Saturday, October 10, 2015

সমগ্র জীবন দিয়ে, একটি বাক্য রচনার চেষ্টা করে যাচ্ছি...শব্দগুলি খুঁজে পাচ্ছি না, পেলেও তা মনোমতো হচ্ছে না...
আমার রাধাকে আমি দেখি নানা ভাবে,
কখনো ডুবুরী হই, কৃষক স্বভাবে
কখনো বা চাষ করি তাহার জমিন ।
সে আমার লেখা হয়ে জাগে রাত্রিদিন...
প্রতিটি অক্ষর, জানি, মূলত ঘাতক,
চকচকে ছুরিটি লুকানো,
কণ্ঠনালি কেটে তারা বেরিয়ে এসেছে ।
তুমি তার চিহ্ন ধরে রাখো,
প্রত্যেক বসন্তে পুজো করো আম পাতা সহ
ভুল ছন্দে, মাত্রা ভুলে গেঁথে রাখো তাকে
সুতোহীন স্রোতে...
তুমি গুপ্ত ঘাতকের কেউ নও, নাকি ভুল জানি ?
তোমার হাতেও তবে রয়ে গেছে পানিনির ছুরি ?
কুহকিনী কথা দেখলাম ।
এরাবেলের নাটক দেখেছিলাম প্রায় ৩৫ বছর আগে, মানিক চক্রবর্তীর নির্দেশনায় । মিতুল দত্তের এই নাটক দেখতে দেখতে, কেন জানি, মনে পড়ে গেল, এরাবেলের কথা । নাটক কবিতা নয়, কিন্তু কবিতা যে কখনও কখনও নাটক হয়ে ওঠে, মিতুল তা বুঝিয়ে দিলেন আমাদের । একটি দীর্ঘ কবিতাই তো কুহকিনী কথা ! তার ইশারা, ব্যঞ্জনা, শব্দে শব্দে গড়ে ওঠা ভাষা, তার কারুকার্য অনুভূতির শেকড় ধরে যখন টান মারে, তখন তাকে কবিতা না বলে উপায় থাকে না আমাদের ! 
মাইকেল মধুসূদন দত্তের বীরাঙ্গনা কাব্যে তবু নাটকীয়তা ছিল, শুভাশিস সিংহ, বাংলাদেশের তরুণ নাট্যকার ও নির্দেশক, সেই নাটকীয়তাকেই পূঁজি করে এক কাব্যকে মঞ্চস্থ করার সাহস দেখিয়েছিলেন, জ্যোতির অভিনয়, সে নাটকের প্রাণ, আর কুহকিনী কথায নাটকীয়তার দিকে একেবারেই ঝুঁকেননি মিতুল ।
এখানেই তার যাদুমযতার স্পর্শ দর্শকের অন্তর ছঁয়ে যায় । এরাবেলের নাটকে কোথাও যেন বাঘের থাবার মত লুকিয়ে থাকে এক দার্শনিকতা, মিতুল সেদিকেও যাননি । তার এক এবং অদ্বিতীয়ম অস্ত্রই হল কবিতা যাকে সঙ্গ দিয়েছে অসাধারণ কিছু গান !
বড় দুর্গম এক পথের যাত্রী কুহকিনী কথা, আমরা তার মুগ্ধ দর্শক !
ধমনীবাহিত তুমি, সুড়ঙ্গলালিত,
চেয়ে থাকে শাদা অ্যাপ্রনের চোখগুলি,
উত্থানরহিত ঐ মুহূর্তে,
পরকামী তুমি, শুয়ে আছো
কোন অপমানে ? সে কি জানে ? না কি সেও
দ্বিধাগ্লাসে পান করে দৃষ্টি ?
তোমার এ নিদ্রারূপ বিভ্রম এনেছে
তার মনে ? চৌষট্টি কলার দেশে তুমি
পরম ঈশ্বর, হায়, এখন পাথর,
অনুভূতিহীন, না কি অতিঅনুভূতিময় আজ ?
খুব শীত পড়েছে এখানে,
জানি না, তোমার ওখানে কেমন শীত !
শীত-গ্রীষ্ম পার হয়ে তুমি চলে গেছ
সেই কবে, পচানব্বই জুলাই । বড় অভিমানে !
অভিমান কি আমার নেই ?
