তাকে
বলি, সুখে আছি, সুখে আছি আমি । যেভাবে উপমহাদেশের সাড়ে তিরাশি শতাংশ লোক
অপমানে, মাথা গুঁজে বেঁচে থাকে সুখে, আমিও সেভাবে বেঁচে আছি, সুখে ।
Monday, May 26, 2014
নানা
জনের নানা কথার উত্তরে, আমার সম্পর্কে দুইখান কথা : (এক) আমি দুঃখবাদী নই,
হতাশাবাদীও নই । ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়েও স্বপ্ন দেখি আর এক পৃথিবীর ।
(দুই) ভালোবাসাই আমার ঈশ্বর, আমার আর কোনো দেবতা বা ধর্ম নেই । ফলে, মন্দির
মসজিদ বা গীর্জাকে মনে হয় ক্ষমতাভবন, পার্লামেন্ট বা রাজসিংহাসনের মত ।
লোকাল কমিটি বা স্থানীয় মন্দির মসজিদের পুরোহিত পয়গম্বরদের মধ্যে কোনো
পার্থক্য দেখি না ।
শরীরের ভেতর আরেক
শরীরের জন্ম হয়, অনুভব করো আজ তাকে ।
মনের ভেতর মন, যেন
জলের ভেতরে জল ক্রমে ওঠে ফুলে ।
গোপন দরোজা খুলে, রাত কাঁদে, একা ।
এসব পুরাণকথা জন্ম নেয় শরীরের রিক্ত কোষে কোষে ।
সকল দর্শন শেষে, সমাধিভূমিতে,
পড়ে থাকে ধুলি সহ শরীরের ভেতর শরীর
ঘাস সহ শূন্য এক মন । তার নাভি, কিছু হাড়...
রাত্রি কি তা জানে ? বিকেলের মৃত আলো ?
শরীরের জন্ম হয়, অনুভব করো আজ তাকে ।
মনের ভেতর মন, যেন
জলের ভেতরে জল ক্রমে ওঠে ফুলে ।
গোপন দরোজা খুলে, রাত কাঁদে, একা ।
এসব পুরাণকথা জন্ম নেয় শরীরের রিক্ত কোষে কোষে ।
সকল দর্শন শেষে, সমাধিভূমিতে,
পড়ে থাকে ধুলি সহ শরীরের ভেতর শরীর
ঘাস সহ শূন্য এক মন । তার নাভি, কিছু হাড়...
রাত্রি কি তা জানে ? বিকেলের মৃত আলো ?
রুডিয়া, তোমার ঊরুর বিস্তারেে কেঁপে ওঠে আজ
মৃত এই তৃতীয় বিশ্বের সকল শিক্ষাসসদন ।
রাত বাড়ে, একা, একা । ড্রাম
বাজছে তৃষ্ণার্ত পানশালা জুড়ে ।
ফ্লুরোসেন্ট আলো
ঠিকরে পড়ছে যোনিপীঠে ।
সেখানে উল্লাস রূপ নেয় সঙ্গীীতের ।
এই সব কথা লিখে রাখে তরুণ কবিটি,
গোপন ডায়েরি জুড়ে । আঁকিবুকি সহ ।
সে তোমাকে ভালোবেসে, ফাঁস পড়েছিলো
শ্বাসহীন রাতে ।
তুমি তাকে চেনো না কখনও । তুমি জানো,
তোমার জঙ্ঘার ভাঁজে চাপা পড়ে আছে
রুদ্ধ টাঁকশাল সহ তাদের মালিক ।
মৃত এই তৃতীয় বিশ্বের সকল শিক্ষাসসদন ।
রাত বাড়ে, একা, একা । ড্রাম
বাজছে তৃষ্ণার্ত পানশালা জুড়ে ।
ফ্লুরোসেন্ট আলো
ঠিকরে পড়ছে যোনিপীঠে ।
সেখানে উল্লাস রূপ নেয় সঙ্গীীতের ।
এই সব কথা লিখে রাখে তরুণ কবিটি,
গোপন ডায়েরি জুড়ে । আঁকিবুকি সহ ।
সে তোমাকে ভালোবেসে, ফাঁস পড়েছিলো
শ্বাসহীন রাতে ।
তুমি তাকে চেনো না কখনও । তুমি জানো,
তোমার জঙ্ঘার ভাঁজে চাপা পড়ে আছে
রুদ্ধ টাঁকশাল সহ তাদের মালিক ।
বিপুলা এ পৃথিবীর আমি কেউ নই ।
ঘাসের ঘ্রাণের রঙে ফুটে ওঠি রোজ,
মরে যাই কলের ধোোঁয়ায় ।
যে ছেলেটি কলার উঁচিয়ে চলে গেলো, তাকে দেখি ।
যে মেয়েটি ফিরে এলো নখ থেকে, দাঁত থেকে, ক্ষণ
বিষ থেকে, রাতের কল্লোল
থেকে ফিরে আসে মেয়ে, তাকে দেখি ।
দুপুর বাগান থেকে উড়ে যায় মথ, দেখি তাও ।
ফুটেছে পাহাড় আজ রাবারের বিষে । তাও দেখি ।
চাঁদার রসিদ হাতে যারা আসে রোজ,
তাদের হাসির ছুরি বিদ্ধ করে আগামী দিনের হৃৎপিণ্ড ।
মরে যেতে যেতে তবু পরীদের নাচ হয় মৃতভূমি জূড়ে ।
ঘাসের ঘ্রাণের রঙে ফুটে ওঠি রোজ,
মরে যাই কলের ধোোঁয়ায় ।
যে ছেলেটি কলার উঁচিয়ে চলে গেলো, তাকে দেখি ।
যে মেয়েটি ফিরে এলো নখ থেকে, দাঁত থেকে, ক্ষণ
বিষ থেকে, রাতের কল্লোল
থেকে ফিরে আসে মেয়ে, তাকে দেখি ।
দুপুর বাগান থেকে উড়ে যায় মথ, দেখি তাও ।
ফুটেছে পাহাড় আজ রাবারের বিষে । তাও দেখি ।
চাঁদার রসিদ হাতে যারা আসে রোজ,
