Saturday, October 10, 2015

সমগ্র জীবন দিয়ে, একটি বাক্য রচনার চেষ্টা করে যাচ্ছি...শব্দগুলি খুঁজে পাচ্ছি না, পেলেও তা মনোমতো হচ্ছে না...
আমার রাধাকে আমি দেখি নানা ভাবে,
কখনো ডুবুরী হই, কৃষক স্বভাবে
কখনো বা চাষ করি তাহার জমিন ।
সে আমার লেখা হয়ে জাগে রাত্রিদিন...
প্রতিটি অক্ষর, জানি, মূলত ঘাতক,
চকচকে ছুরিটি লুকানো,
কণ্ঠনালি কেটে তারা বেরিয়ে এসেছে ।
তুমি তার চিহ্ন ধরে রাখো,
প্রত্যেক বসন্তে পুজো করো আম পাতা সহ
ভুল ছন্দে, মাত্রা ভুলে গেঁথে রাখো তাকে
সুতোহীন স্রোতে...
তুমি গুপ্ত ঘাতকের কেউ নও, নাকি ভুল জানি ?
তোমার হাতেও তবে রয়ে গেছে পানিনির ছুরি ?
কুহকিনী কথা দেখলাম ।
এরাবেলের নাটক দেখেছিলাম প্রায় ৩৫ বছর আগে, মানিক চক্রবর্তীর নির্দেশনায় । মিতুল দত্তের এই নাটক দেখতে দেখতে, কেন জানি, মনে পড়ে গেল, এরাবেলের কথা । নাটক কবিতা নয়, কিন্তু কবিতা যে কখনও কখনও নাটক হয়ে ওঠে, মিতুল তা বুঝিয়ে দিলেন আমাদের । একটি দীর্ঘ কবিতাই তো কুহকিনী কথা ! তার ইশারা, ব্যঞ্জনা, শব্দে শব্দে গড়ে ওঠা ভাষা, তার কারুকার্য অনুভূতির শেকড় ধরে যখন টান মারে, তখন তাকে কবিতা না বলে উপায় থাকে না আমাদের ! 
মাইকেল মধুসূদন দত্তের বীরাঙ্গনা কাব্যে তবু নাটকীয়তা ছিল, শুভাশিস সিংহ, বাংলাদেশের তরুণ নাট্যকার ও নির্দেশক, সেই নাটকীয়তাকেই পূঁজি করে এক কাব্যকে মঞ্চস্থ করার সাহস দেখিয়েছিলেন, জ্যোতির অভিনয়, সে নাটকের প্রাণ, আর কুহকিনী কথায নাটকীয়তার দিকে একেবারেই ঝুঁকেননি মিতুল ।
এখানেই তার যাদুমযতার স্পর্শ দর্শকের অন্তর ছঁয়ে যায় । এরাবেলের নাটকে কোথাও যেন বাঘের থাবার মত লুকিয়ে থাকে এক দার্শনিকতা, মিতুল সেদিকেও যাননি । তার এক এবং অদ্বিতীয়ম অস্ত্রই হল কবিতা যাকে সঙ্গ দিয়েছে অসাধারণ কিছু গান !
বড় দুর্গম এক পথের যাত্রী কুহকিনী কথা, আমরা তার মুগ্ধ দর্শক !
ধমনীবাহিত তুমি, সুড়ঙ্গলালিত,
চেয়ে থাকে শাদা অ্যাপ্রনের চোখগুলি,
উত্থানরহিত ঐ মুহূর্তে,
পরকামী তুমি, শুয়ে আছো
কোন অপমানে ? সে কি জানে ? না কি সেও
দ্বিধাগ্লাসে পান করে দৃষ্টি ?
তোমার এ নিদ্রারূপ বিভ্রম এনেছে
তার মনে ? চৌষট্টি কলার দেশে তুমি
পরম ঈশ্বর, হায়, এখন পাথর,
অনুভূতিহীন, না কি অতিঅনুভূতিময় আজ ?
খুব শীত পড়েছে এখানে,
জানি না, তোমার ওখানে কেমন শীত !
শীত-গ্রীষ্ম পার হয়ে তুমি চলে গেছ
সেই কবে, পচানব্বই জুলাই । বড় অভিমানে !
অভিমান কি আমার নেই ?
দাঁত চেপে কিভাবে হজম করে, শিখে গেছি তাও,
কাউকে বলি না, আমার শরীর ক্রমে ছোট থেকে
ছোট হয়ে যাচ্ছে !
তারপর একদিন হয়ে যাব বিন্দু ।
শাদা কাগজের উপর এক ফুটকি !
একটা সকাল ক্রমশ সন্ধ্যার দিকে চলে যাবে...
সব রঙ মুছে দিয়ে রাত্রি তার রঙে
সাজাবে পৃথিবী...
সেখানে আমার প্রেম নবতর লোভে
আর একবার জেগে ওঠে,
যেন কোনো বুদবুদ, একা !
তুমিও হাসপাতালে, রিক্ত করতলে
রেখে আসি বাতাসের চুল ।
সুস্থ হয়ে ওঠো, এটুকুই বলি, কণ্ঠহীন স্বরে,
এটুকুই থাকে ভাগশেষ,
বাকি সব শূন্য ফলাফল, না-পারা দিনের মত
সকলের দৃষ্টি থেকে দূরে ।
ফিরে এস, ফিরে এস আজ সুস্থ হয়ে ।
তুমি ছাড়া আমাদের শহরের যান চলাচল
বন্ধ হয়ে গেছে ।
কবিতা আবেগের সন্তান, যদি বলি, তাহলে, সহজ হত কবিতার সংজ্ঞায়ন, অথচ তা নয়, তত সহজ নয় এই সংজ্ঞায়ন । কবিতা আবেগের সন্তান নয় ! তিন আনা আবেগ যদি থাকে, বাকি তের আনা আবেগের থাবার বাইরে । গণিতও নয় কবিতা, যে, সূত্র মেপে হবে তার চলাচল । মেধার ঘুঙুরধ্বনি যদি শুনতে চাই, লক্ষ্য করি, সেখানে সঙ্গীত অনুপস্থিত, অথচ কবিতার রক্তে বেজে যাচ্ছে আব্দুল করিমের গান, হয়তো বা বিঠোফেনও ।
কবিতা তাহলে কি ?
বলি, বা, কোরবানি কথাটির মধ্যে এক না বলা শব্দ আছে, যাকে ছাড়া বলি বা কোরবানি কোনোটাই সিদ্ধ নয়, তা হল, আত্ম ।
বাজার থেকে গরু-মোষ বা পাঁঠা কিনে এনে তাকে জবাই করা বা বলি দিলেই কোরবানি বা বলি সিদ্ধ হবে, বলে, যারা ভাবছেন, তাদের দেখে করুণাই হয় । আত্মবলিতেই পরমতালাভ, অন্যথা নয় । বরং এটা দেখনদারি, এক ধরণের মাৎসর্যও বটে ।
ধর্ম মানে, হিন্দু, ইসলাম, বৌদ্ধ বা খ্রীস্টান, সবই এসেছে পরে । মানব সভ্যতা ততদিনে এগিয়ে গেছে অনেক । ২০১৫ বছর আগে খ্রীস্টধর্মের অস্তিত্বই ছিল না ! ইসলাম ধর্ম এসেছে তারও অনেক পরে । বৌদ্ধ বা জৈন এদের পূর্বসূরী । হিন্দু ধর্ম নামে কোনো ধর্মই নেই, যা আছে তা সনাতন ধর্ম ।
মানুষ তাদের কর্তৃত্ব কায়েম রাখতে এসব ধর্ম চালু করে । মনে রাখা দরকার, আধ্যাত্মিকতা আর ধর্ম এক নয় । নিজেকে জানার পদ্ধতিগুলির একটা এই আধ্যাত্মিকতা । এর সঙ্গে আচরণবাদের কোনো সম্পর্ক নেই ।
মানুষকে চিরবোকা বানাবার জন্য ধর্মের সুড়সুড়ি যথেষ্ট । এবং এটাই হয়ে আসছে বারবার ।
কেউ যখন 'হে ভগবান, হে রাম, হে কৃষ্ণ' বলে, বা 'ইনশাল্লাহ্' বলে, অবাক হয়ে আমি তার বা তাদের দিকে তাকাই । কিভাবে মানুষের মগজ ধোলাই করা হয়েছে, ভাবি ।
সকলই মীথ, এই রাম বা কৃষ্ণ, ঈশ্বরবাদ, আল্লাহ্ ভরসা, সব । গৌতম বুদ্ধ ঈশ্বরই মানেননি, তার অনুগামীরা তাকেই বানিয়ে দিয়েছে ঈশ্বর !
