Saturday, January 3, 2015

রাত জাগছে বিছানা, আর
টেবিলে নাইট ল্যাম্প, গ্লাস,
দেয়াল ঘড়ির শ্বাসে ভরে যাচ্ছে ঘর !
বস্তুত এসব দৃশ্য দেখে
জম্ম নেয় গান,
গানের ঐ সরগম খেয়ে
ফেলছে ঘরের নীরবতা !

উপমার দিন আর নেই,
বীমাহীন আয়ু বাড়ছে ফ্রিজের, তার
সবুজ মুছেছে টিকটিকি !
ঘরের দিন ও রাত্রি দেখে,
বোঝে না কিছুই !
একা, রচনাকুশলী স্বপ্ন
ঢুকে যাচ্ছে দীর্ঘ শীতের ভেতর...
চতুর্থপতি অষ্টমে, বন্ধুভাগ্য নেই, অবিদ্যার সন্তান, এটুকু জানার পর, নিজের প্রতি ঘৃণা ও মায়া ভিন্ন আর কিছুই প্রকাশ করতে পারিনি ! এই মায়া থেকে জন্ম নেয় এক ধরণের আত্মদ্রোহ, আমার প্রতিটি লেখা ঐ আত্মদ্রোহের ফসল, নিজেকে দশদিক থেকে দেখার এক উপায়ও বটে !
হতে পারতাম হোটেলবয় থেকে খানসামা, তার বদলে যা হয়েছি, তা মঙ্গলের অবদান, শনিরও ! নবমপতি শনি, তুন্গী এবং সে এখানে বিবেকের ভূমিকায় ! ভুল করলেই দ্বিগুণ শাস্তি দেয় সে !
এসব জাতচক্রকথা, কিন্তু কবিতা লিখতে এলাম কেন ? না কি, যা লিখি, তা কবিতা-ই নয় ?
এই সংশয় থেকে, কবিতার হাত ছেড়ে দিয়ে, একদিন, হাত ধরি গদ্যের, মানে, কথকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হই, এই গল্প লেখার সাহসও যুগিয়েছেন ভাস্বতীদি, ভাস্বতী রায়চৌধুরী, 1975/76-এ থাকতেন টালিগঞ্জে, চারুচন্দ্র মার্কেটে, বের করতেন অহংকার নামে এক সুন্দর কাগজ ! এই অহংকার-এ প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় আমার, নাম, পরী !
মজার একটা ঘটনা, এ প্রসঙ্গে, মনে পড়ে গেলো, পরী পাঠ করে, প্রচণ্ড খেপে গিয়েছিলেন পীযূষ রাউত, আমার লেখালেখির শুরুর দিনগুলিতে তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম ! এতটাই খেপলেন যে, কুড়িবছর আমার সঙ্গে কথা বলেননি আর ! অবশ্য আরও কিছু কারণও ছিলো এর পেছনে !
প্রথম উপন্যাস লিখি সমতল নামে ত্রিপুরার এক কাগজে, অমিয়ভূষণ মজুমদার, এই কাগজের শারদীয় সংখ্যায় উপন্যাস লিখবেন, বলে, ঠিক হয়েছিলো, পত্রিকা প্রকাশের সাতদিন আগে, তিনি জানালেন, লেখা শেষ করতে পারেননি এবং তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন, দিতে পারবেন না বলে ! আর একটি উপন্যাস ছিলো কবিতা সিংহ-এর !
দুটি উপন্যাসের স্থলে একটি মাত্র উপন্যাস, তা কি করে হয় ? সুতরাং আর একটি উপন্যাস চাই ! এত কম সময়ে, কে লিখবে ? অগত্যা, আমাকেই বলা হলো, লিখে দিতে হবে !
তিনদিনে লিখি ঐ উপন্যাস, লেখার প্রতি, নিজের প্রতি এমন অবিচার আর বোধ হয় করিনি কখনও !
এরপর থেকে, প্রায় নিয়মিত গল্প ও উপন্যাস লিখতে শুরু করি ! অনেকেই বলেছেন, উপন্যাসের কোনো শর্ত না কি থাকছে না আমার এসব লেখায় !
শর্ত মানার লোক আমি নই !
লিখি মায়া থেকে, অবিদ্যার সন্তান আমি, শর্ত মানবো কেন ?