তাদের হাসির ছুরি বিদ্ধ করে আগামী দিনের হৃৎপিণ্ড ।
মরে যেতে যেতে তবু পরীদের নাচ হয় মৃতভূমি জূড়ে ।
Tuesday, May 20, 2014
আমরা
যারা রাজনীতির এরেনার বাইরের লোক, তাদের অনেকেই জানতাম, বিজেপিই আসছে
ক্ষমতায় । এবং এলো প্রবল দাপটে যা অনেকের ভ্রু কুঁচকে দেবার মত । কংগ্রেস
ডুবেছে তার পাপেই । পরিবারতন্ত্র আর দুর্নীতি কংগ্রেসের ভরাডুবির প্রধান
কারণ, বললে, খুব একটা ভুল বলা হবে না । এরসঙ্গে করপোরেট থাবা তো রয়েছেই ।
মুক্ত বাজারের পক্ষে যতটা কংগ্রেস হেঁটেছে, বিজেপি হাঁটবে আরও বেশি । এটাই
বিশ্বব্যাংক থেকে দেশীয় করপোরেটদের ধারণা । মাঝখানে
বামপন্থী দলগুলি জীর্ণ পাতার মত ঝরে গেলো তাদের সুবিধাবাদী চরিত্রের কারণে
। আঞ্চলিক দলগুলির মধ্য তৃণমূল, এডিএমকে ছাড়া আর কেউ তেমনভাবে মাথা উঁচু
করে দাঁড়াতে পারলো না । তৃতীয় শক্তি হিসেবে তৃণমূল উঠে এলেও তাদের পথে অনেক
কাঁটা । অনুব্রত মণ্ডলের মত লোক থাকতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শত্রুর আর
প্রয়োজন কি ? এবার সময় এসেছে তৃণমূলকে এসব আগাছা কেটে স্বচ্ছ এক দল হিসেবে
তৈরি করার । না হলে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন মমতাকে কঠিন পরীক্ষার সামনে
পড়তে হবে । তিনবছরের মমতাশাসন পাসমার্ক পেলেও ভালো নম্বর পাবার মত জায়গায়
নেই । বিজেপি সেই সুযোগ নেবেই ।
মোদী
উবাচ : মাম্ একম্ শরণং ব্রজঃ ! ভারতবর্ষের অধিকাংশ লোক মোদীর এই কথা
বেদবাক্য মনে করেছেন । লোকতন্ত্রে বিপ্লবের স্থান নেই, জেনেও, বিপ্লবের
স্বপ্ন বিকিয়ে যাচ্ছে গোপালনভবন । এবার কেউ এই স্বপ্ন কিনতে আসেননি এগিয়ে ।
স্বপ্ন বিক্রি হয়নি । মাতা ও পুত্রের প্রতি আস্থা নেই আর । ফলে, জনগণ
ভেবেছেন, গীতার বচনই শ্রেয় । এই পাঁচ বছর, মোদীর সামনে কণ্টকময় পথ । অতি
সহজ না বিষয়টা । আবেগ আর বাস্তব এক না । এটা এখন টের
পাচ্ছেন বঙ্গেশ্বরী স্বয়ং । জয়ললিতা আর নবীন পটনায়ক এবং মমতার কাছেই
মোদীরথ থমকে গেছে । এই ত্রিফলার ভার কিন্তু কম নয় । ফলে, সতর্ক ভাবে পা
ফেলতে হবে মোদিকে । একই কথা ঐ ত্রয়ীর পতিও । রাজা আসে রাজা যায়, প্রজাগণ
থাকে সেই তিমিরেই । ভারতবর্ষ দেখেছে অনেক প্রতাপান্বিত শাসক, এখন ধুলোয়
মিশে গেছে তারা । মোদী কি তা জানেন ?
মোদী-উল্লাসে
যারা মেতেছেন, তাদের বলি, ফিরে তাকান হিটলারের উত্থানের দিনগুলির দিকে ।
কোনো পার্থক্য নেই। মোদী উচ্চাকাঙ্খী, ক্ষমতালোোভী এক ব্যক্তিমাত্র, যেমন
হয়ে থাকেন অন্য যে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা ।
ভারতবর্ষের গভীরতম সংকটমোচনেের যাদুদণ্ড নেই মোদীর হাতে । ফলে তাকে নির্ভর করতে হবে আবেগের উপর, যে আবেগ ইহুদীনিিধনে প্ররোচিত করেছিলো হিটলারকে, গোধরা হত্যাকাণ্ডে প্ররোচিত করেছিল একদা মোদীকে, যদিও মাননীয় আদালত নিষ্কৃতি দিয়েছে তাকে । আবারও যে তা হবে না, তার কোনো সম্ভাবনা নেই ।
ভারতবর্ষের গভীরতম সংকটমোচনেের যাদুদণ্ড নেই মোদীর হাতে । ফলে তাকে নির্ভর করতে হবে আবেগের উপর, যে আবেগ ইহুদীনিিধনে প্ররোচিত করেছিলো হিটলারকে, গোধরা হত্যাকাণ্ডে প্ররোচিত করেছিল একদা মোদীকে, যদিও মাননীয় আদালত নিষ্কৃতি দিয়েছে তাকে । আবারও যে তা হবে না, তার কোনো সম্ভাবনা নেই ।
দু'হাতে
করোটি ধরি, ঠেসে দিই গুহার আগুনে । বেজেছে এস্রাজ নখের আঘাতে, কাঁধে তপ্ত
শ্বাস, নেচে ওঠে জোড়াফল । ঊরুদ্বয় আলো করে নেমেছে তমসা, সমুদ্রতরঙ্গ ঘিরে
ধরে অশান্ত সী-বীচ । একে কি প্রলয় বলে ? গণজাগরণ শেষে মৃত্যুর প্রণয়থাবা ?
