Thursday, October 31, 2013

একটা বুলেট, একটা ঝকঝকে স্টেনলেস ব্লেড, একটা শক্তপোক্ত দড়ি বা ৩০টা স্লিপিং পিল । অনেকগুলি অপশন । তার কোনো একটা হলেই কেল্লা ফতে । মুশকিল হলো, স্লিপিং পিল বিট্রেয়ার । ভরসা রাখা যায় না । দু দু'বার বিট্রে করেছে । দড়িও যে ভরসা দেবে, সেটা কতখানি বিশ্বাস করতে পারি ? বুলেট হবার নয় । সে অনেক ঝক্কিঝামেলা । হাতে রইল ঐ ব্লেড । কার্তিকদুপুর, তোমার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাবার জন্য এই ব্লেড ব্যতীত আর কিছু নেই । তুমি বসন্তের কেউ নও, গোয়ালপাড়ায় যাতায়াত নেই তোমার । গত গ্রীষ্মে তুমি চষে বেড়িয়েছ উঁইপোকাদের সাথে গীর্জার বাগানে । আমার টেবিলের পেপার ওয়েটগুলি তুমিই পাঠিয়েছিলে তুরস্কের হারেম থেকে । আজ তোমাকে পাঠাচ্ছি স্টেনলেস ব্লেড । যত্নে রেখো, আগামী জন্মদিনে শিরা কেটে তোমাকে উপহার দেবো রক্তঘড়ি সহ বজ্রযানশ্লোক । তাতে উল্লেখ থাকবে বেদব্যাসপিতা রচিত এক অসম্ভব প্রতারণাকাহিনী ।
ম্যাঁয় সময় হুঁ । কোনো এক টিভি সিরিয়ালের শুরুতে এই উক্তিটি ছিলো । জানি না, ঠিক এভাবে কথা বলতে পারত কি না সময় ! সময় আসলে এক ধারণা, যেমন ঈশ্বর । এই ধারণা-বশবর্তী হয়ে, বা, না হয়ে, মানুষ সমগ্র জীবন ধরে নিজেকে জানার চেষ্টা করে গেছে, একই সঙ্গে আপন অস্তিত্ব প্রোথিত করতে চেয়েছে চিরকালীন সময়ে । সে ভালোবেসেছে, ভালোবাসা পেতে চেয়েছিলো বলে । ঘৃণা করেছে, ভালোবাসাহীনতায় । ছবি এঁকেছে দুর্গম গুহায়, নিজের অভিজ্ঞান রেখে যাবার তীব্র বাসনায়, যে বাসনা থেকে সে জন্ম দেয় সন্তানের । সকল সৃষ্টির মূলে যদি ঐ অভিজ্ঞানই থাকে, তাহলে একটি অসহায় প্রশ্ন থেকে যায় আমাদের সামনে, তা হলো, এই সুন্দরতম প্রকৃতি রচনার আড়ালেও কি তেমন কোনো বাসনা ছিলো কারও ? তখনই, ধর্মবিশ্বাসীগণ, জানি, বলে উঠবেন, তিনিই ঈশ্বর ! আজ আমি সেই অদেখা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তর্জনি সংকেত করে বলবো, তিনিও, তাহলে, সামান্য এক পটুয়া যার এই সৃষ্টি একদিন মিশে যাবে সেই কালো গহ্বরে । চিরকালীন সময়ের উর্ধে উঠে যেতে পারেনি তারও রচনা ! এই যুক্তির সামনে দাঁড়িয়ে, দু এক লাইন লিখিয়ে বলে অর্ধপরিচিত এই আমাকে আজ আর অসহায় মনে হয় না । জানি, এই সব লেখা, একদিন, মিশে যাবে ধুলিতে । উঁইয়ের খাদ্য হবার যোগ্যতাও নেই এসব লেখার ।
কোথায় হারিয়ে যায় এত সব কথা ? গুহামানবের কাল থেকে কত কথা কয়ে গেল লোকে, কত প্রেমভালোবাসাঘৃণাতাচ্ছিল্যলোভঈর্ষাঔদ্ধত্যাদি কথা কোথায় গেল ? ভাবছি, এবার থেকে সব ধরে রাখবো আমার এই যাদুবোতলে ।
পিঠে বারবার ছাপ মেরে গেছে লোকে । কেউ বলেছে, লম্পট । কেউ আবার চরিত্রহীন, অহংকারী । স্বেচ্ছাচারী বলে খবরের কাগজের শিরোনাম হলো কতবার । বহুগামিতার দোষে কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছে কতবার । অবিনয়ী বলেছেন কেউ কেউ । স্বার্থপর, লোভী ও কামুক বলেছেন অনেকেই । মিথ্যেবাদী কি বলেছে কেউ ? মনে করতে পারছি না ! প্রেমিকপুরুষ বলে কোনো কোনো নারী আখ্যা দিয়েছেন । প্রতারকও বলেছেন কেউ কেউ । মাতাল তো কমন কথা । এত বিশেষণময় হয়ে, এখন মনে হয়, এই নরকেও আমার স্থান হবে না মৃত্যুর পর । ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে ফেলে আমাকে ভাজা হচ্ছে কত কতদিন আগে থেকে, তাতেও এত বিশেষণভার কমবার নয় । হায়, একজন মোটে যদি পেতাম, এই ভার ওপার পর্যন্ত পৌঁছে দিত, অন্তত ।
তোমাকে অনুভব করি, নীরবতা । এই শূন্যতার ভেতর জেগে ওঠা রন্ধনপ্রণালী, তোমাকে অনুভব করি, তীব্র অন্ত্রময় তুমি । যতিচিহ্নের আড়ালে বেড়ে ওঠা যৌনআবেদন, তোমাকেও অনুভব করি বাঁশীর ছিদ্রে । আজ, ৩১ অক্টোবর ২০১৩, অনুভব করি, ঐ ছিদ্রপথে, জেগে উঠছে উঁইঢিবি ।
কচি ধনেপাতা মোড়ানো সকাল এসেছে । তাকে কিভাবে যে স্বাগত জানাই ?