2005 সালে, উপন্যাসিক শৈবাল মিত্র, আজকাল-এর উত্তরসম্পাদকীয় লিখলেন আমার এক উপন্যাস নিয়ে !
ট্রা রা রা রা ! উপন্যাসটির নাম !
তিনি লিখলেন, লাতিন আমেরিকায় বসে মার্কোজ যে ম্যাজিক রিয়েলিজম নিয়ে মেতেছেন, তার চাইতেও বেশি কাজ হয়েছে এই উপন্যাসে ! মার্কোজের সঙ্গে তুলনা করেই থেমে থাকলেন না তিনি, উত্তরসম্পাদকীয় শেষ করলেন, সমরজিতের লেখা বা ঙালী লেখকদের ঋদ্ধ করুক, বিদ্ধ করুক পাঠকদের !
এটা পাঠের পর প্রচণ্ড সংকোচে পড়ি আমি !
এটা কি আমার লেখাকে ব্যঙ্গ করে লেখা ? না কি পিঠ চাপড়ে দেওয়া ?
আর কেউ আমার এই উপন্যাস নিয়ে উচ্চবাচ্চ্য করেননি!
হায় চতুর্থপতি !
কিছু বুঝে ওঠার আগে, পড়ে গেলাম, পাশে মৃদুল দেবরায়, তরুণ কবি, তার বৌ মনীষা, আর প্রীতি আচার্য ! সবার অলক্ষ্যে, আমার এই পড়ে যাওয়া, নিউরোলজিস্ট-এর মতে, এক্যুইট স্পণ্ডলাইটিস থেকে ব্রেইনে অক্সিজেন ঠিকমত সরবরাহ না হবার কারণে এই পতন, পাশাপাশি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, প্রীতি ও মৃদুলকে অসহায় করে তুলেছিলো ! উদয়পুর জেলা হাসপাতালে, নিয়ে গেলে, সেখানে বলা হয়, হেড ইনজুরি, রেফার করা হয় আগরতলা ! পুলক, প্রীতির অনুজ, মৃদুল, মনীষা ও প্রীতি সবাই মিলে, নিয়ে যায় আগরতলা আই এল এস হাসপাতালে !
সেখানে, আগে থেকেই উপস্থিত ছিলো
রামেশ্বর ভট্টাচার্য, শ্যামল বৈদ্য, পল্লব ভট্টাচার্য, অনন্ত সিংহ, মনীষ চক্রবর্তী, মিউজিক কলেজের প্রিন্সিপাল মনিকা দাস এবং আরও অনেকে !
নিউরোলজিস্ট ডাঃ বরা সব কিছু সামলে নেন যথারীতি, ইসিজি, এক্সরে থেকে নানারকমের ব্লাডটেস্ট, এমআরআই, বাদ রাখেননি কোনোকিছুই !
না, মাথার চোট তেমন কিছু নয়, বরং আগরতলা আসার পথে, এম্বুলেন্স চালকের রাফ ড্রাইভিং-এর ফলে, মেরুদণ্ডের মাঝখানের যে ডিসক ক্র্যাক ছিলো, তাতে চোট পড়েছে মারাত্মকভাবে !
এই চোট কবে সারবে, জানি না !
কাল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর রামেশ্বর তার গাড়ি দিয়ে পাঠালো ! প্রবুদ্ধসুন্দরও এসেছিলো সকালে !রসেবশে এক স্ট্যাটাসও দিয়েছে, দেখলাম !
এই পতন অনিবার্য ছিলো কি না জানি না, তবে, বন্ধুদের এভাবে পাশে পেয়ে, প্রীতি ও আমি চিরকৃতজ্ঞ !
আবার আসছে ফিরে সেই পিছুটান,
তুমি বলো মায়া,
পারাহীন আয়নায় দেখি কার মুখ,
কার নীল ছায়া ?
উনিশ নম্বর রোড, তুমি জানো, কেন
এই পিছুটান ?
'কিছুটা শরীর, বাকি সব হাহাকার,
অন্ধকার গান' !
প্রতিকারহীন রোদ এসেছে উঠোনে,
তাকে অভ্যর্থনা করি এ শরীরে, বলি,
রবার্ট ক্লাইভ নও, সুতরাং, এসো !
দুঃখী মানুষের মতো রোদ উঠেছিলো
ছাদে, তাকে ঘিরে মহল্লার
সকল যুবতী আজ নেচেছে আনন্দে
যেন পিকনিকে এসে মস্তি
করছে সবাই, গান বাজছে, আ গয়া
মেরে দিলবর...