গুহার আগুন থেকে জলের উচ্ছ্বাস, উপমাবিহীন, ঘোর লাগা করোটিকে গিলে খায়
নিষিদ্ধ বাতাসে । পনেরো মিনিট, তারপর, কর্পোরেট জানে, মধ্যাহ্ন বিরতি ।
একজন
লেখকের কাজ লেখা । লেখাই তার ধর্ম । তার ঈশ্বর । সেই ঈশ্বরের ভিত্তিভূমি
মানুষ । মানুষ না থাকলে ঈশ্বরের অস্তিত্বও থাকে না তখন । ফলে, মানুষের
সংকটে বিচলিত হয়ে পড়ে লেখকও । চুপ করে বসে থাকা তখন আর সাজে না তার । সে
লেখে, লিখতে বাধ্য হয় । না, এই লেখা কোনো দলীয় অনুশাসন থেকে নয় । দলের
পক্ষে চলে গেলে তার দৃষ্টি যে সংকীর্ণ হয়ে উঠতে পারে, যা কাম্য নয় । লেখক
বা কবি বা শিল্পী দলের উর্ধে, তার স্থান পাঠকের মনোভূমিতে । এই কারণে, দেশ
বা মানুষের সংকটকালে লিখতে হয় তাকে ।
বর্বরতার
ইতিহাস আমরা জানি । বিজয়ীরা বিজিতদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করতো, লুটপাট করতো,
নারীধর্ষণ থেকে যত কুকাজ আছে, সবই করতো তারা । সে যুগ পেরিয়ে এসেছি আমরা ।
তবু কি পেরিয়ে আসতে পেরেছি ? নির্বাচনের রেজাল্ট বেরুবার পর, বিজিতদলের
সমর্থকদের উপর হামলা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা অব্যাহত । এইসব ঘটনা পশ্চিমবঙ্গ বা
ত্রিপুরায় বেশি । বিজয়ীদল ভাবে না, বিজিতদলের সমর্থকদেরও অধিকার আছে তাদের
পছন্দের দলকে সমর্থন করার । এখানেই গণতন্ত্রের
ব্যর্থতা । প্রবলের আক্রমণের সামনে দুর্বল সাময়িকভাবে চুপ করে থাকতে পারে,
কিন্তু তার দীর্ঘশ্বাস ছারখার করে তুলতে পারে তার সোনার সাম্রাজ্য । দমদম
বা রহড়ার দিকে আজ যা ঘটেছে, তাতে তৃণমূলের উল্লসিত হবার কারণ নেই, কেন না,
এই নিপীড়িতরাই বিজেপির দিকে ঢলে পড়লে, আগামী বিধানসভার নির্বাচনচিত্র আর এক
রকম হয়ে উঠতে পারে । অত্যাচারীর শাসনকাল সত্তর বছরের বেশি নয়, ইতিহাস জানে
। তৃণমূলীরা তা জানলে তাদের পক্ষেই হিতকর ।
স্পাইনাল
কর্ড এর একটা ডিসক আমার আধভাঙা । এপেলো হাসপাতাল চেন্নাই থেকে বলা হয়েছিল,
ডোন্ট মুভ । আগরতলার ডঃ অরুণাভ দাশগুপ্ত বলেছিলেন, ডোন্ট মুভ । সরকারি
চাকর আমি, পেটের দায়ে ঐ অনুশাসন মেনে চলা আমার পক্ষে অসম্ভব । এমনিতেই
সরকারের রোষনজরে আছি । ফলে, অনুশাসন ভুলে থাকি আমি । প্রতিদিন গড়ে ১০০ কিমি
ছুটতে হয় আমাকে । এর ফল এখন পাচ্ছি । দু রাত ধরে ঘুমোতে পারি না প্রচণ্ড
ব্যথায় । অসহনীয় এই ব্যথা নিয়ে বাকি দিনগুলি অতিবাহিত করার কথা ভাবি ।
স্পাইনাল কর্ড এর ঐ ডিসক পুরো ভেঙে যাওয়ার দিন পর্যন্ত আমার এই অভিযাত্রা ।
সকালে,
ঘুম থেকে উঠে, প্রথম ম্যাসেজ পাই এক অজানা নম্বর থেকে । "গোগ্রাসে আপনার
রাত্রিমথ শেষ করলাম রাত সাড়ে তিনটায় । দুর্দান্ত ! মার্কোজের পর এম
যাদুবাস্তবতা নিয়ে লেখা আর কোথায় ?" অজানা নম্বর দেখে, ফোন করি আমি । ওপারে
বাসব রায় । গৌহাটির ব্যতিক্রম কাগজটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তিনি ।
বললেন, এই লেখা কেন যে আদৃত হলো না ! তাকে বলি, আমার লেখা কেউ পড়ে না ।
পাঠযোগ্য নয় হয় তো ।
লেখাটির
পাশে শুয়ে থাকি । লেখাটিও থাকে শুয়ে । মানুষের নজর এড়িয়ে । গরম পড়েছে বেশ ।
রাবারের দেশ ব্যস্ত থাকে মিছিলে ও চিত্কারে । কুঁজোটি একটু দূরে । পানীয়
কি আছে তাতে ? সকল তৃষ্ণার শেষে পড়ে থাকে দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস । আধপোড়া
সিগারেট যেভাবে মাটিতে পড়ে থাকে, লেখাটিও পড়ে আছে, একা ও অবহেলিত । আমি তার
একমাত্র সঙ্গী, নিরক্ষর, আহত পাঠক ।
@একটি
অসফল লেখা@ ক্রমশ আবছা হয়ে যাচ্ছে দৃষ্টি । না, চোখের জলে নয় । সে কবে
শুকিয়ে গেছে । দু'চোখে এখন খরা । রেটিনার থেকে সরে যাচ্ছে আলো । একটা গোলক
বা ঐ বিন্দু এঁটে থাকে চশমার কাচে । মনে হয়, সবটাই আকাশ, যা শুয়ে আছে দূরে ।
আবহসঙ্গীতে মিশে আছে সামান্য বিষাদ, না হলে ওঠে না জমে প্রত্যাখ্যানকথা ।
লোকে জানে সব, জানে না বিদায়ীজন, রেটিনার আলো নিভে গেলে শুরু হয় উন্মাদকথন ।
আমি তবে সে উন্মাদ, ন'তলার কার্ণিশে পা রেখে দাঁড়িয়েছি অন্ধচোখে । ঝাঁপ
দিতে গিয়ে থেমে আছি দূর বিষাদসঙ্গীতে ।
না, মানে, একটি শব্দ, যার চারদিকে কাঁটাতার । আর, ঐ হ্যাঁ, না-কে ডেকে
যাচ্ছে ক্রমাগত, সেই ভোর থেকে । ততক্ষণে ভেঙে গেছে বার্লিনপ্রাচীর,
রোমসাম্রাজ্যের পলেস্তারা খসে গেছে তার অনেক আগেই, গ্লাসনস্ত এসে খুলে দিয়ে
গেছে সোনার পিঞ্জিরা. চীনের প্রাচীর টপকে ঢুকেছে পূঁজি, কনজিউমারিজম তার
থাবা মেলেছে রান্নাঘর থেকে বিছানা পর্যন্ত । না-র জিদ ক্রমে তার সপ্তজিহ্বা
মেলে অশ্বত্থগাছের মত শিকড় ছড়িয়ে বসে আছে অনন্ত দীঘীর কাছে ।
পারিপার্শ্বিকতা তবু জেগে থাকে ঘুমের ভেতর । হ্যাঁ তখনো ডেকে যাচ্ছে অনাথ
ঘুঘুর মত ।
Wednesday, May 14, 2014
আমার
জন্মলগ্ন কি ছিলো, কে জানে, কর্মক্ষেত্রে কারও মন পেলাম না আজও । আপ্রাণ
চেষ্টা করি, কোনো খুঁত যাতে না থাকে কোথাও । তারপরও দেখা যায় লোহার বাসরের
ছিদ্রের মত রয়ে গেছে মারাত্মক এক খুঁত । কেন তা হবে ? সহকর্মীদের কেউ কেউ
আমাকে ভালোবাসেন বটে, আবার এও জানি, উলটোটাও আছে । তাহলে কি সর্ষের মধ্যে
ভূত থেকে যাচ্ছে ? এই ভূততন্ত্রে সকলই সম্ভব । দিন হয়ে যায় রাত তাদের
কল্যাণে । তাহলে কি আবার বদলির খড়্গ আসছে নেমে ? কে জানে ? মনে শুধু কু
ডাকছে আজকাল । চাকুরির আয়ু আর মাত্র পাঁচমাস, এর মধ্যে আবার বদলি ?