পরচর্চা আমাদের প্রধানতম উপজীব্য সংস্কৃতি । তা ফেসবুক হোক, চায়ের স্টল বা অফিস হোক, মন্দির বা কলতলা হোক । রসনা ও মননের এমন যুগল তৃপ্তি আর কোথাও নেই ।

Thursday, October 24, 2013

কানা হারিয়ে গেছে নিরবধিজলে । /সে জলে আমার ছায়া নেই । বলো, কোন মন্ত্রবলে/ ফিরিয়ে আনবো তাকে, পারা ওঠা দিনে ? /পথে পথে ঘুরি, দিন কেটে যায় পরজন্মঋণে/ বাজাই নিজেকে একা, এই নুলো হাতে ।/ সে সুরে রচিত রাত্রি নেমে আসে ঊরু মেলে জঘনপ্রভাতে । /এসব জানে না চারুলতা, বালিকা সে, থাকে কোটিবর্ষদূরে । / আমার পথের শেষে নিরবধিপুরে ।
 


L'indrizzo ha perso con la acua silenziosa./ La mia ombra non esista sulla acqua. Mi suggeriscono un incanto, vorrei tornare lei indietro, il giorno di abilita./Passa gli giorni con il debito di un altro vita,sposto qui è la./ Lo giocco da solo, con le mani di brusco./ La cantata notte arriva a buio mattina con la partita coscia ./La moglia di solitario non lo sa, è ragazza, abita tanti sostenuto da./Alla fine del mio corso, a cielo.
কে তকমা পায় সেরা বলে, কে হারিয়ে যায় চোরাস্রোতে, কার মাথা উড়ে যায় দিগন্ত পেরিয়ে, কার লেজ কাটা পড়ে গোপন চাকার নিচে, কে জানে ? সবাই লাফাচ্ছে, সবাই দৌঁড়ছে, শুধু একজন, খড়ি হাতে, লিখে যাচ্ছে শূন্য ব্ল্যাকবোর্ডে, অন্তিম ঠাট্টা ও হাহাকার ।
কে তকমা পায় সেরা বলে, কে হারিয়ে যায় চোরাস্রোতে, কার মাথা উড়ে যায় দিগন্ত পেরিয়ে, কার লেজ কাটা পড়ে গোপন চাকার নিচে, কে জানে ? সবাই লাফাচ্ছে, সবাই দৌঁড়ছে, শুধু একজন, খড়ি হাতে, লিখে যাচ্ছে শূন্য ব্ল্যাকবোর্ডে, অন্তিম ঠাট্টা ও হাহাকার ।
ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে আছে বাঘাডাঙা । ভোরে, ঘুম ভেঙে গেলে, দেখি, আশি বছরের পিসিমা উঠোনে শিউলি ফুল কুড়োচ্ছেন । আর বিড়বিড় করে কাকে যেন বকছেন । পরে, বুঝলাম, যাকে লক্ষ্য করে এই বকাবাদ্যি, সে সামনে নেই, তাদের সব ফুল চুরি করে চলে গেছে অনেক আগেই । আজ লক্ষ্মীপুজো । বাংলার ঘরে ঘরে গতকাল থেকে শুরু হয়ে গেছে এর আয়োজন । বাঘাডাঙার এ ঘরেও তার ব্যতিক্রম নেই । পূজাকাতর আমি নই, ধর্মহীন লোক, আমার লোভ ঐ নারকেলের নাড়ুর প্রতি । আহা ! ঐ নাড়ুতেই যেন সকল স্বর্গীয় অনুভূতি । প্রীতি আচার্যর ভাইঝি, শ্রীমতী অপর্ণা আচার্য, গতরাত থেকে বায়না ধরেছে, পূজা উপলক্ষ্যে পিকনিক খাবে । পিকনিক বলতেই মনে পড়ে গেল চড়ুইভাতির কথা । এই দুইয়ের চরিত্র কত আলাদা । পিকনিকে বাঙালিয়ানা নেই, চড়ুইভাতিতে আছে । আমরা কি তাহলে ঐতিহ্যকেও ক্রমে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি ? এই যে, আজ লক্ষীপূর্ণিমার রাতে, এ পাড়ার লোক ও পাড়ার জাম্বুরা(বাতাবিলেবু)গাছ থেকে চুরি করবে জাম্বুরা ? কই সেই দিনগুলি ?
আমার নিজস্ব এক নদী আছে । সে নদী গভীর, ছলোচ্ছল তার জল । বান এলে ভাসিয়ে নিয়ে যায় । তবু অচেনা নদীর চোরাটান অনুভব করি বিষাদগ্রস্ত রাতে, যে রাতে পাখি ওঠে জেগে ।
আমার কিছু স্বপ্ন নীলামে বিক্রি করবো । স্টক ক্লিয়ারেন্স করতে হচ্ছে । না হলে নতুন স্বপ্ন দেখতে পারছি না । যারা কিনতে চান, অগ্রিম বুক করুন ।
বাঘাডাঙায় বাঘ নেই, বাজি আছে । আজ সন্ধ্যেবেলা বাজির খেলা শুরু হবে যার লোভে আমার শিরা-উপশিরা টানটান ।
কান্না ও বন্যা দুই বোন । দু জনেই ভাসায় । ভাসিয়ে নিয়ে যায় সকল মালিন্য ।
পেটে বুদ্ধি নাই, ঘটে বুদ্ধি নাই, মগজেও কিছু নাই । কি কইরা যে বাঁইচ্যা আছি, কও তো, নদী ?
