Thursday, April 17, 2014

প্রীতি আচার্য রচিত ক্যাপশন যা যেকোনো যাত্রাপালার নাম হতে পারে : স্বামীর মন সাংহাই... যাত্রাপালার কোম্পানী এই নাম ব্যবহার করতে হলে অনুমতি লাগবে ।
চিন্তার অস্বচ্ছতা যেমন দায়ী, মানসিক জটিলতাও ভাষার জটিলতার পেছনে কাজ করে । ভাষার জটিলতা মানে ভাষার অস্পষ্টতা । তা বলে, কমলকুমারের ভাষার জটিলতার পেছনে চিন্তার অস্বচ্ছতা নয়, বরং তা একের পর এক চিত্রকল্প ব্যবহারের ফল । নিজে চিত্রকর ছিলেন, ফলে, তার গদ্য চিত্রময়, ঐ চিত্রময়তা না বুঝতে পারলে তার ভাষা অগম্য হয়ে থাকবে সাধারণ পাঠকের কাছে । বাংলাভাষায়, সম্প্রতি, অনেক লেখকের গদ্যে একটা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তা ঐ চিন্তার অস্বচ্ছতাজনিত জটিলতা ।
ক্রিয়াব্যবহারের দক্ষতার উপর নির্ভর করে একজন লেখকের প্রকাশমহিমা । চিত্রকল্প মূলত ইশারাবাহী, সেই ইশারার অমোঘতাও নির্ভরশীল ক্রিয়ার ব্যবহাররীতির উপর । অর্জুনের মত লক্ষ্যভেদী হতে হয় একজন কবি বা লেখককে, মনোরঞ্জন সার নয়, তার লক্ষ্য পাঠকের ব্রেণসেলসকে একটা ধাক্কা দেওয়া, ভাবনার জগতকে আমূল পরিবর্তন করার জন্য এটা জরুরি । বাক্য যদি অমোঘ না হয়, তাহলে এটা কি করে সম্ভব ? মুশকিল হলো, বাংলা ভাষায়, অধিকাংশ লেখক বা কবির উদ্দেশ্য মনোরঞ্জনের দিকে, বেস্ট সেলার সিরিজে তার গ্রন্থ যাতে তালিকাভুক্ত হয়, তার জন্য প্রাণাতিপাত করাই এখন বাঙালি লেখকের ধর্ম । এটাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বাক্যের প্রাণবীজ যেখানে থাকে, ঐ ক্রিয়ার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন অনেকেই । ত্রিপুরার লেখকদের ক্ষেত্রে এই ব্যাধি আরও মারাত্মক । কেন না, এখানে অধিকাংশই ক্রিয়াব্যবহারে অপটু ।
তখন সবে চাকুরিতে ঢুকেছি । আমার ব্রাঞ্চ অফিসার হীরালাল চৌধুরী, দাপুটে অফিসার হিসেবে ভারি নামডাক তার । একদিন কথাচ্ছলে বললেন, বাঙালিরা ইংরেজিতে কথা বলার আগে মনে মনে ট্রান্সলেশন করে । অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি আমি । কথাটির সত্যমিথ্যা নিয়ে ভাবছিলাম । তার আগেই, তিনি, পুনরায়, বললেন, প্রায় প্রত্যেক বাঙালির মগজে একটা ট্রান্সলেশন জোন থাকে । সেখান থেকে এই অনুবাদকর্ম সম্পাদিত হয়, তার আগে, তারা ভাবে বাংলায় । হীরালাল স্যরের কথাটির সত্যতা অনুধাবন করি, আঞ্চলিক ভূখণ্ডে বসবাসকারী বাঙালি লেখকদের গদ্যপাঠের পর । তাদের গদ্য পড়লে মনে হয়, তারা আগে সিলেটি বা নোয়াখালিতে চিন্তা করেন, তারপর তা অনুবাদ করেন বাংলার মান্যভাষায় । ফলে, জড়তা থাকে সেসব লেখায় । ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ বাঙালি লেখক এই জড়তায় আক্রান্ত । একেই, হয়তো, কেউ কেউ বলেন গ্রাম্যতা ।
দিনে মাছি রেতে মশা, কবে কথাটি লিখেছিলেন ঈশ্বর গুপ্ত, আজও তা খাঁটি বচন হিসেবে পরিগণিত । পনেরো বা কুড়িহাজার লোকসংখ্যা হলেই সেই ছোটো শহরকে পুরসভা বলে ঘোষণা করার মধ্যে কি মাহাত্ম্য আছে, জানি না, তবে, এসব পুরসভা যে মশকদমনেও অপারগ, এটা প্রমাণিত । তিনতলাতেও মশার উপদ্রবে স্থির হয়ে বসার যো নেই, তার উপর অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য লোডশেডিং ! নরক দেখিনি, তবে মনে হয়, নরক এর চাইতেও বেটার জায়গা । সেখানে অন্তত উন্নয়নের বক্তৃতা শোনাতে আসে না কেউ ।
আয়নাপর্বটি অতিসাধারণ । পারা-ওঠা, ভাঙাচোরা । ত্রাস আছ কিছু ।
প্রতিরাতে, জেগে থাকি এই ত্রাস নিয়ে ।

ভাবি মৃগশিরা আর রোহিনীর কথা ।
পূবের বারান্দা জেগে থাকে চৈত্রশেষে । 'সন্ত্রাসের দিন
শেষ হবে কবে ?' আধ-পারা বলে ওঠে ।

আয়নাপর্বের সঙ্গে এটুকু সম্পর্ক,
মৃগশিরা জানে । ত্রস্ত দিনলিপি জুড়ে এই আয়নাপর্বটি ।
the nicest way to live in a happy mood is to be an ass...
একটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ, ৩০ গ্রাম আঙুর আর ১২০ বাবা জর্দা দিয়ে একটা সাঁচিপান । মুড ফিরিয়ে আনতে আর কি দরকার এই সন্ধ্যায় ? ভালুক বা রাম নেই, রাশিয়া বা স্কটল্যাণ্ড নেই । ফলে, এটুকু দিয়ে, বলছি, ওঁ মুডায় নমঃ ।
ত্রিপুরায় বসে যারা, এই মুহূর্তে, বাংলা কবিতা লিখছেন, তাদের মধ্যে পল্লব ভট্টাচার্য, স্বাতী ইন্দু, প্রবুদ্ধসুন্দর কর, অশোক দেব, সুবিনয় দাশ, তমালশেখর দে, প্রীতি আচার্য এবং মৃদুল দেবরায় আমাকে টানে । মাঝেমাঝে, মিলনকান্তি দত্ত, কৃত্তিবাস চক্রবর্তী, শুভেশ চৌধুরী, অনন্ত সিংহ, অনিরুদ্ধ সাহা বা অভিজিত্‍ চক্রবর্তীর কবিতা পড়ে চমকে ওঠি । ধারাবাহিকতা একজন কবির বেড়ে ওঠার জন্য জরুরি । অনেক তরুণই লিখছেন, বাহবাও হয়তো পাচ্ছেন, তাদের কবিতা সে অর্থে, আমার কাছে উজ্জ্বল মনে হয়নি । লিখলেই কবিতা হয় না, এই সরল কথাটি এদের অনেকেই জানে না, বলে, মনে হলো তাদের কবিতা পড়ে । যে সাড়ে তিনশো জন বইমেলায়, কবিতাপাঠের আসরে, কবিতা পাঠ করে, তাদের অনেকেই কবি নয়, সরকারি ব্যবস্থাপকগণ কবে তা বুঝবেন ? কবিতা যে 'হেলাফেলা নয়' এটা তো অনেক আগেই রণজিত্‍ দাশ বলেছেন । তবু কবিতার নামে এই রাজ্যে চলছে মোচ্ছব । সামান্য পাঠক হিসেবে, এইসব মোচ্ছব, দেখে, বড় লজ্জিত ।
কাল থেকে টানা চারদিন সরকারি ছুটি । যদিও ছুটির আনন্দ নেই এখন আর । ব্যস্ত থাকতে হবে সরকারি কাজেই । হাস্যকর এই সব কাজ । তবু পেটের দায় ! আজ, এসবের ফাঁকে, রিমিকে পাঠাতে হবে গদ্য, যা না পাঠালেই নয় । কাল পাঠালাম সমরেন্দ্র দাসকে । আত্মপ্রকাশ আবার বের করছে সমরেন্দ্র । সত্তরের দশকে অন্যতম সেরা কাগজ ছিলো এই আত্মপ্রকাশ । এমন সুসম্পাদিত কাগজ খুব কম দেখা যায় । তখন বেরুতো অজ্ঞাতবাস । কৃষ্ণনগর থেকে দেবদাস আচার্যও একটা সুন্দর কাগজ করতেন । মেদিনীপুর থেকে বররুচি বের করতো শ্যামলকান্তি দাশ । পুরুলিয়া থেকে সৈকত রক্ষিতেরা বের করতেন আমরা সত্তরের যিশু । কৌরব তো তখনই বাংলা কবিতার জগত কাঁপাচ্ছে । পুরাণো সে সব কাসুন্দি থাক । আমাকে এখন লিখতে হবে রাতদিন । অনেকেজনকেই কথা দিয়েছি, লিখে উঠতে পারিনি । চারটে গল্প তার আগে শেষ করতে হবে আমাকে । এই গরমে, হাঁসফাঁস করতে করতে. ভাবছি, এক ফাঁকে, লিখে ফেলবো সব লেখা । তুমি পড়বে তো ? না কি উনুনের আগুনে ফেলে দেবে সব লেখা ?
রাষ্ট্র মূলত এক শোষনপ্রণালীর সমাহার । যে বা যারাই ক্ষমতাই আসুন না কেন, ক্ষমতাসীন ব্যক্তি বা দল কার্যত শোষকের পক্ষেই থাকে । এক্ষেত্রে, পূঁজিবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ, মার্কসবাদ সকলই এক গোয়ালের গরু । তাদের হাম্বা ডাকটাই প্রাথমিকভাবে ইতরবিশেষ আলাদা । পূঁজি বা ধন হয় ব্যক্তির নয় দলের কুক্ষিগত হবেই । এর অন্যথা হবার যো নেই যেন ।
ত্রিপুরায় একটা বড় নদী নেই, অনেককাল আগে, আক্ষেপ করে কথাটা বলেছিল কবি দীপংকর সাহা । বড় নদী না থাকলে সংকীর্ণতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে । তবে, পাহাড়ি নদী আছে অনেকগুলি । বর্ষায় এরা ভয়ংকর । অন্য সময়, প্রায় মৃত থাকে । আমাদের চরিত্রও খানিকটা এরকম । পরিবেশ নিজের অনুকূলে হলে, জোয়ার আসে আমাদের মনে । নাহলে, মৃত নদীটির মত অবস্থান । বৃষ্টি দেখে ছাতা ধরার কথা অনেকেই বলেন । এটা যতখানি কার্যকরী, তারচেয়ে বেশি স্বার্থপরতা দোষে দুষ্ট, চাচা আপন প্রাণ বাঁচার মত । প্রায় চারদশক লেখালেখির সঙ্গে জড়িত থেকে, আজ, পুনরায়, দীপংকর সাহার কথাটি ভাবছি । সংকীর্ণতা, কতদূর মেলেছো তোমার ছায়া ?
ফাঁকিই দিলাম আজ । অফিসে যাবার কথা, না গিয়ে রান্না করতে লেগে গেলাম । থানকুনি পাতার বর্তা (মনিপুর আইটেম. ইরলপা ), কুমড়োচিংড়ি, ঝিঙাপোস্ত, আলুর ডাল (মনিপুর আইটেম), খেসারি ডালের বড়া, গুড়া মাছের তরতরা আর উচ্ছে তো রয়েছেই । মাংসটা এভয়েড করলাম, এই গরমে উচিত নয় ভেবে । ফাঁকির দিনে এই ফাঁকিবাজি রান্না দিয়ে, ভাবছি, দুপুর কাটিয়ে দেবো ।
আকাঙ্খা স্বাভাবিক । উচ্চাকাঙ্খাও দোষণীয় নয় । ভয় পাই, অতিউচ্চাকাঙ্খীদের দেখলে । তারা পারে না এমন কোনো কাজ নেই । তাদের প্রেমপ্রণয়ও ঐ অতিউচ্চাকাঙ্খার সার্থক রূপায়ণে ব্যবহৃত হতে দেখেছি, বারবার ।
ব্যক্তি স্বাধীনতা যে জরুরি, এই সরল কথাটি কোনো দল মানতে চায়নি, তাদের কাছে দল আগে । ব্যক্তি দলের উর্ধে নয়, বলে, যে খড়গটি তার মাথার পেছনে রাখা হয়, তা, যে কোনো মুহূর্তে, ঘাড়ে কোপ মারার জন্য ব্যবহৃত করা হবে, জেনেও, যারা ঐ স্বাধীনতাকেই বরণ করে নেয়, তাদের কথা খুব কম লোকই জানে । বরং দলবদ্ধভাবে, স্বাধীনতাকামী ব্যক্তিটিকে দলের কুকুররা কামড়াতে আসে, তার আগে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে রটিয়ে দেয় নানা কুত্‍সা, যার ভার অনেক সময় সহ্য করতে পারে না ব্যক্তিটি । এই খেলা নতুন নয় । তখন আক্রান্তের পাশে তার প্রিয় বন্ধু বা স্বজন থাকে না কেউ । একা হয়ে পড়ে সেই ব্যক্তি । একাকীত্ব তাকে মহান করে তোলে কি না জানা নেই, যেটা হয়, নিজের বিশ্বাসের প্রতি সংশয় দেখা দেয় তার । দুর্বলেরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়, ব্যক্তি তখন সঙ্ঘ থেকে অনেক দূরে । এই দৃশ্য আবহমানকালের । সকলেই ভুলে যেতে থাকে, কেবল আমার মাথা নত হতে থাকে ঐ স্বাধীনতাকামী ব্যক্তির চরণতলে । ইতিহাস নির্মম, সে দেখে, কয়েকশো বছর পরে হলেও, একজন দুজন করে লোক অনুগামী হয়ে ওঠে স্বাধীনতাকামী ব্যক্তিটির ।
কাউকে লেলিয়ে দিয়ে যারা সাধু সেজে থাকে, তাদের চাইতে নিকৃষ্ট পশু আর কেউ নেই । তারা ভাবে, তাদের মুখোশ কখনই খুলবে না । অথচ, তাদের মুখোশ যে ছিঁড়ে গেছে তার অনেক আগেই, এটাই জানে না তারা ।
বিশেষ্য আর বিশেষণের পার্থক্যই যারা জানে না, সমাস ও সন্ধি থেকে যারা দূরে থাকে, বাক্যের মহিমা কোথায় দীপ্ত হয়, ক্রিয়ার ভুমিকাই বা কি, যারা জানে না, অলংকার ও ছন্দ সম্পর্কে যারা উদাসীন, তারাই লেখার জগত যখন আলোময় করে তুলতে চাইছে, বুঝতে হবে, ঘোর দুর্দিন ঘনিয়ে এসেছে বাংলা ভাষার !