আসলে, এটা সেই খেলা, যা ক্ষমতার শিকড় বিস্তৃত করে, প্রোথিত করে মানুষের মজ্জায়, রক্তে । এই খেলা থেকে মুক্তি না পেলে, মানুষ কোনোদিনই মানুষকে প্রকৃত ভালোবাসতে পারবে না ।
যে সকল লেখা মুছে ফেলতে চেয়েছি
ব্ল্যাকবোর্ড থেকে,
সেগুলি তোমার জন্মদিনে ফিরে আসে
বিড়ালের মত ।
দেখি, ব্ল্যাকবোর্ড জুড়ে বিড়ালের থাবা,
নখ সহ উজ্জ্বল, উজ্জ্বলতর অক্ষরসমূহ...
আমার সম্পর্কে দু-চারটে কথা যা কেউ জানে না
আত্মপ্রচার নয়, কেন না, আমার মধ্যে আত্মপ্রচার করার মত কিছু নেই, প্রতিভাহীন বলতে যা বোঝায়, আমি তাই । গুণহীন হলেও আলসেমি বারো আনা । লক্ষ্য করে দেখেছি, আমি আসলে ভীরু, কাপুরুষও বটে । ফলে, প্রতিবাদীও হতে পারিনি । আমার ব্রেনসেলে যে সেতার বাজে, তা আসলে এক নুলোর কান্না । আমি তার অসহায়তার সঙ্গী । রোজ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে, আমি ব্যালকনিতে এসে দেখি, অনাথ শিশুর মত, একা, ঘুমিয়ে আছে রাত্রি । তার দুচোখে স্ফটিকের মত নক্ষত্রমণ্ডল, হয়তো কিছু আগে খসে পড়েছে আকাশ থেকে । চুল বিশৃঙ্খলার মত ছড়িয়ে আছে মুখমণ্ডলে ।
এসব, একা একা, দেখি । আমার এটাই কাজ, আর কোনো কাজ নেই এখন । আমার সম্পর্কে বাজারে যা রটেছে, ঐ বহুগামিতা, মদ্যপানাদি সব বাতিল করে দিতে গিয়ে দেখি, আমি আসলে তা-ই । দু-এক ছত্র লেখার সুবাদে আমি অমরত্ব চাইনি কোনোদিন । একারণে, সভাসমিতির থেকে চিরকাল দূরে দূরে থেকেছি । স্মৃতি বলতে এক কুকুরছানা আর এক বিড়ালছানা ।
ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা করতে পাসপোর্ট ভিসা লাগে না । রেলস্টেশনে যে অন্ধ ভিখারিটা বসে থাকে ভাঙা থালা পেতে, তিনিই ঈশ্বর । অথবা ফুটপাতের ঐ অনাথ শিশুটি, সেও ঈশ্বর । ঈশ্বরের কোনো আলাদা মন্দির নেই । যারা পাপী তারা মন্দিরে যায়, প্রার্থনা করে, তারা ঈশ্বরের কাছে যায় না । ঈশ্বর নিরাকার নন, তিনি সাকার । ঐ যে, মুটে মাথায় তিনি এখন রেলব্রীজ পেরিয়ে যাচ্ছেন, একা !
পুরুষ পতঙ্গ মাত্র, বিবেচনাহীন ।
রূপশিখা দেখে তার বেজে ওঠে বীণ
ব্রেনসেলে, নেচে ওঠে সব নিউরন...
নারী হাসে, বলে ওঠে, আমার মরণ !
প্রতিটি ঋণাত্মক (negative) লেখার পেছনে আশ্চর্য এক ভোর থাকে, যা দেখার চোখ থাকতে হয় । পজিটিভ কথার ক্ষেত্রে ঠিক তার উলটো । সেখানে নেমে আসে এক গাঢ়তম রাত্রি ।
তুমি তার কেউ নও, তবু ফেসবুকে
মাতিয়ে রেখেছ তাকে চরম অসুখে ।
একে নাকি ভার্চুয়াল প্রেম বলে থাকে ।
ত্রসরেণু উড়ে যায় নদীটির বাঁকে,
সেখানে রয়েছে ডুবে গূঢ় বাল্যকাল,
তুমি দাও মন্ত্রপূত ধানদুব্বোচাল ।
জেগে ওঠে বাল্যকাল বন্ধুহীন দিন,
ফেসবুকে সেও লেখে অলিখিত ঋণ ।
তোমাকে ভুলিয়ে রাখে তার প্রতিচ্ছবি,
তোমার অসুখ হলে শুক্র শনি রবি
অরন্ধনে কাটে তার ভাদ্র ও আশ্বিন,
একে নাকি প্রেম বলে শান্ত অমলিন ।
সেই প্রেমে লিখে ফেলে তরতাজা পদ্য,
প্রতিটি শব্দের মধ্যে অল্প কিছু মদ্য
ঢেলে দিয়ে করো তাকে জিহ্বা অনুসারী,
ভার্চুয়াল রসে ডুবে প্রাণবন্ত নারী
ইহাকে লাইক দিলে বুঝে নিও তুমি
আর্ধেক নৌকার মত জাগে জন্মভূমি ।
মনখারাপের গল্প না হয় রইল পড়ে
একা একা, পুরাণো প্রেম, তোমার ঘরে ।
এখন বাতি জ্বালাও তুমি অন্য রূপে,
আগুন জ্বলে শূন্য বুকে চুপে চুপে ।
সে কথাটি না হয় হল বালিশ চাপা
পূর্ণিমা থাক তোমার লেখায় খানিক মাপা
মন খারাপের দিনে কেবল দু পাত্র মদ
পেটে ঢেলেই হলাম না হয় বশংবদ !
লেখা থাকে পাশের বাড়িতে,
কবিতা একটু দূরে, ও পাড়ায়, প্রেমিকের সঙ্গে,
আমার উচিত নয় এই পরনারী সঙ্গ !
মহাপ্রস্থানের পথে এসে, দেখলাম,
কুকুর ছিল না ধারেকাছে ।
এ পথে গিয়েছিলেন যুধিস্থির । আমি
তাকে অনুসরণের কথা
ভাবিনি কখনও । আমার দ্রৌপদী নেই,
নকুল বা সহদেব নেই ।
কুরুক্ষেত্র থেকে বহুদূরে থাকি আমি,
মহাপ্রস্থানের পথে এসে খুঁজছি কুকুর ।
কালো হোক, শাদা হোক একটি কুকুর,
যে অন্তত যাবে না আমার সঙ্গে ।
আত্মরতিময় এই মনুষ্যজীবন, শ্বেতকেতু, নিয়মে ও শৃঙ্খলায় বেঁধে, গতিরহিত করেছ । এই পাপ থেকে, এই অপরাধ থেকে তোমার মুক্তির পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল ।
গরুর মাংস খাবার অপরাধে কাউকে হত্যা করা যায়, ভারতবর্ষে, এটা জেনে, মনে হলো, এটা ভারতবর্ষ নয়, এ আমার দেশ নয় !