দক্ষিণেশ্বর গঙ্গার ঘাট । ওপারে বেলুড়, এপারে রাণী রাসমনির অসামান্য কীর্তি । এক বিধবা রমণী নিজ প্রতিপত্তি ও মেধা দিয়ে প্রবল ইংরেজ শাসনকালে, বাংলার রেনেসাঁর ঐ যুগে এই দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির স্থাপিত করেন এবং সেই বৈদ্যবাটী বা ঐ দিকের একটা গ্রাম থেকে গদাধরকে এনে, প্রচারের আলোয় পরম হংস রামকৃষ্ণ হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন এই অসামান্য রমণী । আজ বন্ধুবর অশোক মাহাতো এখানে আমাদের নিয়ে এসেছেন । আগেও কত কতবার এসেছি এখানে । প্রতিবারই মাথা নত হয়ে গেছে এই অসামান্য কীর্তির সামনে । আজও চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছি, ঘাটে প্রচণ্ড ভীড়, দূরে ছুটে যাচ্ছে লঞ্চ, সে এক অপার্থিব দৃশ্য । অশোক আর প্রীতি মন্দিরচত্বর ঘুরতে গেছে আর আমি অবাক হয়ে দেখছি বাঙালীর ভক্তিকাতরতা ।
দক্ষিণেশ্বর গঙ্গার ঘাট । ওপারে বেলুড়, এপারে রাণী রাসমনির অসামান্য কীর্তি । এক বিধবা রমণী নিজ প্রতিপত্তি ও মেধা দিয়ে প্রবল ইংরেজ শাসনকালে, বাংলার রেনেসাঁর ঐ যুগে এই দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির স্থাপিত করেন এবং সেই বৈদ্যবাটী বা ঐ দিকের একটা গ্রাম থেকে গদাধরকে এনে, প্রচারের আলোয় পরম হংস রামকৃষ্ণ হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন এই অসামান্য রমণী । আজ বন্ধুবর অশোক মাহাতো এখানে আমাদের নিয়ে এসেছেন । আগেও কত কতবার এসেছি এখানে । প্রতিবারই মাথা নত হয়ে গেছে এই অসামান্য কীর্তির সামনে । আজও চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছি, ঘাটে প্রচণ্ড ভীড়, দূরে ছুটে যাচ্ছে লঞ্চ, সে এক অপার্থিব দৃশ্য । অশোক আর প্রীতি মন্দিরচত্বর ঘুরতে গেছে আর আমি অবাক হয়ে দেখছি বাঙালীর ভক্তিকাতরতা ।
আমি বিশুদ্ধ মানুষ নই, ভালো মানুষ নই । নিজের ভেতরে টর্চ জ্বেলে কতদিন দেখেছি, কত খানাখন্দ সেখানে । পোকা কিলবিল করছে সে সকল খানাখন্দে । আমার সরলতা চুরি হয়ে গেছে কবে যেন । সব কিছু বাঁকা দেখি । আমার ভার্জিনিটি যে হরণ করেছিলো জোর করে, সেই পিসতুতো দিদিকে অভিশাপ দেবার বদলে ধন্যবাদ দিই এই জন্য, সেই শিখিয়েছিলো, ভালোবাসার বদলে কি করে শরীর হয়ে যায় তীর্থস্থান । তীর্থপরিক্রমাকালে দেখেছি, মানুষ শুধুই ব্যবহৃত হয়ে থাকে । ব্যবহৃত হয়েছি আমিও । হতে হতে আমার সকল বিশ্বাস নিজ হাতে হত্যা করেছি । ভালো মানুষ নই আমি । অথচ একদিন সত্যিই আমারও স্বপ্ন ছিলো প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার...
দ্বন্দ্বসমাসের ঐ দ্বন্দ্ব থেকে কোনো রকমেই বেরিয়ে আসতে পারছি না, মত্‍পুরুষের দোষে ।
মৃত্যুর অধিক এই রাত আজ হাত পেতে বসে আছে ভাঙা সেতুটির কাছে । 'যা দেবার দিয়ে দাও, তর সইছে না আর' বলে, সে আসে এগিয়ে । সেতুটির কথা না বলা বিধেয়, জেনে, চুপ করে চেয়ে আছে রাত্রির অধিক মথ ।
এই দেহকাব্য কীটরচিত প্রাচীন এক মর্মগাথা মাত্র, যার প্রতিটি পাতায় ঈশ্বরীর দীর্ঘশ্বাস, নখের আঁচড়, দংশন ব্যতীত আর কিছু নেই । অকুস্থল থেকে ফিরে এসে, এই অসমাপ্ত নোট লিখে, যে গিয়েছে, তাকে কি চিনেছে, এই মঙ্গলকাব্য ?
বিদায় কলকাতা । বিদায় বন্ধুরা । কফিহাউসে কথা দিয়েও যেতে পারিনি আজ, অথচ অপেক্ষা করছিলেন অনেকেই । দেখা হয়নি অনেকের সঙ্গেই । হয়তো আবার আসবো, হয়তো দেখা হবে তখন । এই ঝটিতি সফরে অপূর্ণতাই থেকে গেলো বেশি । তবু আশ্চর্য এক ভালো লাগা নিয়েও ফিরে যাচ্ছি । গৌতম মণ্ডল সম্পাদিত 'আদম' এর সাম্প্রতিক সংখ্যা পেলাম, যেখানে সত্তর দশকের কবির তালিকায় সমরজিত্‍ সিংহকেও রেখেছে, যা ভাবিনি কোনোদিন ।
নীরবে হজম করে যাচ্ছি । তাতে পেট ভালো থাকে, এটুকুই জানি । বাকি সব অন্ধকার ।
যুবকের মেধা-বীর্য, একদিন, এই কলকাতা খেয়েছিলো, আজ সেই কলকাতা কি তাকে এই বয়সকালে গ্রহণ করবে জুতোহীন পুরাণো সেই প্রেমিককে ?
যুবকের মেধা-বীর্য, একদিন, এই কলকাতা খেয়েছিলো, আজ সেই কলকাতা কি তাকে এই বয়সকালে গ্রহণ করবে জুতোহীন পুরাণো সেই প্রেমিককে ?
জবাটির রঙ লাল, ভেবে, যতটা হয়েছো খুশি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেলে, লাল মুছে যখন পাপড়িগুলি হয়ে ওঠল ধূসর । জবাও কি বহুরুপী তবে ? আফোট বিস্ময়ে কাকে যেন বললে কথাটি । উত্তর দেবার কেউ নেই চরাচরে । জানোনি কখনো, রঙ মূলত কল্পনা, না হলে সকল শাদা । বলে, উড়ে গেল এক প্রজাপতি । ডানাহীন অন্ধকারে ।
এখানে রাত একাকী জাগে...ঘুমিয়ে পড়ি রাতের বুকে...
