Monday, February 9, 2015

রাতের সাধনা শেষে, বলি, হে নির্জন, 
হে নিঃসঙ্গ শুয়োপোকা, একবার, জাগো,
ক্রমশ উপরে বেয়ে ওঠো,
ঐ যে, দূরে, জলবাতিঘর, রাঙা ও নরম, যাও
জলের উচ্ছ্বাসে ডুব দাও...
পূণ্য অর্জনের সুখ হাতছাড়া করো না এখন
গাড়ি কেনার শখ ছিলো যে দীর্ঘদিনের,
আই টেন, বা ঐ এশ কালারের হোণ্ডা একটা,
লং ড্রাইভে কি যেতে পারি, অনুমোদন 
না পেলে আজ ?শখ ছিলো গো অনেকদিনের
পাহাড় বেয়ে যাবার কালে তোমার টিলা
দেখবো ছুঁয়ে, নরম সরম তোমার টিলা,
উপত্যকার উষ্ণতা ছুঁই হাত বাড়িয়ে,
ঝলসে ওঠে তোমার হাতের রুদ্রনীলা
এই ছোঁয়াতে, না কি নিজেই উঠলে কেঁপে
স্পর্শসুখে, যেমন কাঁপে গাছের পাতা
একটু হাওয়ায়, লং ড্রাইভের এই আনন্দ আজ
নাও গো তুমি, বসো তুমি একটু চেপে !
গাড়ি কেনার এই আনন্দ পরজন্মের
তোমার সঙ্গে এই আনন্দ পরজন্মের
এই জীবন যে মিছি মিছি স্বপ্ন দেখার, 
এই জীবন যে কুড়িয়ে পাওয়া গতজন্মের...
বেহিসেবী বলে, সঞ্চয় নেই কিছু,
প্রেম ছাড়া, প্রেমেও তো ফাঁকি রয়ে গেলো,
জীবনের মত, 
সেলুকাস, যুদ্ধের মত আনন্দ 
কোথাও পেয়েছো তুমি ? শয্যাও, জানো,
এক রণভূমি, ঢাল আর বল্লম
দুটিই অস্ত্র, একে অপরকে হেনে,
ডুবে গিয়ে পায় আনন্দ !
সেখানেও থাকে ছলনার হাতছানি...
কি বলবে একে ?
আমার হিসেব নেই, আছে লুব্ধক,
ছায়াপথ, গ্রহশাসিতের 
মত এক অধুরা জীবন, শূন্যের
ওমে বেঁচে আছি, 
সেলুকাস, ফিরে যাবার আগে এটুকু
বলে গেলাম তোমাকে, লেখো, কোনোদিন...
ছুঁয়ে, মনে হলো, এ কোন বিদ্যুতস্পর্শ !
এগারো হাজার ভল্ট, না কি আরো বেশি ?
দুটি তানপুরা উল্টে দিই, 
ঐ তারে, আঙুল রেখে বাজাই ইমন,
গলে যাচ্ছে সুর, জলোচ্ছ্বাস শুরু হলে,
সাইরেন বাজে, বেজে যেতে থাকে রক্তে,
না কি ব্রেনসেল জুড়ে মুগ্ধ তারাবাজি ?
তুমি জানো, এ সময় পুড়ে মরবার,
এ সময় অগ্নুত্পাতের,
এ সময় মুহূর্তের সাথে নিমেষের 
এক দেহে লীন হয়ে আকাশ দেখার...
আমি যা পারি না, তুমি পারো,
এই সত্য থেকে আমি ক্রমশ তোমার
দিকে ঝুঁকে পড়ছি, ঈশ্বর !
নারায়ণ শিলা নয়, তুমি সেই, আমার কৈশোর, পীড়িত শৈশব আর মুগ্ধ দিনগুলি !
তোমাকে প্রণাম, হে অতীত !
ঈশ্বর জেনেছি আমি তোমাকে, হে সতেরো,
যেভাবে জেনেছে মরু-উট কাঁটা সহ
ঐ সবুজ, ক্রম জায়মান শ্যাওলাকে !
ধূসরের কাছে হাত পেতে
বলেছি, ফিরিয়ে দাও ভাঙা পেনসিল,
ছেঁড়া বর্ণপরিচয় সহ
টিলার উপরে থাকা বেতছড়া স্কুল !
প্রার্থনার ভাষা পড়ে থাকে 
বাতিল খাতার মত মনু রোড জুড়ে,
সমস্ত দুপুর, একা, ধর্ণা দেয় শৈশবের মাঠে,
ঈশ্বরের সাথে খেলে সেখানে ধূসর !