প্রতিটি জিহ্বায় বিষ, নখে বিষ, ঈর্ষার আগুন চোখে, বলছে, দেখো হে, লোকটাকে । এ ঝাঁকের কই নয়, উড়ে এসে, বসেছে পিড়িতে । তাকে ঝেটিয়ে বিদেয় করো, এখানে রাজত্ব আমাদের, অক্ষমের জয়গান ছাড়া চলবে না কিছু । কুত্‍সা ছড়াও, স্টালিন শিখিয়েছেন, মনে নেই ? কুত্‍সার চেয়ে বড় অস্ত্র নেই পৃথিবীতে । তবু যদি মাথা না নোয়াতে চায়, যিশুখ্রীষ্ট বানিয়ে ঝোলাও তাকে । ঈর্ষা মহত্‍ ও কূপমণ্ডুকের সামগানে জরুরি কী বোর্ড । তাকে বলো, পিড়ি থেকে উঠে যেতে । আর গলায় ঝুলিয়ে দাও জুতোমালা । সন্ধ্যে হয়ে গেছে । নখবিষ, কুত্‍সার অন্ধগলিপথ পার হয়ে লোকটা তখন প্রার্থনা করছে, মূর্খের উল্লাস দীর্ঘজীবী হোক । তারা যেন সুখী হয় কুত্‍সাভোজনে । সঙ্ঘের শ্রীবৃদ্ধি হোক এই নববর্ষে ।
আজ বড় বেশি করে যার কথা মনে পড়ছে, তিনি বিবেকানন্দ । কুত্‍সা তাকে ঘিরে ধরেছিলো অক্টোপাসের মতো । জর্জরিত ছিলেন মিথ্যা অপবাদে । ধৈর্য হারিয়েও ফেলেছিলেন একসময় । তবু তিনি আপন মহিমায় ঈর্ষাকাতর কুত্‍সারটনাকারীদের বেড়াজাল থেকে এসেছিলেন বেরিয়ে । আজ কেউ মনে রাখেনি কুত্‍সারটনাকারীদের নাম । আর তিনি, আমার প্রণম্য ।
বলেছো, আকাশ হয়ে যেতে । আকাশ মানে ঐ থাবা, শূন্যতার ?
ঐ হাঁ, মেলে ধরা জিহ্বা সহ টেনে নিচ্ছে অপ্রাকৃতস্বরে. দেখো, অর্জুনের মত দেখো এক শূন্য, প্রলয়রচিত মহাশূন্য, গিলতে আসছে খড়ি, মাটি. সমুদ্র ও নুন । অর্থ থেকে অনর্থের দিকে যেতে যেতে, হা হা করে হাসছে, ঢেউ আর ঢেউ, ভেঙে পড়ছে সৈকত, বালির ঐ সমাহার, তেতে আছে মৃত বালি, মৃতরাও জেগে ওঠে সঙ্ঘের প্রভাবে. দেখো. সঙ্ঘ ভেঙে যায় শূন্যগ্রাসে । কুরুক্ষেত্র থেকে উঠে আসা ঐ হাঁ, জেনে নিও, কুরুদলে শিখণ্ডী ব্যতীত তুমি আর কিছু নও, তোমার উদ্যত তর্জনীও গিলে খাবে ।
আমি বিনা গতি নাই । গীতার ঐ কথাটি মনে আছে ? মামেকং শরণং ব্রজঃ ! অর্জুনকে বলেছিলেন কৃষ্ণ, জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি আদি বিষয়ে লেকচার দিয়ে, না পেরে, এই অমোঘ কথাটি উচ্চারণ করেছিলেন । তারপরও হয়নি । ভোটপ্রার্থীর মত, রাজনৈতিক নেতা বা মাফিয়াসর্দারের মত সবশেষে বললেন, মন্মনা ভব । এই যে, আমার হও, কথাটির ইশারা ও ব্যাপ্তি বহুদূর প্রসারিত । শাসক দলের যদি না হয়ে ওঠেন আপনি, তাহলে আপনার ভিটেয় ঘুঘু চরিয়েও ক্ষান্তি নেই । মাফিয়ার লোক যদি হয়ে উঠতে না পারেন, কি হাল হতে পারে, তা ভেবে, গা শিউরে ওঠে । সর্বত্র ঐ আমি । এমনকি, ভালোবাসার মানুষটিও আপনাকে বলবে, শুধু আমারই হও । এক আমি চাইছে আনুগত্য আর অপর আমি চাইছে তা থেকে মুক্তি । এই চিরকালীন দ্বন্দ্ব থেকে কবিতা ও সঙ্গীতের জন্ম, রেখা ও বিন্দুর অভিয়ান, রঙ ও রেখার খেলা, তাল ও লয় এর সহগমন ।
ওড়ো, ডানার কুশলে, হে উড্ডীন ঘুড়ি, লালময়, ওড়ো । তোমার লেজের সুতো বাঁধা আছে কার হাতে, কার লাটাইয়ে, ভুলে যাও, ওড়ো, সুতো ছিঁড়ে যাবার প্রাকমুহূর্তটুকু চরম রোমাঞ্চকর, মনে হবে, শূন্যভেদী অথবা শূন্যের তুমিই শাসক । এও এক নেশা, যে ওড়ায় আর যে উড়ছে, দুজনেই বলে ওঠে, চিয়ার্স চিয়ার্স ! বোকা লোকটিকে বলা গেছে, নরকেই যাও, সঙ্ঘহীন পথে । এবার গ্লাসের ফেনা, বুদবুদ, উপচে পড়ছে সুখ । সুতো ছিঁড়ে যাবার কথাও ভুলে যাও । উড্ডীন হে ঘুড়ি, তাকিও না নিচে, ওড়ো, উড়ে যাও । পতন সময় এলে, দেখবে লাটাই নেই, লাল গেছে ভিজে, একা তুমি ঝুলে আছো কোনো এক ডালে, ফাঁসিতে লটকে থাকা অসহায় পুরুষের মত, শব হয়ে ।
এক একটা দিন যায়, এক একটা মাস যায়, বছরও চলে যায়, এই চলে যাওয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কিছু সুখদুঃখের স্মৃতি, অপমান, ব্যর্থদিনলিপি, ঈর্ষাকাতর কিছু লোকের আস্ফালন, আর স্বপ্ন । হ্যাঁ, এই স্বপ্নবিভোরতাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায় আরেক নতুন বছরের দিকে । যে জানে, তার কাছে এই এগিয়ে যাওয়া মূলত নদীর সাগরে মেশার মতো । এ আসলে অখণ্ডের সঙ্গে, সমগ্রের সঙ্গে খণ্ডের মিলনযাত্রা । এই মিলনযাত্রীদের, আমার হিতাকাঙ্খী ও নিন্দুক, সকলকেই আমার শুভেচ্ছা । কল্যাণ হোক সবার । মঙ্গল হোক পৃথিবীর । ওঁ সহনা ভবতু ।
আজ ১ বৈশাখ । আজ উদয়পুর শহরে বৈশাখী আড্ডা, আয়োজক মনন, যে সংস্থাটির জন্মও আজ বিকেলে । বৈঠকী গান, কবিতাপাঠ, আবৃত্তি আর আড্ডায় জমে উঠেছে এই আড্ডা । মনন এর ঘরে প্রতিমাসে এরকম আড্ডা বসবে, বলে, জানিয়েছেন সংস্থার কর্ণধার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী । তিনি 'অববাহিকা' এবং বাচ্চাদের কাগজ 'চাঁদের পাহাড়' এর সম্পাদকও বটে । আগামী মাসে এই আড্ডা শুরু হবে বার্গম্যান এর ফিল্ম দিয়ে ।
সকল প্রস্তাব ছিল তোমার টেবিলে । ফিরে এল ।
নাকচ করেছ । লাল কালি দেখে, স্তব্ধ হয়ে পড়ি,
ঐ না শব্দটির সামনে দাঁড়িয়ে । আলো নিভে এল ।
চারদিকে । মানে, অস্পষ্ট, ঝাপসা দেখছি, না-এর
কৃষ্ণরূপ । তার মোহন বাঁশিটি দেখছি না কেন ?