একটা শব্দ । জল তোলার, না কি, মগজের ভেতরে ঘুণপোকার শব্দ । ছিঁড়ে নিচ্ছে থ্যালামাসের সকল পালক ।
একটু আগে, খেয়ে উঠেছি মাত্র, ঘরে লোকজন, কালীদার ফোন এলো । কবি কালীকৃষ্ণ গুহ । আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ 'রাত্রিমথ' পড়ছেন । প্রথম দুটি গল্প পাঠের পর ধৈর্য রাখতে পারেননি । বললেন, 'তোমার গল্প পড়ে আমার রক্তক্ষরণ হচ্ছে । মনে হয়, আড়ালে একজন কাপালিক আছে । অসাধারণ ।' তিনি আরও কথা বললেন । হয়তো, তাঁর সব কথাই স্নেহসম্ভব । তবু, এই কটি কথা আমার ভেতরের মৃতসত্তাকে দানবে রূপান্তরিত করেছে মুহূর্তে । লিখতে ভালো লাগছিলো না আর । কোথাও যেন নিঃস্ব হয়ে পড়ছিলাম । রাত্রিমথ প্রকাশিত হবার পর কলকাতার একটি কাগজ ব্যতীত আর কোথাও কোনো আলোচনা বেরোয়নি । যেমন আলোচনা হয়নি আমার উপন্যাস 'আলান' 'অন্তর্জলকথা' নিয়ে । অথচ 'ট্রা রা রা রা' উপন্যাস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে, প্রথিতযশা উপন্যাসিক শৈবাল মিত্র, কলকাতা থেকে প্রকাশিত আজকাল-এ বলেছিলেন, সমরজিত্‍ সিংহ এর লেখা শুধু পাঠক নয়, বাঙালী লেখকদেরও ঋদ্ধ করবে । হায় ! পাঠক কোথায় আমার ?কালীদার চার নম্বর sms একটু আগে এলো । তিনি পড়ছেন এখনও । এক একটা গল্প পড়ছেন, আর sms করে তার প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন । এ আমার বুকার পাওয়ার চাইতেও অনেক বড় পাওনা ।

Monday, October 14, 2013

কথাটি গুজব, সত্য নয় । সত্যের চাইতে তার শক্তি বেশি । উড়ে যেতে পারে মুহূর্তের হাত ধরে । নিমেষসম্ভব, বলে, সে থাকে আড়ালে, সত্যের পোশাকে । যেন এখনই মঞ্চে উঠবে সে, দ্বিতীয় অংকের পর । সত্য তুমি, তাড়াহুড়ো নেই, ধীর পায়ে, এগিয়ে যাচ্ছো ঐ, দূরে বধ্যভূমি, প্রস্তুত ফাঁসুড়ে, প্রস্থানভূমির চারদিকে শ্বাসরোধকারী এক গল্পের খসড়া । ক্যামেরাতীত সে দৃশ্যে, তোমার চোখের তারা ক্রমে হয়ে ওঠে সবুজ, ক্ষুধার্ত ।

La parola rumors, non è vero. Piu forza della verita. Puo essere voltare con i momenti. é possibile dividere, chè,verita abbigliamento, essere a dietro. Comè ora sta andando in scena dopo i secondi numeri.Sei vero, sta andando a avanti, non chè sta fretta, il chiuso terrano lantano da,il slayer è pronto ,Sfondo smothery intorno alla storia di uno dei progetti. I tuo occhi sono verdi, a poco a poco venne fame, Scena della photocamera .
নিয়তি, নিষ্ঠুর সে নারীর প্রতি আমার মূলত কোনো টান নেই । তবু সে আমার নিদ্রাজাগরণে খেলছে আমাকে নিয়ে । তাকে বলি, ক্ষান্ত দাও, মোহময়ী । কবরের উষ্ণতা আর হিমচিতার



Doom, non c'è carenza di donna, e crudele. Oppure, lei gioca con il mio sonno e la veglia. Gli dico, madame, dai spassionato.Comè La calda tomba e la pira di nevicata.

নামই আসল । নামকীর্তনই সার । এই যে শত শত ব্রাণ্ডনেম, তা ঐ নামকেই সার ভেবে । নামহীন কাউকে বা কোনোকিছুকে ঘরে ঢুকতে দিই না, অন্তত কুণ্ঠা বোধ করি । এই নাম এর পেছনে দৌড়ছেন হাজার হাজার তরুণ তরুণী থেকে বুড়োবুড়ি সবাই । আর আমি, ঐ নামটাকেই ভুলে যেতে চাইছি, কেন না, নামবিভ্রাটের পাল্লায় পড়ে ওষ্ঠাগত আমার প্রাণ । একবার, কমলপুরে, এক অনুষ্ঠানে, দেখলাম, ১৮৩ জন সমরজিত্‍ সিংহ । শুনেছি, তার মধ্যে একজন ডাকাত ও একজন নকশাল নেতা আছেন । এটা জানার পর থেকে, ভাবছি, নামে আমার কাম নেই । বরং কামে থাকি মেতে । কামই সার, বলে, এই বয়সে, মেতে ওঠি, কামকীর্তনে । কর্মেন পরিচয়তে, এর বাংলাও করে নিয়েছি, কামে পরিচয় ! বাংলা ভাষার এই সুবিধা বা মহিমা কজনে আর বুঝি ? বুঝেছিলেন গৌরপাগলা । হায় ! তিনি তো নামের পাগল !