দাঁত চেপে কিভাবে হজম করে, শিখে গেছি তাও,
কাউকে বলি না, আমার শরীর ক্রমে ছোট থেকে
ছোট হয়ে যাচ্ছে !
তারপর একদিন হয়ে যাব বিন্দু ।
শাদা কাগজের উপর এক ফুটকি !
একটা সকাল ক্রমশ সন্ধ্যার দিকে চলে যাবে...
সব রঙ মুছে দিয়ে রাত্রি তার রঙে
সাজাবে পৃথিবী...
সেখানে আমার প্রেম নবতর লোভে
আর একবার জেগে ওঠে,
যেন কোনো বুদবুদ, একা !
তুমিও হাসপাতালে, রিক্ত করতলে
রেখে আসি বাতাসের চুল ।
সুস্থ হয়ে ওঠো, এটুকুই বলি, কণ্ঠহীন স্বরে,
এটুকুই থাকে ভাগশেষ,
বাকি সব শূন্য ফলাফল, না-পারা দিনের মত
সকলের দৃষ্টি থেকে দূরে ।
ফিরে এস, ফিরে এস আজ সুস্থ হয়ে ।
তুমি ছাড়া আমাদের শহরের যান চলাচল
বন্ধ হয়ে গেছে ।
কবিতা আবেগের সন্তান, যদি বলি, তাহলে, সহজ হত কবিতার সংজ্ঞায়ন, অথচ তা নয়, তত সহজ নয় এই সংজ্ঞায়ন । কবিতা আবেগের সন্তান নয় ! তিন আনা আবেগ যদি থাকে, বাকি তের আনা আবেগের থাবার বাইরে । গণিতও নয় কবিতা, যে, সূত্র মেপে হবে তার চলাচল । মেধার ঘুঙুরধ্বনি যদি শুনতে চাই, লক্ষ্য করি, সেখানে সঙ্গীত অনুপস্থিত, অথচ কবিতার রক্তে বেজে যাচ্ছে আব্দুল করিমের গান, হয়তো বা বিঠোফেনও ।
কবিতা তাহলে কি ?
বলি, বা, কোরবানি কথাটির মধ্যে এক না বলা শব্দ আছে, যাকে ছাড়া বলি বা কোরবানি কোনোটাই সিদ্ধ নয়, তা হল, আত্ম ।
বাজার থেকে গরু-মোষ বা পাঁঠা কিনে এনে তাকে জবাই করা বা বলি দিলেই কোরবানি বা বলি সিদ্ধ হবে, বলে, যারা ভাবছেন, তাদের দেখে করুণাই হয় । আত্মবলিতেই পরমতালাভ, অন্যথা নয় । বরং এটা দেখনদারি, এক ধরণের মাৎসর্যও বটে ।
ধর্ম মানে, হিন্দু, ইসলাম, বৌদ্ধ বা খ্রীস্টান, সবই এসেছে পরে । মানব সভ্যতা ততদিনে এগিয়ে গেছে অনেক । ২০১৫ বছর আগে খ্রীস্টধর্মের অস্তিত্বই ছিল না ! ইসলাম ধর্ম এসেছে তারও অনেক পরে । বৌদ্ধ বা জৈন এদের পূর্বসূরী । হিন্দু ধর্ম নামে কোনো ধর্মই নেই, যা আছে তা সনাতন ধর্ম ।
মানুষ তাদের কর্তৃত্ব কায়েম রাখতে এসব ধর্ম চালু করে । মনে রাখা দরকার, আধ্যাত্মিকতা আর ধর্ম এক নয় । নিজেকে জানার পদ্ধতিগুলির একটা এই আধ্যাত্মিকতা । এর সঙ্গে আচরণবাদের কোনো সম্পর্ক নেই ।
মানুষকে চিরবোকা বানাবার জন্য ধর্মের সুড়সুড়ি যথেষ্ট । এবং এটাই হয়ে আসছে বারবার ।
কেউ যখন 'হে ভগবান, হে রাম, হে কৃষ্ণ' বলে, বা 'ইনশাল্লাহ্' বলে, অবাক হয়ে আমি তার বা তাদের দিকে তাকাই । কিভাবে মানুষের মগজ ধোলাই করা হয়েছে, ভাবি ।
সকলই মীথ, এই রাম বা কৃষ্ণ, ঈশ্বরবাদ, আল্লাহ্ ভরসা, সব । গৌতম বুদ্ধ ঈশ্বরই মানেননি, তার অনুগামীরা তাকেই বানিয়ে দিয়েছে ঈশ্বর !