মাঠের সীমানা ঘেঁষে, একা, বসে থাকি,
খেলা দেখি, হাততালি দিই,
ধূসর দেখে না এইসব, আমি তবু
প্রার্থনা করেছি, দাও সেই ভাঙা শ্লেট !
যেখানে লিখেছি তাকে আমার প্রণয়,
এঁকেছি হলুদ এক মহাফেজখানা,
মুছেছি নিজের মুখ কাটা দুই হাতে,
ভেঙে যায় শাদা খড়ি ভেঙে ভেঙে যায়...
একা, বসে থাকি,
ব্যালকনি জুড়ে পাখিদের খেলা
দেখি, চুপচাপ...
একটি চড়ুই আসে ঘরের ভেতরে
চারদিক দেখে, তারপর
কাকে যেন ডাকে,
আসে না পাখিরা, ইতস্তত চড়ুই এবার
তাকায় আমার দিকে, সঙ্গী নই তার,
ডানা ঝাপটায়...
একা একা ঘোরে এই ঘরের ভেতর,
কি যেন ভাবে সে,
উড়ে যায় নিরুদ্দেশ দেশে...
পাখিটির উড়ে যাওয়া দেখি,
শূন্যে, চরাচরহীন এক নিরুদ্দেশে,
আমি তা পারিনি
তোমার উষ্ণতাটুকু এই শীতে বড় প্রয়োজন,
শীতার্তকে করো দান আজ,
জড়াও দুহাতে এই দেহ, রন্ধ্রে রন্ধ্রে
ছড়িয়ে পড়ুক তাপ, জ্বালাও আগুন
চকমকি পাথরের মত ঘষে ঘষে,
শরীরের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ুক
পারদের নীল আলো, উত্থানের পথে
মুখ রাখো, এ দেহ পোড়াও,
ছাই হলে, দেখে নিও, তোমার উষ্ণতা
ক্রমপ্রসারণে তোমাকেও 
নিয়ে গিয়েছিল আগ্নেয়গিরির দেশে,
লাভার অম্লান স্বাদ তোমাকে দিয়েছে !
দেহ রন্ধ্রময়,
চুমু দিলে বাজে !
সরগম ভুলে
আমিও বাজাই
তোমার শরীর
এই নিশি রাতে !
আমাদের দেখে
ঈশ্বর আসেন,
নৈশ প্রহরীর
মতো, একা একা,
এখানে রচিত
হচ্ছে আদি স্বর্গ !
জলমগ্ন ভূমি
জাগে লোহাস্পর্শে,
এই দৃশ্যে, তিনি
বজ্রযানী যোগী !
আমরা দুজনে
তাকেও জাগাই !
তিনিই পাঠক,
এই কবিতার
তিনি মগ্ন শ্রোতা
আমাদের গানে !
রন্ধ্রে রন্ধ্রে তার
দীর্ঘশ্বাস শুনি
এ শরীর যেন
আনন্দমুখর
বাঁশি, ধ্বনিময়,
পূর্ণ ইশারার !
তুমি কি সাঁতার জানো, অবেলার গান ?
ডুব দেবে এই শীতে নিশীথ কুয়োয় ?
মিথ্যাও মূলত এক সত্য,
লজিক্যালি, এটা মেনে নিলে,
সত্য হবে মিথ্যা...
তর্কশাস্ত্র বড় মজাদার,
ফ্যালাসিকে মনে হয় ফাঁদ
আজীবন ফাঁদ থেকে দূরে
থাকতে চেয়েছি,
আর ফাঁদ চিরকাল আমাকে টেনেছে
ফ্যালাসির মত, ফলে, সত্য ও মিথ্যার
দ্বন্দ্ব ফেলে রেখে
আসতে পারিনি আমি, মহাফেজখানা !
ছলনার মত সুন্দর তোমার হাসি
আর ঐ চাহনি, মিথ্যে বলবো না, ঝড় 
শুরু হয় ব্রেনসেলে, আহত মেঘের
ডাক শোনো কি তখন তুমি ?
অন্ধ ও বধির ছাড়া কে আর তোমাকে
দেখেছে এভাবে, মগ্ন হয়ে ?
ছুঁয়েছে তোমার স্তন এই নুলো হাত,
করেছে লেহন দেহ এই কাটা জিভ...
এ রূপ আঁধার হয়ে আসে এই প্রেমে,
শিহরণে শিহরণে বলেছো তুমিও !
এই মিথ্যা সত্য মনে করে
একদিন মরে যাবে সকল যুবক !
ঊরুসন্ধি জুড়ে ও কিসের নীল আলো ?
অন্ধকার সরে গেছে, মুখ ধুয়ে নিই
ঐ আলোয়, একে কি বলবে ?
অশ্লীলতা, না কি কাম ? কোকা পণ্ডিতের
কাছে জেনে নিতে হবে সব !