জন্মসূত্রে, আমি মনিপুরী । এই মনিপুরী সমাজ মূলত বৈষ্ণব, এবং মাংস থাক, পেঁয়াজ পর্যন্ত নিষিদ্ধ আমাদের । ক্লাস থ্রী-তে যখন পড়ি, তখনই, প্রথম মাংস খাই, সমাজের অন্ধরীতি ভাঙি ।
পরবর্তীকালে, শুয়োর, গরু, হরিণ, বনশুয়োর কোনোটাই বাদ দিইনি । মাংস ভক্ষণের সঙ্গে জাতি বা ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই । সত্যিই নেই । এটা খাদ্যাভ্যাস মাত্র, আর কিছু নেই । হিন্দুদের গরু না খাওয়া বা মুসলিমদের শুয়োর বা কচ্ছপ না খাওয়া অন্ধ গোঁড়ামি ।
কে কি খাবে, তা তার খাদ্যরুচি অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, কোনো ধর্মীয় মতাদর্শ দ্বারা নয় । একটি গণতন্ত্র মেনে চলা দেশে এটাই নিয়ম ।
নয়ডায় যা ঘটেছে, তা অতি নিন্দনীয় । ভারতবর্ষে যারা ধর্মীয় গোঁড়ামির বীজ বপন করছেন, তারা কোনো অংশেই তালিবানি বা ISIS থেকে কম উগ্র বা কম জঙ্গী নয় ।
মোদী সরকার যদি একে তাদের 'আচ্ছে দিন' নমুনা হিসেবে পেশ করতে চা্য়, বুঝতে হবে, আমাদের সামনে ভয়ঙ্কর দিন আসছে, যা প্রতিহত করতে হবে আমাদেরই !
যে জাতি ভিন্নরুচি ও ভিন্ন স্বাদের খাবার খেলে তার জাতিত্ব হারায়, সে কোনো জাতিই না ।
সংকীর্ণতা আর গোঁড়ামি নিয়ে অতীতে থাকা যায়, ভবিষ্যতে যাওয়া যায় না !
করতলহীন এই দুহাত পেতেছি
তোমার সামনে ।
ক্ষুদকুড়ো দিও তুমি, অতি ভালোবেসে,
দিও ভাঙা শ্লেট,
অক্ষরজ্ঞানের মত খুচরোও দিও ।
তোমার সময় নেই, তাড়াহুড়ো করে
চলে যাচ্ছো জরাসন্ধ পথে,
লোকাল ট্রেণের মত ঘড়ি ধরে, আমাকে দেখার
সুযোগ ছিল না, ফলে, দুহাত পেতেছি
খুচরো খুঁজতে গিয়ে, মুঠো ভর্তি আয়ু
ব্যাগ থেকে বের করে, তুমি
তুলে দিলে অবহেলা করে । ধন্যবাদ
জানাবো তোমাকে, ভুলে গেছি,
আমি দেখছি, লোকাল ট্রেণ চলে যাচ্ছে
হুইশেল বাজাতে বাজাতে...
অস্তাচলে এসে, দেখছি, পৃথিবী তার রূপ পাল্টে ফেলেছে ।
আমার কবিতা ঠিক আমারই মত, হার্ট ব্লক্ড, স্পাইনাল কর্ড ভাঙা, স্পণ্ডিলাইটিস, বহুগামী, বিষাদাচ্ছন্ন এক ছায়া ঢেকে রেখেছে ভবিষ্যত...
পাঠ করার আগে, দু'পেগ হুইস্কি বা ভদকা নিয়ে নিলে, জমে যেতে পারে । আবার উলটোটাও হতে পারে ।
আমার কবিতা আমারই মত, আনপ্রেডিক্টেবল !
আজ আর কোনো কথা নয় ।
ঐ নীরব তালপাতাটির মত চুপ করে আমি
কিছুক্ষণ থাকবো কবির কাছে ।
উৎপলকুমার বসু আর নেই, রাহুল পুরকায়স্থপ্রেরিত ম্যাসেজ পেয়ে, শোকগ্রস্ত, মুহ্যমান ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি, সারা বিকেল ও সন্ধ্যে পাথর হয়েই ছিলাম ।
একবার ভেবেছিলাম, শেষ দেখা করে আসি, পরক্ষণেই মনে হলো, অসুস্থ অবস্থায় দেখা করতে যাইনি, এখন গিয়ে কি হবে !
এখন মনে হচ্ছে, ভুল করেছি ।
উৎপলদা, ক্ষমা করবেন আমাকে ।
তোমার চুলের কাঁটা, লগ্নহীন মাসে, ফুটে উঠেছে সুন্দর...
যিনি কলম ধরবেন, তিনি মূলত প্রেমিক এবং প্রতিবাদীও । কেউ কেউ প্রতিবাদী সাজেন, প্রকৃত সময়ে, দেখা যায়, ইঁদুরের মত গর্তেও ঢুকে যান বিপদকালে । কেউ আবার স্বদলের বিরুদ্ধে অন্যরা প্রতিবাদ করলে, তাদের বিরুদ্ধেই গর্জে উঠছেন । তারা মেকি প্রতিবাদী ।
আগরতলায়, এরকম এক মেকি প্রতিবাদীকে দেখেছি, বৌ-এর বদলী শহর থেকে কলেজটিলায় হলে, তিনি দল ছেড়ে দেবেন, বলে, হুমকি দিয়েছিলেন ।
আয়নার সামনে দাঁড়াতে, সাধারণত, পছন্দ করি না । আজ দাঁড়িয়ে, দেখলাম, আমার দুটো কান খরগোশের মত ! 
এটা আগে লক্ষ্য করিনি ।
তাহলে, এটা কি আমার খরগোশজন্ম ?
কতদূর গেলে নদী বুকে তুলে নেবে ?
রাত এখন কুহক ছড়িয়েছে...
ঘুমোবার আর কি যো আছে ?
আকাশলীন এই নীলে ঐ ভাঙা ডানা মেলে উড়ছে আজ আমার পাখি...
মুগ্ধতা অসুখমাত্র, তাকে জল দিই,
পিঁড়ি পেতে দিই । পাখা এনে হাওয়া করি,
আশ্বিনে-গরম, কি জানি, খতরনাক
কোন মোড় নেয়, তার আগে,
তাকে ঠাণ্ডা করি, শরবৎ এনে দিই ।
মুগ্ধপুরাণের কথা এর চেয়ে আর
কিছু বলা যায় ?
একটি কথার ফাঁকে ওঠলো জ্বলে আগুন,
বললে নাকি, ভাগুন ?
আগুন বুঝি ? নদীর বুকে রহস্যময় লাভা,
আমার দেহে তারই নানান আভা,
দেখতে পাচ্ছো, প্রেমের মত বিষাদগ্রস্ত
চোখে কেমন যেন সূর্য গেল অস্ত !
সম্ভাবনার দুটি মুখ । একটি আমার দিকে, অপরটি তোমার দিকে...
দেখো, কেমন বিটকেলে হাসি তার !
বড় দুঃসময় এই উপমহাদেশের । বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত আজ জ্বলছে ধর্মীয় উন্মাদনার আগুনে, রাজনীতির সন্ত্রাসে ।
বাংলাদেশে মন্দির ভাঙচুর, দুর্গাপুজোর মূর্তি ভেঙে দেওয়া সহ চাপাতির তাণ্ডব, পাকিস্তানে তালিবানি শাসন, ভারতে আর এস এস ও শিবসেনার আক্রমণ কোনোটাই সমর্থনযোগ্য নয় ।
এখন তো দলিতদের উপর নির্যাতন বাড়ছে, কাল দেখলাম, এক দলিত দম্পতিকে প্রকাশ্য রাস্তায় নগ্ন করে আক্রমণ করছে ।
এটা কোন ভারতবর্ষ ? এ আমরা কোথায় আছি ?
আর এস এসের এই নির্যাতন নতুন নয়, ব্রাহ্মন্যবাদের আধিপত্য থেকে বাঁচতে এই দলিতরাই, একদিন, দলে দলে, বৌদ্ধধর্মের আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীকালে, এই দলিতরাই আশ্রয় নেয় মুসলিম ধর্মের । বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিম তো এভাবেই ব্রাহ্মণ্যবাদের আগ্রাসী থাবা থেকে বাঁচতে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন ।
এখন, তাদেরই একদল সংখ্যালঘু হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মালম্বীদের উপর আক্রমণ করছে ।
এর কোনোটাই কাম্য নয় । সমর্থনযোগ্য নয় ।
প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে তার নিজস্ব ধ্যানধারণা নিয়ে, বিশ্বাস নিয়ে বাঁচার । এই বিশ্বাস বা মতকে দলন করার অধিকার কারও নেই। না, জামাতিদের, না তালিবানিদের, না isis-এর, না আর এস এস বা শিবসেনার, না কোনো রাজনৈতিক দলের ।
সবার জানা উচিত, মানুষই সত্য, ভালোবাসাই আল্লাহ বা ঈশ্বর । এবং তা মানুষের কল্যাণেই।।
কতটা অপ্রিয় হলে পর তুমি আমাকে পোড়াবে, শাদা বিষ ?