হৃদয়
কোথায় থাকে ? হৃত্পিণ্ডে, না কি মনে ? মন বললেই মনে পড়ে যায়, মনের হদিশ
ক'জনে পায় ? মন থাকে কোথায় ? তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেছি, আমার হৃদয় নেই,
মন নেই । তাদের আবাসস্থল জানি না আমি । তারপরও, আমার ভেতরে কে যেন কাঁদে,
একা একা । কাঁদে, অনেক অত্যাচার ও নিপীড়ণের সামনে অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে থাকি
বলে । বিদুরের মত ঘৃণায় বিকৃত করে ফেলি রাজঅত্যাচারের বিরুদ্ধে । গণতন্ত্রে
রাজার স্থান নেই । কিন্তু যাদের স্থান আছে,
সেই সব মন্ত্রীনেতাদের চেয়ে রাজাই ছিলো ভালো । এরা আরও ভয়ংকর । এদের
স্তাবকবাহিনীর দৌরাত্ম্য অসহনীয় । এদের সংগঠিত বাহিনী কোনো অংশেই হিটলারের
নাত্সীবাহিনীর চাইতে উপেক্ষার নয় । প্র্যাকটিক্যালি আরও ভয়ংকর । কোনোভাবেই
এদের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে পারি না । অসহায় মনে হয় নিজেকে । হৃদয় থাকলে
তো প্রতিবাদ করতে পারতাম । অবিচার সইতে সইতে পাথর হয়ে গেছি আমি । ক্রীতদাস
যেভাবে থাকে বোধহীন, আমাকেও থাকতে হয় সেভাবেই । আমি তো এক অর্থে ক্রীতদাসই
।
একদা
যে বাজাতো মুরলী, গোপীসম্মোহনে, আজ সে বাজারে বিক্রি করে মুড়ি । সেই
হাসিটুকু রয়ে গেছে, আড়াল করতে পারেনি সে । গোপীগণ এখন বাজারে আসে, মুড়ি
কেনে, ষোলো আনা দাম দেয় । রাধা নামের গোপিনী ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ায়, শহরে
থাকে, তার স্বামী আয়ান কেরাণী, টুপাইস কামাই বিস্তর করে, মিছিল মিটিং করে ।
দ্বাপরকালের কবচকুণ্ডল নেই, তবু ভাবে, একদিন দেখা হবে, রাধা নয়, চন্দ্রপুর
কন্যা, বিষুবকন্যার সঙ্গে । উদাসিনী সেও ।
পিলাক
থেকে ফিরে এলাম এইমাত্র । এই সেই স্থান, যা পেটিকারা বলে চিহ্নিত ছিলো, যে
পেটিকারাকে কেন্দ্র করে আমাদের বংশগৌরব । এই পেটিকারার কোনো এক রাজার
বংশধর না কি আমি ! ধনপতি রাজকুমার, যিনি পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে
কাছাড়-মনিপুর হয়ে বর্মা যেতে চেয়েছিলেন । পারেননি । তিনি মনিপুরের খুমল
রাজকন্যার প্রেমে পড়ে থেকে যান মনিপুরেই । তার ছোটোভাই অভিকুমার পেরেছিলেন
পিতৃহন্তাকে বধ করতে । পিতৃহন্তা আর কেউ নন, বর্মার রাজা
স্বয়ং । বর্মার রাজমহিষীর সঙ্গে গোপন প্রণয় ছিলো ধনপতি আর অভির পিতার । এই
প্রণয় ধরা পড়ে গেলে, ক্ষিপ্ত বর্মাধিপতি হত্যা করেন ধনপতি ও অভির পিতা,
মানে, পেটিকারার রাজাকে । অষ্টাদশ বর্ষীয় অভি পিতৃহন্তাকে বধ করেন আর
প্রেমে পড়ে যান বর্মারাজমহিষীর । এবং বিয়ে করেন তাকে । দেশে ফিরে যখন জানতে
পারেন তার স্ত্রী আর কেউ নয়, তারই পিতার প্রণয়িনী, অভি তাকে হত্যা করে
নিজে আত্মঘাতী হন । আমি ধনপতির বংশধর । এই প্রণয়-অভিশাপবীজ বয়ে বেড়াচ্ছি
এখনও । রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী জয়ন্তী পুরকায়স্থকে আমার পিতৃভূমি দেখালাম আজ ।
কেবল এই গল্পটা নিয়ে আমার একটি উপন্যাস আছে, তা বলিনি তাকে ।
রবিবাবুর
সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার, সেই যেবার আমি প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে, রেললাইনে
মাথা দিতে গিয়েছিলাম । রেলগাড়ির অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
রেললাইনের ধারে । কখন রেল এসে চলে গেছে, টের পাইনি । টের পেলাম, যখন আমার
চুলে কে এক জোব্বা পড়া, দাড়িঅলা লোক এসে বিলি কাটতে থাকলো । ধড়ফড় করে উঠলাম
আমি । চোখ কচলে দেখি অবাক হয়ে । আশ্চর্য এক হাসি তার চোখেমুখে । বললেন,
চিনতে পারলে না ? আমি রবিবাবু । গীতাঞ্জলি পড়োনি
তুমি ? মূঢ়ের মতো তাকিয়ে আছি তার দিকে । জানো, আমার একটা দুঃখ আছে । কাউকে
বলতে পারিনি তা । নোবেল পেলাম, ইয়েটস সাহেবও অনুবাদ করে দিয়েছিলেন বটে ।
ভেবেছিলাম, এটা কবিতার বই । এখনকার ছেলেমেয়েদের কবিতা পড়ে, মনে হলো,
গীতাঞ্জলির লেখাগুলি কবিতা নয় । আসলে এগুলি গান । একথাগুলি কাউকে বলতে
পারিনি । তোমার কি মনে হয়, ওগুলি কবিতা ? রোদ এসে লাগছিলো চোখেমুখে । চলে
গেলেন তিনি । অথচ তার এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে পারিনি আজও ।
কবিতা আমাকে লেখে প্রতি রাতে, শাদা খড়ি দিয়ে ।
যে আগুন জ্বলেছে প্রতিটি
শব্দে, তার জিহ্বা আমাকে লেহন করে
কামার্ত নারীর মত । পুড়ে যায় আমার নিজস্ব ডানা,
তার গন্ধে জেগে ওঠে ঘর ।
সে ঘর চৌষট্টি যোগিনীর,
যোগী থাকে উত্থিত পুরুষে । আমি থাকি, একা, পড়ে
অনাদৃত সবুজে ও নীলে ।
আমি তো লিখি না, লেখে অন্য কেউ চিনি না তাকেও ।
যে আগুন জ্বলেছে প্রতিটি
শব্দে, তার জিহ্বা আমাকে লেহন করে
কামার্ত নারীর মত । পুড়ে যায় আমার নিজস্ব ডানা,
তার গন্ধে জেগে ওঠে ঘর ।
সে ঘর চৌষট্টি যোগিনীর,
যোগী থাকে উত্থিত পুরুষে । আমি থাকি, একা, পড়ে
অনাদৃত সবুজে ও নীলে ।
আমি তো লিখি না, লেখে অন্য কেউ চিনি না তাকেও ।
অন্ধ ভিখিরির গান আসে ভেসে, শুনেছো কখনও ?