দুঃখী মানুষটি কেবল জানে না, এই
যুবতীরাও মূলত নিঃসঙ্গ,
উষ্ণতা-কা ঙাল রূপ তাদের জীবন
করেছে আতুর আর নীরব উজ্জ্বল !
এমনই দিনে তারে বলা যায়
এমনই ঘনঘোর কুয়াশায়...
মরণ আমার শ্যাম নয়,
আমার ঐ রাধাপ্রেম, এটুকু সম্বল,
এই যে না-পারা, তাও, এই
জড়ভরতের দেশে আলোচ্য বিষয়...
বিষাদগ্রস্ত রাত্রির কাছে
ভিক্ষা চেয়ে ফিরে আসে একা সে সাধক,
সেও জানে, সফলতা ছাড়া
এ দেশে বাঁচে না নিরীহ সে মূষিকও !
IL Postino মাইকেল রেডফোর্ড-এর ছবি, পাবলো নেরুদা ও এক পোস্টম্যানের সম্পর্ক নয় শুধু, একটি কবিতাও !
আমার গতজন্মের পূণ্য, এই অসাধারণ ফিল্ম আমাকে পাঠিয়েছেন এক দূরঅন্তর্বাসিনী, যার নাম বলা বারণ, না হলে এই অজমফস্বল শহরে বসে দেখা সম্ভব ছিলো না আমার পক্ষে ! তাঁর পাঠানো বার্গম্যান-এর The Seventh Seal দেখে বাকরহিত আমি ! মৃত্যুর সঙ্গে দাবা খেলার এই স্পর্ধা কবি ছাড়া কজনে পারে ?
IL Postino ছবিতে, পাবলো নেরুদার কাছে মারিও, যিনি টেম্পোরারি পোস্টম্যান হিসেবে কাজ পেয়েছিলেন, জানতে চেয়েছিলেন, কবিতা কি ?
পাবলো নেরুদা সংক্ষেপে জবাব দিয়েছিলেন, মেটাফর !
মেটাফর শব্দটি বেচারি মারিওর অজানা, ফলে সে অবাক হয়ে জিগ্যেস করে, এটা কেমন শব্দ ? আর কোনো শব্দ নেই ? আর এটার মানেই বা কি ?
নেরুদা হেসে জবাব দিলেন, এটার মানে মেটাফর !
মারিও আবার জিগ্যেস করে, আমি কি কবিতা লিখতে পারবো ?
শীর্ণ, রোগা পাতলা মারিওর দিকে তাকিয়ে, নেরুদা বললেন, তুমি খুব পরিশ্রমী, অলস আর মোটা নও ! কবিতা তো অলস ও আমার মতো মোটারাই লেখে !

মারিও আর পাবলো নেরুদার ঐ আলাপ যে কোনো তরুণ কবির কাছে জরুরি !
নখে কাটি জিহ্বা,
মিথ্যা বলেছে সে !
চোখে ভরে দিই
জ্বলন্ত কাঠিটি
মিথ্যা দেখেছে সে,
আর দুটি কান ?
লোহার শলাকা
দিয়ে পর্দা কাটি
কোনোদিন যেন
মিথ্যা সে না শোনে...
চারদিকে তবু
মিথ্যার দামামা
জনসমাবেশ
গোপন কমিটি
টিভি চ্যানেলের
মূঢ কথকতা
নৈঃশব্দ, তুমিও
আমার মতন
কেটেছো ঐ জিহ্বা ?
আগুনে ভরেছো
তোমার দু-চোখ,
নীরব সুন্দর ?
বোনের শরীর কাল এঁটো করে গেছে
যারা, তারা আজ ভোট চাইতে এসেছে !
কাল ছিল পিস্তলের নল,
আজ শুধু ভিক্ষুকের ঝুলি !
আমার বেকার বাবা, অসুস্থ মা, বোন,
সকলে করেছি ঠিক, ও পথে যাবো না !
ভোট নয়, আমরা চাইছি,
সদর দপ্তর নয়, আদালত নয়,
গণবণ্টনের মত চিরক্ষমতাকে
ভাগ করা হোক আজ ধুলির আকাশে !
ছবি পাল্টে পাল্টে
কি খুঁজছো তুমি ?