অন্ধ হয়ে যেতে যেেতে ভাবি, ভাল হল, আর কোন
প্রস্তাব দেবার অক্ষরপ্রতিমা রইল না তবে !
ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতা কি শূন্যবাদী ? বৌদ্ধধর্মের শূন্যতাবাদ কি তাঁর কবিতায়
লক্ষ্য করা যায় ? আদৌ ?
চলো, আজ, একটু ইয়ে, মানে, মস্তি করি । ঝাপিংটাপিং বাদ । স্রেফ মস্তি । বাদ বলতে আবার ইজম বুঝতে যেও না । এই এক মুশকিল, কথায় কথায়, পিঠে ছাপ্পা মেরে দেয় আজকাল । মস্তি যে করবো, তার আগে, দেখা গেলো, তোমার চারপাশে একটা লক্ষ্মণগণ্ডি এঁকে গেছে কেউ কোনো গাঁয়ে মানে না এক আপনি মোড়ল । লাইফ এখন আর ঝক্কাস না, বিন্দাস না । তোমার নামে, গোপনে, সাঁটা হয়ে গেছে অশ্লীল পোস্টার । শহীদবেদী তো ভাড়া পাওয়া যায় পার্টি অফিসেই । সে নিয়ে চিন্তা নেই । মস্তি করবে যে, সে ইয়ারদোস্ত কই ? প্রত্যেকের টিকি বাঁধা আছে এন্টেনার মত নির্দিষ্ট পয়েন্টে । সব কিছু ফ্রি পাবে । বাই ওয়ান গেট ওয়ান । মস্তির বাজারে এসবে মন দিতে নেই । তুলে নাও হাতে গ্লাস । হাণ্ড্রেড পাইপার, চিয়ার্স । তারপর, হজম করো বিষ । সকল অপমান । মূর্থদের মত নয়, তোমার মতো করে বলো, চিয়ার্স...

Monday, April 7, 2014

এপরিল মাস মানে সর্বনাশা মাস । এই সর্বনাশের ইশারা এড়াতে পারি না, বলে, এবার এপরিলেই যাবো কলকাতা, চারপাঁচদিনের জন্য । মূলত প্রীতি আচার্যর ফ্ল্যাটসংক্রান্ত ঝামেলার একটা সুরাহা করতেই এবারের এই যাওয়া । এপরিলের তীব্র দহন এর চাইতেও এই বিষয়াসক্তি আরও ভয়ংকর, এটা থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলাম সমগ্র জীবন । তা আর পারলাম কই ? আসক্ত পুরুষ শক্তিহীন হয়, এটা এখন নিজেকে দিয়েই অনুভব করি ।
টিভি দেখি না । তবু, কাল, সন্ধেবেলা, চোখ গেলো টিভিস্ক্রিণে । ঘরে লোকজন অনেক, কেউ গল্প করছে, কেউ চুপ করে, টিভির সামনে বসে আছে । আর এক ঘরে ভদকা আর ফ্রুটি খাচ্ছিলাম । একটা সিগারেট নিতে এসে, টিভিস্ক্রিণে চোখ গেল । কবি সুবোধ সরকার তখন মল্লিকার মৃত্যুর সময় তার বামপন্থী বন্ধুদের পাশে না থাকার কথাটি বলছিলেন এবিপি আনন্দ এর প্রতিপক্ষ অনুষ্ঠানে । অভিনেতা অরিন্দম শীল এবং কবি সুবোধ সরকার লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলপ্রার্থী অর্পিতা ঘোষের পক্ষে প্রচার করবেন, বলে, প্রেসকনফারেন্স করে, জানিয়েছেন । আনন্দ এটাকেই ইস্যু করে প্রতিপক্ষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে । মল্লিকা সেনগুপ্তর অকাল মৃত্যু বেদনাদায়ক, এবং সুবোধ সরকারের পাশে ঐ সময় তার বামপন্থীবন্ধুদের না থাকাটাও অস্বাভাবিক নয় । অর্পিতা ঘোষ আমার প্রিয়জন, যদিও এখন যোগাযোগচ্ছিন্ন । তা, সুবোধ বা অরিন্দম শীল যদি অর্পিতার হয়ে প্রচার করে, তাহলে অপরের এত মাথাব্যথা কেন ? তারা যদি সিপিআইএমের হয়ে প্রচার করেনও, তাহলেই বা আপত্তির কি আছে ? মতাদর্শ শব্দটি অনেকেই উচ্চারণ করেন বেশ গৌরবের সঙ্গে, অথচ লক্ষ্য করে দেখেন না, মতাদর্শই ডেকে আনে মৌলবাদ যা অতিবিপজ্জনক এবং ভয়ংকর ।
এবারের লোকসভা নির্বাচন এক বড় তামাশা বললে তামাশা শব্দটির গুরুত্ব কমে যাবে । ভোটের লড়াই এবার কার কার মধ্যে হবে ? রাহুল-মোদির মধ্যে ? না কি কেজরীলালও এই লড়াইয়ে ঢুকে পড়বেন ? না কি অন্য কোনো আঞ্চলিক দল ? মমতা-জয়া-মায়া এই ত্রয়ী ছাড়াও মুলায়ম, নীতিশ বা বিজুর ভূমিকা কি হবে শেষে ? সিপিআইএম এখন পর্যন্ত এই লড়াইয়ে পিছিয়ে আছে অনেক । সমীক্ষার পর সমীক্ষা হয়েছে, সর্বত্র এগিয়ে রাখা হয়েছে মোদিকেই, যে মোদির অবস্থান খুব সুবিধের নয়, নিশ্চিত নয় তার জয় । কংগ্রেস এখন ডুবন্ত জাহাজ, আশা কম । আর রাহুল গান্ধীর ট্রেডরেকর্ড খুব খারাপ । কেজরীলাল একটা হুজুগ । হুজুগে কত কিছু হয় ! আবার উলটোও হতে পারে । ফলে, বাজি ধরার ঘোড়া নন কেজরীলাল । মুলায়ম কি পারবেন বেশি আসন পেতে ? উত্তরপ্রদেশের চিত্র এবার বড় জটিল । যেমন পশ্চিমবঙ্গ । তৃণমূলের এখন একাদশে বৃহস্পতি । তা বলে, এবারের নির্বাচনে ছক্কা হাঁকাবে, সেই চান্স খুব কম । চতুর্মুখী লড়াইয়ে জনগণ কাকে বরমাল্য পরাবেন, তা নিশ্চিত নয় । ফলে, বাজি রাখার তামাশা এই নির্বাচন নয় । বাজি যারা ধরছেন, তাদের সতর্ক থাকতেই হবে পরবর্তী ঘটনাবলীর দিকে ।