তার নুলো দুটি হাতে অশান্ত খঞ্জনি কেঁদে ওঠে মাঝরাতে ।
শ্রোতাটিও বধির, তন্ময় ।
বসে আছে তার দিকে চেয়ে ।
সে দেখে অশ্রুর রূপ, বিহ্বল নদীর মত নেমে যাচ্ছে গাল বেয়ে ।
এ পৃথিবী শোনে না এসব,
ব্যস্ত থাকে ভোটে, ধর্ষকামে,
কিছুটা কাঁদায় ডুবে থাকা মহিষের মত নির্বিকার ।
সঙ্গীত একাকী মানুষের,
নির্জন শ্রবণ বিনা তাকে স্পর্শ ক'জনে করতে
পারে অন্ধ ভিখিরি, বধির ছাড়া ?
তুমি জানো, আমি সে বধির শ্রোতা,
ভিখিরির পায়ে পায়ে এসেছি তোমার দরজা পর্যন্ত ।
তার নুলো দুটি হাতে অশান্ত খঞ্জনি কেঁদে ওঠে মাঝরাতে ।
শ্রোতাটিও বধির, তন্ময় ।
বসে আছে তার দিকে চেয়ে ।
সে দেখে অশ্রুর রূপ, বিহ্বল নদীর মত নেমে যাচ্ছে গাল বেয়ে ।
এ পৃথিবী শোনে না এসব,
ব্যস্ত থাকে ভোটে, ধর্ষকামে,
কিছুটা কাঁদায় ডুবে থাকা মহিষের মত নির্বিকার ।
সঙ্গীত একাকী মানুষের,
নির্জন শ্রবণ বিনা তাকে স্পর্শ ক'জনে করতে
পারে অন্ধ ভিখিরি, বধির ছাড়া ?
তুমি জানো, আমি সে বধির শ্রোতা,
ভিখিরির পায়ে পায়ে এসেছি তোমার দরজা পর্যন্ত ।
Monday, May 5, 2014
হর্ষবর্ধন
কলকাতা গিয়ে গোটা ডবলডেকার ভাড়া করে ফেলেছিলেন । আমি হর্ষবর্ধন নই, কাঠের
ব্যবসাও নেই আমার । ফলে, ডবলডেকার থাক, একটা ট্যাক্সি ভাড়া করার কথা ভাবতে
পারি না । অথচ, এই গরমে, পাতাল রেল আর ট্যাক্সিই ভরসা হবে আমার । এবারও
সল্ট লেকে, পুরুলিয়া ভবনে থাকবো । প্রীতি আচার্যর কবিবন্ধু অনাময় কালিন্দীর
সৌজন্যে এখানে থাকতে পারবো । কলকাতার বন্ধুরা ঐ ভবনে এলে, সান্ধ্য আসর
ঝক্কাস হবে । অবশ্যই আগে ফোন করে এলে ভালো । কেন না, আমি এবার কলকাতা
যাচ্ছি মূলত কলা কিনতে । এই ফাঁকে যদি রথ দেখা যায়, তাহলে মন্দ নয় ।
যারা
আমাকে ঘৃণা করে, তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি অন্তর থেকে । তাদের গালিগালাজ
যাতে ঠিকমতো শুনতে পাই, এজন্য, তাদের সাদর আমন্ত্রণ, তারা আসুন । আমার দরজা
সর্বদা তাদের জন্য খোলা । আমি মোহন দাস নয়, যে, এক গালে থাপ্পড় খেয়ে অপর
গাল পেতে দেবো । আমি শুধু বলবো, আয়না বা ক্যামেরা রাখবেন না । নিজের
কুৎসিত রূপ না দেখাই ভালো। তারা আসুন, এসে, গালি দিন । ঘৃণা প্রকাশ করুন ।
তাদের ঘৃণা ও গালি ভালো করে শুনতে আগ্রহী আমি । গালিও তো পুরস্কার । এই
সুযোগে তাদের প্রকৃত চেহারাটও দেখে নেওয়া যাবে ।
একজন
লেখক বা শিল্পী কীভাবে ধারণ করেন তার ঐতিহ্য ও পরম্পরা ? এই নিরীহ প্রশ্নে
এতদিন উত্তরহীন ছিলাম । অনেকেই বলেন, বলে থাকেন, অবস্থানগত ও ভৌগোলিক ছায়া
থাকা দরকার একজন লেখকের লেখায় বা একজন শিল্পীর সৃষ্টিতে । ত্রিপুরায় বসে
যিনি লিখছেন, তার লেখায় ত্রিপুরার মাটির গন্ধ থাকা বিধেয়, তা বলে,
অনুষঙ্গহীনভাবে তা কি সম্ভব ? বাঁশ, করুল, চাখুই এজাতীয় শব্দ আলটপকা বসালেই
কি তাতে ত্রিপুরার গন্ধ থাকবে ? না কি তা লেখা
হবে ? প্রবুদ্ধসুন্দর, একবার, লিখেছিলেন, গঙ্গার বদলে গোমতী বা ধলাই বসিয়ে
দিলেই তাতে ত্রিপুরায়ন করা হলো ? আজ, রাহুল দেববর্মনের 'নদীর পাড়ে ধোঁয়া'
গানটি শুনতে শুনতে, মনে হলো, কাফী রাগে শুরু করেও অন্তরায় এসে তিনি প্রয়োগ
করেছেন ত্রিপুরার আদিবাসীদের যাদুকলিজার সুর । ত্রিপুরার মাটির সুর এভাবে
কোনো গানে এত সুন্দর ভাবে প্রয়োগ হতে দেখিনি । আরডি বা এসডির গানে যে
হঠাত্ ধাক্কাটি আছে, তা এই ত্রিপুরারই । জোর করে নয়, শোনিতপ্রবাহে বয়ে
বেড়াতে হয় ঐতিহ্য ও পরম্পরা ।
এখন
আর অবাক হবার বয়স নেই, বরং স্তব্ধ হয়ে লক্ষ্য করি, ইংরাজিতে একেই হয় তো
অবজারভেশন বলে, লক্ষ্য করি, যা ঘটছে বা ঘটানো হচ্ছে, তার যুক্তি বা
যৌক্তিকতা । কত হাত থাকে একটা ঘটনার পেছনে, কত ইন্ধনের ফলে, ঘটে যায় সবকিছু
। প্রথমে ধরা পড়ে না, পরে, ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে যায় সব । তখন হাসি পায়,
পর্দার আড়ালে থাকা ঐ সব মুখগুলি দেখে । অতিচালাকির যে বিষময় ফল থাকে, তা,
হয় তো, জানেন না তারা । অপরকে ক্রীড়নক বানাতে গিয়ে, নিজেরাই কখন পাপেট হয়ে
বসেছে, সেই খেয়ালই থাকে না তাদের । মনুষ্য চরিত্র দেবতাদেরও গবেষণার বিষয়,
এটা যেমন ঠিক, তেমনি মেরুদণ্ডটাই যদি না থাকে, তাহলে, তারা কিসের মানুষ ?