আসলে, এটা সেই খেলা, যা ক্ষমতার শিকড় বিস্তৃত করে, প্রোথিত করে মানুষের মজ্জায়, রক্তে । এই খেলা থেকে মুক্তি না পেলে, মানুষ কোনোদিনই মানুষকে প্রকৃত ভালোবাসতে পারবে না ।
যে সকল লেখা মুছে ফেলতে চেয়েছি
ব্ল্যাকবোর্ড থেকে,
সেগুলি তোমার জন্মদিনে ফিরে আসে
বিড়ালের মত ।
দেখি, ব্ল্যাকবোর্ড জুড়ে বিড়ালের থাবা,
নখ সহ উজ্জ্বল, উজ্জ্বলতর অক্ষরসমূহ...
আমার সম্পর্কে দু-চারটে কথা যা কেউ জানে না
আত্মপ্রচার নয়, কেন না, আমার মধ্যে আত্মপ্রচার করার মত কিছু নেই, প্রতিভাহীন বলতে যা বোঝায়, আমি তাই । গুণহীন হলেও আলসেমি বারো আনা । লক্ষ্য করে দেখেছি, আমি আসলে ভীরু, কাপুরুষও বটে । ফলে, প্রতিবাদীও হতে পারিনি । আমার ব্রেনসেলে যে সেতার বাজে, তা আসলে এক নুলোর কান্না । আমি তার অসহায়তার সঙ্গী । রোজ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে, আমি ব্যালকনিতে এসে দেখি, অনাথ শিশুর মত, একা, ঘুমিয়ে আছে রাত্রি । তার দুচোখে স্ফটিকের মত নক্ষত্রমণ্ডল, হয়তো কিছু আগে খসে পড়েছে আকাশ থেকে । চুল বিশৃঙ্খলার মত ছড়িয়ে আছে মুখমণ্ডলে ।
এসব, একা একা, দেখি । আমার এটাই কাজ, আর কোনো কাজ নেই এখন । আমার সম্পর্কে বাজারে যা রটেছে, ঐ বহুগামিতা, মদ্যপানাদি সব বাতিল করে দিতে গিয়ে দেখি, আমি আসলে তা-ই । দু-এক ছত্র লেখার সুবাদে আমি অমরত্ব চাইনি কোনোদিন । একারণে, সভাসমিতির থেকে চিরকাল দূরে দূরে থেকেছি । স্মৃতি বলতে এক কুকুরছানা আর এক বিড়ালছানা ।
ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা করতে পাসপোর্ট ভিসা লাগে না । রেলস্টেশনে যে অন্ধ ভিখারিটা বসে থাকে ভাঙা থালা পেতে, তিনিই ঈশ্বর । অথবা ফুটপাতের ঐ অনাথ শিশুটি, সেও ঈশ্বর । ঈশ্বরের কোনো আলাদা মন্দির নেই । যারা পাপী তারা মন্দিরে যায়, প্রার্থনা করে, তারা ঈশ্বরের কাছে যায় না । ঈশ্বর নিরাকার নন, তিনি সাকার । ঐ যে, মুটে মাথায় তিনি এখন রেলব্রীজ পেরিয়ে যাচ্ছেন, একা !
পুরুষ পতঙ্গ মাত্র, বিবেচনাহীন ।
রূপশিখা দেখে তার বেজে ওঠে বীণ
ব্রেনসেলে, নেচে ওঠে সব নিউরন...
নারী হাসে, বলে ওঠে, আমার মরণ !