রাত যত বাড়ে, তত নিঃস্ব মনে হয় নিজেকে । যোগবিয়োগ মেলে না । গুণভাগ তখন হয়ে ওঠে ভয়ংকর রহস্যময় । কাকে যেন কি বলেছিলাম, শোনেনি, কার অনুরোধ রাখতে পারিনি, কি একটা জরুরি কাজ ভুলে গেছি বেমালুম । মনে পড়ে না । কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ ম্রিয়মান বড় । বিরহী সে । তবু তার নিয়ম আছে, নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে তার । আমার তা নেই । এটুকুই মনে পড়ে, ঘরওয়ালীকে কিনে দিতে হবে ফ্ল্যাট । না হলে তার মাথা গুঁজবার ঠাঁই থাকে না । আমার ঠাঁই মানে তো রাস্তা । সেই কবে বাড়ি থেকে পালিয়েছি, রাস্তাকেই করে নিয়েছি আস্তানা । এখনও তাই । পথে পথে মোর ঠাঁই আছে. বলে, এতদুর এগিয়ে এসেছি । পেছন ফিরে তাকালে, দেখি, সমস্ত পথটিই ছিলো মরুভুমি ।
রাত যত বাড়ে, তত নিঃস্ব মনে হয় নিজেকে । যোগবিয়োগ মেলে না । গুণভাগ তখন হয়ে ওঠে ভয়ংকর রহস্যময় । কাকে যেন কি বলেছিলাম, শোনেনি, কার অনুরোধ রাখতে পারিনি, কি একটা জরুরি কাজ ভুলে গেছি বেমালুম । মনে পড়ে না । কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ ম্রিয়মান বড় । বিরহী সে । তবু তার নিয়ম আছে, নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে তার । আমার তা নেই । এটুকুই মনে পড়ে, ঘরওয়ালীকে কিনে দিতে হবে ফ্ল্যাট । না হলে তার মাথা গুঁজবার ঠাঁই থাকে না । আমার ঠাঁই মানে তো রাস্তা । সেই কবে বাড়ি থেকে পালিয়েছি, রাস্তাকেই করে নিয়েছি আস্তানা । এখনও তাই । পথে পথে মোর ঠাঁই আছে. বলে, এতদুর এগিয়ে এসেছি । পেছন ফিরে তাকালে, দেখি, সমস্ত পথটিই ছিলো মরুভুমি ।
যিনি পণ্ড করেন= পণ্ডিত । এই ব্যাসকূটটি মনে পড়ে গেলো হিন্দুপণ্ডিতদের দেখে । জানি, রে রে করে তেড়ে আসবেন পণ্ডিতকূল, অভিশাপ দেবেন আমাকে । ভাগ্যিস, কলিযুগ এখনও শেষ হয়নি, না হলে, তাদের অভিশাপে ভস্ম হয়ে যেতাম । তবে, পণ্ডিতকূলের জ্ঞাতার্থে জানাই, আমার জন্ম পূর্বফালগুনী নক্ষত্রে । এর জাতক অভিশপ্ত । জুয়াড়ি । বহুগামী । নিন্দিত । জেদী বা একরোখা । আনন্দবাদী । অসম্ভব কৌতুহলী । তৃতীয়ে ক্ষীণচন্দ্র রাহুগ্রস্ত বলে অস্থিরতাদোষেদুষ্ট । এই বক্তব্য আমার নয়, পরাশরী হোরা ও ভি রমণের । তাঁরা পণ্ডিত এবং আমার জীবনের সকল উদ্যোগ পণ্ড করতে তাঁদের এই বাণীসমূহও কম দায়ী নয় ।
যিনি পণ্ড করেন= পণ্ডিত । এই ব্যাসকূটটি মনে পড়ে গেলো হিন্দুপণ্ডিতদের দেখে । জানি, রে রে করে তেড়ে আসবেন পণ্ডিতকূল, অভিশাপ দেবেন আমাকে । ভাগ্যিস, কলিযুগ এখনও শেষ হয়নি, না হলে, তাদের অভিশাপে ভস্ম হয়ে যেতাম । তবে, পণ্ডিতকূলের জ্ঞাতার্থে জানাই, আমার জন্ম পূর্বফালগুনী নক্ষত্রে । এর জাতক অভিশপ্ত । জুয়াড়ি । বহুগামী । নিন্দিত । জেদী বা একরোখা । আনন্দবাদী । অসম্ভব কৌতুহলী । তৃতীয়ে ক্ষীণচন্দ্র রাহুগ্রস্ত বলে অস্থিরতাদোষেদুষ্ট । এই বক্তব্য আমার নয়, পরাশরী হোরা ও ভি রমণের । তাঁরা পণ্ডিত এবং আমার জীবনের সকল উদ্যোগ পণ্ড করতে তাঁদের এই বাণীসমূহও কম দায়ী নয় ।
ভিসা পেলাম । বাংলাদেশ ভিসা অফিসের প্রথম সচিব ওবায়েদুর রহমান অতি সজ্জন, নিজ হাতে গতকাল সব ব্যবস্থা করে দিলেন । ১১ অক্টোবর ঢাকা যাচ্ছি । ম্যাডাম প্রীতি আচার্য সহ । কমলাপুর শ্যামলীর বাসস্ট্যাণ্ডে অপেক্ষা করবেন কবি সরদার ফারুক এবং তরুণতুর্কী জাহিদ সোহাগ । ঢাকা থেকে বরিশাল । ভেবেছিলাম, কক্সবাজারেও যাবো । হচ্ছে না । এ যাত্রাতেও কক্সবাজারদর্শন হলো না । সব পুষে যাবে, ওবায়েদ আকাশ, সরকার আমিন, মেঘ অদিতি, বিধান সাহা, অপরাজিতা ফেরদৌস, সাঈদা মিমিদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারলে । অতি অবশ্যই শামীম রেজা ও লোক পত্রিকার সম্পাদক সহ গল্পকার পারভেজ ও কচি রেজাও আছেন । আরও অনেক অনেক বন্ধুও আছেন । সিম কার্ড দেবেন বলেছেন অনুজ কবি রেজওয়ান তানিম । আসছি ঢাকা ।
পথে এসে, দেখি, পথের বিভ্রম ম্লান করে রেখেছে তোমাকে ।
পথে নেমে, দেখি, তোমার বিভ্রম ম্লান করে ফেলেছে আমাকে ।

