Tuesday, November 25, 2014

স্মিরনফ, অবসরপ্রাপ্তদের তুমি
দু-গেলাস স্বপ্ন আর ঘুম
দিও রোজ, দিও প্রাণময় শব্দগুলি
বিপ্লব এখন পেটেন্ট, তোমার মত
ঠিকেদারদের হাতে পতাকা উড়ছে
স্মিরনফ, বিপ্লবের কেউ নও তুমি
তবু মিছিলের শেষে তুমি
স্বপ্নবিক্রেতার ছোটভাই
তুমিই পলিটব্যুরো, আমাদের একক হাইকমাণ্ড !
বি পজিটিভ !
কথাটি যারা বলে, তাদের প্রতি একটি নিতান্তই শাদামাটা প্রশ্ন : পজিটিভ না হলে কেউ স্বপ্ন দেখে নীল আকাশের ? ঐ আকাশ হাতের মুঠোয় ধরার ?
সন্ধ্যার আঙুলগুলি রাঙা,
ঠোঁটের মতন,
চুলে গুঁজে এসেছে নক্ষত্র,
মনে হচ্ছে ফুটে আছে যূঁই
বিকেলের বুকে মুখ গুঁজে
সে অভিমানিনী, তার অশ্রু দিগন্তের কুয়াশা হয়েছে,
ঐ কুয়াশা পার হয়ে আজ
তরুণ কবিটি চলে যাচ্ছে
খ্যাতি নামে মেয়েটির কাছে !
তাকে ভুল বোঝো না, পাঠক !
অবসর
দু-একটা আসন ও প্রাণায়াম, প্রাতঃরাশ, আর
বাজারের ব্যাগ হাতে, ঐ যে,
বেরিয়ে পড়া, এটুকু কাজ
ফিরে এসে, ফেসবুক, আত্মীয়স্বজন,
আত্মীয় কে ? প্রশ্ন থাক ! সকালের কাগজ বা,
দু-একটা ফোন, তা মূলত
ইনস্যুরেন্স ও ব্যাংক থেকে আসে, ঋণের তাগাদা
ঋণে ঋণে কেটে গেছে এ জীবন, বাকি গণিতবিহীন এই অবসর, যাকে
অর্পণ করেছি শেষ ভালোবাসা, কবিতার মত
পাঠ করি রোজ
তারপর হাতে নিই শূন্য ধারাপাত !
অবসর
'কি করে কাটান দিন ? এই অবসর ?'
'পিঠের ব্যথায়, পানে পানে,
তরুণী বান্ধবীদের রিক্ত কলরবে !'
কৃষ্ণরূপ দেখেছিলো দুজনেই, রাধা ও অর্জুন,
দুজনেই জেনেছিলো অহম্ মূলত
প্রকাশিত হয় কৃষ্ণরূপে !
কৃষ্ণ নয়, আমি মজে আছি নীলে, ফলে,
আকাশ ধরেছি আজ হাতের মুঠোয় !
অপরাজিতার মত ফুটে ওঠে আমার অহম্ !
ব্রজভূমি, কুরুক্ষেত্র সব
মিলিয়ে গিয়েছে আকাশসঙ্গীতে, নীলে ...
নীলরূপ দেখে মজেছিলো আর এক
বিবাগী পুরুষ, রাধা নামে ছেড়েছিলো সংসার,
সমুদ্র ডেকেছে তাকে, সাক্ষী নীলাচল
তুমি তার কেউ নও, কেবল পাঠক
প্রতিটি অক্ষরে লেখা থাকে তবু তোমারই নাম !
যাকে ফেলে গিয়েছিলে পথে
সে আজ এসেছে ফিরে এই সন্ধ্যেবেলা,
মনে পড়ে তাকে, ওগো শ্রীগোপাল লেন ?
ধরো, 'অ' মানে, না !
তাহলে, 'আ' মানে কি ?
অজ আর আম, বাল্যশিক্ষাকালে, এই অজ ইত্যাদির মানে বুঝিয়ে দেয়নি কেউ ! ফলে, অভিধাসম্বল পাঠক কোনো লেখার মানে থাক, শব্দের ব্যঞ্জনা অনুভব করতে অসমর্থ হয় !
পাঠক দেবতা, জানি, মুশকিল হলো, ঐ যে, তার দেবত্ব সকলে অর্জন করতে পারে না !
নাস্তির ভেতরে প্রবলতম এক অস্তি যে রয়েছে, দেবত্বহীন পাঠক কোনোদিনই অনুধাবন করতে পারে না তা !
এর পরিণাম জানি, আমাদের বাংলাজগতের শক্তিশালী কবি বা লেখক থেকে জান উপেক্ষিত !
ভুলে যেতে পারলেই মানুষ বাঁচে ! তবু পারে না ! এই একদিক, অপরদিকটি আরও করুণ ! নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা সে করে যায় অনবরত, আবার এই অস্তিত্বের আধিপত্য বিস্তারের অনন্ত প্রয়াসও করে মানুষ ! ক্ষমতাবিস্তারের পাশাপাশি সে চায় অমরত্ব, এই চাওয়া যুগ যুগ ধরে !
এই দুই রূপ মানুষের আজন্ম !
এই জীবন, এই বেঁচে থাকা, সকলই তোমার জন্য, নচিকেতা জেনেছিলো !