প্রোফাইল, এক
আত্মঘাতী রূপ,
ইস্তেহার ভেবে
ছড়িয়েছো একে
দূর থেকে দূরে,
খালি ইনবক্সে !
ছবি, মূলত যা
স্মৃতিকাতরতা
ফিরে ফিরে দেখা,
নিজেকে, না কি সে
পথ, হারিয়েছো
গীতবৃন্দাবনে ?
লাইক পড়ছে,
আসছে কমেন্ট,
তৃপ্তি মেলে তাতে ?
কোথায় সে ওম্ ?
একা দুপুরের
পথে পথে তার
উষ্ণ শ্বাস, স্পর্শ,
মেলে কি লাইকে ?
পাল্টে পাল্টে ছবি
কি খোঁজো, সুন্দর ?
শরীর, নেমেছো অথৈ জলে,
জল, না কি, আগ্নেয়গিরির
লাভা, বিস্ফোরণপ্রিয়, মেখে
নাও মাঝরাতে,
ভাঙে আধোঘুম, স্নান শেষে
ভাবো, এই চেয়েছিলে তবে ?
না কি, গভীরের টানে, ডুবে
যেতে যেতে চেয়েছো নিজেকে ?
সালতামামির কথা থাক,
তারচেয়ে ঘুরে আসি আগামী বছর,
জলপথে নয়,
সড়কও নয়, দুর্ঘটনাপ্রবণ সে,
রাহাজানি, দাঙ্গা, পার হয়ে,
মুদ্রাস্ফীতি থেকে সরে গিয়ে,
আর্তপথে, একা,
ঘুরে আসি দুহাজার পনেরোর দেশ !

আগামীর সঙ্গে গত একবছরের
দেখা হবে নির্জন পার্কের
গেটে, উইশ জানাবে একে অপরকে !
ধুলি ও কীটের কাছে রেখে যাচ্ছি আমি
এইসব পাণ্ডুলিপি, খেরো খাতা সহ !
পাঠক হিসেবে, প্রণাম জানাই
তাহাদের...
অক্ষরগুলি ছুটে আসছে খেরো খাতায়,
প্রার্থনা করছে,
গ্রহণের আগে, কলম দেখে নিচ্ছে
প্রস্তুতি, আলো ঠোঁট এগিয়ে আনে প্রদীপের
দিকে, দৃশ্য জুড়ে
হাততালি, উল্লাস, মাইক্রোফোন
এগিয়ে যায় মুখের কাছে !

হর্ণ নয়, গমগম আওয়াজ শোনাচ্ছে
রসিক কানদুটিকে,
প্রাগ-ইতিহাসের কথা :
শূন্য দশকের পর কোন দশকের
নাম আসবে এবার ?
তুমি জানো, নতুন কবিতা ?
তোমার ঐ লাল পাপড়ির দিকে
তাকিয়েছিলাম, আর
ভাবছিলাম, ঐ রূপ এত আকর্ষণীয়,
এত রস, ভাবের অর্ধেক
ডুবে যাবে মুহূর্তেই, উপমা এখন বড় ক্লিশে
অর্থহীন মনে হয়, কালিদাস নই,
সামান্য বলতে যা বোঝায়,
আমি তার চাইতেও কম,
তবু আজ মজে আছি পাপড়ির লালে,
তার নরম ও উষ্ণ রঙে !
এ শহরে রেল নেই, উদ্দামতা আছে,
এ শহরে বার নেই, রাতভর মদ
আছে গলিতে গলিতে, এই
শহরের কথা আমি বলিনি কখনো,
এ শহরে পাগলা গারদ নেই, আছে পাগলামি
এ শহরে গান নেই, মাইক বাজছে
একা একা, আর
শহরের যুবকেরা বেঁহুশ নাচের তালে তালে
এ শহরে আমি থাকি গ্রাম থেকে এসে
আমার গ্রামের গন্ধ এ শহরে খুঁজি,
আমার গ্রামের রাত এ শহরে নেই,
এ শহরে, নিদ্রাহীন থাকি !
ওম্ হ্রীং ক্লীং শ্রীং স্বাহা...
এই নাও রজ,
আগুন জ্বেলেছি যজ্ঞপীঠে,
মুখ খোলো, নাও,
আমার সকল ভ্রান্তি সহ এই মধু
পূর্ণ হও ধরণীর মতো

জড়িয়ে ধরার আগে, নাও এই জিভ
বাক্যহীন করো একবার !
