনি, কেন না, উত্তমকুমার এর ঐ অতিনাটকীয় অভিনয় কোনোদিনই তেমন স্পর্শ করতো না আমাকে । অথচ, বিজ্ঞাপনে ঐ নামটা দেখে. চমকে ওঠেছিলাম । মনোজগতের এমন সুন্দর প্রকাশ খুব কম দেখা যায় । সমরেশ বসু আমার প্রিয় লেখকদের একজন, তাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ দু একবার হয়েছিল ১১ অক্রুর দত্ত লেন এর সেই বিখ্যাত ঘরটায়, কৃত্তিবাস অফিসে । তখন আমি সেখানে কর্মরত, কার্তিক জানা ও কবি দেবাশিস বসু সহ । শ্যামলকান্তি দাশ তখনও মেদিনীপুরে । জয় গোস্বামীর কবিতা তখনও ছাপা হয়নি কৃত্তিবাসে । সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মস্করারত অবস্থায়, এক কৃত্তিবাসী সন্ধ্যায়, তাঁকে বলতে শুনেছি, এত যে লিখি, জানেন সন্দীপন, সব ধুলোয় যাবে মিশে । সেই সন্ধ্যার হাহাকার, আজ সকালে, স্পর্শ করে যাচ্ছে আমাকে । বিদ্যুত্‍স্পর্শের মত ।
ভালোবাসার জন্য বনে বনে ধাবমান যারা =বন্ধু ?
কতকিছু শেখার আছে । মূর্খ বলে, বাল্যকাল থেকেই সুবিদিত আমি । বাল্যশিক্ষা পাঠ করিনি, বলে, এই পরিণাম । এফবিতে যাতায়াত করলে না কি মূর্খদোষ কাটে ! এটা শোনার পর, এখানে এসে, দেখি, আমাকে ছাড়া হগ্গলেই জ্ঞানী । দু-একজন, আমার মূর্খতা দেখে, দয়াপরবশত, এখন, ইনবক্সে, একটু একটু করে, সহজপাঠ শেখাচ্ছেন । আমি নবসাক্ষর না হোক, নবছাত্র হলাম । মরণ অবধি যেন তা থাকতে পারি ।
হৃদয়, মানে, ঐ যে, আপনাগো ভাষায়, হার্ট, সারাক্ষণ ধুকপুক করে ।
কোলেস্টরেল । ডাক্তার নল সরিয়ে কইলেন ।
বৈদ্য নাড়লেন মাথা । বললেন, বিষয়টা গম্ভীর । এবং হৃদয়ঘটিত ।
গৃহলক্ষ্মীর মাথায় হাত ! চিৎকার করে ওঠলেন । সে কি গো, মিনসে !!! লুকিয়ে লুকিয়ে কোন ছুঁড়ির সঙ্গে লটরপটর করছো ? অ্যা ! বুড়ো বয়সে এ কি ভীমরতি গো তোমার ! এখন আমার কি হবে গো ওওও !
বান্ধবীরা প্রত্যেকেই বলে ওঠলো, তার মানে, আমি ছাড়াও তোমার আরও প্রেমিকা আছে ? ইউ হ্যাভ চীটেড মী....
হৃদয়ে তখনও ধুকপুক ধুকপুক....
রাতে, ইনবক্সে, এক মগ্ন পাঠিকা লিখলেন, ঐ ধুকপুক থেকে আগামী শতকের কবিতার জন্ম হবে । উদগ্রীব হয়ে রইলাম ।
হাচা কতার দাম নাই । মাগনা গরুর দাত নাই । আমার লেখার দাম নাই ।
সন্ধ্যে থেকে দুচোখ জুড়ে ঘুম । মরণ ঘুম কি একেই বলে ? নেট খুলছি আর অফ করে দিচ্ছি । আবার অন করছি । যেন দুচোখের পাতা খুলছি আর বন্ধ করছি । আবার খুলছি । উপমাব্যবহারে বরাবর কাঁচা আমি, ঘুমেরও যুতসই কোনো উপমা পেলাম না । উপমা মধুর হলে ঘুম ফিরে যেত কি ? কালিদাস বলতে পারতেন । বিনয় মজুমদারও । জীবনানন্দ দাস তো চমকে দিতেন । তাঁরা নমস্য । এই অকালঘুমও নমস্য । নমো নিদ্রায় ।