লেখা যাকে ভালোবাসে, কবিতা প্রেমিকা যার, তার চেয়ে ভাগ্যবান আর কেউ নেই ।
আমি ভাগ্যবান নই । দূর থেকে, কবিতা ও লেখার প্রেমে ডুবে হাবুডুবু খাচ্ছি ।
কে যে কোথায়, কখন ডুবে যায়, তার ঠিকানা কে জানে ? আমি ডুবে আছি, এটুকু জানতে কোনো গণনার প্রয়োজন নেই ।
ডুবে গেলে কি কি হয় ? শ্বাসকষ্ট ? নিদ্রাহীন রাত ? উপসর্গ থাক, আমি তার আগে, কি করে যেন তলিয়ে যাচ্ছি...
ফেসবুকে যারা লেখেন, তাদের লেখা মূল্যহীন, বলে, কারও কারও বদ্ধমূল ধারণা । কথাটা হয়তো খানিকটা সত্য, কেন না, ফেসবুক মূল্যহীনদের আশ্রম । আমি নিজেই মূল্যহীন, আমার লেখাও তাই । এ নিয়ে আমার, সত্যি, কোনো লজ্জা নেই !
তবে, মজা লাগে, মূল্যবান লেখা যারা লেখেন, যারা নিজেরাই মূল্যবান, সেলিব্রিটিও, তারা যখন এই মূল্যহীনদের পাতায় নিজের লেখা দিয়ে পড়ার অনুরোধ করেন, বা কোনো মূল্যবান কাগজে প্রকাশিত মূল্যবান লেখাটিকেই পুনরায় পোস্ট করেন, সেটা দেখে, করুণা হয় । 
লেখার মূল্য কি বাজারের কড়ি দামে নির্ধারিত হয়, নাকি হাততালিতে ? কেদার ভাদুড়ী হাততালির তোয়াক্কা করেননি, বাজারের তোয়াক্কা করেননি, বাঘাযতীনে একটা ছোট্ট ঘরে থেকে কী অসাধারণ কবিতা লিখে গেছেন, যা আবিষ্কার করতে বাঙালি পাঠকের আরও একশ বছর লেগে যাবে ।
ফেসবুকে দুচার লাইন লিখি, বা এই যে লিখলাম, তা হয়তো দশজনেও পড়বে না, কিন্তু স্বাধীনভাবে লিখলাম, এটাই আমার বাঁচা !
একটা জবরদস্ত প্রেম চাই, দুনিয়া কাঁপানো...
সে কি মৃত্যু ব্যতীত আর কেউ পারে ? নাকি মৃত্যুও নীরবে পা ফেলে আসবে ?
এমন নীরব প্রেম আমি চাই না !
তার চেয়ে, এইই ভালো, নিজের কবর নিজে খুঁড়ে যাওয়া...
নন্দনচত্বরে, একা, বসে বসে, হাওয়া খাচ্ছি, হঠাৎ, 'এই যে সমরজিৎ' বলে, যে এগিয়ে এসে, হাত বাড়ালো, সে আর কেউ নয়, জয় গোস্বামী ।
আমার মনে পড়ে গেলো, রাণাঘাট সিদ্ধেশ্বরী তলা, এক ছিপছিপে তরুণের সঙ্গে আড্ডা মারছি । সে জয়, তখনও তার খ্রীস্টমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়নি, তখনও কৃষ্ণনগর রাণাঘাট ছাড়া আর কেউ তেমন চেনে না তাকে ।
আমি গিয়েছিলাম কৃত্তিবাসে তার একগুচ্ছ কবিতা ছাপা হচ্ছে, তা জানাতে, আমার স্বভাবসিদ্ধ মনিপুরী আবেগে । যদিও এই একগুচ্ছ কবিতা যা জয় পাঠিয়েছিল কৃত্তিবাসে এবং যথারীতি শক্তিদার হাতে তা অমনোনীত হয়ে বাতিলের ঝুরিতে স্থান পেয়েছে । অথচ এই কবিতাগুচ্ছ আমার খুব ভালো লেগেছিলো ।
কৃত্তিবাস তখন ১১ অক্রুর দত্ত লেন থেকে বেরুচ্ছে, আমি সেখানে ৭৫ টাকা মাইনের এক কর্মচারিমাত্র ।
কবিতাগুলি বাতিলের স্থান থেকে তুলে এনে, চুপচাপ, রেখে দিই মনোনীত কবিতার ভিড়ে, আর ছুটে যাই রাণাঘাট, জয়কে জানাতে ।
পরবর্তী এক সংখ্যায়, সুনীলদা ও শক্তিদা নেই, পাটনা গেছেন বেড়াতে, এই সুযোগে, কবিতাগুলি ছেপে দিই ।
ফিরে এসে, সুনীলদা বললেন, ছেলেটাকে তুমি চেনো ? ভালো লিখেছে । ওকে আরও লেখা দিতে বলো ।
জয় সম্পর্কে এটুকু বলার একটিই কারণ, জয়-এর সেইসব লেখা আর পাইনি উন্মাদের পাঠক্রম-এর পর ।
আমি চাই, জয় আমাদের আবার মাতিয়ে তুলুক ।

Friday, September 18, 2015

শর্ত এটুকুই,
গণ্ডী টানা আছে, চৌকোণো, তার বাইরে
থাকতে হবে, তাহলে, এসো ।
অন্দরমহলে, মনে রেখো, কোনোদিন
প্রবেশ নিষেধ ।
শর্ত এটুকুই,
যদি রাজি থাকো, বলো, কবুল কবুল !
যদি রাজি থাকো, বলো, অন্দরেবাহিরে
নিকাহ সম্পন্ন হবে, কবুল, কবুল !
শর্ত এটুকুই,
যদি রাজি থাকো,
জীবিত ও মৃতে হনিমুন হবে আশ্বিনের শেষে ।
তোমাকে কোথায় রাখি, এইটুকু ঘর,
পিঁপড়ের বাসা এর চেয়ে ঢের বড় ।
কুড়িয়ে এনেছি কিছু ক্ষুদ,
নুন মেখে দিয়েছি থালায়, খেয়ে নাও ।
ফুরিয়ে এসেছে রাত, ফিরে গিয়ে বলো,
দুহাজার তিরিশের পর, পুনরায়, দেখা হবে
গৃহনির্মাণের কাজ ততদিনে ঠিক শেষ হবে !
তোমাকেই লিখি, বারবার ।
লেখক হতাম যদি, প্রতিটি অক্ষরে
রেখে দিতাম তোমার শ্বাস ।
বুকের ঐ উঠানামা, মেলে ধরা ঊরু,
আর তির তির করে কেঁপে ওঠা ঠোঁট...
লেখক হইনি, তবু তোমাকেই লিখি
আগামী জন্মের পরে চিত্রকর হবো...
পুনরায়, মূষিক নয়, রীতিমতো সিংহের মত এলাম মাঠে...
সিংহই তো, মূষিক হবো কেন ?
অপরাধতত্ত্ব এক জটিল তত্ত্ব । লোভ এর পিতা, মাৎসর্য এর সঙ্গী, আর মাতা স্বয়ং মোহ ।
হোটেলের জানালা থেকে দীঘার সমুদ্রকে মনে হচ্ছে ব্রজবালা রাধিকা, প্রতীক্ষা করছে মিলনের ।
অলিখিত এই বেঁচে থাকা ।
মৃত্যুও লিখিত নয় । গ্রহদোষ যাকে বলো তুমি,
সে কেবল প্রাণতৃষ্ণা, মেটে না সহজে ।
এই সব ভাগবতে লেখা নেই, বেদ বা পুরাণে
পাবে না কখনও, কোরাণ বা বাইবেল
এসব বলে না । পরাশরকথা থাক,
নারদপুরাণে নেই । শূন্য থেকে শূন্যে
যেতে যে সাঁকোটি পার হতে হয়, একা,
তাকে বলো, প্রেম, বলো, মৃত্যু...