প্রতিটি ঋণাত্মক (negative) লেখার পেছনে আশ্চর্য এক ভোর থাকে, যা দেখার চোখ থাকতে হয় । পজিটিভ কথার ক্ষেত্রে ঠিক তার উলটো । সেখানে নেমে আসে এক গাঢ়তম রাত্রি ।
তুমি তার কেউ নও, তবু ফেসবুকে
মাতিয়ে রেখেছ তাকে চরম অসুখে ।
একে নাকি ভার্চুয়াল প্রেম বলে থাকে ।
ত্রসরেণু উড়ে যায় নদীটির বাঁকে,
সেখানে রয়েছে ডুবে গূঢ় বাল্যকাল,
তুমি দাও মন্ত্রপূত ধানদুব্বোচাল ।
জেগে ওঠে বাল্যকাল বন্ধুহীন দিন,
ফেসবুকে সেও লেখে অলিখিত ঋণ ।
তোমাকে ভুলিয়ে রাখে তার প্রতিচ্ছবি,
তোমার অসুখ হলে শুক্র শনি রবি
অরন্ধনে কাটে তার ভাদ্র ও আশ্বিন,
একে নাকি প্রেম বলে শান্ত অমলিন ।
সেই প্রেমে লিখে ফেলে তরতাজা পদ্য,
প্রতিটি শব্দের মধ্যে অল্প কিছু মদ্য
ঢেলে দিয়ে করো তাকে জিহ্বা অনুসারী,
ভার্চুয়াল রসে ডুবে প্রাণবন্ত নারী
ইহাকে লাইক দিলে বুঝে নিও তুমি
আর্ধেক নৌকার মত জাগে জন্মভূমি ।
মনখারাপের গল্প না হয় রইল পড়ে
একা একা, পুরাণো প্রেম, তোমার ঘরে ।
এখন বাতি জ্বালাও তুমি অন্য রূপে,
আগুন জ্বলে শূন্য বুকে চুপে চুপে ।
সে কথাটি না হয় হল বালিশ চাপা
পূর্ণিমা থাক তোমার লেখায় খানিক মাপা
মন খারাপের দিনে কেবল দু পাত্র মদ
পেটে ঢেলেই হলাম না হয় বশংবদ !
লেখা থাকে পাশের বাড়িতে,
কবিতা একটু দূরে, ও পাড়ায়, প্রেমিকের সঙ্গে,
আমার উচিত নয় এই পরনারী সঙ্গ !
মহাপ্রস্থানের পথে এসে, দেখলাম,
কুকুর ছিল না ধারেকাছে ।
এ পথে গিয়েছিলেন যুধিস্থির । আমি
তাকে অনুসরণের কথা
ভাবিনি কখনও । আমার দ্রৌপদী নেই,
নকুল বা সহদেব নেই ।
কুরুক্ষেত্র থেকে বহুদূরে থাকি আমি,
মহাপ্রস্থানের পথে এসে খুঁজছি কুকুর ।
কালো হোক, শাদা হোক একটি কুকুর,
যে অন্তত যাবে না আমার সঙ্গে ।
আত্মরতিময় এই মনুষ্যজীবন, শ্বেতকেতু, নিয়মে ও শৃঙ্খলায় বেঁধে, গতিরহিত করেছ । এই পাপ থেকে, এই অপরাধ থেকে তোমার মুক্তির পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল ।
গরুর মাংস খাবার অপরাধে কাউকে হত্যা করা যায়, ভারতবর্ষে, এটা জেনে, মনে হলো, এটা ভারতবর্ষ নয়, এ আমার দেশ নয় !
জন্মসূত্রে, আমি মনিপুরী । এই মনিপুরী সমাজ মূলত বৈষ্ণব, এবং মাংস থাক, পেঁয়াজ পর্যন্ত নিষিদ্ধ আমাদের । ক্লাস থ্রী-তে যখন পড়ি, তখনই, প্রথম মাংস খাই, সমাজের অন্ধরীতি ভাঙি ।
পরবর্তীকালে, শুয়োর, গরু, হরিণ, বনশুয়োর কোনোটাই বাদ দিইনি । মাংস ভক্ষণের সঙ্গে জাতি বা ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই । সত্যিই নেই । এটা খাদ্যাভ্যাস মাত্র, আর কিছু নেই । হিন্দুদের গরু না খাওয়া বা মুসলিমদের শুয়োর বা কচ্ছপ না খাওয়া অন্ধ গোঁড়ামি ।
কে কি খাবে, তা তার খাদ্যরুচি অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, কোনো ধর্মীয় মতাদর্শ দ্বারা নয় । একটি গণতন্ত্র মেনে চলা দেশে এটাই নিয়ম ।
নয়ডায় যা ঘটেছে, তা অতি নিন্দনীয় । ভারতবর্ষে যারা ধর্মীয় গোঁড়ামির বীজ বপন করছেন, তারা কোনো অংশেই তালিবানি বা ISIS থেকে কম উগ্র বা কম জঙ্গী নয় ।
মোদী সরকার যদি একে তাদের 'আচ্ছে দিন' নমুনা হিসেবে পেশ করতে চা্য়, বুঝতে হবে, আমাদের সামনে ভয়ঙ্কর দিন আসছে, যা প্রতিহত করতে হবে আমাদেরই !