আপন সহোদরাকে সহধর্মিনী হিসেবে গ্রহণ করে তুমিই দেখিয়েছিলে, নারী ও পুরুষ ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক নেই মানুষের !
তুমি যম, ধর্ম বলে মানুষে তোমাকে চেনে !
মরজগতের শেষ কথা তুমি !
তুমিই শিখিয়েছো, নিত্য বলে কিছু নেই !
বিষাদ ও সুখ, আজ, দুজনেই এসেছে আমার কাছে,
কোর্ট-ম্যারেজের প্রস্তাব এনেছে তারা !
বিবাহ বিষয়ে তাদের কি আর বলি !
পাখিদের গল্প শোনাই তাদের, চড়ুইয়ের কথা,
শুক ও সারির কথা, বলি, বিবাহের
চেয়ে, যাও, ঘুরে এসো নৈনিতাল, সিকিম ও পুরী
তুমি সুখ বিষাদের সব রস শুষে নাও নিজের গভীরে,
বিষাদ, তুমিও, শ্বাসে নাও সুখ !
বিবাহ বিষয়ে, এটুকু বলার পর
দেখি, দুজনে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে অনন্ত বাসরে !
শিখে গেছি নাগরিকতার ভান,
গ্রাম্য শিক্ষকের ছেলে আমি,
এবার গ্রাম্যতা ছেড়ে পরে নেবো সাপের খোলস,
প্রবল শীতের রাতে ঝড় এলে কাকতাডুয়ার
টুপি ও পোশাক পরে পাহারা দেবো নিজের আত্মা
আর হেড়ে গলায় গাইবো
বড়ে গোলাম আলির আশ্চর্য খেয়াল
ভাটিয়ালি গান ভুলে এখন শুনবো বিঠোফেন
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে
নিজের চেহারা দেখে চমকে ওঠবো
ভূত না কি প্রেত ?
ভি এম হাসপাতাল, মানে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হাসপাতাল, জোট আমলে, যার নাম পালটে দেওয়া হয়েছিলো, ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল নামকরণ করেছিলো তদানীন্তন কংগ্রেস সরকার, ক্ষমতারদর্পে, আজ দেখলাম ভেঙে ফেলা হচ্ছে !
আগরতলার সকল ঐতিহাসিক স্মৃতি কি নির্মমভাবে মুছে ফেলা হচ্ছে, এটা তার এক নমুনা !
এর আগে ভেঙে ফেলা হয়েছে লালমহল, রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন দুটি বাড়ি, শ্বেতমহল ও লালমহল ! এই লালমহলেই মহারাজা বীরবিক্রম মাণিক্য এবং তার পূর্ব-পুরুষগণ ছবি আঁকতেন ! অসাধারণ এই প্রাসাদটি ভেঙে সেখানে তৈরি করা হলো টাউনহল !
রাজস্মৃতি মুছে ফেলার বিপ্লবের সেই শুরু !
এবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হাসপাতালের অপূর্ব বাড়িটিও ভেঙে ফেলা হচ্ছে !
ইতিহাস মুছে ফেলার এই বিপ্লব কবে যে থামবে ?
ছেড়ে যাবার আগে, প্রাণ, তার দেহকে বলে গেলো, তুমি আমাকে ঠকিয়েছো ! এই শেষদিনও !
--প্রাচীন প্রবাদ
চৌষট্টি যোগিনী আসলে চৌষট্টি কলা,
ভুবনেশ্বরের পথে যত ছলাকলা
সকল ছাপিয়ে তুমি হয়ে ওঠো সত্য !
তুমি নারী, তুমি দেবী, নরক ও মর্ত
তোমার প্রতিষ্ঠা, স্বর্গ তোমার রচনা !
তোমাকে বন্দনা করি প্রতি রাতে, ক্ষণা !
মুশকিল হলো, শব্দ, যা মূলত ধ্বনিনির্ভর, যা বহুব্যবহারে হয়ে উঠেছে ক্লিশে, তাতে কি ভাবে সঞ্চারিত হবে প্রাণ ?
একজন কবির সামনে, লেখার আগে, এই প্রশ্নটিই বড় হয়ে দেখা দেয় !
অভিধা তার কাঠামোকে ধরে রাখে বটে, তাতে প্রাণ সঞ্চারিত হয় না ! কাঠামো তো আর প্রতিমা নয় !
তা হলে ?
এই তাহলে থেকে জন্ম নেয় দার্শনিকের আকাশ, কবির নীলিমা !
লোকে যারে বড় বলে বড় সে-ই নয়
আপনারে বড় বলে, বড় সে-ই হয় !