কেন বেঁচে আছি ? কিসের লোভে ? নৈঃশব্দ তার থাবা যেখানে মেলেছে, সেখানে অর্থ, কাম বা ভোগ অর্থহীন । তাহলে আর কিসের লোভ ? ভালোবাসা ? হায়, শূন্যতা যাকে ঘিরে ধরে, তার কাছে এই জাগতিক ভালোবাসাও মনে হয় বড় অর্থহীন এবং স্বার্থসম্ভব । না কি, দায়বোধ থেকে এই বাঁচা ? জানি না, দায়বোধ কতখানি টেনে নিয়ে যেতে পারবে জীবনের দিকে ?
বাড়মুড়া ট্রায়াঙ্গল বড় রহস্যময় । সেখানে সবই হারিয়ে যায় । আমি বাড়মুড়া ট্রায়াঙ্গল দেখিনি । তোমার বদ্বীপে হাত রাখার আগে মনে পড়ে যায় বাড়মুড়া ত্রিভুজের কথা । ঐ চুম্বকের টানে, এসে, টের পাই, হারিয়ে যাবার চেয়ে কামারশালার তপ্ত লোহাটির মত আমাকেও ডুব দিতে হবে নুনের সমুদ্রে । বদ্বীপে এসেছি, সমুদ্র কি আর বেশি দূরে থাকে ?
'মার্চ চলে যাবে । তারপর ? তারপর তুমি কি করবে ?' প্রেতদুপুরের ছায়া এসে প্রশ্ন করে । টোটেম প্রথার মত গ্লাস ভরে আছে সঙ্গরসে, ক্রমপলায়ণরত রোদ এসে গিয়েছে চুমুক দিয়ে । মার্চ মাস চলে গেলে কি করবো আমি ? গারো পাহাড়ের থেকে নেমে আসে গণপ্রত্যাখ্যান । আমি তো উদ্বাস্তু, সমতল থেকে এসে পাহাড় দখলে মাতি । চিন্তা নেই, এলসি পেছনে । তারপর ? মার্চ মাস চলে গেলে কি করবো ?
রাতে, ফেরার পথে, ক'দিন ধরে, তাকে দেখতাম, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে সে, একটা ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে । একদিন বললো, একটা সিগারেট দেবে ? তখনই, ভালো করে তাকিয়ে দেখি, বাইশ তেইশর যুবতী । স্লিম, ঈষত্‍ শ্যামলা, চোখ নেশাচ্ছন্ন । সিগারেট বাড়িয়ে দিই । ম্যাচিস ? তাও দিই এগিয়ে । সিগারেট ধরিয়ে বললো, গত তিনদিন কেউ আসেনি । আজও এলো না । তুমি যাবে ? চলো, না ? রাতটাকে এনজয় করবে । কলকাতায় অফিসের কাজে সেবার যাওয়া । থাকি প্রিটোরিয়া স্ট্রিটে, ত্রিপুরা ভবনে । রাহুল পুরকায়স্থ ও অর্পিতা ঘোষ এসেছিল দিনের বেলা । একরাত বেলঘড়িয়ায় তাদের ঘরে থেকেও এসেছি । সেদিন ফিরছিলাম কফিহাউস থেকে । যাবে ? মেয়েটার কথায় কি যেন ছিলো, শিউরে উঠলাম আমি । গম্ভীর গলায় বললাম, না । আপনার কাস্টমার আমি নই, অপেক্ষা করুন, আজ ঠিক আসবে । তিনদিন পর, মেয়েটাকে সেই একই জায়গায় দেখলাম । এগিয়ে এসে বললো, থ্যাংকস । সে রাতে সত্যিই এক রাঘব বোয়াল পেয়েছিলাম । দুমাসের ঘরভাড়া চুকিয়ে দিয়েছি তার টাকায় । আজও আসবে সে । প্রিটোরিয়া স্ট্রিটে এসে, ত্রিপুরা ভবনে, ঢুকতে ঢুকতে, মনে মনে বললাম, সুখী হও, হে রাত্রিসুন্দরী ।
নুনে যে রয়েছে কষ, জিহ্বা জানে, তা তোমার স্বেদ । হাডুডু খেলার মত তোমার পা আমার দু'কাঁধে, উল্টে দিচ্ছো গ্লোবাল ভূমিকা, আর আমি, এক পরিবেশকর্মী, দূষণবিরোধী এই রাতে, জিভ রাখি নুন থেকে সুমেরুপর্বতে, তোমার ইচ্ছায় । সমুদ্র গলেছে তার আগে, হিমবাহ নয়, উষ্ণতর ঢেউ ক্রমে আছড়ে পড়ছে । 'তাহলে কি ধ্বংস অনিবার্য আজ ?' হেসে ওঠো তুমি । 'ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক দূষিত জগত, নিজ বীর্যে গড়ে তোলো আমার পৃথিবী ।' বলে, বিপরীতমুদ্রাসনে বসে, তুমি গড়তে লাগলে গ্রহ ও নক্ষত্র, ছায়াপথ । আর চারদিক থেকে বয়ে এলো আশ্চর্য বাতাস ।
ডুবুরি হবার আগে জেনে নিতে হয় শর্তাবলী ।
কাকে বলে শ্বাসাঘাত, কাকে চোরাটান,
জলোচ্ছ্বাস বেড়ে গেলে, শক্ত হাতে দু'কাঁধ আঁকড়ে
কিভাবে সামাল দিতে হয় মাঝপথে নেমে আসা তীব্র আগ্রাসী কামড়
জেনে নিতে হয়, কতটুকু ডুবে গিয়ে,
পুনরায় ভেসে এসে, দাঁত চেপে, দৃঢ়তর পেশী,
যেতে হয় নুনের গভীরে ।

সমুদ্রমন্থনকথা লেখা আছে সকল পুরাণে,
তুমি লেখো ডুবুরীকাহিনী ।
ক্রমে মেলে ধরেছো পাপড়ি, আর আমি
জিভ রাখি সেই লালে । মধু ঝরছে ঐ ।
শিল্পের সকল সংজ্ঞা ভেঙে ছটফট করে ওঠো তুমি,
ব্যাকরণহীন আমি দাঁতে কাটি তোমার যুগল ।

এই দৃশ্যে, হা হা করে তেড়ে আসছেন
অভিভাবক সমিতি । তুমি
সেই থেকে অতৃপ্ত রয়েছো, আর আমি
ঘরছাড়া, ব্যর্থ অতিজীব !