সমালোচকের ঐ তর্জনী 
অস্থিরতর, সে তুমি জানো, সিণ্ডেরেলা,
আমি ঐ ঊরুর বিস্তারে হাঁ করে দেখে 
যাচ্ছি অরূপতা...
নৈঃশব্দের আর্ত কলরোল !
যে লেখে, চিনি না আমি তাকে,
তোমাকে যে ভালোবাসে, তাকেও চিনি না,
এই দুজনের কাছে মিনতি করেছি,
লেখা থেকে, ভালোবাসা থেকে
আমাকে সরিয়ে রেখো, জানি,
এ জন্ম লেখার নয়, এ জন্ম ভালোবাসার নয়
এ জন্ম কেবল প্রতীক্ষার...
দাঁড়াও, একটু, হ্যাঁ, এই, এদিকে, মানে,
বাঁয়ে নয়, ডানে, না, না,ডানে কেন হবে ?
এদিকে তাকাও, এই যে, সূর্যাস্ত পার হয়ে, এই
নির্জনতর চরের দিকে একবার
তাকাও, তাকিয়ে দেখো, নদী
খুলে রেখেছে পোশাক, তার বুকে ডুব
দিয়েছে আহত চাঁদ, আহত কি, না কি,
ভ্রম ? এই অন্তরঙ্গ দৃশ্যে 
ঈশ্বরও হয়ে ওঠেন কামুক, ঈশ্বরের কথা
থাক, তাকাও, তাকিয়ে, অনুভব করো,
এই ডুব সাঁতারের জন্য 
আর একবার জন্ম নেবে কি না ! আজ
বলে রাখছি তোমাকে, আমি ঠিক জন্ম নেবো
তোমার গঙ্গায় ডুব দেবো !
তোমাকে রচনা করি, দেবী,ধরো এই
বাঁশিটিকে, রন্ধ্রে তার মুখ 
রাখো, ফুঁ দাও অথবা জিভ দিয়ে তাকে
স্পর্শ করো, বাঁশিটির প্রাণ
সঞ্চারিত হোক, সা রে গা মা পা ধা নি থেকে
আলাপে আলাপে তারপর
আমিই রচনা করি তোমার শরীর ভোর রাতে,
ও মুগ্ধ ভৈরবী, প্রাণ দিই
দুটি পাপড়িকে আঙুলে সরিয়ে, ওম্ তত্ স্বাহা
আসলে তা নয়, আমাকে রচনা
করো তুমি, তোমার হাতের স্পর্শে, জিভ দিয়ে
যেভাবে প্রতিমা গড়ে অন্ধ সেই শিল্পী...
তারপর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছো তুমি...
সন্ধ্যা এলে, মনে পড়ে বিকেলের কথা, 
বিকেল তোমার হলে, সন্ধ্যা থাক
আমার অন্তরে...এই প্রস্তাবের পক্ষে
তোমার কি মত ?
সন্ধিটেবিলের দুই পাশে বসে আছি
আমরা দুজন, একজন যদি অন্ধ হয়ে থাকি,
অপরজন বধির, একে অপরের
হাত ধরে বসেছি রাত্রির এই দেশে !
এই স্পর্শ আঙুল ছাড়িয়ে
সন্ধিপ্রস্তাবের মত পৌঁছে যাচ্ছে দ্রুত
ব্রেণসেলে, তরঙ্গের পর 
তরঙ্গ, ঐ, আছড়ে পড়ছে রক্তে, শিরায় শিরায়
প্রস্তাব মানার আগে আমাদের হাত
মিশে গেল, বিকেল যেভাবে মিশে যায়
সন্ধ্যার নিভৃত বুকে, আর ক্রমাগত
পাতা ঝরে পড়ে ধুলির এ দেহ থেকে..
দুটি গ্লাস, খালি,
মাঝখানে বালি,
মাঝখানে বালি
থালাটিও খালি !
থালা ভর্তি ভাত
স্বপ্নে বোনে তাঁত,
স্বপ্নে বোনে তাঁত
নুলো জগন্নাথ !
জগন্নাথ নুলো
দেহ ভর্তি ধুলো,
ধুলো দেহে দেহে
জমে ওঠে স্নেহে,
খালি দুটি গ্লাস
আর দীর্ঘশ্বাস !
দীর্ঘশ্বাস আর
নাহি ঘুচিবার !
অপর একটি শব্দ, যার বিপরীতে
দাঁড়িয়ে রয়েছে পর, অথচ আমরা
কত ভুলভাবে জেনে এসেছি এদের,
যেভাবে জেনেছি নিজের সম্পর্কে, এই
ভুলকেই জানি সত্য বলে !