যে জাতি ভিন্নরুচি ও ভিন্ন স্বাদের খাবার খেলে তার জাতিত্ব হারায়, সে কোনো জাতিই না ।
সংকীর্ণতা আর গোঁড়ামি নিয়ে অতীতে থাকা যায়, ভবিষ্যতে যাওয়া যায় না !
করতলহীন এই দুহাত পেতেছি
তোমার সামনে ।
ক্ষুদকুড়ো দিও তুমি, অতি ভালোবেসে,
দিও ভাঙা শ্লেট,
অক্ষরজ্ঞানের মত খুচরোও দিও ।
তোমার সময় নেই, তাড়াহুড়ো করে
চলে যাচ্ছো জরাসন্ধ পথে,
লোকাল ট্রেণের মত ঘড়ি ধরে, আমাকে দেখার
সুযোগ ছিল না, ফলে, দুহাত পেতেছি
খুচরো খুঁজতে গিয়ে, মুঠো ভর্তি আয়ু
ব্যাগ থেকে বের করে, তুমি
তুলে দিলে অবহেলা করে । ধন্যবাদ
জানাবো তোমাকে, ভুলে গেছি,
আমি দেখছি, লোকাল ট্রেণ চলে যাচ্ছে
হুইশেল বাজাতে বাজাতে...
অস্তাচলে এসে, দেখছি, পৃথিবী তার রূপ পাল্টে ফেলেছে ।
আমার কবিতা ঠিক আমারই মত, হার্ট ব্লক্ড, স্পাইনাল কর্ড ভাঙা, স্পণ্ডিলাইটিস, বহুগামী, বিষাদাচ্ছন্ন এক ছায়া ঢেকে রেখেছে ভবিষ্যত...
পাঠ করার আগে, দু'পেগ হুইস্কি বা ভদকা নিয়ে নিলে, জমে যেতে পারে । আবার উলটোটাও হতে পারে ।
আমার কবিতা আমারই মত, আনপ্রেডিক্টেবল !
আজ আর কোনো কথা নয় ।
ঐ নীরব তালপাতাটির মত চুপ করে আমি
কিছুক্ষণ থাকবো কবির কাছে ।
উৎপলকুমার বসু আর নেই, রাহুল পুরকায়স্থপ্রেরিত ম্যাসেজ পেয়ে, শোকগ্রস্ত, মুহ্যমান ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি, সারা বিকেল ও সন্ধ্যে পাথর হয়েই ছিলাম ।
একবার ভেবেছিলাম, শেষ দেখা করে আসি, পরক্ষণেই মনে হলো, অসুস্থ অবস্থায় দেখা করতে যাইনি, এখন গিয়ে কি হবে !
এখন মনে হচ্ছে, ভুল করেছি ।
উৎপলদা, ক্ষমা করবেন আমাকে ।
তোমার চুলের কাঁটা, লগ্নহীন মাসে, ফুটে উঠেছে সুন্দর...
যিনি কলম ধরবেন, তিনি মূলত প্রেমিক এবং প্রতিবাদীও । কেউ কেউ প্রতিবাদী সাজেন, প্রকৃত সময়ে, দেখা যায়, ইঁদুরের মত গর্তেও ঢুকে যান বিপদকালে । কেউ আবার স্বদলের বিরুদ্ধে অন্যরা প্রতিবাদ করলে, তাদের বিরুদ্ধেই গর্জে উঠছেন । তারা মেকি প্রতিবাদী ।
আগরতলায়, এরকম এক মেকি প্রতিবাদীকে দেখেছি, বৌ-এর বদলী শহর থেকে কলেজটিলায় হলে, তিনি দল ছেড়ে দেবেন, বলে, হুমকি দিয়েছিলেন ।
আয়নার সামনে দাঁড়াতে, সাধারণত, পছন্দ করি না । আজ দাঁড়িয়ে, দেখলাম, আমার দুটো কান খরগোশের মত ! 
এটা আগে লক্ষ্য করিনি ।
তাহলে, এটা কি আমার খরগোশজন্ম ?
কতদূর গেলে নদী বুকে তুলে নেবে ?