রাত
আসলে একটা পাখি, যে ঝড়ের সংকেত বয়ে আনে আমাদের ঘুমে । রাবার বাগান ঘেরা
আমাদের জীবনে সন্ত্রাস এক ধর্ম, যার ছায়া থেকে নিস্তার কখনও নেই, জেনে,
এলজুলামের কাছে যাই । শহরের হাওয়া আসে চৈত্র উত্সবে, ফ্রুটি ও আইসক্রীম
ঠাণ্ডা রাখে রাবার বাগান । রাত হলে পাখি আসে, ফ্রয়েডসাহেব জানেন, পাখির
স্বপ্নে যৌনকেশ যদি ওড়ে, তাতে রাবারবাগান, নিশ্চিত, শ্রীহরি হয়ে যাবে,
একদিন । আমাদের নিরাপদ ঘুম থেকে উঠে আসবে সকাল ।
দেবপ্রসাদ
মুখোপাধ্যায় এর নাম এই প্রজন্ম কতটুকু জানে, আমি জানি না । অসাধারণ সব
কবিতা লিখতো দেবপ্রসাদ । প্রচারবিমুখ ছিলো বরাবর, অথচ আড্ডাশিরোমনি ।
শিয়ালদার দিকে একটা মেসে থাকতো তখন, জরুরি অবস্থা দেশে তখন । একরাম আলি
থাকতো তার থেকে সামান্য দূরে, আর্মহাস্ট রোডের কাছে মহাত্মাগান্ধী রোডের
উপর এক মেসে । আর আমি, শ্রীগোপাল মল্লিক লেনে । দেবপ্রসাদের ওখানেই আড্ডা
জমতো বেশি । একরামের ওখানে মাঝেমাঝে আসতেন সিউড়ি
থেকে কবিরুল ইসলাম । তার মিষ্টি মিষ্টি কবিতা বের হতো কৃত্তিবাস, অমৃত আর
দেশে । আসতো লিয়াকত আলী । দেবপ্রসাদের ওখানে আসতো হেমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ।
ভারি মজার সব গল্প, বলে, নিজেই হাসতো ঠা ঠা করে । তার মেসেই একবার
দেবপ্রসাদ শোনালো, কোনো এক তরুণ কবিকে ধরে নিয়ে ভ্যাসেকটমি করেছে সরকারি
লোকেরা । তাদের সেদিন নির্দিষ্ট কোটা পূরণ হয়নি, ফলে, ঐ কবিকে পেয়ে,
তত্ক্ষণাত্ হাসপাতালে নিয়ে...। জরুরি অবস্থার সেদিনগুলির কথা নিয়ে
দেবপ্রসাদ যদি একটা বই লিখতো, আমরা উপকৃত হতাম । স্টেটম্যান পত্রিকায় চাকরি
করতো দেবপ্রসাদ, তার কাছে রসদের ভাণ্ডার ।
জীবনবাবু,
আপনার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে । না, বার্গম্যান এর নায়কের মত বলবো না,
চলুন, এক রাউণ্ড দাবা খেলি । ঘোড়ার চাল আমি বুঝি না, তার ঐ আডাই ঘরের
প্যাঁচ থেকে পরিত্রাণ নেই, জেনে. হেরে বসে আছি খেলা শুরু হবার আগেই । এই
নিয়তি আপনারই রচিত । আপনি, বেশি নয়, আমাকে, তের মিনিট সময় দিন, তের, হ্যাঁ,
তের মিনিট । এর বেশি দরকার নেই, যা বলার শর্টকাট বলে ফেলবো । তা ছাড়া,
বেশি কথা বলারও কিছু নেই আমার । একটা মিনতি শুধু, ঐ তের মিনিট আমরা থাকবো
এক রুদ্ধঘরে, শ্রেণীবিভাজনহীন এক পরিবেশে, যেখানে রাবার নেই, দল নেই, নীরব
সন্ত্রাস নেই, পুলিশ নেই, আগ্রাসন নেই । এমনকি যেসব কথা হবে, তা পুড়িয়ে
ফেলা হবে । এটুকুই শর্ত । আপনি রাজি হবেন, আশা করি ।
ভ্রমণসূচি
কাল নয়, অকালও নয়, এই দুইয়ের ফাঁকে, একদিন,
বেরিয়ে পড়বো, লোটা ও কম্বল সহ ।
যেদিকে দু'চোখ যায়, বলেও, আমার হাতে থাকবে ভ্রমণসূচি ।
ট্রেণে কি খরচ কম ? ট্রেণের জানালা চাই এই
ভ্রমণের পথে । রুটি, ঝোলা গুড়, পান ।
এর বেশি দরকার নেই এই ভ্রমণসূচিতে ।
ভীমবেটকার গুহা থেকে যাবো ব্যাসাশ্রমে । গণেশের প্রতি
টান নেই, তবে ঐ গন্ধর্ব,
কিন্নরসুন্দরীদের সাথে কিছুদিন
কবিতার মত সহবাস করে, ফিরে যাবো বানপ্রস্থগ্রামে ।
উটের সহিস ডেকে চলে যাবো মরুদেশে । নির্জনতা যদি
বিশেষ ভূমিকা নেয়, চলে যেতে পারি বমডিলা ।
আপাতত, এটুকুই উল্লেখ করেছি
ভ্রমণসূচিতে । এল টি সি-ভূত এসে যদি চায়
বিমানটিকিট, এই ভয়ে, বিনা পারমিশনে সীমানা
অতিক্রম করে যাবো ঊনিশ শতকে ।
অথবা বুদ্ধের কাছে গিয়ে বলবো, জাতককথার মত
আমার সূচিতে স্থান দিতে চাই সুজাতাকে ।
পায়েসসম্বল করে আমিও থাকবো ব্যস্ত জোড়াহাঁসে ।
গয়ার বদলে আসন পাতবো চৌষট্টি যোগিনী সহ বৈতরণী তীরে ।
ওপারে তোমার বাড়ি, সেখানে যাবো না ।
কাল নয়, অকালও নয়, এই দুইয়ের ফাঁকে, একদিন,
বেরিয়ে পড়বো, লোটা ও কম্বল সহ ।
যেদিকে দু'চোখ যায়, বলেও, আমার হাতে থাকবে ভ্রমণসূচি ।
ট্রেণে কি খরচ কম ? ট্রেণের জানালা চাই এই
ভ্রমণের পথে । রুটি, ঝোলা গুড়, পান ।
এর বেশি দরকার নেই এই ভ্রমণসূচিতে ।
ভীমবেটকার গুহা থেকে যাবো ব্যাসাশ্রমে । গণেশের প্রতি