তুমি কোনোদিন এ বিষয়ে
ভেবেছো কি,বলো, সেলুকাস ?
দুজন দুদিকে,
দুজনের কেউ নও তুমি !
রাত শেষ হয়ে এলে, দুই পথ এসে
মিলিত হয়েছে তোমার ঘরের পাশে,
এই দুই পথে কোনোদিন
হাঁটোনি তুমিও !
যে পথে হেঁটেছো তুমি একা
সে পথ তাদের নয়, ফলে,
রাত শেষ হয়ে এলে তুমি
বিছানা আলাদা করে শুতে যাও রোজ
দুজনে তোমাকে ভাবে, তুমি
দিক ভুলে হারিয়ে গিয়েছো !
পথ, দিক, রাত্রি
আর ঐ দুজন তোমারই প্রতিবেশী
শুধু এই, সময় আলাদা তোমাদের !
এই শীতে, হে অগ্নি, তোমাকে প্রয়োজন,
পোড়াও এ দেহ...
মেঘ ঝুঁকে আছে তোমার মুখের দিকে,
যেন সে প্রেমিক, ভিজে যাচ্ছে
তোমার শরীর, তোমার চোখের পাতা
এই দৃশ্যে, আমিও কাতর, মেঘ নই,
সামান্য প্রেমিক, দূর থেকে
দেখি, মেঘচুম্বনের সুখে কেঁপে ওঠে
তোমার শরীর যেন তুমি আরতির ঐ প্রার্থনা
আমাকে বিহ্বল করে কি সুখ পেয়েছো ?
চুপ, কথা নয়,
নীরবতা থাক
মাঝখানে, শ্বাস
নাও, যতখানি
পারো, তারপর
দেখো, দেহ জুড়ে
জ্যোত্স্নার ছায়া...
এই চেয়েছিলে
শরীরের কাছে ?
না কি আরো কিছু ?
বলোনি কখনো,
আড়ালে রেখেছো
এত সব কথা ?
বুঝি না তোমাকে,
চুপ করে থাকি,
এই নীরবতা
আমারও আড়াল !
রাত আর দিন, দুইই সমান বলে
আমি প্রেফার করেছি রাত,
রাত মানে নিশি, তার ডাক 
উপেক্ষা করার নয়, জেনে, তার প্রতি 
টান বড় বেশি, বসে থাকি,
কখন সে ডাকবে আমাকে,
অন্ধকারে তার রূপ খোঁপাটির মত
খোলে, জানু খুলে সে আমাকে ডাকে,
আমি দেখি, ঊরুসন্ধি জুড়ে 
তারাদের মেলা, 
রাঙা হয়ে ফুটে আছে তার যোনিপদ্ম,
উত্তরের হাওয়া নয়, ঐ পদ্মের পাপড়ি কাঁপছে
প্রচণ্ড আবেগে,
আরতির পর রাত্রি মেলে ধরে তার
শরীর, সে সময়, নিজেকে
ধরে রাখা অসম্ভব, নিশিডাক ফিরিয়ে দেবার
মত সামর্থ আমার নেই...
আমার কি দোষ ?
সামান্য পুরুষ, মজে থাকি তার নিশিরূপে...
একা হও, না হলে কি করে
দেখা পাবে তার ?
ভিড়ে সে আসে না,
মুখরতা তার প্রিয় নয়,
উল্লাসে মেতেছে কেউ কেউ,
চিয়ার্স, চিয়ার্স...
ভরে ওঠে গেলাসের ফেনা,
সেখানে সে নেই,
মজলিস থেকে দূরে থাকো,
একা হও, একা
তখনই, দূরের তারার 
আলো ক্রমে তোমার ভেতরে
বৈতরণী পার হয়ে অসম্ভব এক 
হাওয়া আসে, আর
সে হাওয়ায় মনে হবে, কে যেন সেতার 
বাজাচ্ছে, বাগেশ্রী...
স্তব্ধ চরাচর,
দূরে কয়েকটি
গ্রহ ও নক্ষত্র,
আর, এই, নিচে
স্ট্রীটলাইটের
টিমটিমে আলো !
আর, এই ঘরে,
দেয়াল ঘড়িটি
টিক ট্যাক টিক...
মগজের মধ্যে
ঝিঁঝি পোকাগুলি
ডেকে ডেকে যাচ্ছে !
নিদ্রাহীন গৃহ
বিছানা টেবিল
সহ বাথরুম
কিচেন, ঐ চুল্লী,
সকলেই চুপ
করে বসে আছে !
কারো কথা নেই,
যেন শবদাহ
শুরু হবে এই
এখনই, শোক
গিলে খাচ্ছে মন
স্তব্ধতা মূলত
ঝড়ের আগের
মুহূর্ত, জেনেছি,
দাহকার্য শেষে,
ছাই হয়ে, ছাই...