রাত এখন কুহক ছড়িয়েছে...
ঘুমোবার আর কি যো আছে ?
আকাশলীন এই নীলে ঐ ভাঙা ডানা মেলে উড়ছে আজ আমার পাখি...
মুগ্ধতা অসুখমাত্র, তাকে জল দিই,
পিঁড়ি পেতে দিই । পাখা এনে হাওয়া করি,
আশ্বিনে-গরম, কি জানি, খতরনাক
কোন মোড় নেয়, তার আগে,
তাকে ঠাণ্ডা করি, শরবৎ এনে দিই ।
মুগ্ধপুরাণের কথা এর চেয়ে আর
কিছু বলা যায় ?
একটি কথার ফাঁকে ওঠলো জ্বলে আগুন,
বললে নাকি, ভাগুন ?
আগুন বুঝি ? নদীর বুকে রহস্যময় লাভা,
আমার দেহে তারই নানান আভা,
দেখতে পাচ্ছো, প্রেমের মত বিষাদগ্রস্ত
চোখে কেমন যেন সূর্য গেল অস্ত !
সম্ভাবনার দুটি মুখ । একটি আমার দিকে, অপরটি তোমার দিকে...
দেখো, কেমন বিটকেলে হাসি তার !
বড় দুঃসময় এই উপমহাদেশের । বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত আজ জ্বলছে ধর্মীয় উন্মাদনার আগুনে, রাজনীতির সন্ত্রাসে ।
বাংলাদেশে মন্দির ভাঙচুর, দুর্গাপুজোর মূর্তি ভেঙে দেওয়া সহ চাপাতির তাণ্ডব, পাকিস্তানে তালিবানি শাসন, ভারতে আর এস এস ও শিবসেনার আক্রমণ কোনোটাই সমর্থনযোগ্য নয় ।
এখন তো দলিতদের উপর নির্যাতন বাড়ছে, কাল দেখলাম, এক দলিত দম্পতিকে প্রকাশ্য রাস্তায় নগ্ন করে আক্রমণ করছে ।
এটা কোন ভারতবর্ষ ? এ আমরা কোথায় আছি ?
আর এস এসের এই নির্যাতন নতুন নয়, ব্রাহ্মন্যবাদের আধিপত্য থেকে বাঁচতে এই দলিতরাই, একদিন, দলে দলে, বৌদ্ধধর্মের আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীকালে, এই দলিতরাই আশ্রয় নেয় মুসলিম ধর্মের । বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিম তো এভাবেই ব্রাহ্মণ্যবাদের আগ্রাসী থাবা থেকে বাঁচতে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন ।
এখন, তাদেরই একদল সংখ্যালঘু হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মালম্বীদের উপর আক্রমণ করছে ।
এর কোনোটাই কাম্য নয় । সমর্থনযোগ্য নয় ।
প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে তার নিজস্ব ধ্যানধারণা নিয়ে, বিশ্বাস নিয়ে বাঁচার । এই বিশ্বাস বা মতকে দলন করার অধিকার কারও নেই। না, জামাতিদের, না তালিবানিদের, না isis-এর, না আর এস এস বা শিবসেনার, না কোনো রাজনৈতিক দলের ।
সবার জানা উচিত, মানুষই সত্য, ভালোবাসাই আল্লাহ বা ঈশ্বর । এবং তা মানুষের কল্যাণেই।।
কতটা অপ্রিয় হলে পর তুমি আমাকে পোড়াবে, শাদা বিষ ?
লেখা যাকে ভালোবাসে, কবিতা প্রেমিকা যার, তার চেয়ে ভাগ্যবান আর কেউ নেই ।
আমি ভাগ্যবান নই । দূর থেকে, কবিতা ও লেখার প্রেমে ডুবে হাবুডুবু খাচ্ছি ।
কে যে কোথায়, কখন ডুবে যায়, তার ঠিকানা কে জানে ? আমি ডুবে আছি, এটুকু জানতে কোনো গণনার প্রয়োজন নেই ।
ডুবে গেলে কি কি হয় ? শ্বাসকষ্ট ? নিদ্রাহীন রাত ? উপসর্গ থাক, আমি তার আগে, কি করে যেন তলিয়ে যাচ্ছি...
