আমার প্রেমিকার নাম
শূন্যতা । যখন একটু একটু করে বড় হতে শুরু করেছি, দিদি ও মাসিদের দিকে, সহপাঠিনীদের দিকে
তাকালে, যখন শিউরে উঠতে শুরু করল শরীর ও মন, রাতে না ঘুমিয়ে, পুকুরপাড়ে এসে বসে
থাকতাম সারারাত, ভাবতাম, আকাশ থেকে নেমে আসবে পরীদের দল, তাদের কেউ একজন এসে বসবে আমার পাশে, কথা বলবে, চুমু খাবে বড়
ভালোবাসায়, কোনও পরীই আসত না, হয় তো তাদের পছন্দ নয় আমাকে । পছন্দ করার
কথাও ছিল না । খেলাধুলো থেকে দূরে থাকা এক শীর্ণকায় ছোটখাটো কিশোরকে কে আর পছন্দ করে ! একা, ঐ নির্জন রাতে, তাকিয়ে থাকতাম আকাশের দিকে । একটা দুটো করে খসে পড়ছে তারা, ক্রমে হেলে পড়ছে
পশ্চিমের দিকে, দু একটা নক্ষত্রকে, নাম জানতাম না তখন, ভালো লাগতো আমার । তাকিয়ে থাকতে থাকতে কান্না পেয়ে যেত আমার । ঐ নির্জনতা ভেঙে আমার ঐ কান্না
ছড়িয়ে পড়তো চরাচরে । টের পেতাম, এই একান্ত বেদনাবিধুর মুহূর্তে, কে যেন এসে, পাশে বসতো আমার, জড়িয়ে ধরতো আশ্লেষে । শিউরে উঠতাম আমি । আশ্চর্য এক শিহরণ ছড়িয়ে যেতো সমস্ত
শরীরে । সে শিহরণ অনিবর্চনীয়, অতুলনীয় । যেন হস্তমৈথুনকালীন শিহরণ । না, তাও নয় । এ শিহরণ
আরও গাঢ় ও মন তোলপাড় করা । পরে, অনেক পরে, প্রথমবার প্রত্যাখ্যাত হবার পর, সারারাত, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাশে, পাশে নয়, একদিকে, বিড়লা প্লেনোটোরিয়ামের পাশে, ক্যাথিড্রাল চার্চের প্রাঙ্গনে, ঝোপের আড়ালে, বসে কাটালাম, তাকে দেখলাম । হূ হূ করে কাঁদছিলাম আমি ঐ নির্জন চার্চের একদিকে বসে । কেউ নেই, সামনে ক্যাথিড্রাল
চার্চ । মাঝে মাঝে দু একটা গাড়ি হুট করে চলে যাচ্ছে রাতের স্তব্ধতা ভেঙে । তখন এল
হে । পাশে বসে, একটু হাসলো যেন । তারপর, আশ্লেষে, বুকে জড়িয়ে ধরে, সারা শরীরে, ঐ শীতলতম হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠল, এত একা ভাবো কেন ? নারী তোমাকে ভালো
হয়তো বাসবে না, কাছে আসবে না, আমি তো আছি । এবং থাকবো তোমার সমগ্র জীবন । সে তার কথা রেখেছে । আজও. তার প্রেম ঘিরে রেখেছে আমাকে । আমি
ভালোবাসি তাকে । আমার একান্ত প্রেমিকা, শূন্যতা ।
No comments:
Post a Comment