রান্না চাপিয়েছি,
তপ্ত কড়াইয়ে
তেল ও ফোঁড়ণ 
দিয়ে নাড়লাম, 
যতক্ষণ গন্ধ 
না বেরোয় তার,
তারপর, ঢেলে
দিই একে একে
মেরিনেট করা
আমার মগজ,
হৃদয়, হ্যাঁ, ঐ যে,
তোমার পুঁচকে,
অণ্ডকোষদ্বয়,
পাঁজর, হাত-পা,
ঊরুসন্ধি, গলা,
সব ঢেলে দিই
তেলে, নেড়ে নেড়ে,
মিশিয়ে দিলাম
সকল মশলা !
কয়েক মিনিট,
সেদ্ধ হয়ে গেলে,
নামাবার আগে
মেশাবো সবুজ
স্বপ্নগুলি সহ
আমার সকল
পারা ও না-পারা...
পরিবেশনের 
আগে, বলে রাখি,
এই রান্না স্বাদু,
নেশাচ্ছন্ন করে !
বিফলে...না, থাক,
নিজের ঢোলটি
নিজে বাজাবো না !
আগামী জন্মের কথা বলে যাবো আজ...
তুমি কি বিশ্বাস করো এই জন্মান্তরে ?
গতজন্ম ছিলো পাথরের,
তার আগে, ছিলাম গভীরতম জলে,
এবার ধুলোর প্রেম, তুমি কি থাকবে
আমার ধুলোয় ?
যদি থাকো, তাহলে, তোমাকে 
দেবো ঐ চাবিটি, আমার.আগামী জন্ম...
তিন পেগ ? মাত্র ? পরাজিতদের তিনে
থামতে নেই ! কে যেন বলেছিল ? কে ? কে ?
চার নেবো ? বলছেন ? কিছু
হবে না তো ? লোকে
যদি ভাবে, লোকটা মাতাল, যদি ভাবে !
ভাবতে দে ! উপেক্ষার সীমা
দেখেছিস আগে, 
উচ্চারণ করেনি ও নাম, যেন এক
কালপ্রিট, রেপিস্ট বা খুনী !
নে, খা ! চার নয়, আজ বিশ্বসংসার
গলায় ঢেলে নে ! তারপর,
মাথা উঁচু করে বল, ইয়েস, ডিয়ার,
আমিই সে, যাকে
অবজ্ঞা করেছো এতদিন,
আজ সুদে ও আসলে সকল হিসেব
নেবো !
কথকতা শেষ হলো, তবু
কথা থেকে যায়,
না বলা এসব বুঝে নিও একদিন !
নিত্য বাজারের পথে দেখা হয়েছিলো,
ভুলে গেছো বুঝি ?
সবুজ মাঠের শেষে সূর্যাস্তের আলো
পড়েছিলো এসে,
সে আলোয় স্নান করে তুমি
উঠে আসছিলে, কুললক্ষ্মী...
এই দৃশ্য স্তব্ধতার, আহত পাঁজর
খুলে, দেখিয়েছি
মৃতদের স্বপ্নগুলি কেমন ফ্যাকাসে ! 
স্বপ্ন আর কথা
বলেছি অনেক, বাকি থেকে গেছে আরও !
বাকি সব বুঝে নিও, একান্ত আড়ালে !
স্তব্ধতার পরপারে নামহীন একটি নক্ষত্র
তুমি কি দেখেছো ?
গৌতম বুদ্ধের মতো বসে আছে একা,
তার দুই চোখে লেগে রয়েছে বিষাদ
প্রশান্তির পরিবর্তে এক অস্থিরতা
চুল থেকে নখ, হ্যাঁ, সর্বত্র !
ঘুম নেই কতদিন তার
সে দেখছে, যা হবার নয়, তাই হচ্ছে,
লোকালয় জুড়ে ছত্রাকের মত এক ত্রাস 
দূর থেকে দেখে যাচ্ছে যেন
সে অবজার্ভার, নোট দেবে একদিন
যেখানে দেবার
লক্ষ্য করেছো কি, নক্ষত্রের 
দুই চোখে বয়ে যাচ্ছে নীল আদিগঙ্গা...
ঠকে যাওয়া অনেক ভালো, কাউকে ঠকানোর চাইতে ! ঠকতে ঠকতে এই এতদূর এলাম, বৈতরণীতীরে !
আমার এই অভিযাত্রাপথটি কণ্টকাকীর্ন হলেও, মাঝে মাঝে মরুদ্যানময় ছিলো ! বেহালায় আমার মত এক অখ্যাতলোককেও আশ্রয় দিয়েছিলো অচিন ল্যাডলীরা !