যা ভাবো, আর যা ভাবো না, এই দুইয়ের মাঝখানে এক বৈতরণী বয়ে যাচ্ছে আদম ও ঈভ-এর জন্মকাল থেকে !
আমাকে ঐ বৈতরণীর অগ্নিস্রোতে ফেলে দিয়ে, বলছো, ডুব দাও, তুলে আনো, ত্রিশাংশ নয়, দ্রেক্কান-সন্দেশ !
লগ্নপতি অষ্টমে যার, তাকে এটুকু অপমান সইতে হয়, বলে, ডুব না দিয়ে, আমিও এগিয়ে যাচ্ছি দ্বাদশপতির দিকে !
চিত্রগুপ্ত, তুমি কেন তাকে রেখেছো শত্রুগৃহে ?
আমি আজকাল স্বপ্ন দেখি না,
কেন না, স্বপ্নেরও সীমাবদ্ধতা আছে !
ডায়েরি নিজস্ব, প্রতিরাতে লেখা এক ইতিহাস,
রাজা-উজিরের কথা নেই,
বিজয়কাহিনী নেই, দীর্ঘশ্বাস সহ
পোড়া সিগারেট, ছাইদানি,
উপমাবিহীন এক খালি ময়দান
উড়ে এসে বসেছে সেখানে ! তাঁবু পেতে
রচিত ত্রাণশিবির থেকে ভেসে আসে
হাহাকার-ধ্বনি... একত্রিশ পাতা জুড়ে,
তেষট্টি পাতায় এসে, চাপা এক যৌনকাতরতা, সন্ত্রাসের মত রয়েছে ছড়িয়ে,সত্তর পাতার
শেষে, কাটাকুটি, পরিমার্জনার মত
এক তরুণীর মুখচ্ছবি
নিচে লেখা : ট্রয় ধ্বংস হলো...
তারপর, সব পাতা সাদা...
সামনে, ডায়েরি খুলে, বসে আছেন ওয়াটসন
দূরে, শ্রাদ্ধবাসরের শান্ত কলরব !
শক্তি চট্টোপাধ্যায় আসছেন !
এই একটি বাক্যে, শিলচর শহর, সেদিন, উত্তাল হয়ে উঠেছিলো প্রায় ! কাছাড় বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন ছিলো জেলা গ্রন্থাগারে ! আগের দিন এসেছিলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মাতিয়েও গেছেন কবিতাপ্রেমীদের !
কিন্তু শক্তি চট্টোপাধ্যায় আলাদা !
আমি তখন বাড়ি-পালানো ছেলে !
কবিতা লিখি, এই গর্বে, শিলচরের মাটিতে যেন পা পড়ে না আমার ! মিথিলেশ ভট্টাচার্য, তপোধীর ভট্টাচার্য, শেখর দাশদের সঙ্গে শতক্রতু নিয়ে মেতেছি, রাত কাটাই মিথিলেশ-এর পাশের বিছানায়, দু-বেলা খাই তপোধীর ও তার বোন অদিতির সৌজন্যে ! আর দৈনিক প্রান্তঃজ্যোতির সম্পাদকীয় লিখি, রবিবারের পাতা সম্পাদনা করি !
শক্তি চট্টোপাধ্যায় এলেন দুপুরের ফ্লাইটে, মুড অফ, সার্কিট হাউসে, তাকে ঘিরে অনেকেই, কারও কথার জবাব দিচ্ছেন না তিনি !
কবি কি এমনই হয় ?
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তো সবার সঙ্গে কথা বলেছেন, তবে মেপে মেপে ! শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাহলে কথা বলছেন না কেন ?
শক্তিপদ ব্রহ্মচারীও থ হয়ে আছেন ! কি করবেন বুঝতে পারছেন না ! হাইলাকান্দি থেকে এসে ব্রজেন্দ্রকুমার সিংহ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কানে কানে , কি যেন বললেন, হো হো করে হেসে ওঠলেন তিনি !
মনে হলো, চার বছরের কোনো শিশু হাসছে !
সন্ধ্যায়, মঞ্চে উঠে, বই ছাড়াই তিনি যখন 'তীরেতে প্রচণ্ড কলরব' পাঠ করতে করতে, হঠাত্, সমগ্র গ্রন্থাগার কাঁপিয়ে, বলে উঠলেন, আমি স্বেচ্ছাচারী...আমার শরীরের রোমরাজি শক্তি শক্তি করে উঠেছিলো !
কবিতার পুরুষ তিনি, তাঁর সান্নিধ্যে না এলে, কবিতার অন্দরমহলে প্রবেশ করতে পারতাম কি না, সন্দেহ আছে আমার ! শব্দ নিয়ে এমন পাগলামি বাংলা কবিতায় খুব কমজনই করেছেন ! মেদিনীপুর মানে মেদিনী দুপুর, আর দুপুর মানে দুখান বুক...এভাবে, ধীরে ধীরে মর্মমূলে যাওয়া, তাঁর পক্ষেই সম্ভব !