ফেসবুকে যারা লেখেন, তাদের লেখা মূল্যহীন, বলে, কারও কারও বদ্ধমূল ধারণা । কথাটা হয়তো খানিকটা সত্য, কেন না, ফেসবুক মূল্যহীনদের আশ্রম । আমি নিজেই মূল্যহীন, আমার লেখাও তাই । এ নিয়ে আমার, সত্যি, কোনো লজ্জা নেই !
তবে, মজা লাগে, মূল্যবান লেখা যারা লেখেন, যারা নিজেরাই মূল্যবান, সেলিব্রিটিও, তারা যখন এই মূল্যহীনদের পাতায় নিজের লেখা দিয়ে পড়ার অনুরোধ করেন, বা কোনো মূল্যবান কাগজে প্রকাশিত মূল্যবান লেখাটিকেই পুনরায় পোস্ট করেন, সেটা দেখে, করুণা হয় । 
লেখার মূল্য কি বাজারের কড়ি দামে নির্ধারিত হয়, নাকি হাততালিতে ? কেদার ভাদুড়ী হাততালির তোয়াক্কা করেননি, বাজারের তোয়াক্কা করেননি, বাঘাযতীনে একটা ছোট্ট ঘরে থেকে কী অসাধারণ কবিতা লিখে গেছেন, যা আবিষ্কার করতে বাঙালি পাঠকের আরও একশ বছর লেগে যাবে ।
ফেসবুকে দুচার লাইন লিখি, বা এই যে লিখলাম, তা হয়তো দশজনেও পড়বে না, কিন্তু স্বাধীনভাবে লিখলাম, এটাই আমার বাঁচা !
একটা জবরদস্ত প্রেম চাই, দুনিয়া কাঁপানো...
সে কি মৃত্যু ব্যতীত আর কেউ পারে ? নাকি মৃত্যুও নীরবে পা ফেলে আসবে ?
এমন নীরব প্রেম আমি চাই না !
তার চেয়ে, এইই ভালো, নিজের কবর নিজে খুঁড়ে যাওয়া...
নন্দনচত্বরে, একা, বসে বসে, হাওয়া খাচ্ছি, হঠাৎ, 'এই যে সমরজিৎ' বলে, যে এগিয়ে এসে, হাত বাড়ালো, সে আর কেউ নয়, জয় গোস্বামী ।
আমার মনে পড়ে গেলো, রাণাঘাট সিদ্ধেশ্বরী তলা, এক ছিপছিপে তরুণের সঙ্গে আড্ডা মারছি । সে জয়, তখনও তার খ্রীস্টমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়নি, তখনও কৃষ্ণনগর রাণাঘাট ছাড়া আর কেউ তেমন চেনে না তাকে ।
আমি গিয়েছিলাম কৃত্তিবাসে তার একগুচ্ছ কবিতা ছাপা হচ্ছে, তা জানাতে, আমার স্বভাবসিদ্ধ মনিপুরী আবেগে । যদিও এই একগুচ্ছ কবিতা যা জয় পাঠিয়েছিল কৃত্তিবাসে এবং যথারীতি শক্তিদার হাতে তা অমনোনীত হয়ে বাতিলের ঝুরিতে স্থান পেয়েছে । অথচ এই কবিতাগুচ্ছ আমার খুব ভালো লেগেছিলো ।
কৃত্তিবাস তখন ১১ অক্রুর দত্ত লেন থেকে বেরুচ্ছে, আমি সেখানে ৭৫ টাকা মাইনের এক কর্মচারিমাত্র ।
কবিতাগুলি বাতিলের স্থান থেকে তুলে এনে, চুপচাপ, রেখে দিই মনোনীত কবিতার ভিড়ে, আর ছুটে যাই রাণাঘাট, জয়কে জানাতে ।
পরবর্তী এক সংখ্যায়, সুনীলদা ও শক্তিদা নেই, পাটনা গেছেন বেড়াতে, এই সুযোগে, কবিতাগুলি ছেপে দিই ।
ফিরে এসে, সুনীলদা বললেন, ছেলেটাকে তুমি চেনো ? ভালো লিখেছে । ওকে আরও লেখা দিতে বলো ।
জয় সম্পর্কে এটুকু বলার একটিই কারণ, জয়-এর সেইসব লেখা আর পাইনি উন্মাদের পাঠক্রম-এর পর ।
আমি চাই, জয় আমাদের আবার মাতিয়ে তুলুক ।