পথ রেখে, সেই থেকে, হেঁটেছি বিপথে ।
ফেসবুক এলিসের সেই আজব দেশ । এলিস আয়নার ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়েছিল সেদেশে, আর আমরা ডেস্কটপ ল্যাপটপ বা মোবাইলের স্ক্রীন দিয়ে ঢুকে পড়ি ফেসবুকে, মোহগ্রস্ত হই, মোহ ভাঙে । অভাবিত ঘটনাবলীর সম্মুখীন হই প্রতিমুহূর্তে । যা ভাবি, তার বিপরীত ঘটে আর যা ভাবিনি, দেখা গেলো, তাই হয়ে গেছে । শিল্পী আমীর চারু বাবলু থাকেন আরবদেশের কোথাও । ফেসবুকবন্ধু । ইনবক্সে দুচারটে কথা হয়েছে কি হয়নি । লাইকালাইকি হয় । এটুকুই । ঢাকা যাচ্ছি, শুনে, তিনি যারপর নাই চিন্তিত সেই দূর আরবদেশ থেকে । তার চিন্তার কারণ ঢাকা গিয়ে আমি কোথায় ওঠবো । এবং তিনি যথারীতি ১৬ ও ১৭ অক্টোবর আমার থাকার জন্য ঢাকায় থ্রিস্টার হোটেল বুক করে দিয়েছেন নিজ খরচে । সেখানেই থেমে থাকেননি, তার এক বন্ধু, রিয়াজ খানকে দায়িত্ব দিয়েছেন আমার যাতে কোনো অসুবিধে না হয়, তা দেখার জন্য । আমীর চারু আমাকে চিরজীবনের জন্য ভালোবাসার ঋণে আবদ্ধ করে রাখলেন । এখন মনে হয়, আসলে, আমিই সেই এলিস ।
চিত্রা নক্ষত্রকে মনে পড়ে । কত কত রাত তার সাথে শুয়ে দেখেছি, বাঘিনী মূলত সে । তার ডাক নিশিরাত পার হয়ে চলে গেছে অনন্তের দিকে । মনে পড়ে মৃগশিরা, রোহিনীর কথা । সর্পগন্ধা মৃগশিরা উল্লাসে মেতেছে প্রতিটি দুপুরে । রোহিনী বিষাদগ্রস্তা, পূর্ণ কলসের মত, কথা কম, রাতে প্রগলভা । পতিত নক্ষত্র শতভিষা, মূলত হস্তিনী । রাহুপ্রিয়া । কেতুর সকাশে তার আসা-যাওয়া । দেখি তাকে মধ্যযামিনীতে । একটি শব্দের জন্য রাত জেগে বসে থাকা তরুণ কবিটি, জেনে রেখো, নক্ষত্র দোষের কথা । প্রতিটি বাক্যের নিচে যে পাহাড়ী ঝর্ণা বয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ শিয়রে, তার জলে কৃত্তিকার ছায়া । সেই ছায়া গ্রাস করে রাখে এই শূন্য পাতাগুলি । জেনে রেখো, কবিকে নরকগামী করে বিশাখার ক্রোধ ।
রাত কি বাত কুছ অলগ হ্যায়...দিলকি বাত কুছ অলগ হ্যায়...লেকিন হামারে বাত অলগ নেহি ।
রাত কি বাত কুছ অলগ হ্যায়...দিলকি বাত কুছ অলগ হ্যায়...লেকিন হামারে বাত অলগ নেহি ।
ভাবছি, অবসর জীবনে, বসে বসে, দিন কাটানোর চাইতে, কিছু কি করা যায় ? বাংলা একাডেমি ঢাকা চালু করেছে লেখা শেখার ক্লাস । আমিও কি তা করবো ? পূঁজিহীন এই ব্যবসাটা মন্দ নয় । মার্কসসাহেব কি বলবেন, জানি না, আমার মনে হয়, পূঁজিহীন ব্যবসাতেই ক্ষতির সুযোগ কম । তাহলে কি কবিতার ক্লাস শুরু করে দেবো অবসর জীবনে ? কবি যদি নাই হলাম, কবিতার ক্লাস এর মাস্টার তো হতে পারি !
এবারই প্রথম এত নির্জীব দেখলাম আগরতলা । ষষ্ঠীর রাত যে ভাবে মেতে ওঠত আনন্দে, প্রাণের সেই আনন্দ যেন আর নেই । পূজা আয়োজকগণের সে জৌলুষ নেই । আলোকসজ্জাও এবার অতিম্রিয়মান । আগরতলার এত দরিদ্ররূপ এর আগে কখনও দেখিনি । কেন এমন হল ? আগরতলা কি দুঃখে আছে ? নাহলে এত বিষাদগ্রস্ত হবে কেন সে ? কে একজন বললেন, ম্লান হবে না কেন ? এই রাজ্যের প্রাণশক্তি হল কর্মচারিবৃন্দ । আজ তাদেরই আবস্থা রিক্ত । প্রতিমাসে একজন গ্রুপ ডি কর্মচারি ছহাজার টাকা কম পায় । উপরে আঠারো কুড়িহাজার টাকা । অংকের হিসাবে লক্ষ লক্ষ টাকা মার খাচ্ছেন কর্মচারিরা । বঞ্চনার এই বেদনাময় ইতিহাস আর কোথাও নেই পৃথিবীতে । কর্মচারিদের দীর্ঘশ্বাসে চাপা পড়ে গেছে পূজার আনন্দ ।
সন্তের জীবন, পিতা, আমিও জেনেছি ।--সরদার ফারুক
ভদকা জ্ঞানী, সেই জ্ঞানে ডুবে যাচ্ছি আমি ।
প্রেতযোগিনীর সাথে দেখা হয়েছিল চিত্রানক্ষত্রের ঘরে । দেখা ও নাদেখা এই দুটি পথ পার হয়ে যে মরুভূমিটি, একা, জেগে থাকে রাতে, তার বিছানাটি কেঁপে ওঠে প্রেতযোগিনীর স্পর্শে । কাঁপে চিত্রানক্ষত্রের ঘর । যে কাঁপেনি, সে আর কেউ নয়, অন্ধ সে ক্যামেরামান ।
আজ, মনে হচ্ছে, সময়ের দুটি ডানাই কেটে দিতে হবে, যাতে উড়ে যেতে না পারে ।
দশমী সে, চলে যাবে, বলে এসেছিল, চলে গেছে মোহপাশ ছেড়ে...
হায় ! ভালোবাসা ! হায় ! প্রেম ! তুমিও দশমী তবে ?
হায় ! ভালোবাসা ! হায় ! প্রেম ! তুমিও দশমী তবে ?