আজ মন খুব খারাপ !
লতিফ সিদ্দিকিকে, বাংলাদেশে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে !
একজন মুক্তিযোদ্ধা তিনি, তাঁর মত কবিতা পাগল লোক খুব কম দেখেছি আমি !
2009-য়ে, ঢাকা গিয়েছিলাম ! মেসবাহ কামাল-এর ধানমণ্ডির ঘরে কয়েকদিন কাটাবার পর, ময়মনসিং যেতে হয়েছিলো প্রীতি আচার্যর অনুরোধে ! তিনি তসলিমা নাসরীন-এর গুণগ্রাহিনী, বাংলাদেশ বেড়াতে এসে, তসলিমার বাড়ি দেখবেন না, এটা কি করে হয় !
ময়মনসিং-য়ে তসলিমার বাড়িতে, তাঁর দাদার সঙ্গে যখন কথা বলছি, একদল তরুণ এসে খোঁজ করলেন আমার ! ঢাকা থেকে মফিদুল হক খবর দিয়েছেন তাদের, যে, আমি সেখানে গেছি !
যাই হোক, ধান ভানতে শিবের গান এখন থাক, বরং বলি, পরদিন, আমাদের পথপ্রদর্শক-এর কাছে ফোন এলো, বাংলাদেশের বস্ত্রমন্ত্রী আমাদের ডিনারে নেমন্তন্ন করেছেন !
মন্ত্রী-নেতাদের থেকে সতেরশ কিলোমিটার দূরে থাকি আমি ! আর বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রীর নামও জানি না ! তার চেয়ে বড় কথা, আমি কোনো সেলিব্রিটিও নই !
দু-এক লাইন লিখি, দু-চারটে বই, পকেটের টাকা খরচ করে, বের করেছি বটে, সতের কপির বেশি বিকি হয়নি তার একটাও !
এ হেন অখ্যাত লোককে ডিনারে নেমন্তন্ন করবেন কেন এক দেশের মন্ত্রী ?
তত্ক্ষণাত্ সেই নেমন্তন্ন ফিরিয়ে দিই আমি !
হায় ! ফিরিয়ে দিতে পারলাম কই ? বাসে করে ঢাকা যখন ফিরছি, আবার ফোন এলো !
মন্ত্রী নাছোড়, অগত্যা গ্রহণ করতে হলো সেই নেমন্তন্ন ! তাও এক শর্তে ! আরও কয়েকজন কবিকেও যেন এই ডিনারে ডাকা হয় !
হ্যাঁ, তিনিই লতিফ সিদ্দিকি !
রাতে, মন্ত্রীর অফিস থেকে গাড়ি এসে আমাদের যখন তাঁর বাসস্থানে নিয়ে গেলো, আমি বাকরুদ্ধ ! তিনি তাঁর আসন থেকে উঠে এসে, প্রীতিকে বসাতে গেলেন তাঁর আসনে ! কবি জাহিদ হায়দার বললেন, তরুণী কবিরই যোগ্য আসন সেটা, কোনো মন্ত্রীর নয় !
যাই হোক, প্রীতি নয়, সে রাতে, মন্ত্রীর চেয়ারে বসেছিলেন বাংলাদেশের সিনিয়র লেখক আবুবরকর সিদ্দিকি আর ঘরের এক কোণে, একটা টুলের উপর চৌকিদারের মত বসেছিলেন বাংলাদেশের তদানীন্তন বস্ত্রমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকি !
গান, কবিতা পাঠ, পানীয় ও আড্ডায় জমে উঠেছিলো সেই ডিনার ! লতিফ সিদ্দিকি নিজে পাঠ করে শুনিয়েছিলেন রবিঠাকুরের কবিতা !
লতিফসাহেব সেরাতে তাঁর পার্সোনাল লাইব্রেরি দেখিয়েছিলেন আমাকে ! ত্রিপুরার যে কোনো জেলাগ্রন্থাগার লজ্জা পাবে এটা দেখলে ! ফিরে আসার সময় তিনি হাজার পাঁচেক টাকার বই হাতে তুলে দিয়েছিলেন, যার কয়েকটা ছিলো তাঁর নিজের লেখা !
এগুলির একটি ছিলো স্ত্রীকে লেখা চিঠি, সেই বই থেকে জানতে পারি, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন ত্রিপুরায় !
আজ সত্য কথা বলার অপরাধে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, হয়তো তাঁর উপর নেমে আসবে শাস্তির খাঁড়া ! সক্রেটিসের বিচারের মত হয় তো তারও বিচার করবে হাসিনাসরকার !
আমরা তখন ফেসবুকের আড়ালে মুখ ঢেকে রাখবো ! কাপুরুষের এইই নিয়তি !