বাঙালী মূলত কোনো একটিমাত্র জাতি নয় । সে জাতি চারটি জাতির মিশ্রণে গঠিত । "Bengal originality did not form one country and... one nation...the four tribes, Pundra,, Vanga, Radha, and Sumha, were the important ones, who gave their names to the various tracts they inhabited." (Dr. Suniti Kumar Chatterjee : The origin and Development of the Bengali Language/p67)
আমি দালানকোঠা ত্যাজ্য করি গাছতলা করেছি সার । ধুতি চাদর ত্যাজ্য করি ডোরকৌপিন করেছি সার ।"
"জীবনকে গ্রহণ করবার দুটো ছক আছে-- হয় দীনদারি না হয় দুনিয়াদারি ।"
মনস্হির।নীলাঞ্জনাচ্যাটার্জী @ তুমি মনস্থির করো ।/ কাকে চাও,/ তাকে না আমাকে ?/ তোমার হৃদয়ে আছে/শুধু দুজন মানুষ/ বলো কাকে চাও, / তাকে না আমাকে ?
প্রেমের প্রস্তাব পাঠাবার আগে একটি কিশোর দেখে নেয়, শাদা পাতাটির মত তার হাহাকার তাকে কতদূর পৌঁছে দিতে পারে ! সমীকরণের কাছে হেরে যাওয়া গণিত-ছাত্রের মত মাথা তুলে তাকায় ছাদের দিকে । মাথার উপরে ঘুরছে সিলিং ফ্যান, একটা অদৃশ্য দড়ি নেমে এসেছে মেঝের দিকে । কে লালের মত যাদুকর নয়, যে, ঐ দড়ি বেয়ে চলে যাবে কাঙ্খিতার কাছে । তার পাঠ ও আবেগ তাকে, এইমুহূর্তে, সাহসী করে তোলে চণ্ডীদাস হয়ে যেতে । ভাবে, গীতগোবিন্দম থাক, দু লাইন লিখে সে পাঠাতে পারে তার মনোকথা । শাদা পাতাটিতে ঐ কিশোর, তখনই, লেখে ফেলে কয়েক লাইন, যা মূলত হয়ে উঠতে পারতো একটি কবিতা বা আসলে তা কবিতাই ।
সঙ্গ দরকার, সঙ্ঘও দরকার, তা বলে সঙ্ঘের নামে জুলুমবাজি নাত্‍সীদের মত খারাপ এবং নিন্দনীয় । আটোচালকদের দৌরাত্ম যেমন মানা যায় না, কর্মচারিদের অযথা ইউনিয়নবাজিও সহ্য করা যায় না । এতে ক্ষতি ব্যতীত আর কিছুই হয় না, উন্নয়ন তো অনেক দূরের কথা ।
নারী নির্যাতন বা ধর্ষণ মারাত্মক এক ব্যাধি । ক্যানসারের মত ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত । কে দায়ী, এ নিয়ে তর্কবিতর্কের অন্ত নেই । পুরুষতন্ত্রের কুফল বললেও ভুল বলা হবে না একে । আমাদের এই দেশে ভ্রুণহত্যা থেকে শুরু করে পণপ্রথার পেছনে এই পুরুষতন্ত্র । তার উপর মিডিয়ার বাড়াবাড়ি, ভুলশিক্ষা পদ্ধতি, ব্লুফিল্মের আধিক্য কম দায়ী নয় । এসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজনীতিও । কলকাতায় প্রতিটি নারীনির্যাতনের ক্ষেত্রে যেভাবে মানুষ প্রতিবাদ করছেন, তা অভিনন্দনযোগ্য । পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় আমাদের এই ছোটোরাজ্যে নারীনির্যাতন বা ধর্ষণ হচ্ছে তা ভয়ংকয ও বিস্ময়কর । অবাক লাগে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শাসকদলের কর্মী ও নেতারা এসব ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত থাকে এবং তাদের বাঁচানোর জন্য তত্‍পর হয়ে ওঠে পুলিশ ও নেতারা । কোনো প্রতিবাদ নেই, নারী কমিশন এক নিদ্রামগ্নসংস্থা যার কোনো ভূমিকা নেই । প্রতিবাদের ভাষাও যখন perchaged হয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে, এ বড় সুখের সময় নয় ।
আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি নিজের ক্ষুদ্রতা, দীনতা আর অসামর্থতা ।
সত্য আর মিথ্যার মাঝখানে সামান্য যে ফাটল, সেখানেই আটকে আছে ৩১ মার্চ ।
আউলে ফকির আল্লাহ্ বাউলে মহম্মদ দরবেশ আদম সফী এই তক হদ । তিন মত এক সাত করিয়া যে আলী প্রকাশ করিয়া দিল সাঁইমত বলি ।। --মৌলবী আবদুল ওয়ালি
একজন সাধনার ভেতর দিয়ে অর্জন করেছেন, অপরজন জীবন দিয়ে । লালন সাঁই হয়েছেন সাধনার ভেতর দিয়ে, সমাজের বিধিনিষেধ ভেঙে দিয়ে । হাছনরাজা ভোগের ভেতর দিয়ে উপলব্ধি করেছেন এ জীবনের অসারতা । তার আর্তি, পরমাত্মার সঙ্গে একাত্মবোধ, ফলে, ছুঁয়ে যায় সাধারণজনকে । হয়তো, তার তথাকথিত 'অমার্জিত' ভাষা এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন রেখেছে বোদ্ধাদের সামনে, কিন্তু সহজ কথা যায় না বলা অত সহজে, যা পেরেছিলেন হাছনরাজা ।
বরফের মধ্যে পানি রয় /সে পানি কিন্তু এ পানি নয় । /বরফ যখন গলে যায় /সে পানি এ পানি না রয় ।
হিঁদুদের দুর্গাপূজা বেলপাতা দেয় বোঝা বোঝা
ভিতরে খড়ের বোঝা উপরে ন্যাপা পোঁচা --
কী ঠাকুর দেখলাম চাচা কী দুগ্গি দেখলাম নানি
সিংহরাজার উপরে এক বেটি যে বইস্যা আছে
আর এক বেটার বুকের মধ্যে মারে খোঁচা !
