Tuesday, November 25, 2014

আজ মন খুব খারাপ !
লতিফ সিদ্দিকিকে, বাংলাদেশে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে !
একজন মুক্তিযোদ্ধা তিনি, তাঁর মত কবিতা পাগল লোক খুব কম দেখেছি আমি !
2009-য়ে, ঢাকা গিয়েছিলাম ! মেসবাহ কামাল-এর ধানমণ্ডির ঘরে কয়েকদিন কাটাবার পর, ময়মনসিং যেতে হয়েছিলো প্রীতি আচার্যর অনুরোধে ! তিনি তসলিমা নাসরীন-এর গুণগ্রাহিনী, বাংলাদেশ বেড়াতে এসে, তসলিমার বাড়ি দেখবেন না, এটা কি করে হয় !
ময়মনসিং-য়ে তসলিমার বাড়িতে, তাঁর দাদার সঙ্গে যখন কথা বলছি, একদল তরুণ এসে খোঁজ করলেন আমার ! ঢাকা থেকে মফিদুল হক খবর দিয়েছেন তাদের, যে, আমি সেখানে গেছি !
যাই হোক, ধান ভানতে শিবের গান এখন থাক, বরং বলি, পরদিন, আমাদের পথপ্রদর্শক-এর কাছে ফোন এলো, বাংলাদেশের বস্ত্রমন্ত্রী আমাদের ডিনারে নেমন্তন্ন করেছেন !
মন্ত্রী-নেতাদের থেকে সতেরশ কিলোমিটার দূরে থাকি আমি ! আর বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রীর নামও জানি না ! তার চেয়ে বড় কথা, আমি কোনো সেলিব্রিটিও নই !
দু-এক লাইন লিখি, দু-চারটে বই, পকেটের টাকা খরচ করে, বের করেছি বটে, সতের কপির বেশি বিকি হয়নি তার একটাও !
এ হেন অখ্যাত লোককে ডিনারে নেমন্তন্ন করবেন কেন এক দেশের মন্ত্রী ?
তত্ক্ষণাত্ সেই নেমন্তন্ন ফিরিয়ে দিই আমি !
হায় ! ফিরিয়ে দিতে পারলাম কই ? বাসে করে ঢাকা যখন ফিরছি, আবার ফোন এলো !
মন্ত্রী নাছোড়, অগত্যা গ্রহণ করতে হলো সেই নেমন্তন্ন ! তাও এক শর্তে ! আরও কয়েকজন কবিকেও যেন এই ডিনারে ডাকা হয় !
হ্যাঁ, তিনিই লতিফ সিদ্দিকি !
রাতে, মন্ত্রীর অফিস থেকে গাড়ি এসে আমাদের যখন তাঁর বাসস্থানে নিয়ে গেলো, আমি বাকরুদ্ধ ! তিনি তাঁর আসন থেকে উঠে এসে, প্রীতিকে বসাতে গেলেন তাঁর আসনে ! কবি জাহিদ হায়দার বললেন, তরুণী কবিরই যোগ্য আসন সেটা, কোনো মন্ত্রীর নয় !
যাই হোক, প্রীতি নয়, সে রাতে, মন্ত্রীর চেয়ারে বসেছিলেন বাংলাদেশের সিনিয়র লেখক আবুবরকর সিদ্দিকি আর ঘরের এক কোণে, একটা টুলের উপর চৌকিদারের মত বসেছিলেন বাংলাদেশের তদানীন্তন বস্ত্রমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকি !
গান, কবিতা পাঠ, পানীয় ও আড্ডায় জমে উঠেছিলো সেই ডিনার ! লতিফ সিদ্দিকি নিজে পাঠ করে শুনিয়েছিলেন রবিঠাকুরের কবিতা !
লতিফসাহেব সেরাতে তাঁর পার্সোনাল লাইব্রেরি দেখিয়েছিলেন আমাকে ! ত্রিপুরার যে কোনো জেলাগ্রন্থাগার লজ্জা পাবে এটা দেখলে ! ফিরে আসার সময় তিনি হাজার পাঁচেক টাকার বই হাতে তুলে দিয়েছিলেন, যার কয়েকটা ছিলো তাঁর নিজের লেখা !
এগুলির একটি ছিলো স্ত্রীকে লেখা চিঠি, সেই বই থেকে জানতে পারি, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন ত্রিপুরায় !
আজ সত্য কথা বলার অপরাধে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, হয়তো তাঁর উপর নেমে আসবে শাস্তির খাঁড়া ! সক্রেটিসের বিচারের মত হয় তো তারও বিচার করবে হাসিনাসরকার !
আমরা তখন ফেসবুকের আড়ালে মুখ ঢেকে রাখবো ! কাপুরুষের এইই নিয়তি !

No comments:

Post a Comment