নক্ষত্রদোষের কথা, প্রাণ জানে, মন...
গ্লাসে ঢেলেছি সামান্য বিষ,
নীলকণ্ঠ, এ'বলে তোমার
প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবো না আমাকে !
সমগ্র পুরাণ জুড়ে তুমি, 
মীথ হয়ে আছো !
কাহারও পরাণ জুড়ে বাসভূমি নেই,
গ্লাসে ঢেলে নিই রাত্রিসুখ ।
তুমি একে অসুখ বলো না !
যুদ্ধ কি সত্যিই বেঁধে যাবে ? কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তান যা শুরু করেছে, মোদী সরকারের ভূমিকাও সংশয়াতীত নয়, তাতে এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ।
পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকাগুলি কেচ্ছাতেই মগ্ন, কাল হয় তো ধর্মঘট নিয়ে পাতা ভরাবে, কিন্তু দেশ যে আর এক যুদ্ধের দিকে পা বাড়িয়ে বসে আছে, সে খবর রাখার সময় তাদের নেই !
চলে গেল ! বলেও গেল না !
এটা কার কথা, জানি না । জানি এটুকুই, চলে যে যায়, সে বলে যায় না !
(আয়ু)
অপ্রাপ্তির বেদনার চেয়ে হারাবার হাহাকার অনেক বেশি ও তীব্র...
যে লেখে, সে আমি নই, শুধু প্রতি রাতে
একটি অন্ধ লোক পিয়ানো বাজায়,
একা, নুলো হাতে---
তাকে আজ সেই কবি, দূর থেকে, প্রণাম জানায় !
(১৪১৮য় লেখা)
কবিতা বা গল্প বা গদ্য কোনোটাই লিখতে পারি না, বলে, একটা গাড়িও কিনতে পারবো না ? সেকেণ্ড হ্যাণ্ড না হোক ইলেভেন্থ হ্যাণ্ড হলেও তো পারতাম ! পারতাম না ?
না, সেই যোগ্যতাও আমার নেই, বলে, ঘোষণা দেওয়া হয়ে গেছে !
লিখতে যে পারে না, তার কোনো শখ থাকতে পারে না ! এটা না কি লেখকপুরাণে বলা আছে ।
লেখকপুরাণ কোথায় পাবো গো ? দেখে নিতে হবে, কথাটা নেতাদের ভাষণের মত সত্যি কি না !
ফেসবুকে, কাল থেকে শিক্ষক দিবস নিয়ে মাতামাতির শেষ নেই । মাতিয়ে তোলার বিষয় এটা নয়, শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের বিষয় । ফলে, প্রায় প্রত্যেকের স্ট্যাটাস পড়ে যাচ্ছি কাল থেকে ।
শিক্ষক তিনিই, যিনি নতুন পথ দেখাতে পারেন, হাত ধরে সেই পথে হাঁটতে শেখান । বাকিরা 'মাস্টর' ।
মাস্টর নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই, তারা তাদের মত থাকুন । 
আমার আজীবনের শিক্ষক তিনজন ।
আমার নিরক্ষরা মা, আমার অংকের স্যর সুহাস মিশ্র এবং কবিতার প্রেমে পড়তে যিনি শিখিয়েছিলেন, সেই কৃষ্ণধন নাথ । 
এই তিনজনকে, আজ শুধু নয়, আমি রোজ প্রণাম জানাই ।
স্নান করে এলে শুদ্ধ রূপে
দেখব, এটুকু বাসনা নিয়ে বসে থাকি
পুকুরঘাটের পশ্চিমে, সেখানে, নারকেল গাছ,
একটা নাগকেশর, আর আম্রপল্লী...
দূরে, কৃষ্ণাদ্বাদশীর চাঁদ, তার ছায়া
পুকুরের জলে, না কি ছায়াটি আসলে
তোমার নিজের ?
বিভ্রমের মত তুমি ডুব দাও জলে...
তোমার কাছে আমার ছিল ঋণ
হারানো সেই দিন...
মনে পড়ে, শ্রীগোপালের দুপুরগুলি ?
মেঝের উপর দুটি শরীর, ছেঁড়াফাটা ঝুলি ?
তোমার কাছে ছিল আমার সবুজ ধারাপাত
মনে পড়ে, সন্ধ্যে থেকে অমাবস্যা রাত ?
তোমার কাছে আমার ছিল ঋণ
হারানো সেই দিন...
মনে পড়ে, শ্রীগোপালের দুপুরগুলি ?
মেঝের উপর দুটি শরীর, ছেঁড়াফাটা ঝুলি ?
তোমার কাছে ছিল আমার সবুজ ধারাপাত
মনে পড়ে, সন্ধ্যে থেকে অমাবস্যা রাত ?
খুব সংগোপনে তোমাকে অনুসরণ করে যাচ্ছি, ঐ তো, তুমি বেরিয়ে এলে লাল টী-শার্টের সঙ্গে, দক্ষিণাপণ থেকে, ছেলেটি কি তোমার প্রেমিক ? তার আগে, যাদবপুর থানার সামনে অটো থেকে নেমেছিলে, একা । আজ তুমি জিন্স, ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে, কাকে যেন ফোন করলে, এই ছেলেটিকেই ? কথা শেষ হলে, আর কারও ফোন যেন এল, আমি তখন তোমার ঠিক পেছনে, বললে, বিকেল চারটেয় আসছি । ঘরে থেকো । 
চারটে এখনও বাজেনি । আর আধঘণ্টা । রাস্তায় এসে, ট্যাক্সি ডাকলে । ছেলেটিকে, হেসে, বললে, কাল ঠিক এগারোটায় । মনে রেখো ।
তোমাকে অনুসরণ করতে করতে, এখন মনে হচ্ছে, তুমিই শতরূপা, যার প্রেমে আমিও ডুবে মরেছি ।
আমি তোমার অনুসরণকারী, প্রেমিক নই, অথচ নাকতলার বৈশাখী পার্কের কাছে ট্যাক্সি থেকে যখন নামছ, চারটে সতের, একটু লেট, তোমার চোখ থেকে রোদচশমা খুলে, বাড়িটার দিকে তাকালে, এই প্রথম, হ্যাঁ, আমার মনে হলো, আমি তোমার অনুসরণকারী নই, আমিই তোমার প্রেমিক, যাকে ঘরে থাকতে বলেছিলে !
দেয়াল থেকে বেরিয়ে আসছে একটা আস্ত টিকটিকি, তার মাথায় শ্যাওলা, ভাগাড়ের গরুর পাঁজরের মত দু-একটা ইট, দেযালটি ইতিহাসহীন, এই দেয়ালরচিত এলাকায়, তোমার শেষ নিঃশ্বাস যেন দেয়ালের খসে পড়া পলেস্তারা...
এই রচনালেখক, একা, তোমার মৃত্যু দেখে যাচ্ছে, কৌশিকী অমাবস্যার আগে ।
পাতা খসে খসে পড়ছে । আদিকথার মত । দূরে লোহার জঙ্গল ছড়িয়ে রয়েছে শিরা-উপশিরার মত । নাবিকের খুলি, মাস্তুলের প্রান্তভাগ ঢেকে যাচ্ছে পাতার হলুদে ।
গতজন্ম থেকে তুলে আনা এই দৃশ্যটির সামনে দাঁড়িয়ে, তুমি, ক্রমে নিস্তেজ হয়ে পড়ছো । তোমার শুশ্রুষা দরকার । লোহার জঙ্গলে পাখি নেই, যে পাখিটা দিয়েছিলাম তোমাকে, তার ফসিল থেকে কুড়িয়ে নিও গন্ধ ।
এই জন্ম গন্ধহীন, তাকে ঘ্রাণের রঙ দিও ।
আত্মা শব্দটি এসেছে আত্ম থেকে । এই আত্মকে আর এক আত্মর সঙ্গে মিলিয়ে দেয় ভালোবাসা ।
আত্মকে জানতে হলে, এটাও জরুরি । আবার আত্ম দেহহীন নয়, দেহহীন হলে তার অস্তিত্ব থাকে না ।
নাটকের অভিনেতা চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গেলে সে আর অভিনেতা থাকে না, চরিত্র হয়ে ওঠে । আবার চরিত্র থেকে বেরিয়ে এলে, সে অভিনেতা ।
আত্মা ও শরীরের সম্পর্কও অনেকখানি তাই...