অচিন তো নিজের পরিবারের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক করিয়ে দিয়েছিলো ! সেই অচিনকে পুনরায় ফেসবুকে পেয়ে আমি পুলকিত !
কি যেন লিখবো, ভেবে, আজ, সারাদিন,
বসেছিলাম, টেবিলে কনুই রেখে, সুকান্ত কায়দায়, ভাবছিলামও !
কি লিখতে চেয়েছিলাম আসলে ?
যারা ভুলে গেছে, তাদের কথা ? ব্যবহৃত হতে হতে হতে শুয়োরের মাংস হয়ে ওঠার কথা ?
না কি সেই সব দীর্ঘশ্বাস যা ভারি হয়ে বুকে চেপে বসে আছে ?
না কি সেই পিতার কথা যে সন্তান বিক্রি করে সংসার চালায় ? 
কি লিখবো আসলে ? দুর্নীতি ধরা পড়লে, যে সকল আদর্শবান নেতামন্ত্রীরা অফিসারকে বলির পাঁঠা বানায়, তাদের কথা ?
না কি সেই প্রেমের কথা, যা মূলত ব্যবসায়ে রূপান্তরিত, যা সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত ?
লিখবো ?
সারাদিন কেটে গেলো, লেখা আর এল না আমার কাছে !
আমার কলম তুমি নিলে কেন হাতে ?
তোমার লেখার কাছে এ কলম কিছু নয় আর,
তন্ত্রহীন জীবনের মত এ সকল
লেখা অনুস্বার আর বিসর্গবিহীন !
আমার অক্ষরবৃত্ত, তুমি চলো মাত্রাবৃত্তে, তবু
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেছো,
সাপ তার মাথা তুলে যেদিন বসাবে
দাঁত, মনে রেখো, আমার কলমে তুমি
লিখেছিলে আরোগ্যবাগান !
বাগান মানে ঐ কুয়োটির কথা, জীর্ণ,
শ্যাওলার আদরে আদরে
থাকা বালতির ইতিহাস লিখেছিলে
একদিন এ কলমে, মনে নেই আর ?
সিঁড়ি সাক্ষী, তুমি সেই হাতে ধরেছিলে
আমার কলম, যে হাতে লিখছো আজ
যজ্ঞকথা, পুরোনো দিনের 
চোখে নতুন জগতকথা !
লেখার কথা ছিলো তোমার, লিখছি আমি...
হাজার দুয়ার খুলে রেখে সুদূরগামী
ট্রেণেই চেপে বসলে শেষে এই অবেলায় ?
না কি এটাই তোমার অপার লীলাখেলা ?
লীলার কথা উঠলো যখন বলেই ফেলি,
সুন্দরী সে, শ্যামবর্ণা, লাল রঙের একটা চেলি
তার কোমরে, দু দুটি বুক উদোম খোলা,
যেন দুটি কালো ভ্রমর আত্মভোলা
আমার আঙুল ঐ ভ্রমরের পিঠে রেখে
খেলছি লুডো, মই বেয়ে এই সাপকে দেখে
চমকে ওঠে ভেতরমহল, উচ্ছ্বাসে জল
বানের মত নেমে আসছে কী অনর্গল !
লিখছি বটে, কিন্তু তুমি গেলে কোথায় ?
ভেবেছিলাম রাখবো তোমায় হাতের মুঠায় !
এখন তুমি পাঠের আগে সুদূরগামী
ট্রেন ধরেছো ? লিখছি তবু একা আমি !
আজ কি বার ? মঙ্গল ? না কি বৃহস্পতি ? 
না কি রবিবার ? 
প্রার্থনার দিন ছিল কবে ?
যজ্ঞ শেষ হবে কবে ? যজ্ঞ ?
গোমেধ, না, অশ্বমেধ ? না কি নরমেধ ?
আজকাল চারদিকে নরমেধ যজ্ঞ !
আচারবিহীন, শাস্ত্রহীন !
প্রতীক্ষার দিনগুলি অসহ রোদের মত তীব্র, 
যন্ত্রণার, তুমি তবু ভীত
আশংকার মত দিনগুলি ঘিরে আছে
আমাদের, শেষ হোক গ্রহণবেলার
ঐ মুহূর্ত, যাবো, সোমবার !
ও বেহুলা, সাজাও বাসর...