টান নেই, তবে ঐ গন্ধর্ব,
কিন্নরসুন্দরীদের সাথে কিছুদিন
কবিতার মত সহবাস করে, ফিরে যাবো বানপ্রস্থগ্রামে ।
উটের সহিস ডেকে চলে যাবো মরুদেশে । নির্জনতা যদি
বিশেষ ভূমিকা নেয়, চলে যেতে পারি বমডিলা ।
আপাতত, এটুকুই উল্লেখ করেছি
ভ্রমণসূচিতে । এল টি সি-ভূত এসে যদি চায়
বিমানটিকিট, এই ভয়ে, বিনা পারমিশনে সীমানা
অতিক্রম করে যাবো ঊনিশ শতকে ।
অথবা বুদ্ধের কাছে গিয়ে বলবো, জাতককথার মত
আমার সূচিতে স্থান দিতে চাই সুজাতাকে ।
পায়েসসম্বল করে আমিও থাকবো ব্যস্ত জোড়াহাঁসে ।
গয়ার বদলে আসন পাতবো চৌষট্টি যোগিনী সহ বৈতরণী তীরে ।
ওপারে তোমার বাড়ি, সেখানে যাবো না ।
উপজাতি
এলাকার জুনিয়র বেসিক স্কুল । জুনিয়র বেসিক মানে ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ ।
প্রধান শিক্ষক সহ মোট তিনজন শিক্ষক । আছে মিড ডে মীল । বলা চলে আদর্শ
বিদ্যালয় । প্রধানশিক্ষক স্কুলে এসে, দশমিনিট থাকেন, তারপর, পাশের
উপজাতিপাড়ায় চলে যান মস্তি করতে । ইনচার্জ হিসেবে যিনি আছেন, তিনি দ্বিতীয়
শিক্ষক । স্টাফরুমে গ্লাসে বাংলামদ ঢেলে শুরু করেন প্রেয়ারের পর থেকে ।
এটাই তার ক্লাস নেওয়া । তারপর একসময় ঘুমিয়ে পড়েন ঐখানেই
। তার আগে অবশ্য তৃতীয়জনকে নির্দেশ দেন, মিড ডে মীলের রান্না হয়ে গেলে,
তাকে যেন খাবার এনে দেওয়া হয় । তৃতীয়জন কিছুদিন আগে ফিক্সড স্কেলে পেয়েছেন
চাকুরি । ক্লাস ওয়ানে পড়া দিয়ে ছুটে যান টুতে । তারপর থ্রি ফোর ফাইভ । মিড
ডে মীল তাদের দুপুরে লাঞ্চ । গুরুজন যে পথে ধাবিত হন, সে পথে ধাবিত হবার
সম্ভাবনা যে তার নেই, হলফ করে বলা মুশকিল । রাবারের দেশে শিক্ষার এই
উন্নতিতে কেন্দ্র সরকারও সন্তুষ্ট । হয়তো সেরার শিরোপাও আসবে কোনো একদিন
যেভাবে আসে অন্য শিরোপাগুলি ।
তিনটে
বিয়ার, ওকেনগ্লো ফুল, আর হ্যাঁ, সোডার কথা ভুলে যেও না । ফুর্তি করতে এসে,
নো হরিন্নাম । শালা, সোম থেকে খাটছি চামড়া খুলে দিয়ে । আন্না, আজ যা মন
চায়, তাই করবো । শুয়োরের মাংস, মনে থাকবে তো ? আজ মিছিল নেই, দাদা নেই,
পাওনাদার নেই, অপমান নেই, আজ চিয়ার্স ।
দুব্বা ঘাসের চাইতেও নত হয়ে থাকতে থাকতে, মেরুদণ্ডটাই বেঁকে গেছে । আজ তা সোজা করবো । আজ আমিই মন্ত্রী, আমিই জনগণ ।
চিয়ার্স, বন্ধুগণ ।
দুব্বা ঘাসের চাইতেও নত হয়ে থাকতে থাকতে, মেরুদণ্ডটাই বেঁকে গেছে । আজ তা সোজা করবো । আজ আমিই মন্ত্রী, আমিই জনগণ ।
চিয়ার্স, বন্ধুগণ ।
পরী
@ চিন্তাসূত্র শব্দটির চিন্তা আছে সূত্রহীনভাবে । আমার সমস্যা এখানেই ।
দুটি পৃথক শব্দ এসে মিলিত হয়েছে প্রেমিকপ্রেমিকার মত, এই মিলনের নাম দিয়েছে
সমাস, আমি সমাস না সমাজ কোনদিকে যাবো, ভাবতে ভাবতে ছুটে এসেছি তোমার কাছে
। আর তুমি তখন তন্দ্রাচ্ছন্নের মত ঢুকে যাচ্ছো অনির্বচনীয় সেই দৃশ্যে, যে
দৃশ্যে কোনো সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত নেই, অন্ধকার নেই, আবহসঙ্গীত নেই, ডানা
পোড়ার গন্ধব্যতীত আর কিছু নেই ।
বহুগামিতা
মানুষের স্বভাবে, কেউ তা চাপা দিতে পারে, কেউ পারে না । কেউ শারীরিক, কেউ
মানসিকভাবে এর শিকার, জেনে, অথবা না জেনে । ফেসবুক এই ছাইচাপা আগুনকে উসকে
দিয়েছে মাত্র । ফলে, এই আগুনের তাপে শীতার্ত পাচ্ছে উষ্ণতা, নিঃসঙ্গ যে, সে
পেয়ে যাচ্ছে তার মনোমত বন্ধু, কেউ মরছে পুড়ে, কারও দমবন্ধ করা মন জানালা
খুলে প্রাণ ভরে টেনে নিচ্ছে অক্সিজেন, কোনো কোনোজন প্রকাশ করছেন নিজের
রুদ্ধ অনুভূতি সকল । বহু বন্ধুত্বের ফলে
কারও কারও চাপা পড়ে থাকা বহুগামিতাও হয়ে উঠছে চিত্রময় । যোগাযোগ মাধ্যমও
বটে এই ফেসবুক । লাইক ও কমেন্টের আড়ালে এখানে জেগে ওঠে ফাগুনমাস । আর
ইনবক্স মানে সেই গোপন সিন্দুকটি তো আছেই । সিন্দুকের মুখ চেপে রাখতে
পারাটাই এই ফেসবুকযুগের প্রধান চ্যালেঞ্জ । হাঁটে হাঁড়ি ভেঙে গেলে, কী
সব্বোনাশ, বহুগামিতার আদিইতিহাস জেনে যাবে যে লোকে !