শরীর শরীর নয়, এ কথা জানিও ।
নদীটির কথা ভুলে গেছি ।
সেও কি ভুলেছে ? এই প্রশ্নে, উঠে আসে
গতজন্ম, বিবাহ ছিল না
সেই জন্মে । প্রণয়সঙ্গীতে নেচে ওঠে
নদীটির প্রাণ, শ্রাবণে সে
উচ্ছ্বল যুবতী, ছলাকলা জানে বড়,
আমাকে ভাসিয়ে নিত উজানের কাছে ।
নদীটির মনে আছে বুঝি ?
প্রণয় নিষিদ্ধ হলে, শ্বেতকেতু, বিবাহকে দিলে
তুমি বৈধ প্রতিষ্ঠান, নদী তা জানে না ।
যেদিন জেনেছে, সেই থেকে চর পড়ে
আছে তার বুকে ।
লাইক, আর পিঠ চাপড়ানো কমেন্টস-এর জন্য এই বান্দা লেখে না । ম্যাগাজিনেও লেখা আর দিই না খুব একটা । কোনো মোহ আর নেই । চাইবারও নেই, পাবারও নেই এই লেখা থেকে । একটা তাগিদ থেকে লিখি, ফেসবুকে সরাসরি লিখি, প্রায় কোনো পরিমার্জনা ছাড়াই পোস্ট করি ।
আসলে, এই সকল লেখা মূলত নিজের সঙ্গে নিজের কথোপকথন । কাউকে আঘাত করার জন্যও নয় ।
কথা বলতে ইচ্ছে করে খুব, কার সঙ্গে কথা বলবো ?
প্রত্যকের নিজস্ব সমস্যা আছে । আর, আমার সমস্যার সঙ্গে খুব একটা জড়াতে চাই না । যার সঙ্গে কথা বলতে যাবো, তার অভিযোগের তীর আমার দিকে।
ফলে, কথাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ।
এই জন্যে, নিজের সঙ্গেই কথা বলি, বারবার ।
সে তুমি পছন্দ করো, আর নাই করো...
ঘোড়াদের ছুটি দিয়ে, নৌকোয় বসেছি ।
বিশ্রামের পর হাতিগুলি
এসে যাবে মাঠে, ততক্ষণ, আমাদের
ইঁদুর দৌড়ের খেলা দেখা ছাড়া করণীয় কিছু
নেই, ফলে, হাততালি দিই, শিস দিই ।
শিস দিতে দিতে, লক্ষ্য করি, বোড়েগুলি,
আর কেউ নয়, আমরা, হ্যাঁ, আমরা ছিলাম !
রচনা করেছি জতুগৃহ,
এবার আগুন দেবো তাতে ।
পঞ্চপাণ্ডবের কেউ নেই, এই গৃহে ।
পঞ্চশর আছে ।
পুড়ে যেতে যেতে ছাইগন্ধে
বুঁদ হয়ে থাকে চরাচর ।
দুই চোখে আয় ঘুম আয় ।
এই ভাবে নিদ্রাকে জানাই,
ডাকি তাকে, সে কি আর আসে ?
ঘরণী সে, কাকে ভালোবাসে ?
নিদ্রাহীন বাঁচবো কি করে ?
বেঁচে থাকি প্রতিবার মরে ।
সকলের জন্য চাই বস্ত্র, খাদ্য, বাসস্থান, প্রেম ও যৌনতা !
চাল ফুটছিল ডেকচিতে,
আঁচ ছিল না তখন ।
আগুন যখন নিভে গেল
ছ্যাঁকা লাগে গায়ে !
হায় ! লাগছিল ছ্যাঁকা গায়ে,
লাল ফুসকুড়ি গালে,
হাতের আঙুল পুড়ে গেল
গরম মসুর ডালে ।
হায় ! রাঁধুনীর কী কপাল !
তিনি আসছেন ।
এটুকুই ব্রেকিং নিউজ ।
তিনি আসছেন ।
ক্যামেরা, লাইট, রেডি । ঐ যে,
তিনি আসছেন ।
চ্যানেল স্পেশ্যাল কভারেজ
দেখুন । একটা বিরতির পর, ফিরে
আসছি আমরা ।
তিনি আসছেন ।
বিরতির পর ।
নিয়তিতাড়িত আমি, অভিশাপগ্রস্ত,
হাতের সকল তাস ফেলা হয়ে গেছে
সেই কবে, পৌষে, আমার জন্মের আগে !
এ জীবন, জানি, শুধু দেখে যাওয়া...
আলো, মূলত এক ধাঁধা ! প্রকৃত অন্ধকার তো ঐ আলোর ভেতরেই !
আর প্রকৃত আলো ? ঐ অন্ধকারের ভেতর থেকে ফুটে আসছে !
অবাক হয়ে, তা দেখছি...
পেত্নী : ১
মিথ্যা বলিব না । পেত্নীর সহিত আমার কলহ ।
তাহার দুই পা দুলাইয়া থাকা, ঘোর নিশিকালে
হাসিতে হাসিতে প্রসারিত হস্তে গ্রহপুঞ্জসহ
আকাশ ধরিয়া ছেলেখেলা করে বলিয়াই এই,
এই বিরূপতা । ইহাও সঠিক, পেত্নী না থাকিলে,
এই বেলগাছ অস্তিত্ববিহীন হইতে পারিত ।
এই সম্ভাবনা ছিল বলিয়াই, প্রতিদিন আমি
বেলগাছটিকে প্রদক্ষিণ করি । যদি ইহা ভুল
করিয়া চলিয়া যায়, কোন নব্য গৃহস্থের গৃহে,
আর ঐ গাছের সহিত পেত্নীও যদি, উচাটন
মনে, কোন কথা না বলিয়া যায়, যদি দুই চক্ষু
মেলিয়া আমাকে না দেখে সকালে, এই ভয়ে, আমি
কলহ করিতে গিয়া, বলি, পেত্নী, বেলগাছে থাক ।
প্রণয়রহিত জীবনে তুমিই বিসর্গ, তুমি চন্দ্রবিন্দু ।
একা হবার, একা থাকার, একা হতে পারার শক্তি, একদিন, সত্যিই, ছিল না আমার । নাকি ছিল ?
আজ আর সংশয় নেই, আমি একা হতে পেরেছি !
তুমিই আমাকে এটা শিখিয়েছ, মা, একা হতে গেলে, মানসিক শক্তি দরকার । আজ সে শক্তি, বোধহয়, অর্জন করতে পেরেছি !
সকল না-পারা নিয়ে আমার এই থাকা, যা আসলে, না-থাকা-ই ।
না-থাকারও কিছু দাবি আছে । তখনই, মনে হয়, দাবি ছাড়া পৃথিবীতে আর কিছু নেই !
ওয়েটিং হলে, বসে থেকে থেকে, যখন শুনলেন, ট্রেন ক্যানসেল হয়ে গেছে, আজ আর যাওয়া হল না, সেই মুহূর্তে, মনে পড়ে যাবে, এই ট্রেন মিস করা, মানে, কানেক্টিং ট্রেন মিস, চাকরিতে জয়েন করা হল না, বা, ইন্টারভিউটা মিস হল, মা-কে গিয়ে পাবো তো, নাকি তার আগেই...সেই উৎকণ্ঠিত মুহূর্ত এসে, এখন, চেপে ধরেছে আমার গলা, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে...
বুঝতে পারছি, আমার করণীয় আর কিছু নেই...চেয়ে থাকা ছাড়া ।
কারও সঙ্গে কথা বলার চাইতে নিজের সঙ্গে কথা বলার সুবিধে এই, যে, তাতে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকে না । অপরের সঙ্গে কথা বলতে গেলে দেনা-পাওনার হিসেব চলে আসে । কেন না, এই জগত স্বার্থের, ফলে, ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ থাকে বেশি, আবার ব্যবহার করারও । কাউকে ব্যবহার করা খুব খারাপ, অপরদিকে, ব্যবহৃত হওয়ার মত অপমানকর আর কিছু নেই।
কোনো সম্পর্ক যদি ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে রচিত হয়, বা অপরপক্ষ যদি ব্যবহৃতই হতে থাকে, সেই সম্পর্কও বেশিদিন টিকে না ।
একই নদীতে দুবার স্নান করা যায় না...