তোমার চুলের চেয়ে তালিকাটি দীর্ঘ,
বিকেলের ছায়াটির মত
পড়ে আছে নিচে, চোখ বুলিয়ে নেবার
আগে দেখে নিও
বাদ গেল কি না ব্রা-র হুক,
লাল প্যান্টি, আইলেনারের মত কিছু,
বেড়াতে যাবার ক্ষণ এলে
তালিকা তৈরির কাজ প্রতিবার থাকে
আমার প্রস্তুতি আরেক রকম, জরুরী কণ্ডোম
ব্যাগে ভরে নিই, গোটা সাতেক বোতল
ভদকা ও জিন, সিগারেট
সব নিই সঙ্গে, ঘন অরণ্যের পথে
অবৈধ প্রেমের মত এসব জরুরি !
দুজনেই এসেছি পালিয়ে,
আমাদের দেখে হেসে ওঠে অলৌকিক এই
ফরেস্ট বাংলোর রাত, আর
ঐ ঘন জঙ্গল, বারান্দায় 
এসে দাঁড়িয়ে দেখছো আকাশ পেরিয়ে
আসা জ্যোত্স্নার হাসি...আমি
দেখছি, তোমার ঊরু বেয়ে ক্রমে নেমে
আসছে চৌষট্টিকলা, বেড়াতে এসেছো
তুমি তো যোগিনী নও, চলো,
শুরু করি পর্যটন উত্সব দুহাজার ষোলো !
নিভে গেছে রাতের আগুন 
এখন প্রশান্তিকাল, ও শরীর, ওঠো,
মেয়ে নাপিতেরা গেছে সকলে নাইতে,
খবরের কাগজে আবার
যৌন হয়রানি আর দলবদলের গল্প,
দ্বারোয়ানের বৌ এসেছে চা নিয়ে, শোনো
তার শরীরের গান, বেড়াতে এসেছো,
জঙ্গলের ঘ্রাণ নাও, বুনো হাঁসদুটি 
তার দেখো তাকিয়ে রয়েছে,
সেরে নাও সকালের খাবার, না, দ্বারোয়ান নেই
সে গেছে বাজারে !
জঙ্গল ও গ্রাম, শহরের মত নয়,
প্রকৃতি আলাদা, বুনো গন্ধ উত্তেজক, 
ও শরীর, ওঠো, মন যখন চাইছে,
দেরি করো না, বাজার চলে এলে আর
এক হাঙ্গামার শুরু, ফরেস্ট বাংলোর
পথ চলে যাবে গভীর স্যাংচুয়ারির দিকে !
এই যাঃ ! ঐ হাঁসদুটি চলে গেল মট মট করে!
মাটি করে দিলে এই বাংলোর সকাল !
ভ্রমণ : তিন
আর না, এবার গ্লাস ভরে দাও, ঐ যে,
লেমন জিন, অনেক বেড়ানো হয়েছে, 
এবার গলা ভেজাবো, সকাল অযথা
গেলো, যে সুযোগ এসেছিলো,
মাটি হয়ে গেল সব, রাতে 
ঐ দ্বারোয়ানকে, ভাবছি, খাইয়ে দেবো
রাম, তিন-চার-পাঁচ পেগ, 
ঘুমিয়ে পড়লে, রামায়ণলীলা হবে 
তার নধর বৌয়ের সঙ্গে,
এট্টু ফস্টিনষ্টি না করলে, বাবুদের মান, বলো,
থাকে আর কই ?
বেড়াতে এসেছি, তীর্থ করতে আসিনি !
ত্রিভুজ প্রসঙ্গ এলে, প্যাথাগোরাসের 
চেয়ে বেশি মনে পড়ে তোমার শরীর,
জ্যামিতি জানি না, সমদ্বিবাহুর মত
মসৃণ ঐ ঊরুদ্বয় উপমা হিসেবে
যদি ধরি, তাহলে সম্পাদ্য 
এখানে টেকে না, আর উপপাদ্য প্রমাণসাপেক্ষ
প্রমাণের প্রসঙ্গে, তোমার
যজ্ঞভূমি মনে হতে পারে উপযুক্ত,
সমবাহু ত্রিভুজের সকল লক্ষণ দৃশ্যমান
এ বিষয়ে, প্যাথাগোরাস কি বলেছেন,
সমালোচকের মতামত 
কি হবে, জানি না, আমার আ ঙুলগুলি 
তোমার ত্রিভুজে রেখে প্রতিপাদ্যটিকে 
সম্পন্ন করার ব্যর্থ চেষ্টা 
করে যাচ্ছি, এ মাঘনিশীথে !
রাজনীতির এক বড় অধ্যায় কূটনীতি,
মিথ্যাকেও সত্য প্রমাণিত করার প্রয়াস এই কূটনীতির আওতাভুক্ত !
কবিতায় এসব দাওপ্যাচ নেই, যা আছে তার কারবার বোধ ও অনুভূতিনির্ভর !