মাঝে মাঝে, তাকে দেখি, রেলিংয়ের উপর ঝুঁকে আছে । সঙ্গে ঝাঁকড়া মাথা মেঘ । তার আভায় সেই মেঘ কেমন মনমরা লালে ডুবে গেছে । তার দিকে তাকিয়ে থাকি আমি । ভাবি, সেও বড় একা । মুহূর্তের আয়ু তার । একদিন সে আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিল তার কথা । আজ সে এসেছে অন্য সাজে । আমাকে দেখে বলল, আররে য়্যার, পুছো মত্‍ । মুঝে আজ যানা হ্যায় ডেটিং মে । ও তুমহারা সন্ধ্যা হ্যায় না, উসকি সাথ । কথা কি বলতে পারলো সব ? তার আগে, সন্ধ্যা এসে নিয়ে গেলো তাকে । আমি তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম । গোধূলিও তাহলে মজে আছে সন্ধ্যার ভালোবাসায় ?
অরুণ বরুণ কিরণমালার গল্প আমরা সকলেই কম বেশি জানি । এই কিরণমালাকে বাস্তবজীবনে এখন থাকতে হয় ভয়ে, কখন কোন নরপশুর দল তার উপর হামলে পড়ে, তার যে ঠিক নেই । মারী ও পিশাচের ভ্রুকুটি তাচ্ছিল্য সে করেছিলো কাহিনীতে । অথচ এখন বাসে, ট্রেণে, রাস্তায়, অফিসে, বাজারে বা মন্দিরে, উত্‍সবে ওত পেতে থাকে এই পুংগবগণ । কিরণমালাকে সতর্ক থাকতে হয় প্রতিমুহূর্তে । তাতেও রক্ষে নেই । দরজা ভেঙে ঘরে এসেও হামলা করতে পারে যে কোনো মুহূর্তে । এই আতংক থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে কিরণমালা । সে ভাবে, এই বাস্তবের চাইতে কাহিনীর বাস্তবে বিপদ অনেক কম । সে ফিরে যেতে থাকে তার কাহিনীতে । সে জানে, ঐ কাহিনীও পুরুষরচিত ।
তোমাকে লেখার আগে পড়েছি আমাকে,
জীবন রেখেছি বাজি ডুডু ও তামাকে ।
মাঝরাতে, তুমি একা, তার মানে সমুদ্র শিয়রে,
সমুদ্রের ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিয়েছে বুঝি তোমার শরীর ?
খোলা বুকে কার হাত, মনে কি পড়েছে ?
বালির উপরে দেহ, মনে পড়ে, নাভি পার হয়ে মেলে ধরা ও ঝিনুক ?
ভোর হয়ে এলো, রাত্রি, এবার আমাকে যেতে হবে...
এই সকাল তোমার । এই হাওয়া তোমার । এই মাটিও । রোদ এসে পড়েছে তোমার জানালায় । মাছওয়ালা হেঁকে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে । তুমি তবু শুয়ে আছো । কাগজওয়ালা দিয়ে গেছে কাগজ, পড়ে দেখোনি । ধর্ষণ আর ক্ষমতা দখলের নোংরা লড়াই ছাড়া কিছু নেই আর ওতে । যদি থাকেও, তা নিজেদের প্যায়ারের লোকেদের লেখক বানাবার হাস্যকর কিছু প্রয়াস । জলের ট্যাপ কি কাল খুলে রেখেছিলে ? জল পড়ছে অনবরত । এটা অপচয় । এই জলের জন্য একদিন কাঁদতে হবে মানুষকে । ওঠো, তোমাকে এই জগতেই বাঁচতে হবে । এবং শিখতে হবে, বেঁচে থাকা কাকে বলে ! ওঠো. ডিয়ার !