দুহাজার পনেরোর পর
দেখা হবে, নিশ্চয়, ষোলতে !
তখনও কি এভাবে তুমি
উষ্ণতার স্পর্শ দেবে, ওষ্ঠ ও অধরে ?
দুটি কিসমিসে দাঁত রেখে
আঁকতে পারবো চরাচরহীন এক ইতিহাস ?
আই এল এস হাসপাতালের বেড়ে
শুয়ে লিখবো না বুঝি তোমার শরীর ?
দুহাজার চৌদ্দ চলে গেলো
বড় অভিমানে, একা একা,
শয্যা শূন্য করে এক নিখিল অসীমে
যেন সে প্রেমিক, প্রত্যাখ্যাত !
আগামী ষোলয়, আর প্রত্যাখ্যান নয়,
তোমার গভীরে নিও আমার কলম !
শূন্য পাতা ভরে দিও আঁঠার অক্ষরে,
অমর নাভির মত লেখায় লেখায়...
ইংরাজি, মজাদার খুব,
বাজি পুড়ছে ঐ,
চারদিকে মাতাল মাতাল
সুখ, নববর্ষ বলে কথা !
বাংলায় এত রস নেই,
ভাবে যারা, আমি
তাদের দলেও নেই, ঐ যে,
বিষুব সংক্রান্তির রাত
মণ্ডপে মণ্ডপে পাশাখেলা
আর নৃত্য ও সঙ্গীতে, প্রেমে,
মজে থাকে, কই,
ইংরাজি নতুন বছরে
আমি তা পাই নে, আমার ঐ
বাংলা সনের ছন্দলয়ে
ধার করা মাতলামি নেই,
আছে স্নিগ্ধ, সৌম এক প্রেম,
কীর্তনের সুরে,
আকাশও নাচে তালে তালে...
তবু, এসো আজ ইংরাজি
স্বাগত জানাই
খেঁজুরের রসে, পিঠেপুলি
ভাটিয়ালি গানে,
এসো, এই দাওয়ায় বসো,
অতিথি ঈশ্বর,
তোমাকে বরণ করি হাড়ে ও মজ্জায় !
তোমার গরলে
স্নান করি আমি,
প্রতি সন্ধেবেলা
ভরে রাখো কুয়ো
ডুব দিই আমি,
সাঁতার জানি না
ফলত ব্যবস্থা
করেছো কুয়োর !
পুকুর বা দীঘী,
নদী বা সমুদ্র
সবখানে ডুব
দিতে পারি, যদি
তা তোমার হয়,
গরলে কী সুখ
আমি ছাড়া, বলো,
জানে কয় জনে ?
ঐ যে, লুব্ধকের,
ব্রহ্মহৃদয়ের
মতো তারাগুলি
প্রতি রাতে বসে
থাকে একা একা,
তোমার গরলে
একবার ডুব
দিতে যদি ডাকো
আশায় আশায়...
তাদের রেখেছো
প্রতীক্ষার ঘরে,
আমাকে দিয়েছো
ঠাঁই, ঐ নরম
ও উষ্ণ কুয়োয়,
তোমার উজ্জ্বল
গভীর গভীরে...
তোমার গরলে
রোজ স্নান করি...
ও আমার ভাষা,
আমার প্রেমিকা !
বৃষ্টির মতো তুমিও ছড়িয়ে পড়ছো
আমার চারপাশে...
জর্দা বলতে একশো কুড়ি,
কখনও বা একশো ষাট,
এটুকুই দৌড়,
মিঠে পাতি দিয়ে, এই পান,
এই নেশা, তোমার ঐ বুকে
মুখ ডুবাবার মত, মাদকতাময়...

এটুকু নেশার ভেতরে তোমাকে খুঁজি
দিনরাত, ঘরে ও বাইরে...
বানপ্রস্থে এসে কোনোদিন
আর ফিরে যাবো না গার্হস্থ্যে,
বলেছি নিজেকে !
কপিলাবস্তুর দিকে ঘন অরণ্যের
কোথাও আস্তানা
বানিয়ে থাকবো, ভীমবেটকার গুহা
বা ঐ অরুণাচলের দিকে
চলে যেতে পারি...

গৃহ নয়, আমাকে টানছে পরজন্ম
দূর থেকে সে আমাকে ডাকে,
উদাস, উদাস, চলে এসো...
সকল ভ্রান্তির পথ পার হয়ে আমি
এসেছি নির্জন বানপ্রস্থে...