সোনার গাঁ, ছেলেবেলায় দেখা এক যাত্রাপালা । যে রাজধানী এখন ইতিহাস, ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে পানামনগরে, শতোর্ধ বয়সী এই মৃতনগরী । ব্রিটিশ স্থাপত্যের আদলে তৈরি এই নগরের ঘরবাড়িগুলি অধিকাংশই দ্বিতল. জীর্ণ, জনহীন । সামান্য এগিয়ে গেলে ছোটো এক বাজার । সোনার গাঁ পুরসভা আয়োজন করেছে দুর্গাপুজো । আরতির জন্য প্রস্তুতিতে যেসকল যুবক গলদঘর্ম হয়ে ব্যস্ত, তাদের একজন ওমর ফারুক । সে জানালো, আইছেন যহন, বারদী ঘুইরা আসেন । সেখানে বাবা লোকনাথ মন্দিরে দুর্গাপূজা । দেইখা আসেন একবার । মন্দির পূজা, মাজার বা গীর্জাতে আমার কোনো আকর্ষণ নেই । ধর্ম যে আদৌ মানুষের কল্যাণকামী নয়, অন্তত আচরণবাদ কোনোভাবেই মানা যায় না । তবু ইতিহাসের টানে সরদার ফারুক আর আমি ছুটে গেলাম বারদীতে ।
পাতালগঙ্গার কথা থাক আজ । দশমীও থাক । ভেজা কাঠ, তাকে আজ ভাসিয়ে এলাম তোমার নীরব চোখের নদীতে । পূণ্য থাক । স্বর্গলোভ থাক আজ । নদী, তাকে আজ পুড়িয়ে এলাম এই মৃতনগরীতে ।
কথাটি গুজব, সত্য নয় । সত্যের চাইতে তার শক্তি বেশি । উড়ে যেতে পারে মুহূর্তের হাত ধরে । নিমেষসম্ভব, বলে, সে থাকে আড়ালে, সত্যের পোশাকে । যেন এখনই মঞ্চে উঠবে সে, দ্বিতীয় অংকের পর । সত্য তুমি, তাড়াহুড়ো নেই, ধীর পায়ে, এগিয়ে যাচ্ছো ঐ, দূরে বধ্যভূমি, প্রস্তুত ফাঁসুড়ে, প্রস্থানভূমির চারদিকে শ্বাসরোধকারী এক গল্পের খসড়া । ক্যামেরাতীত সে দৃশ্যে, তোমার চোখের তারা ক্রমে হয়ে ওঠে সবুজ, ক্ষুধার্ত ।

Saturday, October 5, 2013

নিস্পৃহতা ভালো । জীবনের প্রতি এটা থাকলে, তা সুখ ও দুঃখের বাইরে গিয়ে এক নিরাসক্ত জগত তৈরি করে তোলে । এই নিস্পৃহতা পারসোনোলালাজড় হলে সম্পর্কের সেতুটি ভাঙে, অন্তত ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হতে থাকে । একটি সম্পর্ক টিকে থাকে আবেগের উপর ভর করে, যা মূলত কাজ করে সিমেন্ট হিসেবে । সম্পর্ককে যদি একটি সরলরেখা ধরি, তাহলে তার দুটি প্রান্তবিন্দুর ভূমিকা হবে আবেগ সচল রা
প্রবচন মাত্রেই অভিজ্ঞতাসঞ্জাত । অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণসম্ভব । এই যেমন, মুখে মিষ্টি অন্তরে বিষ/ সেই বন্ধুকে চিনে রাখিস । এই সতর্কবাণী কেন যে, বারবার, ভুলে যাই !
প্রবচন মাত্রেই অভিজ্ঞতাসঞ্জাত । অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণসম্ভব । এই যেমন, মুখে মিষ্টি অন্তরে বিষ/ সেই বন্ধুকে চিনে রাখিস । এই সতর্কবাণী কেন যে, বারবার, ভুলে যাই !
দিন কাটে উপেক্ষায়, রাত কাটে অপেক্ষায় । না কি তার বিপরীত চিত্র হবে, বলো, বক, বলো, হে ঠাকুরমার ঝুলি ! রূপার কাঠি নেই, সোনার কাঠি তো দূরের কথা, ঘুম ভাঙাতে চেয়েছিলাম তার, কথা ও শব্দে । বলো, কাঠ, বলো হে হিতোপদেশ, বাক্য কেন বৃথা যায় স্বপ্নের পেছনে ? ক্রোধ কেন শুয়ে থাকে কুণ্ডলী পাকিয়ে ? জাগে না ধর্ম, জাগে না নির্দেশাবলী, তাকে ঘিরে বড় হতে থাকে শূন্য চরাচর । বলো. ধারাপাত, বলো পঞ্চতন্ত্র, আমার মাতৃভাষা কেন এত উপেক্ষিত ? কেন আমি পান করি এত আত্মবিষ ?
মিথ্যার কোনো আবেগ থাকে না । আশ্চর্য এক শীতলতা তার দু'চোখে । আজ আমি সরে আসছি সেই শীতলতা থেকে, আবেগহীনতার কাছ থেকে । এক পা দু'পা করে ।
অভিসারী রাত্রি আজ পথে এসে দাঁড়িয়েছে, একা । মুহূর্মুহূ বিদ্যুচ্চমক থেমে গেছে কখন । ফলে, তাকে ঘিরে রেখেছে অন্ধকার । পথ পিচ্ছিল ও অনিশ্চিত, এই গোপন অভিসার তাকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে, জানা নেই তার । এটুকুই জানে সে, পথে নেমে, ভাবতে নেই কিছু । পথই দেখাবে তাকে পথ ।
কতটুকু দিতে পারো তুমি ?
ঠিক কতটুকু ? বলে ওঠে ভাঙা শ্লেট ।
কখনো লেখোনি অন্ধকার,
শুয়ে থাকা ছাদ আর নাভির অতল ।
লিখেছো কি ঘন উপত্যকা
ভিজে আছে নুনে ?