Sunday, September 1, 2013

অসম চলন তার, অথচ সুন্দর,
ক্ষিপ্র ঘোড়াটির কথা ইতিহাস থেকে
এনেছিলো তুলে । সেই ধূসর প্রান্তর
খুরের ধুলিতে হয়ে উঠেছিল লাল,
সূর্যাস্তের রঙে । না কি মৃত ময়ূরের
ঐ পেখমে লেগে থাকা রক্ত, ফোঁটা, ফোঁটা...
মিশেছে ধুলিতে ? সূক্ষ্ম তুলির আঁচড়ে
বেদনা হয়েছে শিল্প প্রকৃতির হাতে ।
না ভালো লাগার ১০টি কারণের একটি হলো অনিশ্চয়তা । এই অনিশ্চয়তা আজন্ম আমার কাঁধে । কোনো রকমেই নামাতে পারছি না তা ।
শ্যালককথা

আমার পরমপ্রিয় শ্যালক শ্রীমান শৌনক দত্ত তনু আজ এসেছে বাংলাদেশ থেকে । মূলত তার সৌজন্যে আজ ফেসবুক ছুটি । আমার ফেসবুকীয় গেরিলা তৎপরতা শ্যালকের কাছে ধরা পড়ে যাক, চাই না । এক ঢোক ভদকা খাইয়েও ওকে ঠাণ্ডা করা যাচ্ছে না । সে তার দি-র সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে, এদিকেও নজর রেখে যাচ্ছে নিক কার্টারের মতো ।
ফলে, আরব মরুভূমিতে গোপন আস্তানা নেবার মত ফেসবুক থেকে চলে যাচ্ছি দিব্যেন্দু বড়ুয়ার আশ্রমে ।
gd morning makes me crazy...heading for an old destination to rescue the self...an identity...a shelter under the sky...with love and affection...with care and dream...
ইচ্ছেগুলি ডানাহীন । ইচ্ছেগুলি বোরখার নিচে ।
বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলার প্রশ্ন ছিল, পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ ? বঙ্কিমের সেই সময় এখন আর নেই । কপালকুণ্ডলাও নেই । এখন সকলই সর্বজনপ্রশ্ন, পথ, তুমি পথিক হারাইয়াছ ?
ক্রমবিকাশের ধারা থেকে নেমে এসে
বসেছো রাস্তায় । ধর্ণাবেশে ।
দারুহরিদ্রার দেশে, দ্রাক্ষা তুমি, অস্থিরতা দোষে,
সকল নেশার শেষে, জীবিকা করেছো পরনীতি ।

নিরাপদ দূরত্বে আমিও থাকি, তবু
নেমে আসে শান্ত গিলোটিন ।

যেটুক করেছো উচ্চারণ,
অর্থহীন জেনে, ফিরিয়ে নিয়েছো তাও ।

তোমার ধর্ণার পাশে ওড়ে বালি, ওড়নার মতো
ওড়ে গীর্জা, অন্তহীন, ও মহাকরণ । ওড়ে প্রতারণা ।

ক্রমবিকাশের পথ চলে গেছে মৃতদের দেশে ।
বিত্ত ও বৈভবে ।


কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে মূলগত পার্থক্য প্রচুর । প্রধান পার্থক্য হলো, কলকাতা গেলে, কোনো বন্ধু আপনাকে তাদের ঘরে ডাকবে না । লাঞ্চ বা ডিনারের কথা তো দূর অস্ত । ঢাকাতে ২০০৯ সালে একদিনের আলাপে চারদিন থাকতে হলো মেসবাহ কামালেস ঘরে ।


শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো, এবার পুজোর ছুটি কাটাবো বাংলাদেশে । ষষ্ঠী বা সপ্তমীর সন্ধ্যেবেলা পৌঁছে যাবো ঢাকা । দু'রাত কাটিয়ে, পরদিন, কবি সরদার ফারুকের নেতৃত্বে, লঞ্চে করে বরিশাল । কীর্তনখোলায় বাদামগাছের নিচে তুমুল আড্ডা । বরিশালের রান্না আমার প্রিয় । বিশেষ করে, ঐ যে, কুচো চিংড়ি দিয়ে শাপলা ফুলের ডাঁটা নারকেল ইত্যাদি মিশিয়ে চমত্‍কার সেই রান্না । বরিশাল থেকে ঢাকা । আজিজ মার্কেটে লোক পত্রিকার সম্পাদক শামীম, বি শামীম রেজা ও পারভেজ হোসেনের সঙ্গে আড্ডা না মারলে সব বৃথা । ওবায়েদ আকাশ আমার অন্তরের মানুষ । তার সঙ্গে নিভৃত আলাপ হবে । আর প্রণাম করতে যাবো অধ্যাপক ও ভালো মানুষ মেসবাহ কামালকে । মফিদুল হককে কি ভুলে যাবো ? অথবা কবি রফিক আজাদকে ? সেখান থেকে সোজা কক্সবাজার । সমুদ্রসঙ্গমে দুদিন কাটিয়ে ফিরবো আমাদের ত্রাণশিবিরে । আপাতত এটুকুই ঠিক হলো Her Highness প্রীতি আচার্যর পরামর্শানুসারে ।


ফেসবুক এক বিপজ্জনক এলাকা । রেড এরিয়া বললেও কম বলা হবে । বন্ধুত্ব, প্রেম থেকে এর স্রোত বাঁক নিতে পারে অন্ধকারে । অতিসম্প্রতি, এরকম কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যা বিপর্যয় এনেছে ডেকে । এই বিপর্যয় মূলত হয়ে থাকে মেয়ে বা মহিলাদের । ফেক আইডির চল এই ফেসবুকে বেশি । এই ফেক আইডির আড়ালেই এসব খেলা হয়ে থাকে । মেয়েদের নগ্ন ছবি ব্যবহার করে ছাড়া হচ্ছে বাজারে । যার পরিণতি অন্ধকার ছাড়া আর কিছু নয় । ফেক আইডি থেকে সাবধান থাকুন । আমিও ফেক আইডি ধারণকারীদের বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছি । তারা যদি ইনবক্সে তাদের আসল পরিচিতি দেয় (এটা গোপনই থাকবে), তাহলে তাদের বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দেবো না