বলার ছিল না কিছু, চুপ করে থাকাটাই
দস্তুর এখন,
শব্দহীন, ধ্বনিহীন এই থাকা মূলত যে
প্রতিবাদহীন !
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখি ধুলিরচিত ভবিষ্যে,
আর অনস্তিত্বে,
অন্ধ ভিখারির গান শুনি, একা, দূর থেকে,
পারাপারহীন !
ব্রেনসেলসের ভেতরে, না, নিউরন
নয়, কিলবিল করছে অনেকগুলি পোকা,টের
পাচ্ছি, তাদের ঐ ছটফট,
দাঁত বসাচ্ছে নরম, থকথকে জেলি
আর উষ্ণতর ঘিলুমুখে !
অপেক্ষা করছি, পোকাগুলি ডানা মেলে
কখন উড়তে শুরু করবে দিগন্ত
পার হয়ে, দূরে, শ্বাসহীন এক জগতের দিকে
এই যে, দাঁড়ান, দাঁড়ান, একটা কথা বলে নিই,
ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন ছদ্মনামে, কেন পাঠালেন, বলেননি, আপনি কে, কি করেন, অথচ আপনি জানেন না, এই আমি সুবিধের লোক নই, বলতে পারেন, ওয়াকিং ডেডম্যান থেকে কয়েকবছর হলো প্রমোশন পেয়েছি আমিও ! মানুষ হইনি ! কোনো ভালো কাজ করতে পারিনি কোনোদিন, জেলঘুঘুদের মত এই জীবনে, কোথাও আলাদীন নেই, অস্তিত্বহীনতা কাকে বলে জানি, তবু আপনি আমাকে পাঠালেন ফ্রেণ্ডরিকোয়েস্ট !
পরিচয়হীন এক লোকের কাছে ঐ রিকোয়েস্ট, মানে, পরিচয়হীন আরেক লোকের রিকোয়েস্ট, সত্যি বলতে কি, আনওয়ান্টেড !
কবি, এই দিনে,
আর প্রয়োজন নেই কোনো কবিতার,
এখন ধরতে হবে অস্ত্র,
সেপাই যেভাবে অস্ত্র ধরে,
সেভাবে না, প্রভু বা রাষ্ট্রের স্বার্থে নয়,
এতদিন তারা
স্টিয়ারিং ধরেছিল, জয়গান তুমি
করেছিলে ভুল করে, এখন পাল্টাও,

তোমার কলম হোক একে ফরটি সেভেন
আর নিশানা, ঐ, মহাপ্রভুদের দিকে !
না লেখার ছলে,
এতখানি পথ আমি এসেছি পেরিয়ে
রাত হয়ে এল,
এখন বিশ্রাম চাই, জোর ভালোবাসা
এসপার ওসপার করে
ভালোবাসো, হে ময়ূর, হে সুন্দর, নীল...
এ জীবন লইয়া কি করিব, যদি তা কোনো কাজেই না লাগে ?
লেখো, যা খুশি...
ফরাসী কবি অঁরি মিশোর এই পংক্তিটি আমার মতো ফেসবুক লিখিয়েদের কাছে একটা পাসপোর্ট, কবিতার জগতে প্রবেশের !
ছাইপাশ যাই লিখি, সতেরোটা লাইক পাই,
দু-একটা আহা উঁহু কমেন্ট আসে, আমার আর কি চাই ?
অমরত্ব যাদের প্রয়োজন, আমি তাদের দলে নেই, ছিলাম না কখনও ! ফলে, এই জীবনের প্রথম উচ্ছ্বাসকালে, দু-একটা লেখা কোথাও ছাপা হলে, তা সংগ্রহে রাখিনি !
এই যেমন, গল্পকার দেবব্রত দেব-এর তাগাদা খেয়ে, একবার, ত্রিপুরার এক দৈনিক পত্রিকা, স্যন্দন-এ একটা উপন্যাস লিখেছিলাম, যার শুরু হয়েছিল, কোর্টে, স্বামী-স্ত্রীর ডিভোর্সের ঘটনা দিয়ে !
এখন, সেই উপন্যাসের কপি বা পাণ্ডুলিপি আমার কাছে নেই !
সংগ্রহে রাখার বাতিক যার নেই, সে লেখক হবে কি করে ?
অঁরি মিশো এই বিষয়ে কেন কিছু বললেন না ?