Thursday, November 13, 2014

লিখি না, পড়ি না, তোমার ভাষায়, ভান করি ! ভান যে করে, সে ভানক, এই ভানকই
তোমাদের কাছে ভদ্রলোক !
(ভান>ভানক>ভদ্রলোক !)

জানো, ভদ্রলোকদের আমার বড় ভয় !
কক্সবাজার, চিটাগাং দেখার ইচ্ছে অনেকদিনের ! ডিসেম্বরে এবার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে পারে ! সাতদিনের জন্য পুনরায় বাংলাদেশে যাচ্ছি বিলোনীয়া বর্ডার দিয়ে ! ফিরবো ঢাকা হয়ে আগরতলা চেকপোস্ট দিয়ে !
সুমী নেই চিটাগাং-য়ে, বলেছিলো সে-ই আমাদের সব দেখাবে, থাকবো তার কাছেই ! সে নেই বলে, হয়তো সামান্য সমস্যা হতে পারে, তা অবহেলা করেই এবারের ভ্রমণপর্ব সেরে নিতে হবে !
মন বলছে, আর দেরি করো না, সমরজিত !
দেখা হয় নাই চক্ষু বুঁজিয়া...
অর্থই অনর্থের মূল...বাংলা ভাষার অনেক শব্দের অর্থ আজ পালটে গিয়ে বড় বিপদ ডেকে এনেছে আমাদের মত সাধারণ কাছে !
আবার অনেক শব্দই মুছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে !

শব্দই ব্রহ্ম, এই কথাটির গুরুত্ব না বুঝলে, লেখালেখির করার কোনো মানে নেই !
ফিরে এসে দেখি, তুমি নেই...
ও আয়না, অন্ধ বলে, আজ
আমাকে ফিরিয়ে দিলে, আমি
পথে পথে ঘুরি, পথ ঘোরে,
ছায়ার পেছনে, কানা গলি
পার হয়ে, এসেছি দক্ষিণ
দুয়ারে, মৃত্যুর সন্নিকটে !

অন্ধের সমিতি নেই, বহু ব্যবহৃত স ঙ্গীত রয়েছে
মূলত তা কান্না, অশ্রুহীন
অমাবস্যা রাতে, নিঃসঙ্গের !

ও আয়না, পারা উঠে গেছে
পরাজিত এম এল এর মত
ফিরিয়ে দিয়েছো তুমি তবু,
এ শীতে কোথায় থাকি, বলো ?
দূরে, কোথাও ঘণ্টা বাজছে, শাঁখ বাজাচ্ছে কেউ...প্রাতঃকাল এভাবে বরণ করে নিতে কখনও দেখিনি !
নভেম্বরের শীত নামছে ধীরে ধীরে, কুয়াশার আস্তরণ পড়ছে বোয়াল মাছের তরকারিতেও, কম্বল বিক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে ফুটপাথেও ! কিছুদিন পর খেজুরের রস নিয়ে আসবে গ্রাম থেকে, আধামফস্বল এই উদয়পুর ক্রমে প্রস্তুত হচ্ছে এক অনন্ত শীতের জন্য !

আসলে উদয়পুর নয়, আমিই প্রস্তুত হচ্ছি, এই শীত আমার বড় প্রিয়...
আজ বিলোনীয়া ঘুরে এলাম, প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপন দাশ, সহ-সভাপতি নীহার সাহা সহ অপর সদস্যদের সঙ্গে দেখা হলো নারায়ণ শূর-এর দোকানে ! নারায়ণবাবু সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন ফিলিপাইনস থেকে, মজার মানুষ ! তবু আড্ডার মধ্যমণি নীহারবাবু, যাকে এক ডাকে নিকু বলে জানে ! খাওয়াদাওয়া হলো আমার এক পুরনো সহকর্মী গৌতম দেবনাথের ঘরে !