--গ্রীকবচন
সুখ কাকে বলে, জানি না । সংজ্ঞাহীন আমি । সুখের সন্ধানও করিনি । মানুষ যখন সুখ সুখ করে মরে, আমি তখন ভালোবাসার দরজায় । সে কি আর আমাকে গ্রহণ করে ?
তার অনেক বায়না, বায়নাদার নই, বলে, সে বায়নাও মেটাতে পারি না । আমি চাই, বায়না ছাড়া, শর্ত ছাড়া, দাবি ছাড়া সে আসুক আমার কাছে ।
যদি না আসে, কুছ পরোয়া নেই ! আমার বিষাদ আছে, আমার চিরসঙ্গী ।
সব রাস্তাই গেছে মৃত্যুর দিকে, আমার রাস্তাটি কেবল তোমার দিকে ।
সংখ্যার প্রশ্নে তুমি বিচলিত, এক এল কোথা থেকে ? কার সন্তান সে ? আর পিতামাতা কারা ?
বিন্দু সে, প্রধান । ঈশ্বর প্রতিম । সকল সন্দেহ তাকে ঘিরে । বরং দুই, সে গোবেচারা, তাকে নিয়ে প্রশ্ন নেই । সমস্ত যৌগিক সংখ্যার বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন নেই, সংশয় নেই !
তাহলে, মৌলিক মাত্রেই অগ্নিপরীক্ষা ? ক্রুশবিদ্ধ হতে হবে তাকে ?
একটি দুঃস্বপ্ন, সেই বালককাল থেকে, আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, আতঙ্ক ও ত্রাসে, ঘুম ভেঙে যেত আমার, থর থর করে কাঁপতাম, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেত ভয়ে ।
মনু নদীর পাড়ে থাকতাম, নদীই প্রেমিকা ছিল, বন্ধুহীন সেই সময়ে, নদীপাড়ের বটগাছটিই ছিল বন্ধু । অথচ, স্বপ্নে, সেই নদী, আমি হয়তো হাঁটছি, একা অথবা বসে আছি, নদীর পাড় ভেঙে পড়ে যাচ্ছি আমি, পড়ে যাচ্ছি, নদী ফুঁসে উঠেছে, ভয়ঙ্কর তার রূপ, পড়ে যাচ্ছি, শূন্যে থেকে আঁকড়ে ধরতে চাইছি বটগাছের ডাল, পারছি না, নাগাল পাচ্ছি না, নিচে জল, জলের ঢেউ, ফেনা...আমি পড়ে যাচ্ছি...
কাল, বহুদিন পর, এই স্বপ্নটি ফিরে এল...
কাল আমি ভয় পাইনি !
আত্মবিষ পান করে চলেছি নিয়ত ।
অপমানিত হতে হতে, হতে হতে, হতে হতে, ভুলে গেছি, আমার আদৌ কোনোদিন কোনো সম্মান ছিল কি না ! 
অভিমানও নেই ।
ফ্যাল ফ্যাল করে, তাকিয়ে থাকি শুধু, দেখি, সম্পর্কগুলি কাচের মত ভেঙে ভেঙে, ভেঙে ভেঙে পড়ছে...আর ঐ কাচের টুকরোয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে আমার হাত, আমার পা...
চরাচর ব্যাপী এক হিমঘূর্ণী, কুরুক্ষেত্র শুরু হবার দুদিন আগে, বয়ে যেতে দেখেছিলেন বিদুর । তিনি পুত্র যুধিষ্ঠিরের কল্যাণে, প্রার্থনা করছিলেন আকাশের দিকে তাকিয়ে, কিছুক্ষণ আগে এসেছিলেন পিতা বেদব্যাস, বলেছেন, রচনা ব্যর্থ হবার নয় ।
কি রচনা করেছেন পিতা ? অন্যদিন হলে, জিজ্ঞাসা হয়তো করতেন, এই সময় প্রশ্নের নয়, এই সময় সম্ভাব্য যুদ্ধের ফলাফল চিন্তার । লোভ ও লালসা, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা, ক্ষমতা লিপ্সা অন্ধ করে তুলেছে মানুষকে ।
ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ, তাছাড়া, রাজা কখনই চোখে দেখেন না, কানে দেখার নিয়তি নিয়েই শাসনকার্য চালাতে হয় । অন্ধের পক্ষে রিপু সংবরণ সম্ভব নয়, এটা তিনি জানেন ।
যুদ্ধ অনিবার্য, আর মনুষ্যকূল মেতে উঠছে আত্মধ্বংসযজ্ঞে, ভেবে, দুচোখ থেকে নেমে এল যমুনা ।
ডায়েরির পাতা থেকে
একটু পরেই বন্দনা আসবে, মানে, আমাদের কাজের মাসি । সে এলে, তবে, সকালের চা, ব্রেকফাস্ট, সব ।
ব্রেকফাস্ট করতে করতে, খবরের কাগজ দেখে নেবো । এখন খবরের কাগজ কেউ পড়ে না, দেখে নেয় ।
তবে টাইমস অব ইণ্ডিয়া মাঝে মাঝে পড়তে হয়, আনন্দবাজার হলে, তার দরকার পড়ে না । 
এই একটা কাগজ, খবর নয়, কেচ্ছা ছাপতেই আগ্রহী । জমজমাট কেচ্ছা ।
কেচ্ছা বলতে মনে পড়ে গেল, আমার এই জীবনটাও কেচ্ছার, যেখানে কোনো রামধনু নেই ।
বন্দনা এত দেরি করছে কেন ?
সপ্তম অন্ধ
অন্ধের হস্তীদর্শনের কথা আমরা জানি । হস্তীদর্শন করে এসে, ছয় অন্ধ, প্রত্যেকেই, বর্ণনা করেছিল তাদের অভিজ্ঞতার কথা । কেউ বলেছিল, হস্তী স্তম্ভ সদৃশ । দ্বিতীয়জন বাধা দিয়ে বলল, না, না, হাতি অনেকটা কুলোর মত । এভাবে, প্রত্যেকেই, বলে গেল তাদের কথা । কোনটিই পূর্ণ নয়, অথচ, অংশত, সকলেই সত্য বলেছিল । এই ছয় অন্ধের কাহিনী সকলেই জানে, যেটা কারও জানা নেই, তা হল, আর একজন অন্ধ ছিল তাদের সঙ্গে । সে, ফিরে এসে, বলেছিল, হস্তী সম্পর্কে তোমরা যা বলছ, বলে, বোঝাতে চাইছ, তা মূলত এক শূন্য । দু-হাত দিয়ে স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম আমি, হাতের মুঠোয় হাওয়া ব্যতীত আর কিছুর স্পর্শ পাইনি ।
এই সপ্তমজনের কথা বড় বেশি প্রাসঙ্গিক আজ । কেন না, এই সপ্তমই, দ্বাপরে ধৃতরাষ্ট্র, কলিতে জনগণেশের দোহক এবং রাজনীতির সফল বেপারী । সকল সর্বনাশের আদিপিতা । পার্থক্য এটুকুই, কারও ক্ষতি সাধনের ক্ষমতা ছিল না সপ্তম অন্ধটির, যা অন্যদের মধ্যে প্রবল ।
চিতার আগুনে নিজের মাংস ঝলসে নিয়ে, রুটি ও মদে বুঁদ হয়ে থাকার নাম 'বাঁচা' ?
আমাদের বড় দোষ, আমরা নিজেদের দিকে তাকাই না । গত কয়েক দশক ধরে, যাদুবাস্তবতা নিয়ে মেতে আছি আমরা, অথচ এই যাদুবাস্তবতা ঠাকুরমার ঝুলিতে কি খুব কম? দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদারের এই অসাধারণ রচনা কজনে পড়েছি? অথবা ডমরুচরিত ?
যাদুবাস্তবতার জন্ম, পশ্চিমে নয়, এই দেশেই। পঞ্চতন্ত্র, হিতোপদেশ, কথাসরিৎসাগর যাদুময় ।
আমরা আমাদের ছেলেমেযেদের এসব পড়তে দিই কি ?