মুশকিল
হলো, এই যে, ভার্চুয়াল জগতের দেবদেবীরা যখন আমাদের মত সাধারণ লোকের ঘর আলো
করে, ঐ জগত থেকে, নেমে আসেন, তখন তাদের বসতে দেবার মত উপযুক্ত সোফা বা
চেয়ার নেই বাস্তবের এই রুখুসুখু ঘরে । পোড়া টায়ারের গন্ধ, মাছের আঁশটে
গন্ধ, ধুলোবালি, ময়লার ডাঁই নিয়ে এই জগতে । ফলে, এই গ্রহের বাসিন্দা
হিসেবে, সংকোচ ব্যতীত আর কিছু নেই ভার্চুয়াল মানুষদের দেবার । যারা এই
শূন্য দেয়াল ভেঙে এগিয়ে আসতে পারেন, তাদের জন্য ডম্বুরের নৌকাভ্রমণ ফ্রি ।
বাংলাদেশের বন্ধুদের প্রতি আমার বরাবর একটা শ্রদ্ধা আছে, তা তাদের
আন্তরিকতার জন্য । ওবায়েদ আকাশ, সরদার ফারুক, অনন্ত সুজন, সরকার আমিন,
জাহানারা পারভীন, সঞ্জীব পুরোহিত, মেঘ অদিতি, সাদিয়া ইসলাম মনোনীতা, ওমর
ফারুক জীবন, এহসান মামুদ, মনো মাধুরী মম, মেসবাহ কামাল, কচি রেজা, জাহিদ
সোহাগ, সুমি খান, মুনমুন আন্না । তালিকা বড় দীর্ঘ এবং আমার ফেসবুক বন্ধুদের
অধিকাংশই বাংলাদেশের । আমীর চারু বাবলু তো, গত অক্টোবরে ঢাকা ভ্রমণের সময়,
ঢাকায় এক থ্রিস্টার হোটেল বুক করে ফেলেছিলেন এবং যাবতীয় খরচ তার । অথচ আজও
তার সঙ্গে আমার সাক্ষাত্ পরিচয় নেই । এত ভালোবাসা একমাত্র বাংলাদেশের
মানুষই দিতে পারে । আমার নিয়মিত খোঁজ রাখেন অনেকেই । আমি কোথাও ভুল করে
ফেললে শুধরে দেন মনো মাধুরী মম এবং সাদিয়া ইসলাম মনোনীতা । ঐশী দত্ত বা
কাজী রোমেনাও এভাবে পথ দেখান আমাকে । বিধান সাহার সঙ্গে দেখা হয়নি কোনোদিন,
তবু অন্তরের সম্পর্ক রয়ে গেছে । যেমন রয়েছে মফিদুল হক এবং হারুণ হাবীবের
সঙ্গে । যাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি, যেমন সাঈদা মিমি যাকে মা বলে ডাকি,
আসমা চৌধুরী, জিনাত জাহান খান এবং আর সবাই আমার প্রাণের মানুষ । শামীমূল
এহসান শাওন তো ঢাকা থেকে তার কলকাতার বন্ধু ঊষসী কাজলীকে অনুরোধ করছেন আমার
সঙ্গে দেখা করতে । শুভাশিস সিংহ বা মুজিব ইরম, অপরাহ্ন সুসমিতোর কথা এখানে
উল্লেখ করলাম না, তাদের কবিতা প্রসিদ্ধ । উল্লেখ করিনি শাহনাজ মুন্নির
কথাও যার গল্প আমাকে টানে । এভাবে অনেকের কথাই উল্লেখ করিনি । এর অর্থ এই
নয় যে, তারা আমার প্রাণের নয় । বরিশালের মুস্তাক মেহেদী, তারিফা নাজমিন মেঘ
সিংহ, সুপ্রভা যূঁই এবং এরকম আরও অনেক আছেন যাদের সান্নিধ্যপাগল আমি ।
বাংলাদেশ আমার মায়ের মাতৃভূমি । তাকে প্রণাম ।
এই
আমি, আসলে, কেউ না । একটা জিন্দা লাশ । গ্যারেজের একপাশে থাকা বাতিল গাড়ির
মত । চলাফেরা, আহারনিদ্রা ও মৈথুন সকলই প্রকৃতিগত । যেটুকু আলাদা, তা
চেহারাগত ও চিন্তাসূত্রে । উল্টোদিক থেকে শুরু করি আমি । ছোটবেলায় পাটিগণিত
করতে গিয়ে এই পদ্ধতির আবিষ্কার । তাহলে সঠিক উত্তর পেতে সহজ হয় । এটাও যেন
আর একজন করাচ্ছেন । ঈশ্বরের প্রতি টান নেই বললেই চলে, টের পাই, এই যিনি
আমাকে দিয়ে এতকিছু করিয়ে নিচ্ছেন, এমন কি, এই লেখাটাও, তিনিও থাকেন আমার
ভেতরে । কিন্তু কোথায় থাকেন তিনি ? তার নাম রেখেছি সমরজিত্ নম্বর ওয়ান ।
আমি তো দ্বিতীয় । যার কোনো মূল্য নেই । এটা হতাশা নয় । আশাই যার নেই, তার
আবার কিসের হতাশা ? আমাকে তিনি ভেতর থেকে নির্দেশ দেন, অনেক কাজ বাকি আছে
হে ! করো, করো । আর সময় নেই হাতে ।
Subscribe to:
Posts (Atom)