বিলোনীয়া আমার চাকুরিজীবনের সেরা জায়গা ! এক বছর সেখানে কাটিয়েছিলাম আনন্দে ! এই বিলোনীয়ার মানুষজন এখন ক্ষিপ্ত, তাদের প্রিয় নেতাকে অবমাননাকর ভাবে অর্থ দপ্তর থেকে সরিয়ে দেবার জন্য !
বিশালগড় আর ডি ব্লকের সতের কোটি টাকার কেলেংকারির তদন্ত করিয়ে বিডিও-র বিরুদ্ধে মামলা করার অর্ডার দেওয়ার অপরাধে তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী বাদল চৌধুরীকে দপ্তর খোয়াতে হয় চারদিনের মাথায় ! এটা খবরের কাগজের প্রতিবেদন ! আর বাদল চৌধুরী বিলোনীয়ার জনপ্রিয়তম নেতা, ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন বিলোনীয়ার মানুষজন !
এর বহির্প্রকাশ, আজ দেখলাম, বিলোনীয়ার এক চা-স্টলে ! সেখানে এক জোকস শুনলাম, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে নিয়ে ! ছেলেবেলায় পঠিত এক নীতিশিক্ষার গল্পকে ভাঙিয়ে এই জোকস !
এক মৃত্যুপথগামী বাপ তার তিন ছেলেকে একশ টাকা করে দিয়ে বললেন, যে এই টাকা দিয়ে এমন কিছু কিনে এনে ঘর ভরাতে পারবে, তাকেই সমস্ত সম্পদ দিয়ে যাবেন !
ছেলেদের একজন নিয়ে এল তুলো, ঘর ভরলো না ! আরেকজন আনলো লোহা, ঘর ভরলো না ! শেষজন পাঁচটাকা দিয়ে নিয়ে এলো একটা মোমবাতি, তার আলোয় ভরে ওঠলো ঘর ! ছেলেও খুশি, সম্পদ এবার তার-ই হবে !
বাপ গম্ভীর গলায় বলে ওঠলেন, তুই তো, দেখছি, মানিক সরকারের মতো ! বাকি পচানব্বুই টাকা-ই মেরে দিলি !
মারীচ জানত, তাকে মরতেই হবে, পুরুষের মৃত্যু লোভ ও লালসার হাতে, সে এটাও জানত, রাবণের মৃত্যু সমাসন্ন !
রাবণ তা জানত না, তার চোখ সীতার আলোয় ছিল অন্ধ, অন্ধদের ভবিষ্যতজ্ঞান নেই ! ফলে, সমুদ্রও প্রতারণাকারী, তা জানেনি রাবণ !

রামায়ণপাঠ শেষে, কথক নীরব হয়, আর সকল পুরুষশ্রোতা হা হা করে তেড়ে আসে কথকের দিকে, শাঃলা ! বোকা ঠাউরেছ আমাদের ?
সমাজ উচ্ছন্নে যাক, এমন গ্রন্থপাঠ করে কি বোঝাতে চাইছ ? তুমি কি পুরুষ নও ?

কথক পুরুষ নয়, তবে কি সে নারী ? না কি সে-ই পুরাণকথিত কিম্পুরুষ ?
ছলনাসিদ্ধা বলে খ্যাত এ জগতে,
তোমাকেই পূজা করি, মায়া, তুমি দেবী,
সকল ভ্রমের...
আগনে বিয়োবে মেয়ে, মাঘে তার বিয়া
পঙ্খীরাজে আসে বর, থর থর হিয়া !

Tuesday, November 4, 2014

আয়না, তুমি কার ?
আয়না হেসে ওঠে, বলে, যে দেখে, তার...

আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখি, পারা উঠে গেছে তার, অস্পষ্ট চেহারা...

আয়না, এ কোনজন ?
নীরব এক হাওয়া বয়ে গেলো, শির শির করে ওঠেদেহকাণ্ড !

আয়না...এ যে আমি নই...এই কঙ্কাল, মুণ্ডুহীন...

এই তুমি, এই তুমি...
মূলত আমারও দিন কাটে
মৃত্যুর পথ চেয়ে...

সে কথা বলিনি আগে ?
ওগো রাত্রির মেয়ে !

একটি জিরাফ আসে ঝাউবনে
খুঁটে খায় লাল ঝুঁটি

ঝাউবন তুলে দেয় তাকে তবু
আদরের রুটি !

এসব দৃশ্য দেখি একা একা
পৃথিবীতে এসে,

আবার দেখেছি, মৃতদের
নাচ জতুগৃহ শেষে

ধর্ষকও মজুরি পায়
রেগাময় গ্রামে...

মঞ্চশোভিত হয় পাপ
আর পূণ্যের নামে !