নিঃসঙ্গতার থাবা থেকে বাঁচতে চেয়েছিলাম একদা । এখন, মনে হয়, ঐ থাবা থেকে রেহাই নেই আমার ।
বিজেপি : কংগ্রেসকে ভারতবর্ষ থেকে নির্মূল করতে হবে । ছিবড়ে বানিয়েছে দেশটাকে । কংগ্রেস : বিজেপি এলে দেশের সর্বনাশ হবে । সাম্প্রদায়িক দল বিজেপি । তৃণমূল : দেশকে বাঁচাতে হলে আর কংগ্রেস নয় । বিজেপির মত দাঙ্গাবাজ দল এলে ক্ষতি হবে । সিপিএম : বিজেপি আর কংগ্রেস উভয়ই পূঁজিপতিদের দল । একটা বিকল্প নীতির সরকার চাই । সিপিএমই তা পারে । মায়াবতী : বিজেপি এলে দেশের বারোটা বাজবে । এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিটি দলই নিজে ছাড়া বাকিরা এলে দেশের সর্বনাশ হবে এটা বোঝাতে চাইছে । আর মাথা মোটা, অন্ধ কিছু সমর্থক ও কর্মী এই তীব্র গরমে মেতে উঠছে ভোট নিয়ে । কেউই লক্ষ্য করছে না, জনগণের দুরবস্থা !
ফ্রাঙ্কা কোলম্যান, হাত রেখেছো আগুনে । /তোমার নগর পোড়ে, আমারও দেশ ।/ সহস্র আগুনগাড়ি ছুটে যাচ্ছে ভিক্ষাপাত্র হাতে । / তোমার নগর কাঁদে, আমার এ দেশ, ফ্রাঙ্কা কোলম্যান, প্রতারিত ডানে আর বামে ।/দুজনেই দাঁড়িয়েছি এসে অন্ধ নদীটির কাছে ।/ তোমাকে ফেরাবে না সে, আমাকেও রেখো পাশে পাশে ।/দমকল ছুটে আসে, মিডিয়ার মতো, অন্তর দেখে না তারা/ পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে তোমার নগর/আমার এ দেশ ।
এই সকাল একটু আলাদা, যেন অপমানিতা ও রোদনোদ্যতা কোনো তরুণী বিধবা ।
ঘুমের ঘোরে কাটালাম রাত,
ঘোরের মধ্যে কাটাবো দিন ।
তোমার কাছে পেতেছি হাত ।
এটুকুই আজ পবিত্র ঋণ ।
ফোর্ড ফাউণ্ডেশন সি আই এর একটা সংস্থা যার মাধ্যমে চক্রান্তের জাল বিস্তার করে সি আই এ । কেজরীলাল এর NGO এই ফোর্ড ফাউণ্ডেশন এর টাকায় চলে । এবং বলা হয়ে থাকে, যে, ভারতীয় মিডিয়ার অধিকাংশই পরিচালিত হয় এর অর্থে । একে একে দুই, এটা সবাই জানে, কিন্তু কেজরীলালের দুর্নীতি হটাবার এই মহান কাজ যে কেবল মাত্র আই ওয়াশ, বা জল ঘোলা করে দিয়ে মাছ ধরার গ্রাম্য রীতি মাত্র, এটা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে ? করপোরেটদের যেমন প্রথম চয়েস মোদি, আর কেজরিলাল তেমনি এক হাতিয়ার । দেশের আমজনতার মূল সমস্যাগুলি ধামাচাপা দেবার এমন সহজ সমাধান আর কি হতে পারে ? মধ্যবিত্তরাই সবচেয়ে বেশি রিয়্যাক্ট করে সবকিছুতেই । তাদের নজর ঘুরিয়ে দিতে, 'রোমে রসুনের দর কত' গল্পটির মত দুর্নীতি হটাও আন্দোলন । অথবা মোদি লাও এর শ্লোগান । সংখ্যালঘুদের অবস্থা সবদেশেই শোচনীয়, তারা বলি বকরা, তবু ভোটের সময় তাদের মন ভুলিয়ে রাখতে হয়, কংগ্রেস বা বামপন্থীদের এই পুরণো খেলা এখন একঘেয়ে হয়ে গেছে । তাহলে উপায় কি ? জনগণ বিভ্রান্ত । ততোধিক বিভ্রান্ত বুদ্ধিজীবীগণ । তাদের সামনে পুরস্কারের ললিপপ, বিদেশ যাবার হাতছানি, উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান হবার স্বপ্ন । যে পথ দেখাবেন, তা দিল্লীতে যায় না ।
হে হে ! ভোট দিবা বুঝি ? কারে দিবা ? লোকটার প্রশ্নে, থতমত রহমত আলী । বিড়ির সুখটান দেবার কথা ভুলে গেছে সে । লোকটা বলে কি ? ভোট কারে দিমু, তর বাপের কি ? মনে মনে একটা খিস্তিও দেয় । আজ সারাদিন কাজ জোটেনি তার । রেগার কাজ আপাতত বন্ধ । ভোটের সময় কাজ বন্ধ থাকে । বছরে একশ দিনের কাজ বলা হলেও গড়ে পঞ্চাশদিনও কাজ জোটে না । তবু এটা অনেক ভালো । একটা কোদাল নিয়ে সকাল দশটায় হাজিরা দিলেই হলো । কাজ তো আর হয় না । বরং মিটিংমিছিলে যেতে হয় । তাতেও লাভ । দুদিনের মজুরি খাড়া । এখন সেই সুবিধেটুকু নেই । ভোট বলে কথা । আর লোকটা জিগ্যেস করছে, কারে ভোট দিবা ? সে, গলা খাঁকারি দিয়ে, বললো, আর যারে দিই আপনারে ভোট দিমু না । লোকটা হে হে করে হেসে ওঠলো । বললো, আমারে দিবা ক্যান ? পছন্দ না অইলে এবার না-ভোট দিতে পারো । নোটা বলে একে । রহমত অবাক হয় । নোটাবাবুর কথা বলেছিলো এলসির সেক্রেটারি । খবরদার, ভুল কইরাও তারে ভোট দিবা না । ব্যাটা বিজেপির চাইতে খারাপ । নোটার সিম্বল কি, তা অবশ্য সেক্রেটারি সাহেব বলেননি একবারও । বললো, নোটারে ভোট দিমু না । ও ব্যাটা খারাপ । লোকটা এবার ঠা ঠা করে হেসে ওঠে । নোটা কোনো লোক নয়, ওটা তোমার অধিকার ।