সম্ভাবনা রাজনীতির শিল্প, কবিতার তা নয়,কবিতার প্রাণভোমরা কল্পনার ভেতরে থাকে, যে কল্পনার পা থাকে মাটির উপর !
আইন-এর সত্য প্রমাণরচিত, রাজনীতির সত্য ভোটশাসিত, অথচ কবিতার সত্য বোধজারিত ও অনুভূতিসম্ভব !
হয়তো, একারণেই, কবিতার ঠাঁই রাজনীতির মঞ্চে নেই, রাজনীতি বরং আশ্রয় পায় কবিতার ঘরে !
উদয়পুর, না, রাজস্থান নয়, ত্রিপুরার উদয়পুর, আগে রাঙামাটি নামে পরিচিত ছিলো, যদিও রাজমালার রাঙামাটি আর একখানে, অন্তত আমার তাই ধারণা, লিকাদের রাজধানী ছিলো একদা, বোরোদের একটি শাখাপার্বত্য কাছাড় হয়ে, এই রাজ্যে বসবাস করতে শুরু করে দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ! এবং তারা লিকাদের হারিয়ে দখল করে রাজত্ব ! মাণিক্য উপাধি ধারণ করে সেই সামন্তপ্রভুরা ! সে ইতিহাস রাজমালায় নেই, কেন না, রাজমালা মূলত মাণিক্য বংশের জয়গাথা !
তো, এই উদয়পুরে দীর্ঘদিন মাণিক্য রাজাদের রাজধানী ছিলো ! পরে, পুরানো আগরতলায় রাজধানী স্থানান্তরিত হয়, সেখান থেকে বর্তমান আগরতলায় !
আমার কোনো রাজধানী নেই, তবু আমাদের ত্রাণশিবির আগামীকাল স্থানান্তরিত হচ্ছে আগরতলায়, খোশবাগানে !
সেখানে খুশ্ থাকার সৌভাগ্য আছে কি না জানি না, যেটুকু জানি, কলকাতা আমাকে ডাকছে, আমার যৌবনের বারাণসী, মরণের তীর্থভূমি !
গ্রহণের আগে নিভে গিয়েছিলো আলো,
ছায়াহীন সেই অন্ধকারে
দুটি কবুতর ছটফট করে ওঠে
আমার দু হাতে, পালক ছাড়াতে গিয়ে,
তাদের ঐ ওম বুকে নিই,
যেন শ্বাস নিচ্ছি প্রাণ ভরে, ঘন হয়ে 
আসে বকুলতলার জল,
ঐ পুকুরে ডুব দিতে দিতে মনে পড়ে,
গ্রহণে জোয়ার আসে পুকুর ভাসিয়ে,
প্রণয়ের মত ভেসে যাই তলহীন
বাঁধহীন পুকুরের জলে...
গ্রহণের পরে তুমি লুকোলে ও মুখ
লজ্জা ও শরমে, দুটি কবুতর তখনও কাঁপছে
হাতের মুঠোয়, আর আমি
চৌষট্টি যোগিনী নয়, মুগ্ধ যোগিনীর
দিকে তাকিয়ে ভাবছি, গ্রহণবেলার ইতিহাস
লে হালুয়া...ট্রেনে যেতে যেতে
এই কথাটি শুনতে পাই,
কে কাকে বলছে ? বোঝার আগেই ট্রেন
গেল থেমে, না, ঠিক থামেনি,
গতি হয়ে এল শ্লথতর, আর দুরদার করে
নেমে গেল লোক !
এ দৃশ্য নতুন নয়, হাওড়া ও লিলুয়ার মধ্যে
এই স্টেশন, হালুয়া ! সুকুমার রায়
এর আবিষ্কৃত এই সন্ধি,
সন্ধির পদ্ধতি সর্বান্তকরণে গ্রহণ করেছে
অনুপ্রাসপ্রবণ এ ভাষা, 
দৈনন্দিন ট্রেন আর তার যাত্রীগণ !
যেমন গ্রহণ করে সদ্য বিবাহিত
মেয়ে তার অচেনা স্বামীকে !
ঋষিবাক্য থেকে দূরে এসে
খুঁজেছি তোমাকে,
ধাতুরূপ, তদ্ধিত-প্রত্যয়ে, ক্রিয়া-কর্মে,
মাতৃসদনের পথে, স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নে,
ভালোবাসাহীনতায়, অবৈধ সঙ্গমে,
মিছিলের ভিড়ে,
না, কোথাও নেই তুমি...
তোমাকে তবুও অনুভব করি রোজ
শূন্য হাহাকারে...
যে আমাকে মনপ্রাণ দিয়েছে সে থাকে অন্তরমহলে...তাকে বলি, ভালোবাসাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় !
তাকে কি চিনেছি সেভাবে ?