দিন কাটে আহত বাঘের মত
রাত, ফেরারীর বেশে

একে কি বলবে তুমি, বাঁচা ?
প্রাণহীন দেশে ?
এক স্বাধীন ও সুন্দর সকাল, যার স্বপ্ন দেখেছি বহুকাল ধরে ! 1979 এর জানুয়ারি, এই চাকুরি পাই, বলা বাহুল্য কোনো ইন্টারভিউ ছাড়াই এই চাকুরি !
তখন সবে বাম সরকার এসেছে ক্ষমতায়, জনগণের সরকার হিসেবে নিজেদের ইমেজ গড়ে তোলাই ছিল নৃপেন চক্রবর্তীর প্রাথমিক কাজ ! নিরাপত্তা রক্ষী নিতেন না, সরকারি গাড়ি পারত পক্ষে ব্যবহার করতেন না মন্ত্রীগণ !
এই পরিপ্রেক্ষিতে, নৃপেন চক্রবর্তীর সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যে, ত্রিপুরার ছোটো ছোটো, উপেক্ষিত ভাষাগুলির বিকাশে সরকার সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করবে ! অর্থাত্, সংখ্যালঘু ভাষাগোষ্ঠীর আবেগ কাজে লাগিয়ে, তাদের নিজেদের ভোটব্যাংক শক্তিশালী করার জন্য ব্যবহার করা !
এটা টের পেতে অনেক সময় চলে গিয়েছিলো আমার !
তো, আমার মাতৃভাষা বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরীতেও সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করার প্রস্তুতি নেওয়া হয় !
মুশকিল দেখা গেলো, সম্পাদক হিসেবে যাদের কথা ভাবা হয়েছে, তাদের কেউই এই দায়িত্ব নিতে রাজি ছিলেন না, কেন না, এই কাজটাই তারা জানতেন না !
নৃপেনবাবু মুশকিলে পড়লেন, তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছেন আগেই, 25 জানুয়ারি 1979 এই সাপ্তাহিক কাগজটি বেরুবে অথচ ডিসেম্বর চলে যাচ্ছে, একজন সম্পাদক পাওয়া গেলো না এখনও !
বিমল সিংহ তখন বিধায়ক, কলকাতায় দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাটিয়েছি আমরা ! তিনিই প্রস্তাব করেন সম্পাদক হিসেবে আমার নাম আর তার বিরোধিতা করেন অনিল সরকার, তিনি তখন জনসংযোগ ও পর্যটন দপ্তরের মন্ত্রী , তাঁর আপত্তির কারণ, আমি না কি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চেলা, কট্টর হাংরি ! যাই হোক, তাঁর এই আপত্তি ধোপে টেকেনি নৃপেন চক্রবর্তীর সামনে !
এসব কথা খোদ নৃপেন চক্রবর্তীই একদিন হাসতে হাসতে আমাকে বলেছিলেন ! ততদিনে তাঁর প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলাম ! আর একজনও একথা জানিয়েছিলেন আমাকে, তিনি অরুণাংশু কর, অনিল সরকারের পি.এ !
বিমল সিংহ টেলিগ্রাম পাঠান আমাকে, তাড়াতাড়ি এসে চাকুরিতে জয়েন করো !
10 জানুয়ারি 1979 থেকে 31 অক্টোবর 2014, চাকুরির লোভে, পেটের দায়ে, গোলামজীবন কাটিয়েছি, যে জীবন ছিলো অপমানিতের, যেখানে ষড়যন্ত্র ছিলো প্রধান অস্ত্র ! অফিস মূলত এক চক্রান্তালয় , টের পাই চাকুরিতে এসে !
স্বপ্ন বলে যাকে ভাবি, সে আসলে এক রূপকথা, না দিয়ে তৈরি তার ভিত, হ্যাঁ-এর সেতু, ফলে, একদিন, ভেঙে পড়ে, তখন দোষ চাপানো হয় বুধোর ঘাড়ে !
বেচারা বুধো তখনও স্বপ্ন বুনে যায় তার হৃদয়তাঁতে, নীল আকাশের ছাঁদে বুনে চলে তার স্বপ্ন...
ছিলাম তোমার টানে, নেই যে, সে তোমারই কৃপা, আর এই থাকা ও না থাকার মাঝখানে বয়ে গেছে এক স্তব্ধ ঝড়...
নক্ষত্রজালের ফাঁকে, ঐ যে,
ফুটে আছে ছাইফুলগুলি,
দুধশাদা, কিশোরীর সদ্য
জাগা স্তনের ওভাল শেপ
যেন, তাদের ও পাশে এক বল্লমের মত ধেয়ে আসা
ধূমকেতুটির দিকে যদি
তাকাও, দেখবে, নশ্বরতা
আলো হয়ে আছে পৃথিবীতে !

প্রণাম জানাই আজ এই
নশ্বরতাকে, আহত স্বর,
তোমাকেও, বাঁচিয়ে রেখেছো,
এতদিন, রিক্ত কথকতা !
দেবতা কে ? ঈশ্বর-ই বা কে ?
এর উত্তরে, কৃষ্ণযজুর্বেদের প্রথমদিকের অনুবাকে আশ্চর্য এক কথা বলা হয়েছে, যে, মন-ই ঈশ্বর বা দেবতা !

কত যুগ আগে, আমাদের পূর্বপুরুষগণ এই সরলসত্য অনুভব করেছিলেন, অথচ আমরা ঘুরে মরছি এক মরীচিকার পেছনে !
ভুল নামের পোকাটি তার বিষ ঢেলে দিয়েছে রক্তের প্রতিটি কণিকায়...