ব্রাহ্মীলিপি নয়, খরোষ্ঠী-রোমান নয়, তোমার শরীরে লিখি লালা দিয়ে । লিখি পুনর্জন্মবাদ থেকে ফিরে এসে ডাস ক্যাপিটাল প্রদর্শিত অন্ধকার পথ, স্বপ্নতত্ত্ব সহ কোকাপণ্ডিতের কথা । কয়লাখনির কথা ভুলে যেতে পারি, এই ভয়ে, লিখে ফেলি রাণীগঞ্জ । পাহাড়ের নিচে ঐ উপত্যকাটির কথা সহ ঘনকুয়ো লিখে ফেলি বদ্বীপের নরম মাটিতে । লালার অক্ষরে, মাঝরাতে, জেগে ওঠো তুমি ভোটপ্রচারের নায়িকার মত । মাইক বাজছে প্রতিটি শিরায়, তীব্র দমকল ছুটে যায় ধমনীর রন্ধ্র বেয়ে । আর দেরি নেই, ব্রাহ্মমুহূর্তের দিকে যেতে যেতে লিখে ফেলি মহেঞ্জোদারুর শিল্প, জঙ্ঘা মেলে দিয়ে আছে তাম্রযুগ নয়, গুহাকাল থেকে । তখন নিজেকে মনে হয় ভীমবেটকার প্রাচীনতম লোকটি, শরীরের কোষে কোষে ধরেছিলো মৃত্যুবীজ, গুহার ভেতরে ঢুকে জিভ দিয়ে লিখে যাচ্ছে এক অনাদিসঙ্গীত ।
'এটা কি তোমার বাড়ি ?' চারদিকে তাকিয়ে, সে প্রশ্ন করে ওঠে । 'হ্যাঁ । এই তো, এই আমার উজানবাড়ি । উপরে তাকাও, খোলা ছাদ, মানে, ঐ আকাশ । আর দেয়াল বলতে এই দিকগুলি । উত্তর, দক্ষিণ, পূব ও পশ্চিম । মেঝেটা মাটির । জানালা দরোজা চিরখোলা । এখানে ভয়ের কিছু নেই, হারাবার কিছু নেই ।' লক্ষ্য করলাম, চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সে । আমার চোখের দিকে তাকালো কি ? বললো, 'তাহলে, সংসার এখানেই ?' হাসলাম, 'যার সার নেই তাকে আর সঙ সাজিও না ।' এবার একটু ক্ষেপে গেলো যেন । 'শরীরের চাহিদা কি নেই ? আর মন ? এই খোলা মাঠে...' তার কথা থামিয়ে দিলাম । বললাম, 'চোখ বন্ধ করে ফেলো । খোলা বলে কিছু নেই । মন বন্ধ করতে পারলে, আরও ভালো । আর শরীর যখন জাগে, খিদে যদি পায়, খেয়ে নিলে আপত্তি কোথায় ?' 'ছিঃ ! সমাজ কি ভাববে ? কোনোকিছু পরোয়া করো না বুঝি ?' হা হা করে হেসে ওঠি । তাকে বুকে নিতে নিতে বলি, 'তোমাকে সমাজ সৃষ্টি করেনি । সমাজ সৃষ্টি করেছো তোমার হাতে । এই দেখো, তোমার শরীরে ঢেলে দিচ্ছি আমার সকল স্বপ্ন । একদিন বড়ো হবে, ফুল হবে, ফল হবে । নাও, আমাকে গ্রহণ করো এই চৈত্রের দুপুরে । সমাজ জানুক, কাকে বলে সৃষ্টি আর কাকে বলে শিল্প ।'
বিন্দু থেকে রেখা অবধি যাবার পথে এত খানাখন্দ, দিশাহারা হতে হয় । জ্যামিতি বুঝি না । ফলে ঐ ত্রিভুজ, তার রহস্যময় গভীর উপত্যকা হাতছানি দেয় রোজ । রেখা ক্রমে বাহু হতে থাকে আর লক্ষ্য করি, ত্রিভুজের প্রকারভেদের মূলে ঐ অসম রেখাগুলি । দুটি রেখা যে বিন্দুতে মেলে, তাকে যদি কোণ বলি, তোমার ঐ জঙ্ঘা সৃষ্টি করেছে অসংখ্য কোণ । আকার বা ডিগ্রী বুঝি না, কম্পাস হাতে চেয়ে থাকি পিথাগোরাসের দিকে । তিনিও কি আমার মত মধ্যরাতে তোমার শরীরে জ্যামিতির সূত্র খুঁজেছেন একা একা ? অনুসিদ্ধান্তের আগে পনেরো মিনিট মুগ্ধ ছিলেন সম্পাদ্যে ? না কি উপপাদ্যটির টানে শঙ্কু ও ঘনকে মেতেছেন সারারাত ?
দুপুর কাটে ঢুলু ঢুলু, বুকের মধ্যে ডবাং ডুলু, এই বুঝি এই এলুং সাহেব, আমেজ তবে হলুং গায়েব ।
সকলেই আলোর সন্ধানী । কারও কারও নিজস্ব আলো আছে । আমিই শুধু আলাদা । আমার আলো নেই, অন্ধকার আছে ।
২০ এপরিল কলকাতা যাচ্ছি । ব্যক্তিগত কারণে । ভোটের গরম আর গনগনে তাপ থাকবে তখন, এখনই সেখানে প্রায় ৪০ ডিগ্রী তাপ । আমাদের রাজ্যটি কলকাতাকে অনুসরণ করেছে আবহাওয়ার ক্ষেত্রে । এখানেও ৩৭ ডিগ্রীর উপরে । ভোট উত্তাপহীন এবং বিরোধীহীন । তাপের হেরফের খারাপ লাগে একমাত্র আন্তরিকতার ক্ষেত্রে । উত্তাপহীন আন্তরিকতার কোনো দাম নেই আমার কাছে । গত অক্টোবরে, অভাবিতভাবে অশোক মাহাতোর আন্তরিকতার সান্নিধ্য পেয়েছি । একরাত কাটাতে হয়েছে অশোকের টবিনরোডের ফ্ল্যাটে । নিজে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেছে রাতের গঙ্গাদর্শনে । নন্দিতা ভট্টাচার্যের ভালোবাসার টানে প্রায় মাঝরাতে চড়াও হয়েছি তার বাগুইহাটির ঘরে । সুদূর আমেরিকা থেকে সে এনেছিল রেড ওয়াইন । আমার জন্য । প্রীতি আচার্যর বন্ধু অর্ণব দত্ত প্রতিটি মুহূর্ত সান্নিধ্য দিয়েছেন আমাদের । আর পুরুলিয়া থেকে ছুটে এসেছেন কবি অনাময় কালিন্দী এবং দুর্গাপুর থেকে প্রদীপ চক্রবর্তী । সামান্য কয়েকটি দিন । অথচ কেটেছে আন্তরিকতায় । এর মধ্যে কবি রাহুল পুরকায়স্থর রথতলার ফ্ল্যাটেও যেতে হয়েছে তার ভালোবাসার টানে । এবারও এই দহনসময়ে আশা করি তাদের উত্তাপ পাবো ।
কবিতায় প্রায়শ লক্ষ্য করি এক 'তুমি' । বিস্ময়চিহ্নের মতো সে ছায়া ফেলে পাঠকের মনে । এই 'তুমি' আসলে কে ? কবির গোপন প্রেমিক বা প্রেমিকা ? না কি ঈশ্বর বা মৃত্যু ? কে সে ? বিভ্রান্ত পথিকের মতো পথ ভুলে আমি অবাক হয়ে ঐ 'তুমি'র দিকে তাকিয়ে থাকি অসহায়ভাবে ।