সকলেই বলেছেন, নতুন নয় কথাটা, তবু আমার মত করে উচ্চারণ করি রোজ । জীবন সেই হল্ট স্টেশন যেখানে প্রতীক্ষা করতে হয় মৃত্যু এক্সপ্রেস-এর জন্য ।
গণপতিই কি বাঙালির পরিত্রাণকর্তা ? বিশেষত বাঙালি নারীর ?
ফেসবুকে যে হারে গণপতি বন্দনা শুরু হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে, গণপতি এক্সপ্রেস পশ্চিমবঙ্গে দ্রুত চালু করার দাবিও উঠতে পারে ! কলকাত্তা টু মুম্বাই...পরিত্রাণকর্তাকে আনতে হবে না !
মালাউনের মাইয়াদের ধর্ষণ করলে কি জন্নতে যাওয়া যায় ? কোরানে কি তাই বলা হয়েছে ?
আমার কোরানপাঠ নেই বললেই চলে, তাই জানতে চাইছি ?
অপর ধর্ম বা মতে বিশ্বাসীদের প্রতি কোরান এত অসহিষ্ণু ?
আশ্বিনে রান্ধে কার্তিকে খায়
যে বর মাঙ্গে সে বর পায়...বাৃঙালদের এই সংক্রান্তি-উৎসব পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে, আমাদের কাজের মাসী বন্দনার কথায়, ভাত পুজো ।
এখানে তা, ভাদ্রে রাঁধে আশ্বিনে খায়...
এই ভাত পুজো উপলক্ষ্যে বন্দনার দুদিনের ছুটি । তাদের তো আর বিশ্বকর্মা বা ঈদের ছুটি নেই ।
তাদের ছুটি ভাতপুজোয় ।
ভুল এক অসুখের নাম...
সকলেই চলে যায়, এই দিন আর রাত্রিও । এই সন্ধেটাও চলে যাবে । 
তারপর, একা, চেয়ে থাকব আকাশের দিকে, ঐ ব্রহ্মহৃদয়ের দিকে । আর একটু দূরে লুব্ধক । 
চেয়ে থাকব তারাদের দিকে । তারাদেরও মৃত্যু হয় । ছাই হয়ে ভাসতে থাকে এই মহাশূন্যে ।
আমি এই মহাশূন্যে বিলীন হব একদিন । ঘর করব লুব্ধকের পাশে ।
আমাকে যখন বকতে চাইবে, রাগে ও ঘৃণায়, আকাশের দিকে তাকিও না । আমি ছায়া হয়ে পানকৌড়ির পিছনে পিছনে ঘুরব বিলের জলে ।
কেউ আর আমাকে দেখবে না !

Thursday, August 6, 2015



সরলরেখাটি যদি আঁকি,
আমার অক্ষম হাতে, সেও
হয়ে ওঠে বাঁকা !
ঐ বাঁকের মোড়ে, একদিন,
দেখা হবে, ভেবে,
বসে থাকি নীল রশি সহ ।
পয়ারের মায়া ছেড়ে
যাব না কোথাও !
মাত্রাবৃত্ত দূর থেকে
হাঁকে, কোথা যাও ?
স্বর বলে, কাজ নেই
সতীনের ঘরে,
আমাকে গ্রামীণ বলে
অবহেলা করে !
বিছানা কাঁপাতে পারি
সঙ্গতে সঙ্গতে !
পয়ার কি জানে তার,
বাঁচে কোনো মতে !
চুপ করে শুনি আমি
স্বরবৃত্তকথা,
সকলই সঠিক তবু
রাত্রিসরলতা
পয়ারের কাছে পাই,
মাত্রা তো গম্ভীরা,
ছল তার পূর্ণ করে
শিরা-উপশিরা !
বুকের ভেতরে স্বর
রাখে এক গ্রাম
কুতকুত খেলা হয়
অবশিষ্ট যাম !
পয়ার জীবন আনে
মরণের দেহে,
স্বর তা বোঝে নাআজ
অতিরিক্ত স্নেহে !
শরীর শরীর চায়, বলে, দেহ খুলে
দিয়েছি শরীর, এই নাও
গভীরে তোমার, বলি তাকে !
সে, শরীর রেখে দেহ দিল
অম্বুবাচি শেষে ।উলুধ্বনি চারদিকে,
এবার তাহলে দিতে হবে
ঝাঁপ, শুরু হোক পূণ্যস্নান !
মাঝখানে, দেয়াল, অদৃশ্য ।
ফলত ফাটল অভাবিত,
চাপা গোঙানির শব্দ, থেকে থেকে
আসছে এপারে ।
দৃশ্যাটি অন্নদা পৃথিবীর...
বৃক্ষ কি দেবতা, শাপভ্রষ্ট ?
নক্ষত্রপুঞ্জের সঙ্গে দুধশাদা পথ
নেমে এসে প্রণাম জানায়...
কাল রাতে এই দৃশ্য দেখে
অন্ধ হয়ে গেছে দুই চোখ !
বৃক্ষটি প্রাচীন, তার ডালপালা
যেন সন্ন্যাসীর জটাচুল !
ধ্যানমগ্ন দুই হাত তুলে
কি প্রার্থনা করে ? কার কাছে ?
হাওয়া বয়, চারদিকে প্রার্থনাসঙ্গীত
নীরব ধ্বনির মত শ্বাস
ছায়াপথ, বুকে তুলে নেয়
তাকে, গভীর আশ্লেষে, যেন
সে পুরুষ তার, ঝুঁকে আছে
তার সামনে আকাশ, নক্ষত্রমণ্ডল !
এটুকুই মনে আছে, এই অন্ধ চোখে
এটুকুই রেখেছি গোপনে !
হারিয়েছি লাল ডাকবাক্স,
তুমি না কি আমাকে আঁকছ ?
চিঠি নেই, কতদিন হল ?
সুদূর আকাশ তুমি, বল ।
আমার ছবিটি খুঁজি রাতে,
ডাকবাক্স ঘোরে কার হাতে ?
(উলটোপালটা কথন)
প্রণয় নিষিদ্ধ হলে কার কাছে যাব ?
দুই হাত রয়ে গেল শূন্য,
চোখ হল অন্ধ এক পাখি,
বধির শ্রবণে আজ অমরাবতীর
রূপ হয়ে ওঠে কাঠবিড়ালীর হাসি ।
কিভাবে নামব আমি মেচেদা স্টেশনে ?
প্রণয় নিষিদ্ধ ট্রেণে চেপে বসে আছি !
ঐ খোলসটুকু, জানি, সত্য ।
শীত পার হয়ে গেলে ভূমিকাসম্বল
এই দেহ পড়ে থাকে, ফিরে তাকাবার
সময় কোথায় ?
ফিরে তাকাতেই হয় কোনো একদিন ।
ততদিনে ঋণ বেড়ে যায়
সুদে ও আসলে, অধমর্ণ বোঝে না তা ।
কুড়িয়ে পেয়েছে দীর্ঘ শ্বাস, সে-ই জানে,
অতিপ্রেম খোলস বিহীন,
দেহ তার আরাধ্য দেবতা । খোলসের
দিকে যেতে যেতে ভোর হয়ে আসে
ঋণগ্রস্ত রাত ।
খোলস ছাড়িয়ে সে জেনেছে এ সত্য ।
বৃষ্টি মানে তুমি,
তুমি ছাড়া এরকম ঝর ঝর ঝর
অসম্ভব, আমাকে ভাসিয়ে
আর কে এভাবে নিয়ে যাবে ?
আমি সেই পথ,
যে পথে আসে না কেউ, আজ
সে পথ ভাসিয়ে নিয়ে গেলে !


একটি হাত পড়ে আছে কবরের পাশে,
দূরে, একটি কাক তাকিয়ে রয়েছে
সেদিকেই, কাটা হাত উঠছে নড়ে, ঐ যে,
আঙুলগুলিও !
আরও দূরে, এক তরুণ চিত্রকর এই দৃশ্য আঁকতে গিয়ে, সে চমকে ওঠে, দেখল, ঐ হাতটি আর কারও নয়, তার নিজের !