এবার মজা দেখো...
বসন্ত জাগ্রত দ্বারে, না, বসন্ত আসতে ঢের দেরি ! হেমন্ত পার হয়ে, শীত চলে গেলে সে আসবে !
আর, কে না জানে, বসন্ত মানেই পলাশের মাস !
এই পলাশ সম্পর্কে আমাদের পূর্বপুরুষদের ধারণা অন্যরকম, তাঁরা পলাশশাখাকেও দেবতারূপে বন্দনা করে গেছেন !
তাঁদের বিশ্বাস ছিলো, সোমপর্ণ থেকেই পলাশবৃক্ষের উত্পত্তি !
একদা দেবগণ সোমপর্ণ আহরণ করতে গেলে, সেই পাতাটি খসে পড়ে যায় ভূতলে, সেই ছিন্ন পাতাটি থেকেই পলাশের উত্পত্তি !
যজ্ঞং দধে সরস্বতী !
পাবীরবী কন্যা চিত্রায়ূ: সরস্বতী ধিয়ং ধাত্ !
গ্নাভিরচ্ছিদ্রং শরণং সজোষা দুরাধর্ষং গৃণতে শর্ম্ম যং সত্ !
---কৃষ্ণযজুর্বেদ/একাদশ অনুবাক
বাংলার্থ : বীরগণ উত্পাদনকারিণী, বীরপত্নী, ছন্দযুক্তা, কমনীয়া, বিচিত্রজীবনশালিনী সরস্বতী আমাদের পরাভবহীন অনন্ত সুখ দান করুন !
ধার করে আনা রোদে তাপ নেই, বলে, ভেবো না, জ্যোত্স্না তার নাম !
কাকে বলে জীবন ?
মৃতের মতো এই বেঁচে থাকাকে ? জড় পাথরের মতো অনুভূতিহীন এই থাকা আর না থাকার মধ্যে পার্থক্য কি করে করা যায় ?

পথ বাঁক নেয়, নদীও ! লোকে বলে, জীবন, এই নদী ও পথের মতো, বাঁক নেয় ! এই বাঁকের ওপাশে অনিশ্চিত এক ত্রাস ও আশংকা থাকে তার থাবা মেলে, কখনও বা স্বপ্ন !
এইসব জীবনের অংশ, জীবন নয় !
জীবন তাহলে কি ?
দুদিনের হাসিকান্না ? না কি ঐ সাপলুডো ? সাপের মাথায় পড়ে, পুনরায়, প্রথম থেকে শুরু করা ?
পথ ও নদী তা করে না, তারা জানে, চরৈবতি !
আর এই চলা মূলত মৃত্যুর সমীপে, এক ধ্রুপদী কবিতার মতো, নীরব, নিঃসঙ্গ অথচ দৃঢ় !
না, জীবন নদী নয়, পথও নয়, এ আসলে এক ভাটিয়ালি সংগীত !
চাকুরি থেকে অবসর নেবার পরও, হায়, চাকুরি আর আমাকে ছাড়ছে না !
পূর্বাঞ্চল সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আয়োজিত Tribal Arts & Folk Festival সম্পন্ন করে দিতে হবে আমাকেই ! আদিবিম্ব নামের এই ফ্যাস্টিভ্যালে ত্রিপুরার ঊনিশটি উপজাতিগোষ্ঠীর সতেরটি গোষ্ঠী তাদের নৃত্য ও সঙ্গীত নিয়ে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন, আর আসাম ও মনিপুর থেকেও আসছেন শিল্পীগণ !
আগামী আট ও নয় নভেম্বর এই ফ্যাস্টিভ্যাল ! স্থান রাজর্ষি কলাক্ষেত্র, উদয়পুর !

অবসরপ্রাপ্ত, এবং সরকারের নাপছন্দ লোক আমি, তবু আমাকেই অনুরোধ করা হলো, আর আমিও না করতে পারলাম না, একজনের দিকে তাকিয়ে !
হ্যাঁ, তিনি সুব্রত দেব !
একদা উদয়পুর নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান এবং অতিসজ্জন !
ঘরেং অচ্ছই বাহিরে পেচ্ছই
পই দেকখই পডিবেসি পুচ্ছই
সরহ ভণই বঢ জানউ অপ্পা
ণউ সো ধেয় ণ ধারণ জপ্পা !

--- সরহ দোঁহাকোষ
মোহই কি আসল ? সকল সম্পর্কের পেছনে তাহলে কি এই মোহ ? না কি আর কেউ আছে ? সে কে ?
মায়া ? সে তো মোহ-র ছোটো বোন !
মোহ কেটে গেলে, মায়া ফুরিয়ে গেলেও, অনেক সময় বেঁচে থাকে সম্পর্ক, সে বেঁচে থাকা প্রাণের তাগিদে !

এই প্রাণই আসল, সেই চায় ভালোবাসা, সেই রচনা করে বিরহ, সৃষ্টি করে নিজের জগত...যে জগতের ঈশ্বর মন !
'দেখার আগে চিনেছিলাম,
দেখার পরে চিনতে পারিনি...'

উদ্ধৃতিটিতে হয়তো ভুল থেকে গেলো খানিকটা, কিন্তু সারমর্মটুকু এই...