ভাঙা খড়ি আজ পড়ে আছে
তোমার হাতের অনাদরে ।
INVADOR, এই ইংরাজি শব্দটির মহিমা, আর কেউ বুঝুক আর নাই বুঝুক, ভারতবর্ষ বোঝে । আর্যরা এসেছিল ভিখিরির মত এদেশে । হিংস্র, নারীলোভী, কৃষিজীবী এক গোষ্ঠী এদেশে এসে, নিজেদের দাবি করে সুর বা সভ্য জাতি বলে । আর এদেশের দ্রাবিড় সভ্যতাকে ধ্বংস করে তাদের আধিপত্য বিস্তারের নামে । অথচ এই দ্রাবিড় সভ্যতা (হরপ্পা সভ্যতা) বহুগুণ বেশি উন্নত ছিল তাদের তুলনায় । তাদের অসুরবিজয়ের গাঁথা আজ রামায়ণ হিসেবে পূজিত । এই রামায়ণেও দুর্গার উপস্থিতি দেখতে পাই রাবণবধের প্রাক্কালে । কে এই দুর্গা ? আর্যরা চতুর গোষ্ঠী । তারা হরপ্পান সভ্যতার শেষচিহ্ন ভারতবর্ষের কয়েকজন সর্দারনীকে দেবী হিসেবে বরণ করে অসুরবিজয় সমাধা করেছিল । এই সর্দারনীদের একজন এই দুর্গা, হিমালয় এর পাদদেশ ও তত্‍সংলগ্ন এলাকা যার নিয়ন্ত্রাধীন ছিল । রাবণবধেও তার সাহায্য নিতে হয়েছিল সুর রামকে যার শরীরে ততদিনে দ্রাবিড়রক্ত ঢুকে গেছে । কেন না, আর্যরা এসে এদেশে প্রথম যা করেছিল, তা ঐ নারীলুণ্ঠন । সেই লুণ্ঠিত নারীরক্ত ছিল রামের রক্তে । যে কারণে তার দেহ উজ্জ্বল শ্যাম ।
এই INVADOR বা হানাদারদের উত্‍পাত ভারতবর্ষে হয়েছে সবচেয়ে বেশি । শক হূণ গ্রীক, পাঠান, মোঘল থেকে শুরু করে ইংরেজ অবধি কত কত গোষ্ঠী এসে হানা দিয়েছে এই দেশ, তার ইয়ত্তা নেই । কেউ লুঠপাট করে ফিরে চলে গেছে । কেউ থেকে গেছে ক্ষমতার লোভে । যারা থেকে গেছে দীর্ঘকাল, তাদের আধিপত্য বিস্তারের কাহিনী হয়ে ওঠেছে এদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি । ফলে আমাদের দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি মূলত আধিপত্যবাদীদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি । পাঠান বা মোঘল রাজত্বের হাত ধরে এদেশে মুসলিম ধর্মের আগ্রাসনের শুরু । তার আগে হিন্দু বৌদ্ধ বা জৈন ধর্মের আগ্রাসনকথা আমরা জানি । রাজক্ষমতার হাত ধরে ধর্মের এই আগ্রাসন মেনে নিতে হয়েছে এদেশের নিরীহ মানুষজনদেল । পর্তুগীজ বা ইংরেজশাসনকালেও এভাবেই খ্রীস্টান ধর্মের আবির্ভাব । এই আধিপত্যবাদের নোংরা খেলা এখনও অব্যাহত যা মানা উচিত নয় কোনো সচেতন মানুষের পক্ষে ।
অতিজীবিত, একরাম আলির কাব্যগ্রন্থের নাম । সেই নাম ধার করে, আমি লিখতে শুরু করেছিলাম এক উপন্যাস, যার প্রথমপর্ব প্রকাশিত হয়েছিল পল্লব ভট্টাচার্য সম্পাদিত 'উত্তরপুরুষ' এর প্রথম সংখ্যায় । দ্বিতীয়পর্ব প্রকাশিত হয় সমীরণ রায় সম্পাদিত 'ত্রিপুরা দর্পণ' শারদীয় সংখ্যায় ।
উপন্যাসটির পরিণতি কি হবে, তা নিশ্চিত নই, বলে, আমি বাকি পর্বগুলি লিখতে পারিনি । এই উপন্যাসটি বিদ্বজনদের নজর কেড়েছিল, বলে, সামান্য দুর্বলতাও রয়ে গেছে উপন্যাসটির প্রতি ।
উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র দুটি, সময় আর পরী ।
এই পরী, বারবার, ঘুরেফিরে এসেছে আমার লেখায় । 'হননমুহূর্ত' নামে আমার এক গল্পগ্রন্থের শেষ গল্পটিতে, পরী এসেছে । সেই পরীকে পুষতেন এক লোক । পরী ধরার গল্প আমাদের পরিবারে চালু আছে দীর্ঘবছর ধরে । আমার মা-কেও না কি, তার ছোটবেলায়, ধরে নিয়ে গিয়েছিল পরী । পরে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় ১৭ মিঞা হাওরের মাঝখানে যে ঘন বেতঝোঁপ, তার মাঝখানে, বালিতে স্নানরত অবস্থায় ।
আমার সকল স্বপ্নে, পিতৃ-মাতৃসূত্রে চলে এসেছে পরী । আমার এই অভিশপ্ত জীবন আসলে এক পরীকথা, যা থেকে নিস্তার নেই আমার ।
আমার মা নিজেই ছিলেন এক পরী । তার দুটি ডানা ছিঁড়ে রেখেছিলেন আমার জন্মদাতা । নৃত্যশিল্পী হতে হতে, ছিন্নডানা আমার মা, পুরুষতন্ত্রের বলি হয়ে, মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন একসময় । সে ছিল সাময়িক । তারপর, সব অগ্রাহ্য করে, এই পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ে, পেরেছিলেন নিজ পায়ে দাঁড়াতে ।
পরী সব পারে, এই ধারণা মা-র মগজে যিনি ঢুকিয়েছিলেন, তিনি মা-র শ্বাশুড়ি । আর তিনিই আমার মাথা খেয়েছিলেন চিবিয়ে । তিনিই, মৃত্যুর প্রাক-মুহূর্তে, তর্জনীসংকেতে জানান, পরী বিনা গতি নেই আমার ।
প্রীতি আচার্য জানেন আমার এই পরীকথা । তাকেও, আজ, মনে হয় সেই ছিন্নডানা পরী ।
ছাই

এমন একটা গাছ, ছায়া নেই, আর, সে শুকিয়ে যাচ্ছে, একা ।
পাতাগুলি ঝরে গেছে শীতে, বসন্তেও রুখুসুখু
তার ডালপালা । এই দৃশ্য, গত এপরিলে, দেখে,
চমকে উঠেছি । দুহাজার চার ছিল সম্ভবত । ঐ গাছের নিচে এক
বেদী, তাতে তিনটে কিশোরী ।
গান গাইছিলো এই বসন্তের । একটা কোকিল ঘুরে ঘুরে
ডেকে যাচ্ছে তার সঙ্গিনীকে ।
গাছটাকে, দেখে, মনে হলো, তার প্রাণে
আগুনের ছাই আছে । ঐ ছাই সরিয়ে দিলে, সেও ফিরে পাবে
তার ছায়া । সবুজ পাতার
ঢেউ তাকে মাতিয়ে তুলবে পুনরায় ।
মরুভূমি নয়, এই মাটি এখনো উর্বর । গাছ
প্রাণময় হলে, মেঘ ডেকে আনবে মাটিতে । ছায়া
হবে শীতল, বিস্তৃত । আমি,
আর কিছুই করিনি, সেই থেকে, তার ছাই তুলে নিয়ে উড়িয়ে দিয়েছি
শূন্যে, পিতৃলোকে ।

এতদিন পর, মনে হচ্ছে, সেই ছাই
আজ গ্রাস করতে আসছে, হ্যাঁ, আমাকেই !